ফটোগ্রাফি||মাটি ও মানুষের কাছাকাছি||
হ্যালো বন্ধুরা আসসালামু আলাইকুম/আদাব। সবাই ভালো আছেন এবং সুস্থ আছেন আশা করছি। আমিও মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি আলহামদুলিল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার ব্লগ লেখা শুরু করছি।
"গ্রাম" এই শব্দটি শুনলেই মনের মধ্যে অনেক চিত্র ভেসে ওঠে। ৬৮ হাজার গ্রাম নিয়ে আমাদের বাংলাদেশ। স্বাধীনতার পরবর্তী আমাদের গ্রামীণ জনপদ ততটা উন্নত ছিল না। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে এখন গ্রাম আর গ্রাম নেই। সব জায়গায় আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
তবুও বলতে হয় কৃষি নির্ভর আমাদের এই বাংলাদেশ। এখনো কৃষির উপর নির্ভর করে গ্রামের অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহ চলে। তাই তারা শীত ও বর্ষা উপেক্ষা করে বছরের অধিকাংশ সময় জমিতে কাজ করে।
এই জমি থেকে সোনালী ফসল ফলিয়ে আমাদের দেশের খাদ্য ভান্ডার কে সমুন্নত করার চেষ্টা করে। এই বিষয়গুলো আমার বাচ্চাদের সামনে থেকে দেখানোর ইচ্ছা ছিল। তাই এই উদ্দেশ্যে আমি আজ মাঠে নিয়ে গিয়েছিলাম।
আমার ছেলে মেয়ে দুটো মাটি ও মানুষের কাছে আসতে পেরে অনেক উচ্ছ্বসিত ছিল। পায়ে মাটি ও কাদা লাগার ভয়ে একবারও মাঠে যাওয়ার জন্য আপত্তি করেনি। আসলে গ্রামে আসলেই আমাদের শেকড়ের সন্ধান পাওয়া যায়। আর আমিও তাদের এনেছি সেই উদ্দেশ্যেই।
এরা বাইরে এসে ছুটতে শুরু করল, এখন এদের আটকানো কার সাধ্য আছে। আসলে ছোটরাও শহরে থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে। এরকম খোলামেলা পরিবেশ সহজে পায় না তারা। যখন মাঝে মাঝে পেয়ে যায় তখন তারা উল্লাসে মেতে উঠে।
এখন জমিতে লাঙ্গল চাষ করা হয়েছে। আর এই জমির উপর দিয়ে এখন আমাদের অনেক দূরে যেতে হবে। সামনে বেশ কিছু দূরে একটি সরিষা ক্ষেত দেখা যাচ্ছে। আমাদের উদ্দেশ্য তাই দূরের ওই সরিষা খেতে। যেখানে গিয়ে সবাই মিলে কয়েকটি ফটোগ্রাফ নিব।
এখন সব জমি চারা রোপন করার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। ইরিগেশন এর সময় চলছে, আমাদের দেশে কৃষকদের ধান উৎপাদনের এটাই প্রধান সময়ে। আমাদের দেশের চাহিদার অধিকাংশ ধান উৎপাদন এই মৌসুমে হয়।
যাইহোক আমরা সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি সরিষা ক্ষেতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু জমিতে পানি ছেড়ে দেওয়ার কারণে কাদা হয়েছে প্রচুর।
ট্রাক্টর দিয়ে পুরোদমে জমিতে চাষের কাজ চলছে। জমি তৈরি হয়ে গেলে তারপর সেখানে চারা রোপণ করা হবে। এই বিষয়গুলো আমিও ছোটবেলায় গ্রামে গিয়ে দেখেছি। এখন আমার বাচ্চাদের গ্রাম্য ও গ্রামের কৃষিজীবী মানুষ সম্বন্ধে জানতে পেরে ভালো লাগছে।
