রিক্সা চালক আশরাফুলের মনে আজ অনেক আনন্দ

in Incredible India2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

joy-g88a994248_1920.jpg

source

আজ সকালে বাসা থেকে বের হয়েই রিক্সা চালক আশরাফুলের দেখা পেয়ে গেলাম। দূর থেকে দেখলাম আজকে ওর মনে খুব আনন্দ মুখে অনেক হাসি লেগে আছে। সেটা যে শুধু আজকেই তা নয়, বেশ কিছুদিন থেকেই আমি এরকমটা লক্ষ্য করছি। সাধারণত স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা রিক্সা গুলোর মধ্যে আমি আশরাফুলকেই বেশি পছন্দ করি

বেশ কিছুদিন আমি কুড়িগ্রামের বাইরে ছিলাম তারপর এসে দূর থেকে ওকে লক্ষ্য করেছি কিন্তু রিক্সায় উঠা হয়নি। আজ আমাকে দেখেই রিক্সা নিয়ে এগিয়ে আসলো। ছেলেটি আমাকে খুব শ্রদ্ধা করে, দেখলেই রিকশা থামিয়ে হলেও কথা বলে যায়। কোন সমস্যায় পড়লে বলতে কখনো দ্বিধাবোধ করে না। আর আমিও চেষ্টা করি সাধ্যমত তাকে সহযোগিতা করার।

সহযোগিতা বলতে যে শুধু টাকা দিয়ে সাহায্য করা তা কিন্তু নয়। টাকা পয়সা ছাড়াও বুদ্ধি দিয়ে অনেক সহযোগিতা করেছি। এইতো সেদিন তার ভাড়ায় চালিত রিক্সাটি সমস্যার কারণে ছেড়ে দিতে হয়েছিল। অনেকদিন রিক্সা পাচ্ছিল না আমাকে এসে সমস্যার কথা বলল। আমি পরিচিত একজনের সঙ্গে কথা বলে ভাড়ায় রিক্সা চালানোর ব্যবস্থা করে দিলাম।

যাইহোক রিক্সায় উঠে আশরাফুলের কাছে আনন্দের খবর জানতে চাওয়ার আগেই তার খুশির খবর আমাকে দিয়ে দিল। পাশাপাশি আমাকে ধন্যবাদ জানালো তার মেয়েকে ওই স্কুলে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছিলাম বলে। আশরাফুল অনেক আনন্দের সাথে আমাকে জানালো তার মেয়ে গোল্ডেন A+ পেয়েছে। শুধু তাই নয় অনেক ভালো একটি কলেজে সুযোগ পেয়েছে। কিন্তু তার কলেজের নাম মনে নেই।

একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল হয়তো সেই কলেজে আমার মেয়েকে পড়ানো হবে না। আমি আবারো জিজ্ঞাসা করলাম কোন কলেজে সুযোগ পেয়েছে। শেখ কলেজের নাম বলতে পারল না ঠিকই কিন্তু আমাকে বলল কলেজটি সৈয়দপুরে। আমি বুঝতে পারলাম সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজই হবে। সেখানে অনেক খরচ আর থাকতে হবে বাইরে তার পক্ষে মোটেই সম্ভব নয়।

minimalism-gb7e71d562_1920.jpg

source

এই কথা বলে সে অনেক আবেগ আপ্লুত হয়ে গেল। বুঝতে পারছি একজন বাবার কাছে এটা অনেক কষ্টের ব্যাপার। এত ভালো রেজাল্ট করার পরেও কাঙ্খিত স্থানে তাকে রাখতে পারছে না বলে। আসলে এই অনুভূতিটা কোনভাবেই ফেলে দেয়ার নয়। আমাদের দৃষ্টিকোণ থেকে হয়তো আমরা অনেক হালকা ভাবে নিতে পারি।

কিন্তু একজন বাবা যে রিক্সা চালিয়ে খেয়ে না খেয়ে মেয়েকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়েছে। বুঝতেই পারছেন সরকারি স্কুলের বাইরে পড়ানো কতটা ব্যয়বহুল হতে পারে। শুধু স্কুলের খরচই নয় এই রিক্সা চালিয়েই সে প্রাইভেটের মাসিক বেতন যুগিয়েছে। অবশ্য গরিব মেধাবী ছাত্রী হিসেবে শিক্ষকদের কাছে অনেক সহযোগিতা পেয়েছিল।

