স্বার্থপরতা যখন রক্তের সম্পর্ককে মিথ্যা করে দেয়
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
যতদিন পর্যন্ত পরিবারের লোকজন একত্রিত থাকে ততদিন পরিবারে ভালোবাসার বন্ধন অটুট থাকে। যখন কোন তৃতীয় ব্যক্তির আগমন ঘটে তখনই আস্তে আস্তে শুরু হয় দূরত্ব। একজন নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে পরিবারকে আগলে রাখার চেষ্টা করে। আর ঠিক তখন পরিবারে অন্য কেউ প্রবেশ করে সবকিছুকে নিজের করে নিতে চায়। শুরু হয়ে যায় স্বার্থপরতার খেলা।
অনুরূপভাবে সমাজে এক শ্রেণীর লোক লক্ষ্য করা যায় যারা নিজের স্বার্থপরতার জন্য পুরো সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতেও দ্বিধাবোধ করে না। এই সকল ব্যক্তিরা প্রতিটা ক্ষেত্রে শুধু চিন্তা করে সবকিছু আমার। তাদের শব্দ ভান্ডারে আমাদের শব্দটি কখনোই স্থান পায় না। তারা যে কোন কিছুর বিনিময়ে নিজের আখের গোছাতে সদা প্রস্তুত থাকে। বাকিদের নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়।
এইতো কয়েকদিন আগে আমাদের মহল্লার এক লোক হজ্ব করতে যাওয়ার আগে তার বাড়ির পিছনের লোকদের যাতায়াতের জন্য কিছুটা জায়গা দিয়ে যান। কিন্তু হজ্ব থেকে ফিরে এসে তারা পাঁচতলা ফাউন্ডেশন দেয়ার কারণে পিছনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়। ফলে বেশ কিছু পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অথচ এই রাস্তাটি চলতি অর্থবছরে মেরামত করার কথা ছিল।
রাস্তাটি বন্ধ করার কয়েকদিনের মাথায় পিছনের একটি বাড়ির মেয়ে ঢাকায় এক্সিডেন্টে মারা যায়। অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে আসে কিন্তু আফসোস রাস্তা না থাকার কারণে বাসায় পৌঁছাতে পারেনি। বিষয়টি অত্যন্ত খারাপ লাগলো সকলের কাছে। একজন লোকের স্বার্থপরতার কারণে এখানে মানবতা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গেছে। সমাজের এতদিনের বন্ধন নষ্ট হয়ে গেল নিমিষেই অনেক বড় মারামারি হয়ে যাওয়ার কারণে।
শুধু তাই নয় স্বার্থপরতার কারণে পরিবারে রক্তের সম্পর্ক গুলো মিথ্যা হয়ে যায়। এক্ষেত্রে একটি পরিবারে ঘটে যাওয়া ছোট্ট একটি ঘটনা না বললেই। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই বড় ছেলের কাধে পরিবার সামলানোর দায়িত্ব চলে আসে। তখন সবকিছু ভুলে তার প্রধান কাজ থাকে কিভাবে পরিবারের সকলকে ভালো রাখা যায়।
ছেলেটি নিজের ক্যারিয়ারের কথা চিন্তা না করে নিজেকে উৎসর্গ করে দেয় পরিবারের সকলের কল্যাণের জন্য। সবকিছু ভালোই চলছিল এরই মাঝে সে ব্যবসার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। তাছাড়া কোন উপায় ছিল না পরিবারের খরচ মেটানোর জন্য প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু টাকার প্রয়োজন হয়। বাবা-মার চিকিৎসার খরচ ছাড়াও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে যা করতে হয় আর কি।
ইতিমধ্যে যখন থেকে ছোট ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যায় তখন থেকে শুরু হয় সংসারে অশান্তি। ধীরে ধীরে ছোট ভাইয়ের মাথায় বিষ ঢুকানো হয় এক পর্যায়ে তারা পুরোটাই আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। প্রচন্ড স্বার্থপরতার কারণে সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। এক পর্যায়ে এতদিনের বন্ধন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পরিবারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। আপন লোক গুলো পর হয়ে যায় তার কাছে এমনকি বাবা মাও।