নির্ঘুম একটি রাত্রি

in Incredible India3 years ago

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

night-g0d97917c3_1920.jpg

source

ডিসেম্বর মাস কনকনে শীতের রাত্রি চারিদিকে নিকষ কালো অন্ধকার। কয়েক বছর আগের ঘটনা যখন ব্যবসার কাজে জড়িত ছিলাম। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি মাঝে মাঝে দেশের বাইরে ইন্ডিয়াতেও যেতে হতো। একটু পরিষ্কার করেই বলি, ছাত্র জীবন থেকেই চাকরির প্রতি আমার অনীহা ছিল। আর তাই পড়াশোনা শেষ করার আগে থেকেই ব্যবসা শুরু করেছিলাম

প্রথমেই একটি আমদানি ও রপ্তানি লাইসেন্স করে ফেলি। তারপর আমদানিকারক হিসেবে ইন্ডিয়া থেকে পাথর ও কয়লা আমদানি শুরু করলাম। ঠিক সে সময় থেকেই বাড়ি ছেড়ে বাইরে থাকা শুরু আমার। ব্যবসার কাজে সব সময় দেশের বাইরে এবং দেশের ভেতরেও বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটাছুটি করতে হতো।

ব্যবসার প্রথমদিকে ছোটখাটো একটি স্থলবন্দর দিয়ে আমি পাথর ও কয়লা আমদানি শুরু করি। কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানায় নতুন বন্দর দিয়ে একটি এলসি স্টেশন চালু আছে। ঘোষণা হলেও এখনো স্থলবন্দরের পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু হয়নি। এদিক দিয়ে পার হয়ে আসামের মানকাচর হয়ে মেঘালয়ের নাঙ্গল গিয়েছিলাম কয়লার বিষয়ে কথা বলতে।

ব্যবসায়িক সব কর্মকান্ড শেষ করতে চারদিন লেগে গিয়েছিল। পরের দিন সকালবেলা সেখান থেকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশের আসার উদ্দেশ্যে গাড়িতে উঠলাম। গোয়ালপাড়া নামক একটি জায়গায় এসে আমাদের বহনকারী গাড়িটির কিছু সমস্যা দেখা দিল। প্রায় ২০ মিনিট পর ড্রাইভার সাহেবকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ইঞ্জিনের কি যেন সমস্যা হয়েছে। গাড়ি পুরোপুরি সারাতে আরো ঘন্টা দেড়েক লাগেতে পারে।

কথাটা শুনে মনের মধ্যে কু গাইতে লাগল। যাইহোক ঘন্টাখানেক পার হয়ে যাওয়ার পর কাছে গিয়ে আরো ভয়াবহ কিছু জানতে পারলাম। গাড়ি হয়তো আরো কিছুক্ষণ পর ঠিক হয়ে যাবে কিন্তু আমরা দুপুরের আগে রওনা দিতে পারবো না। সামনে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা সেদিকটায় নাকি পাহাড়ি বন্য হাতির দল নেমেছে। বন বিভাগের লোকজন গিয়েছে রাস্তা ক্লিয়ার করতে।

mountains-gd2459fb8e_1920.jpg

source

এই সময় রওনা দেওয়াটা বোকামি হবে। কারণ বন্য হাতির দল অনেক ভয়ংকর হয়। একবার তো আমার গ্রামের বাড়ির এলাকায় বন্য হাতির দল ঢুকে পুরো এলাকার ফসল নষ্ট করে ফেলেছিল। পরে গ্রামের লোকজন আগুন জ্বালিয়ে হাতির দল তাড়ানোর চেষ্টা করেছিল। বন বিভাগের লোকজন আসার আগেই হাতি একজনকে মেরে ফেলেছিল। যাইহোক দুপুরের আগেই রাস্তা পরিষ্কার হওয়াতে আমরা রওনা দিতে পারলাম।

মানকাচর এসে পৌছালাম শেষ বিকালে বাজারের পাশেই আত্মীয় বাড়িতে কিছু জিনিসপত্র রাখা ছিল। ঝটপট লাগেজ গুছিয়ে ইমিগ্রেশন করে নেয়ার জন্য চলে গেলাম। কাস্টমস সহ বাকি ফরমালিটিজ শেষ করতে অনেক দেরি হয়ে গেল। এখন মনে মনে ভাবছি মানকাচর এসে থাকলেই মনে হয় ভালো করতাম। শেষমেষ বর্ডার পার হয়ে লোকালয়ে আসতে আসতে রাত হয়ে গেল।

রৌমারী থানা থেকে কুড়িগ্রাম জেলা শহরে আসতে ব্রহ্মপুত্র নদ পার হয়ে আসতে হয়। শেষ বিকালে পৌঁছতে পারলেও দিনের শেষ নৌকা পাওয়া যেত। রাত হয়ে যাওয়াতে এখন সেই ভরসাও নেই। এত রাত্রে নদী পার হয়ে যাওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয়। একমাত্র অবলম্বন নৌকা যেটা রাত্রে চলাচল করে না, দূরত্ব কম হলে হয়তো চেষ্টা করা যেত।

