সিদ্ধান্ত নিতে যেন দেরি না হয়ে যায়

in Incredible India2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

20230106_210518.jpg

গত দুইদিন শারীরিক অসুস্থতার কারণে অফিসিয়াল কাজের চাপ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিলাম। বলা যায় অর্ধ দিবস করে ছুটি ছিল আমার। যতই বিশ্রাম নিতে চাই না কেন সেটা বিভিন্ন কারণে হয়ে উঠছে না। কারণ পরিস্থিতি সবসময় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। যেরকমটা এক্ষেত্রে আমার বেলায় হয়েছে।

সকাল থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত মার্কেটে থাকতে শরীর আস্তে আস্তে খারাপ হতে লাগলো। তাই আর বেশিক্ষন বাইরে সময় নষ্ট না করে অফিসে জানিয়ে বাসায় চলে আসলাম। দুপুরের খাবার শেষ করে বিশ্রাম নেয়ার জন্য কেবলমাত্র বিছানায় শরীর ছেড়ে দিয়েছি। ঠিক সেই সময় বিরক্তিকর আওয়াজ করে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো।

ফোনটা তুলে দেখি অচেনা নম্বর তাই ধরবো কি ধরবো না এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছি। প্রথমবার রিসিভ না করে রেখে দিলাম। পরক্ষণেই আবারও রিং বেজে উঠলো। এবার রিসিভ করলাম এই ভেবে, দ্বিতীয় বার যেহেতু দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু হতে পারে। রিসিভ করার পরে ওপাশ থেকে কন্ঠটা খুব পরিচিত মনে হল।

তালেব চাচা আমার গ্রামের বাড়ির ট্রাক্টরের ড্রাইভার। তো চাচা ফোন করে বলল ওনার মেয়ে গর্ভবতী, ডেলিভারির সময় হওয়ার কয়েকদিন বাকি আছে তার আগেই গতকাল থেকে কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত ডাক্তার রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালের গাইনী বিশেষজ্ঞ দেখাতে বলেছেন। তাই কুড়িগ্রামে নিয়ে আসছি তোমাকে থাকতে হবে।

নৌকা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছে ঘন্টা খানেকের মধ্যে কুড়িগ্রাম পৌঁছে যাব এই বলে ফোন রেখে দিল। ব্যাস আমার আরাম হারাম হয়ে গেল, এখন অপেক্ষা করছি কখন পেশেন্ট এসে পৌঁছাবে। আর ভাবছি কোন ডাক্তার দেখালে ভালো হবে যেহেতু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার ক্রিটিক্যাল মনে করেই পাঠিয়েছে।

হঠাৎ মনে হল ডাঃ মাহবুবা খাতুন কনা প্রতিদিন বিকালে পপুলার হসপিটালে বসে। যিনি রংপুর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক একজন মহিলা ডাক্তার। এসব ক্ষেত্রে আমার প্রথম পছন্দ ডাক্তার যেন মহিলা হয়। কারণ অনেকেই ডেলিভারির ক্ষেত্রে মহিলা ডাক্তারকে বেছে নেয়।

20230106_210626.jpg

এসব নানান বিষয় ভাবতে ভাবতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে এলো। হয়তো ইতিমধ্যে সবাই হসপিটালে পৌঁছে গিয়েছে। আমি ভালো করে শীতের কাপড় পড়ে নিয়ে সরাসরি পপুলার হসপিটালে চলে গেলাম। যে কাজে যাচ্ছি নিশ্চিত ফিরতে অনেক রাত হয়ে যাবে। আর রাতে বর্তমান যে পরিমাণ ঠান্ডা পড়ে মনে হচ্ছে আজ নিস্তার নেই।

পেশেন্টের কাছ থেকে যা শুনলাম তাতে আমার কাছে খুব ভালো মনে হলো না। গতকাল থেকে পানি পড়ছে কিন্তু কোন ডেলিভারি পেইন নেই। আর দেরি না করে প্রথমে প্রয়োজনীয় টেস্ট করে ডাক্তারের জন্য অপেক্ষা করলাম। পরিস্থিতি বেশ অনুকূলে ছিল তাই বিশ মিনিটের মধ্যে ডাক্তার দেখানো গেল। ডাক্তার বললেন পরিস্থিতি ভালো নয় পানি একদম শুকিয়ে গেছে দ্রুত সিজার করতে হবে।

20230106_210305.jpg
20230106_210240.jpg

কাল বিলম্ব না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওটি শুরু করা হলো। বেশি কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পরেও ভেতর থেকে কোন সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে না। বাইরে আমরা যারা অপেক্ষমান ছিলাম বারান্দায় এদিক ওদিক পায়চারি করছিলাম। স্বাভাবিকভাবেই একটু দুশ্চিন্তা চলে আসে মনে। তাছাড়া রিপোর্ট একটু খারাপ পাওয়াতে মনে নানান কিছু কল্পনা হতে থাকে।

