বিশ্বাসঘাতকতা ||অতঃপর যা হল পর্ব-১||
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
আবারো নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি বিশ্বাস করে একজনের উপকার করতে কাছে টেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু আজ সেই ব্যক্তি আমার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে পারেনি। জানিনা কোন পরিস্থিতিতে তিনি আমার সঙ্গে এমনটা করতে বলল। অথচ আমি তাকে চাকরি দিয়েছিলাম পরিবার নিয়ে ভালো থাকার জন্য।
ঘটনার সূত্রপাত গত বছর মার্চ মাসে। সেদিন ছিল শুক্রবার জুম্মার নামাজ পড়ে ছোট্ট একটি কাজে গিয়েছিলাম শহরের বাইরে। খুব বেশি দূরে নয় ধরলা নদী পার হয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি বাজার। সেই বাজারের নাম যাত্রাপুর।
আমি বাজারে প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করে রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। রিক্সা চলতে শুরু করার পরে পেছন থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে আমার রিক্সায় উঠে পাশে বসলো।
আমি কিছু একটা বলে ওঠার আগেই আমার হাত ধরে অনুরোধ করে বলল আমার খুব বিপদ শহরে যেতে হবে। এই কথা শুনে আমি কিছু বলতে যেয়েও থেমে গেলাম। ভাবলাম এতটুকুই তো পথ একসঙ্গে না হয় যাই।
একসঙ্গে শহর পর্যন্ত রিকশায় যাওয়ার সময় আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করলাম। আমার জানার আগ্রহ ছিল আসলে তার শহরে যাওয়ার কি এত তাড়াহুড়ো। আমি এটা জানতে চাওয়ার পরে সে কি করে কিভাবে জীবিকার নির্বাহ হয় সবকিছু আমাকে বলতে লাগলো। আমিও খুব ভাল শ্রোতার মত সবকিছু শুনে গেলাম।
ইসমাইল শিক্ষিত যুবক, নদী ভাঙ্গনের ফলে ভিটে মাটিসহ আবাদি-অনাবাদি অনেক জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। জমিজমা ও বাড়িঘর হারিয়ে কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে বেসামাল অবস্থা। বাড়িতে কর্মক্ষম একমাত্র সেই আছে, বাবা মারা গিয়েছেন অনেক আগে। বাড়িতে বৃদ্ধ মা, স্ত্রী আর ছোট তিনজন সন্তান, এই নিয়ে তার পরিবার।
পরিবারের সকলের ভরণপোষণের দায়িত্ব ইসমাইলের একা নিজের। তাই সে নদী ভাঙ্গনের ফলে নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষাবাদ করে। আর চর থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনে নিয়ে শহরের পাইকারি বাজারে বিক্রি করে।
সকালে অনেক আগেই ঘোড়ার গাড়িতে তার পাঠানোর সবজি পাইকারি বাজারে পৌঁছে গিয়েছে। এখন শহরে যাওয়ার জন্য কোন রিক্সা না পাওয়ায় দৌড়ে আমার রিকশায় এসে উঠেছে। যাইহোক তার সাথে এই অল্প সময়ের মধ্যে কথা বলে কেমন যেন একটা আন্তরিকতা তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তারপর বেশ কয়েকবার তার সাথে কথা হয়।
এক পর্যায়ে আমাকে তার বাড়িতে দাওয়াত করে। আমি কোন কিছু না ভেবে তার বাড়িতে দাওয়াতে অংশ নিতে চলে যাই। গিয়ে দেখি তার বাড়িতে ছোটখাটো একটি অনুষ্ঠান। যাইহোক খাওয়ার পরে ইসমাইল সাহেব আমাকে নিয়ে নৌকায় উঠে চরে তার সবজি ক্ষেত দেখাতে নিয়ে গেল। ভালো লাগলো দেখে তার প্রচেষ্টা।
আল্লাহ যখন কাউকে রক্ষা করে তখন কার সাধ্য আছে তার ক্ষতি করার। নদী ভাঙ্গরের ফলে যে চর জেগে উঠেছিল সে বছর বন্যার পরে সেখানে পলি জমে চাষাবাদের উপযোগী হয়ে যায়। সেই জমিগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পটল, বেগুন ও করলার চাষ করেছিল ইসমাইল। আমাকেও ব্যাগ ভর্তি করে অনেকগুলো সবজি দিয়েছিল, ভালো লাগলো তার ব্যবহার।
সেদিন ব্যবহারে আমি অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েছিলাম। একদিনের পরিচয়ে আমাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। আমি তারপর বেশ কয়েকবার তার বাসায় গিয়েছিলাম ওই মার্কেটে ট্যুরে যাওয়ার পর। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম তার উপকারে আসার জন্য।
একদিন হঠাৎ করে অফিস থেকে নতুন লোক নিয়োগের পরামর্শ দেয়া হলো। আমি তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নিলাম ইসমাইল সাহেবের জন্য কিছু করা যায় কি না। আমি ইসমাইল সাহেবের শিক্ষার যোগ্যতা যা আছে সেই মোতাবেক কাগজপত্র তৈরি করে রিজিওনাল অফিসে পাঠিয়ে দিলাম।
আমার রেফারেন্স থাকাতে ইসমাইল সাহেবকে আটকানো হয়নি। তাকে এমপিও পদে নিয়োগ দেয়া হলো কুড়িগ্রাম টু মার্কেটের জন্য। ইসমাইলকে চাকরি দিয়ে আমি কি ভুল করেছিলাম ? কি হয়েছিল তারপর ?
চলমান.....।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
উপকারের প্রতিদান দুনিয়াতে না পেলেও আখিরাতে অবশ্যই পাবেন আল্লাহ হিসাব নিকাশ রাখবেন। তবে দুনিয়াতে কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করতে নেই। বুঝে শুনে পা ফেলতে হয়।
আমি আর আমার একজন রুমমেট ছিলো, এতটাই বন্ধুত্ব ছিলাম যে বিশ্বাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ছিলো। একবসর আগে সে অন্য কোথাও চলে গেছে। বাট তার থেকে মোটা অংকের কিছু টাকা পাই, ৫-৬ আগে দেওয়ার কথা বাট এখনো কোন খোজ খবর নাই। আমি তাকে বিশ্বাস করে দিয়েছিলাম। অথচ তার এই প্রতিদান। আল্লাহ সবাইকে হেদায়েত দান করুক আমিন।
দেখা যাক আপনার চলমান ঘটনা টি কোন পর্যায়ে যায়, সে পর্যন্ত অপেক্ষায় রইলাম।
আপনার লেখাতে আমি কিছু টা শিক্ষা পেয়েছি। ধন্যবাদ আপনাকে এমন পোস্ট উপহার দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখাটি পড়ে।পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।আশা করি পরবর্তী পর্বে আরো ভালো কিছু পাবো ইনশাআল্লাহ।