পরিস্থিতি যখন অনুকূলে থাকেনা
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
ঘটনার সূত্রপাত আজ দুপুরের পর থেকে। আমি সবেমাত্র লাঞ্চ করে বিছানায় একটু গা ছেড়ে দিয়েছি। কিছুক্ষণের মধ্যে ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। তাকিয়ে দেখি কর্পোরেট ফোনে রিং এসেছে। বুকের ধুক ধুক বেড়ে গেল, ভয়ে ভয়ে ফোন ধরলাম। ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে ডিসেম্বর মাস শেষ হয়ে আট দিন চলে গেল এখনো ক্লোজিং করতে পারিনি।
যাইহোক ফোন রিসিভ করার সঙ্গে সঙ্গেই কর্কশ কণ্ঠে সেলস ম্যানেজার স্যার বলে ফেললেন, আপনি যদি আমাদের সঙ্গে থাকতে চান তাহলে আজকের এই নির্দেশনা মেনে কাজ করুন। আগামীকাল সকালে আপনাকে সিদ্ধান্ত দিতে হবে। এক আপনি ওই কলিগের নামে মামলা শুরু করার ছাড়পত্র দিবেন। দুই আপনি অফিসে রিজাইন লেটার পাঠিয়ে দিবেন।
যেকোনো একটি বিষয়ে আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই কথা শুনে আমার পিন্ডি চটকে গেল। ফোন হাতে নিয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত কম করে হলেও বিশ বার রিং দিয়েছি। কিন্তু একটি বারের জন্যও কল রিসিভ করেনি। তাই আর বৃথা চেষ্টা না করে সন্ধ্যার পর চলে আসলাম ধরলা নদী পার হয়ে ওয়াবদা বাজার। আমার বাড়ি থেকে বিশ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ।
শহর থেকে অটোরিকশায় উঠে ভালোভাবেই শুলকুর বাজার পর্যন্ত চলে আসলাম। কিন্তু এই পর্যন্ত এসে যখন সামনে রাস্তা বন্ধ দেখলাম তখন আর মাথা ঠিক থাকলো না। সামনে রোলার মেশিন দিয়ে রাস্তা বন্ধ দেখে এখানেই সবাইকে নামিয়ে দিল। সেখান থেকেই হাঁটা শুরু হলো তারপর থেকে শুধু হাঁটছি।
শুলকুর বাজার থেকে ওয়াবদা বাজার পর্যন্ত যাওয়ার একমাত্র যান ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল। কিন্তু বর্তমানে প্রচন্ড ঠান্ডায় রাত একটু বেশি হলেই আর কোন বাইক থাকে না। তাই হাঁটতে হাঁটতে চলে আসলাম ওয়াবদা বাজারের কাছাকাছি। ঠান্ডায় মেটো পথ দিয়ে হাঁটতে খারাপ লাগলো না।
বাজার থেকে এখনো এক কিলোমিটার দূরে আছি। ভাঙ্গা উঁচু নিচু রাস্তা দিয়ে রাতের বেলা বেশিক্ষণ হাঁটতে ইচ্ছা করছিল না। তাই পাশ দিয়ে একটি ঘোড়ার গাড়ি ছুটে যেতে দেখে চিৎকার করে থামালাম। ওয়াবদা বাজার পর্যন্ত বাকি পথ ঘোড়ার গাড়িতে উঠেই চলে গেলাম। খারাপ লাগলো না কিন্তু জীবনে প্রথম বার ঘোড়ার গাড়িতে উঠে।
আমি যতক্ষণ পর্যন্ত বাজারে পৌঁছাতে পারিনি ততক্ষণ পর্যন্ত আমার কলিগ শাহিন সাহেবের মোবাইল ফোনে রিং দিয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু সৌজন্যতাবোধের এতই অভাব একটিবারের জন্যও ফোন রিসিভ করল না। শেষ পর্যন্ত বাজারে পৌঁছে এক ফার্মেসীতে বসে দোকানের মোবাইল দিয়ে রিং দিলাম। অবশেষে শাহিন সাহেবের সাথে কথা বলতে পারলাম।