আজ আমাদের গ্রামের কৃষকরা যদি অক্লান্ত পরিশ্রম করে ফসল না ফলাতো তাহলে হয়তো আমরা কোনদিনই খাদ্য ঘাটতি মেটাতে পারতাম না। কৃষকরা আছে বলেই আমরা আমাদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারছি।
আমার মেয়ে জমির মাঝে সরু রাস্তা দিয়ে হেলেদুলে যাচ্ছে সরিষা খেতে হলুদ ফুল গায়ে মাখতে। ছেলেকে কোলে নিয়ে আমি পিছনে আস্তে আস্তে যাচ্ছি। কিন্তু এত কষ্ট করে কাদামাটি পেরিয়ে সামনের দিকে তো আসলাম। ভয় হচ্ছে শেষ মুহূর্তে পৌঁছাতে পারবো কিনা।
চলতে চলতে সামনের দিকে সরিষা ক্ষেত অবদি যাওয়ার মত রাস্তা আর খুঁজে পাওয়া গেল না। ছেলে মেয়ে দুটোর ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। কিন্তু আমার কিইবা করার আছে।
রাস্তা খুঁজে না পাওয়ার কারণে সেখান থেকে ফেরত যাচ্ছিলাম। এমন সময় দূরে একটি মেশিন ঘর দেখতে পেলাম। যেখান থেকে সমস্ত ফসলের মাঠে পানি দেয়া হচ্ছে। এখন থেকেই লম্বা বাঁশের উপর বৈদ্যুতিক লাইট জ্বলছে। দেখেই বুঝলাম সারারাত্রি চলতে পারে এই মেশিন।
সারারাত্রি না হলেও মধ্যরাত পর্যন্ত চলতেই হবে। কারণ এখানে যতগুলো ফসলের মাঠ আছে মেশিন শুধুমাত্র একটাই লক্ষ্য করলাম। আমার ছোট ছেলে পানি দেখে ভীষণ খুশি। এখন পানিতে নামার জন্য ব্যস্ত হয়ে গেল। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব!!
তাছাড়াও ব্যক্তিগত সূর্য্য ডুবতে শুরু করেছে। সূর্য্য ঘরে যাওয়ার সাথে সাথে চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসবে। আমরা বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে চলে এসেছি। তাই এখন আমাদেরও দ্রুত ফিরতে হবে।
গোধূলি লগ্নে এই সময়টা আমার খুব প্রিয়। ভীষণ উপভোগ করি আমি সূর্যাস্তের সময় গুলো। বিশেষ করে নদী, সমুদ্র ও ফাঁকা জায়গায় সূর্যাস্ত দেখতে খুব ভালো লাগে। সরিষা ক্ষেত দেখতে না পারলেও বাচ্চাদের অনেক কিছু দিতে পেরেছিলাম আমি মনে করি।
বন্ধুরা আজ আর লিখছিনা। অন্য কোনদিন অন্যকিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে চলে আসবো। আজকের জন্য বিদায় নিচ্ছি। সবার জন্য শুভকামনা। আল্লাহ হাফেজ।
ডিভাইস | স্যামসাং গ্যালাক্সি A-10 |
---|---|
ফটো | @mayedul |
লোকেশন | w3w location |
সোনালী দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায় আপনার পোস্ট পড়ে এবং ফটোগুলো দেখে। ফটোতে সেগুলোই দেখতে পাচ্ছি, যেগুলো ছোট বেলায় দেখতে পেতাম, চারিদিকে শস্য শ্যামল ফসলের ক্ষেত, মাঝখানে মেঠোপথ। চাষিরা চাষ করে জমিগুলোকে, দেখে মনটা ভরে যায়, মনে হয় এটাই খাটি বাংগালীর বাংলাদেশ।
যাইহোক এই দিনগুলো এখনো আছে, কিন্তু শহর অঞ্চলে থেকে সেগুলো ছায়া দেখতে পারিনা। খুব ভলো লাগলো আপনার পোস্ট টি। ভালো থাকবেন, আসসালামু আলাইকুম