ব্যর্থতায় ভরা একটি জীবনের সমাপ্তি

in Incredible India2 years ago

হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।

coffee-2390136_1920 (1).jpg

source

ঘটনার সূত্রপাত দু'বছর আগে। আমি যে বছর প্রমোশন পেয়ে এরিয়া ম্যানেজার পদে নিযুক্ত হই। হেড অফিসে গিয়ে জয়েনিং রিপোর্ট জমা দিয়ে আসার পর থেকে আমার কার্যক্রম শুরু হল। প্রথম কাজ আমাকে পাঁচজন মেডিকেল প্রমোশন অফিসার নিয়োগ দিতে হবে। যাদের তদারকির দায়িত্ব আমার কাছে থাকবে।

শুরু হলো আমার কর্মজীবনের নতুন অধ্যায়। আমি বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে লোকজন খুঁজতে শুরু করলাম। নতুন হিসেবে এই পদের জন্য লোক খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টকর ছিল আমার কাছে। ভালো-মন্দ মিলিয়ে পাঁচজন লোক নির্ধারণ করতে পেরেছিলাম। তারপর সবার কাগজপত্র প্রস্তুত করে অফিসে পাঠিয়ে দিই।

অফিস থেকে মোটামুটি সবাইকে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল শুধু একজনকে বাদ দিয়ে। প্রথম মাসে চার জন নিয়েই আমার যাত্রা শুরু। দ্বিতীয় মাসে আরো দুজনকে নিয়ে ছয় জনের একটি টিম তৈরি করি। কারণ মার্কেটিং জবে যে কোন মুহূর্তে কেউ ছিটকে যেতে পারে। সতর্কতার জন্য একজন বেশি করে রাখা আর কি।

প্রথম তিন চার মাস সবাই বেশ ভালোই পারফরমেন্স দেখাচ্ছিল। হঠাৎ করে দুজনের ছন্দপতন ঘটে যায়। সেই দুজন ক্লোজিং করতে ব্যর্থ হয়। যার ফলে আমিও খুব সমস্যায় পড়ে যাই। কারণ এই কোম্পানির সিস্টেমে অনেক বড় জটিলতা আছে। আমার টিমের কেউ ক্লোজিং করতে না পারলে স্যালারি বন্ধ হয়ে থাকে।

আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ি কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। বারবার তাদের বাসায় গিয়েও কোন সমাধান করতে পারিনি। এক পর্যায়ে কোম্পানি চেক ডিজঅনার করে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়। এই সিদ্ধান্ত পেয়ে আমি পুনরায় তাদের স্থানীয় চেয়ারম্যান কে নিয়ে বাসায় একটি বৈঠক করি।

এত কিছু করেও খুব একটা লাভবান হতে পারিনি। তারমধ্যে একজন ছিল খুবই অসুস্থ। যাইহোক দুজনের নামেই মামলা করার জন্য অফিস থেকে চাপ সৃষ্টি হয়। শেষ পর্যন্ত আমি ছাড়পত্র দিয়ে দিলাম মামলা করার জন্য।

virus-1812092_1920.jpg

source

স্থানীয় ব্যাংক থেকে আমি চেক দুটো ডিজঅনার করে হেড অফিসে পাঠিয়ে দিলাম। প্রাথমিক পর্যায়ে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। তার মধ্যে একজন যিনি খুব অসুস্থ ছিলেন তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেন। সে কারণেই আমি তার বাসায় চলে যাই।

দ্বিতীয়জন সবচেয়ে ভয়াবহ, এই ঘটনার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সে অন্য একটি মামলার ওয়ারেন্টের আসামি। যাইহোক মামলা শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মাথায় তার নামে ওয়ারেন্ট চলে আসে স্থানীয় থানায়। বেশ কয়েকবার পুলিশ গেলেও তাকে ধরতে পারেনি।

কারন সে আগে থেকেই অনেক সেয়ানা। আরো একটি মামলার পূর্বে ওয়ারেন্ট থাকার কারণে রাতে বাসায় ঘুমায় না। যাইহোক এখন পর্যন্ত সে পালাতক অবস্থায় আছে। মাঝে মাঝে এই লোক আমার কাছে মীমাংসার প্রস্তাব দেয় কিন্তু টাকার অংক দেখে আবার পিছিয়ে যায়। এক্ষেত্রে কোম্পানি খরচ সহ পুরো টাকা দাবি করে।

সেদিকে আর না যাই আমার লেখার বিষয়বস্তু আজ ভিন্ন। আমি যে অসুস্থ এম.পি.ও এর কথা বলেছিলাম তার নাম আজিজুল। আজিজুল সাহেবের বাসায় গিয়ে মর্মান্তিক অবস্থার সম্মুখীন হলাম। কয়েক মাস আগেও আমি যে আজিজুল কে চিনতাম তার সাথে বিস্তর ফারাক।