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপের দিকে যায় তারা বাবা মা সবাইকে ছেড়ে আলাদা খেতে শুরু করে। এতদিন যে ছেলেটি পরিবারের কথা ভেবে নিজের জন্য কিছুই করতে পারেনি আজ সে অসহায়। কারণ যে সময় পরিবারের ভাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছিল তখন সে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। বেশ কিছুদিন থেকে সে সায়টিকা রোগে আক্রান্ত ছিল। এক পর্যায়ে ব্যথা এতটাই ক্রনিক হয়ে যায় সে হাঁটতে পর্যন্ত পারতোনা।
স্বার্থপর এই স্বভাবটা আস্তে আস্তে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে। এমনটাই হয়েছিল এই পরিবারের সাথে। বিয়ের পর ছোট ভাই ধীরে ধীরে অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে যায়। এক পর্যায়ে সে সবার সাথে পশুর ন্যায় আচরণ শুরু করে। বাড়ির মধ্যে নানান কারণে ভাঙচুর করত। আর এসব হত নির্দিষ্ট একজনের ইশারায়।
এদিকে যখন থেকে পরিবারের বড় সন্তান সবকিছুর দায়িত্ব নেয় তখন থেকেই ব্যবসার কারণে অনেক ঋণের বোঝা তার মাথায় চলে আসে। এক সময় ব্যাংকের মর্টগেজ রাখা সম্পত্তি নিলামের পর্যায়ে চলে আসে। এতদিন যাদের জন্য সে এত পরিশ্রম করেছিল আজ তারা তার জীবনের জন্য হুমকি স্বরূপ।
একজন নারী পরিবারের চালিকাশক্তি হতে পারে আবার একজন নারীদের কারণেই পরিবারের বন্ধন ধ্বংসের মুখে চলে যায়। ছোট ভাইয়ের স্ত্রী এতটাই ধ্বংসাত্মক যার কারণে এই পরিবার পতনের তলায় পৌঁছে গিয়েছে। আজ ছোট ভাই বড় হয়ে শরীর থেকে রক্ত ঝরায়। বাবা মা হয়েছে তার শত্রু, অথচ যে বাবা মায়ের কারণে আমরা পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছি।
এখন সবকিছুই তার কাছে মিথ্যা আত্মকেন্দ্রিক তার স্ত্রীর কথায় এখন সে উঠে আর বসে। এসব কিছু কোনোভাবেই কোন পরিবারের জন্য কাম্য হতে পারে না।
এমন যদি হতো স্বার্থপর শব্দটি পৃথিবী থেকে উঠে যেত তাহলে সবকিছু কতইনা আনন্দের হতো। স্বার্থপরতা আমাদের জন্য অভিশাপ। আমরা সবাই জানি এই স্বার্থপর ব্যক্তিদের দ্বারাই পরিবার তথা সমাজে কখনো কল্যাণ সাধিত হতে পারে না। আমাদের পরিবারে এবং সমাজে যত রক্ত ঝরছে সম্পর্ক গুলোর অবনতি হচ্ছে সব স্বার্থপরতার কারণে।
আমরা যদি এতটা স্বার্থপর না হয়ে সকলের প্রতি সহনশীল হতে পারি তাহলে অনেক সুন্দর থাকবে আমাদের সমাজ। পরিবারগুলো ভালোবাসার পরিপূর্ণ থাকবে। আমরা সুন্দর একটি পৃথিবী পাবো। আজ বিশ্ব পরিস্থিতি অনেক ভয়াবহ এই যে মারামারি কাটাকাটি যুদ্ধ বিগ্রহ সবকিছুর মুলে স্বার্থপরতা। আসুন সবাই স্বার্থপরতাকে ভুলে সকলের প্রতি সহনশীল হওয়ার চেষ্টা করি।
মানুষকে ভালবাসি, রক্তের সম্পর্ক গুলো টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। স্বার্থপর না হয়ে পরিবারের সকলকে নিয়ে ভাবার চেষ্টা করি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
জি ভাই ঠিক কথা বলেছেন আপনি। স্বার্থপরতা আমাদের শেষ করে দিলো। আমরা যদি স্বার্থপর না হয়ে সহনশীল হই। তাহলে এই সমাজ টা অনেক সুন্দর হয়ে উঠতো। সমাজের মধ্যে যদি কতিপয় লোকজন সহনশীল হয় তবুও লাভ নাই কারন তাদের সহনশীলতাকে সুযোগ বুঝে স্বার্থপর রা ছিনিয়ে নিবে। তাই সবাই কেই সহনশীল হওয়া দরকার।
আপনার পোস্টটি সবার পড়া উচিত, সকলের দারা যেন এই সমাজ টা সহনশীলতায় ভরে যায়, এই কামনায় করি।