এই মোবাইলে আমার কণ্ঠ শুনে সে হতবাক, আমাকে বলল আপনি এত রাতে এখানে। আমি ফোনে বেশি কিছু না বলে তাকে বললাম আমার সঙ্গে দেখা করেন জরুরী। শাহীন আমাকে বলল আমার আসতে দেরি হবে অনেক দূরে আছি। আমি বললাম যত রাত হোক আমি আছি আপনি আমার সঙ্গে দেখা করেন।
আমি যখন বসে বসে লিখতে শুরু করেছি তখন পর্যন্ত শাহীন সাহেব আমার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। শেষবার যখন কথা হয়েছে তখন বলল আসতে আরো ৩০ মিনিট লাগবে। কিন্তু ৪০ মিনিট পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত এসে পৌঁছাতে পারেনি। কিন্তু আমাকে যত রাত হোক না কেন দেখা করেই যেতে হবে। পরিস্থিতি একদম আমার অনুকূলে নেই, আমাকে কাল সকালে যেভাবেই হোক রেজাল্ট দিতে হবে।
অবশেষে শাহীন সাহেবের দেখা পাওয়া গেল। শাহিন সাহেবের সাথে এই ফটোগ্রাফি টা আমি এখানে শেয়ার করার উদ্দেশ্যে নেইনি কিন্তু। রাতে যে ওনার সাথে দেখা করেছি তার প্রমাণস্বরূপ সকালে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাতে হবে। তাকে শুধু একটি কথাই বললাম যদি মামলা খেতে না চান আজকে রাতেই সমস্যার সমাধান করেন।
আমাকে বসিয়ে রেখে দশ মিনিট কোথায় থেকে যেন ঘুরে এসে আবার আমার সঙ্গে পরামর্শ করল। যাইহোক সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত হলো আগামীকাল ১১ঃ০০ টার মধ্যে টাকা পাঠাতে পারবে। আমি ভালো করে বুঝিয়ে বললাম এছাড়া কোন অপশন নেই কিন্তু আপনার কাছে। যেভাবে পরিকল্পনা করেছেন সে অনুযায়ী কাজ হতে হবে।
আর সময় নষ্ট করলে চলবে না আর একটু দেরি হয়ে গেলে বাসায় ফেরার জন্য কোন অটো রিক্সা পাওয়া যাবে না। দ্রুত পোস্টটা সাবমিট করে এখন বাসার দিকে রওনা দিব।
রাস্তা দিয়ে হাঁটছি শুলকুর বাজারের উদ্দেশ্যে আর বাকি লেখাটুকু শেষ করছি। বাজারে এসে পৌঁছানোর পরে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু একটিও অটো রিক্সা চোখে পরলো না। মনের মধ্যে দুশ্চিন্তা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হবে নাকি।
বাজারের অপরপ্রান্তে এসে কয়েকটা অটোরিকশা দেখতে পেলাম তারা বাড়ির দিকে যাচ্ছে। কেউ আর এত রাত্রে ভাড়ায় দিতে রাজি হল না। শেষ পর্যন্ত আমার বিপদ দেখে একজন এগিয়ে আসলো। এই রিকশায় উঠে কমপক্ষে শহর পর্যন্ত যেতে পারবো।
আসলে সমাজটা এখনো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি, এখনো কিছু ভালো মানুষ আছে। সে কারণেই সমাজে বসবাস করতে পারছি, তা না হলে এই সমাজ বসবাসের অযোগ্য হয়ে যেত। এতগুলো অটোরিক্সার মধ্যে একজন ভালো মানুষ ছিল বলেই আমি বাড়ি ফেরার সুযোগ পাচ্ছি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।