বিছানায় শুয়ে আছে কিন্তু খুঁজে পাওয়া মুশকিল এমন অবস্থা। শুকিয়ে একদম বিছানা সমান হয়ে গিয়েছে। তার মেডিকেল রিপোর্ট গুলো দেখে আমি আঁতকে উঠলাম। জানতে পারলাম সে ক্যান্সার নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। তার এই খবর শুনে আমি নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। দিনশেষে আমিও তো মানুষ।

আজিজুল সাহেব ভুল করেছে হাতুড়ে ডাক্তারের চিকিৎসা নিতে গিয়ে। বেশ কয়েক মাস আগে তার পাইলসের সমস্যা দেখা দেয়। স্থানীয়ভাবে একটি চিকিৎসা প্রচলিত আছে "বিনা অপারেশনে নির্মূল"। তারা ইনজেকশনের মাধ্যমে অপারেশন ছাড়াই সেই চিকিৎসা করে।

যাইহোক আজিজুল সাহেবের এই ভুল চিকিৎসার জন্য ধীরে ধীরে সেখানে ক্যান্সারের জীবাণু বাসা বাঁধে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার থেরাপি দিয়ে এসেছে। ডক্টর অবশ্য আরও একটি পরামর্শ দিয়েছেন বাইপাস করার জন্য। আজিজুল সেটা মানতে নারাজ মরে গেলেও তা করবে না। এখন শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে আছে।

reside-3104077_1920.jpg

source

আজিজুল সাহেবের এই অবস্থা দেখে আমি তার বকেয়া টাকা মওকুফের জন্য দরখাস্ত করি। পরবর্তীতে অফিস অর্ধেক টাকা মৌকুফ করে নির্দেশনা জারি করে। সে কথা আজিজুল এর বাসায় না জানিয়ে বাকি টাকা নিজে পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি নেই। অফিসে আমার পাওনা টাকা থেকে পরিশোধ করা হয়েছিল পরবর্তীতে।

যাইহোক আজিজুলের বাসায় শেষবার যখন গেলাম তখন গিয়ে যে খবর শুনলাম তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ঘরে গিয়ে দেখি ফাঁকা বিছানা পড়ে আছে আজিজুল সাহেব নেই। কষ্টে বুক ফেটে কান্না আসছিল কিন্তু কাঁদতে পারিনি। শুধু সবকিছু নীরবে সহ্য করে এসেছি।

আজিজুলের মায়ের কাছে সব কিছু বিস্তারিত জানতে পারলাম। তারা নাকি ইন্ডিয়া যাওয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত করেছিল। কিন্তু জীবন তাকে আর সে সময়টুকু দিতে রাজি ছিল না। নিজেদের চাষাবাদের শেষ সম্বল টুকু বিক্রি করে দিয়েছিল চিকিৎসার জন্য।

ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দুটি ছোট বাচ্চা এখন বেড়ে উঠবে বাবাকে ছাড়াই। হয়তো কোনদিন আর তারা মুখে বাবা কথাটি উচ্চারণ করতেও পারবে না বা উচ্চারণ করতে চাইবে না। ছেলে মেয়ে দুটো একদম ছোট হয়তো প্রাইমারি পাশ করলেও করতে পারে সেটা আমার জানা নেই ঠিকমত।

আজিজুলের ছোট্ট এই জীবন শুধু ব্যর্থতায় ভরা ছিল। তার বাবা অনেক সহায় সম্বল রেখে গিয়েছিল কিন্তু কোন কারণে সবকিছু নষ্ট হয়ে যায়। সেই ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে আজ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে আজিজুল। আজিজুলের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। আল্লাহতালা যেন তাকে পরকালে খুব ভালো রাখেন।

বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।

5ShzsKnKF7vppGeV6VN3m3GSDcLoRruAhMmifZtFSDkYScaQyCM2iuQ1WQQy6nniRf12cc5CtS93357FVJGtsJxDuskm1PhG5v3j8PRTTLNJMvkMUPWrwxdV4doFh5KLHsCHWYfgqWW8XGht9fW3YpYm.gif

Sort:  
 2 years ago 

আজিজুল সাহেবের জন্য আল্লাহর নিকট অনেকবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। যেন তার পরকালের সমস্ত আযাব থেকে আল্লাহ মুক্তি দেন।

সেই সাথে তার সন্তানদেরকে আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য ধারন করার শক্তি দিয়ে দিক। ভালো লাগলো আপনার পোস্ট টি পড়ে। ভালো থাকবেন আসসালামু আলাইকুম

Loading...

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.13
JST 0.027
BTC 58444.83
ETH 2537.94
USDT 1.00
SBD 2.49