কিন্তু নৌকা পারাপারে সময় লাগে আড়াই থেকে তিন ঘন্টা। তাছাড়া শীতকালে নদীর পানি শুকিয়ে যায় কোথাও নৌকা আটকে গেলে সারা রাত নদীতে থাকতে হবে। এরকম ঘটনাও আমার জীবনে দুবার ঘটেছিল। সেদিকে আজকে আর যাচ্ছি না, এই ঘটনা নাহয় অন্য কোনদিন শেয়ার করা যাবে। দিনের আলো ফোটার সাথে সাথেই নৌকা নিয়ে রওনা দিতে হবে। তাই নৌকা ঘাটের কাছাকাছি পরিচিত এক লোকের বাড়িতে রাত্রি যাপনের সিদ্ধান্ত নিলাম।

zombie-gd317b9139_1920.jpg

source

পূর্বেই জানিয়ে রেখেছিলাম ইসমাইলকে তার বাড়িতে আজকের রাতটা থাকতে হবে। সারাদিন ভালো করে খাওয়া হয়নি তাই বাজারে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে কিছু খেয়ে নিলাম। ইসমাইলের বাসার দিকে রওনা দিতে অনেক দেরি হয়ে গেল, মনে হয় সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। যার বাসায় থাকে যাবো সেই ইসমাইলের বাসা নদীর কাছাকাছি ফাঁকা জায়গায়। এত রাত্রে ফাঁকা জায়গা দিয়ে হাঁটতে গা ছমছম করছে।

সাধারণত এরকম পরিস্থিতিতে আমি কখনো ভয় পাই না কিন্তু আজকে কেন জানি একটু ভয় ভয় লাগছে। রাস্তা দিয়ে হাঁটতে ঝোপঝারে একটু শব্দ হলেই থমকে দাড়াচ্ছি। যাইহোক বাসায় পৌঁছে দেখি সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। শুধু ইসমাইল জেগে আছে আমাকে ঘুমানোর জায়গা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। রাত্রে যে ঘরে ঘুমিয়েছি উপরে টিনের চাল হলেও নিচে খড়ের তৈরি। এমন ফাঁকা জায়গায় অনেকদিন থাকা হয় না তাই খুব ভয় করছিল।

ঠিকমতো ঘুম আসছিল না তাই কিছুক্ষণ পর আবারও টয়লেটে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। ঘর থেকে বের হয়েই দেখি চারদিকে নিরব নিস্তব্ধ। নিকষ কালো অন্ধকার ভেদ করে আমি পাশেই একটি জায়গায় বসে পড়লাম। গ্রামের এসব বাড়িতে নির্দিষ্ট কোন প্রস্রাবখানা নেই। আমি বসে থাকতেই একটু দূর থেকে পোড়া ঝাঁঝরা গন্ধ আমার নাকে আসলো। আবার কেমন যেন একটি অদ্ভুত শব্দ শুনতে পেলাম।

আমি ওই সময় তেমন পাত্তা না দিয়ে দ্রুত ঘরে চলে আসলাম। ঘরের ভেতর ঢুকে দরজা আটকে পিছন ফিরে বিছানার দিকে যাচ্ছিলাম শোয়ার জন্য। ঠিক সেই সময় একটি বিকট শব্দ করে দরজা খুলে গেল মনে হলো কেউ যেন দরজা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল। আমি ঘুরে দেখতেই চিৎকার করে উঠলাম। ঠিক যেন হরর মুভির মত বিকৃত মুখের কেউ একজন সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুখ থেকে লালা পড়ছে কি বিশ্রী দেখতে । ঘটনাটি মনে করে এখনো আমার গা শিউরে উঠছে।

কাউকে ডাকার মত শক্তি আমার ছিল না। পরে কি হয়েছে আর কিছু মনে নেই আমার। এভাবেই বসে সারারাত পার করেছি দু চোখ বন্ধ করতে পারেনি আর। ভয়ঙ্কর নির্ঘুম একটি রাত্রি যেন শেষ হতে চাইছিল না। তারপর সেই রাত্রিতে ভয় পাওয়ার পর আমার বাসায় ফিরে তিনদিন জ্বর ছিল। সেদিনই প্রথম এবং শেষ আর কোনদিন আমার জীবনে এরকম ঘটনা ঘটেনি। কেন এমন হলো সেই রহস্য এখনো আমার কাছে অজানা। ভয়ংকর সেই রাত্রির কথা আমি কখনো ভুলতে পারিনি

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1v5hKA8jfHHgL9ABnDXogr1.gif

Sort:  
Loading...
 3 years ago 

বর্তমান আর সেরকম ভয়ংকর গ্রাম নাই বললেই চলে, কম সংখ্যক গ্রাম এমন আছে যাতে বনজঙ্গল আছে। আমার জিবনেও এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিলো বাট ভয়টা আসলে কিছুই না, মনের ভয় বড় ভয়।

ছোটবেলায় যখন মাদ্রাসায় পড়তাম, তখন রাতে ক্লাস শেষ করে খেতে যেতাম একা একা বাঁশ জঙ্গল দিয়ে। কিছু টা ভয় পেয়েও অভ্যস্ত হয়ে গেছিলাম, সেই থেকে ভয় বিষয় টা আমার মধ্যে নাই বললেই চলে।

আপনার গল্প টা সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ভালো লেগেছে আমার কাছে, এরকম আরো গল্প উপহার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করবো সর্বদা। ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আসসালামু আলাইকুম

 3 years ago 

আপনার গল্পটা পড়ে আমার ছোট বেলায় ঠাকুরমার মুখে শোনা গল্পের কথা মনে পড়ে গেল। তখন ঐ গল্প শুনলে ভয় লাগতো,আর‌ এটা তো আপনার ‌‌‌বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর করে ‌‌‌‌নিজের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।

Coin Marketplace

STEEM 0.08
TRX 0.29
JST 0.037
BTC 105792.39
ETH 3546.58
USDT 1.00
SBD 0.55