20230106_210440.jpg
20230106_210420.jpg

আরো কিছুক্ষণ পর ভেতর থেকে একটি লিস্ট বাইরে দিয়ে গেল। বেশ কিছু মেডিসিন আরো আনতে হবে। ওটি শুরু করার আগে মাঝারি সাইজের এক কার্টুন ভর্তি মেডিসিন ও স্যালাইন দেয়া হয়েছে। আবারো অনেক বড় লিস্ট দেখে আমার মনে হলো ভেতরে যারা নার্স ও বয় আছে তারা অবশ্যই কিছু পাচার করে। তা না হলে এত কিছু যায় কোথায়।

যাইহোক লিস্ট অনুযায়ী সবকিছু কিনে এনে ভেতরে পৌঁছে দিলাম। ক্রাইসিসের সময় এত কিছু খোঁজখবর নেওয়া কোন প্রয়োজন মনে করছি না। তাই এবারের মত ছেড়ে দিলাম পরবর্তীতে দেখে নেওয়া যাবে হা হা হা। প্রায় ৩৫ মিনিট পর ভেতর থেকে কান্নার আওয়াজ পাওয়া গেল।

20230106_210207.jpg
20230106_210006.jpg

ভেতর থেকে খবর পাওয়া গেল কন্যা সন্তানের জন্ম হয়েছে মা ও মেয়ে দুজনেই ভালো আছে। আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ আছে এতেই খুশি ছেলে মেয়ে যাই হোক না কেন। কিন্তু আনতে কিছুটা বিলম্ব হলেও খুব বেশি কিন্তু হয়নি। তবে আরও একটু সময় গেলেই বিপদের সম্ভাবনা অনেক বেশি ছিল। কারণ পানি একদম ছিল না।

আর তাতেই বাচ্চার গায়ে বিভিন্ন জায়গায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে গায়ে ও পায়ের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া উঠে গিয়েছে। ডক্টরের ভাষ্যমতে আরো একটু দেরি হলে বাচ্চা হয়তো পেটে পায়খানা করে ফেলত। তখন বাচ্চাকে বাঁচানো অনেক মুশকিল হয়ে যেত।

এখানে একটি বিষয় অনেক শিক্ষনীয় লক্ষ্য করা যায়। এসব ক্ষেত্রে কখনোই কাল বিলম্ব করা উচিত নয়। এক্ষেত্রে হয়তো তেমন বিপদ ঘটেনি কিন্তু সময় মতো না আসলে অনেক বড় বিপদ ঘটতে পারত। তারা যদি ডাক্তারের শুনে কুড়িগ্রাম অবদি না আসতো তাহলে হয়তো এই বাচ্চা আর পৃথিবীর মুখ দেখতে পারত না।

হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে যাব কি যাব না এরকম দ্বিধা দ্বন্দ্বের কারণে গতকাল আসতে পারিনি। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে কখনোই এরকম গাফিলতি করা উচিত নয়। যেকোনো জটিলতা দেখা দিলে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দ্রুত নিয়ে যাওয়া উচিত। এবং সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

5ShzsKnKF7vppGeV6VN3m3GSDcLoRruAhMmifZtFSDkYScdoqgM9j38L3Wo1XJKP9Yh52TtNQSNgCzf9khiri9B614HpnyjE6NemgRRvGAFfocoMRQ2Kxyg8pa3GrNUTCftH6w914wFGXaJ6tQf4Rcj8.jpeg

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD.gif

3q52Dkr5nBe3kDiHrk4F3qdzX6E5VuVcCcF7TDQDco37AUsMDxK7aJ1v5hKA8jfHHgL9ABnDXogr1.gif

Sort:  
Loading...
 2 years ago 

প্রথমেই সর্বদা আপনার সুস্বাস্থ্য কামনা করি। রোগীর জন্য আপনি অনেক বড় দায়িত্ব পালন করেছেন। সৃষ্টি কর্তা রোগীর সেবাকরীদের পছন্দ করেন এবং ভালোবাসেন।

আপনি সঠিক বলেছেন, সঠিক সিদ্ধান্ত জিবনের গতি পরিবর্তন করে দিতে পারে। কিন্তু ভুল সিদ্ধান্ত জিবনকে ধংস করে দিবে।

ধন্যবাদ আপনাকে ভালো থাকবেন

 2 years ago 

প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই এত বড় মহৎ একটা কাজ করেছেন আপনি, এরকম কঠিন পরিস্থিতিতে কিছুটা দেরি হয়ে গেলেই সবকিছু শেষ হয়ে যেত।

যাইহোক বাচ্চাটা অনেক সুন্দর হয়েছে অনেক ভালো হয়েছে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি বাচ্চারা যেন হায়াত দারাজ করুক আমিন।

ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 59838.11
ETH 2384.78
USDT 1.00
SBD 2.51