প্রতিদিন সকালে মেয়েকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আবারও ভাড়া খাটতে চলে যায় বিভিন্ন জায়গায়। আবার স্কুল শেষে বাসায় নামিয়ে দিয়ে নিজের কাজে চলে যায়। আমার প্রতিবেশী হওয়ার সুবাদে আমি এই জিনিসগুলো উপলব্ধি করতে পেরেছি। এতদিন পরিশ্রম করে মেয়ের কাছ থেকে যদিও কাঙ্খিত রেজাল্ট পেয়েছে। কিন্তু অর্থাভাবে এখন আর বাইরে রেখে ভালো কলেজে পড়ানো সম্ভব হচ্ছে না।

এটা একজন বাবার জন্য কতটা কষ্টকর হতে পারে সেটা বোঝার মত মন মানসিকতা নিশ্চয়ই আমার আছে। কারণ আমিও একজন বাবা যখন আমার ছেলে মেয়েদের ছোট ছোট আবদার পূরণ করতে পারি না তখন আমার মনেও এরকম কষ্ট হয়। মনে হয় বুকের মধ্যে কয়েক মন ওজনের পাথর চেপে আছে। দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় কিন্তু কোন কিছু করতে পারি না পরিস্থিতির চাপে।

hand-g8dae5da82_1920.jpg

source

আশরাফুলের মনের আনন্দ কে আবারো জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোন ব্যাপার নয়। নিজের চেষ্টাটাই আসল কথা, মন দিয়ে লেখাপড়া করলে যে কোন জায়গা থেকে ভালো রেজাল্ট করা সম্ভব। যেমনটা রেজাল্ট তোর মেয়ে নামি দামি কোন স্কুলে না পড়েই করেছে। তাই মেয়েকে বোঝাতে হবে যেন সে সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে।

আবারও আশরাফুলকে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বললাম আমি আগেও যেমন তোর পাশে ছিলাম এখনো আছি। যদিও মাঝে মাঝে আশরাফুলের মেয়ের জন্য কাপড় চোপড় ও বই কিনতে সহযোগিতা করেছিলাম। কিন্তু আমার কাছে এগুলোর চেয়েও বেশি কিছু মনে হয় কাউকে সুপরামর্শ দেয়া। যে পরামর্শের কারণে সামনে তার জন্য অনেক পথ খুলে যাবে।

আসলে আমরা যে পরিস্থিতিতেই থাকি না কেন আমাদের লক্ষ্য সবসময় স্থির থাকতে হবে। আমাদের কখনো নিজের লক্ষ্য থেকে বিন্দুমাত্র সরে আসা উচিত নয়। আমরা যদি নিজেদের কাজের প্রতি যত্নশীল হই তাহলে সুফল আসবেই। এই মেয়েটি লেখাপড়ার পাশাপাশি তার মাকে কাঁথা সেলাই করতে সহযোগিতা করত।

মাকে বাড়ির কাজ ও কাঁথা সেলাইয়ে সহযোগিতা করার পরে লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতো। আসলে এক্ষেত্রে লেখাপড়া কিংবা কাজ যেটাই বলি না কেন সেখানে আমাদের একাগ্রতা বেশি জরুরী। আমাদের ফলাফলের কথা চিন্তা না করে মন দিয়ে নিজের কাজটা একাগ্রহ চিত্তে করে যেতে হবে। তাহলে ফলাফল আপনা আপনি চলে আসবে।

আশরাফুলকে আজ অনেক কিছু বুঝিয়ে তার মনে আনন্দ ধরে রাখতে পেরেছি। তাই আমার মনটাও আজ অনেক প্রফুল্ল এই ভেবে যে একজনের আনন্দ নষ্ট হতে দেইনি। সব সময় মনে করি টাকা দিয়ে না হোক সুখ পরামর্শ দিয়ে হলেও যেন কারো উপকারে আসতে পারি। আসলে আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে সকলে মিলে একসঙ্গে ভালো থাকাটাই বড় পাওয়া।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

5ShzsKnKF7vppGeV6VN3m3GSDcLoRruAhMmifZtFSDkYScaQyCM2iuQ1WQQy6nniRf12cc5CtS93357FVJGtsJxDuskm1PhG5v3j8PRTTLNJMvkMUPWrwxdV4doFh5KLHsCHWYfgqWW8XGht9fW3YpYm.gif

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1v5hKA8jfHHgL9ABnDXogr1.gif

Sort:  

Congratulations, your post has been upvoted by @scilwa, which is a curating account for @R2cornell's Discord Community. We can also be found on our hive community & peakd as well as on my Discord Server

Manually curated by @abiga554
r2cornell_curation_banner.png

Felicitaciones, su publication ha sido votado por @scilwa. También puedo ser encontrado en nuestra comunidad de colmena y Peakd así como en mi servidor de discordia

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 59838.11
ETH 2384.78
USDT 1.00
SBD 2.51