নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
হ্যালো বন্ধুরা সবাই কেমন আছেন আশা করছি মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সবাই ভালো আছেন, আমিও আপনাদের দোয়ায় এবং মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে অনেক ভালো আছি।
বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, নদী বিধৌত আমাদের দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চল। আমরা বাংলাদেশের যে অঞ্চলেই যাই না কেন কোথাও না কোথাও আমাদের নদী পারাপার হতে হয়। শাখা-প্রশাখা নিয়ে বাংলাদেশে প্রায় ৪০৫ টি নদী রয়েছে, এই নদীগুলোই বাংলাদেশের প্রায় ২৪,১৪০ কিলোমিটার জায়গা দখল করে রয়েছে।
আমার জেলা কুড়িগ্রামে মোট নদীর সংখ্যা ১৬ টি, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ফুলকুমার। এর মধ্যেই বাংলাদেশের সব থেকে বৃহত্তম নদ কুড়িগ্রামেই অবস্থিত এর নাম হলো ব্রহ্মপুত্র নদ। হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের কাছের জিমা ইয়ং জং হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি।
এই নদী পাড়ি দিয়েই যেতে হয় কুড়িগ্রামের সর্বশেষ থানা রৌমারী থানায়। রৌমারীতে আমার খালা সহ আরো অনেক আত্মীয়র বাসা রয়েছে। তাই মাঝে মধ্যেই আমায় ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিতে হয়। সেদিন নানী এবং নানুকে রাখতে গিয়েছিলাম রৌমারীতে আমার সেই ভ্রমণ কাহিনীই আজ আপনাদের মাঝে উপস্থাপন করব।
আমরা প্রত্যেকবার রৌমারী যাই চিলমারী নদী বন্দর হয়ে, চিলমারী নদী বন্দরে পানি কম থাকায় নদীপথ পারি দিতে অনেকটা সময় লাগে তাই এবার ঠিক করলাম আমরা ফকিরেরহাট ঘাট দিয়েই নদী পার হব। চিলমারি দিয়ে রৌমারী পৌঁছাতে সময় লাগে ৩ ঘণ্টার মতো কিন্তু ফকিরেরহাট দিয়ে গেলে সময় লাগবে মাত্র ১ ঘন্টার মত। তাই এই পথটিই এবার বেছে নিলাম।
আগের দিন খোঁজখবর নিয়ে দেখলাম নৌকা সকাল দশটায় , দুপুর একটায় এবং বিকেল তিনটায় ছাড়ে। আমরা ঠিক করলাম দুপুর একটার নৌকাতেই যাব কারণ সকালের দিকে ঠান্ডার প্রকোপটা একটু বেশিই থাকে দুপুরের নৌকায় উঠলে রোদের তাপের সাথে আরামে চলে যাওয়া যাবে।
জায়গা: ফকিরেরহাট নৌকা ঘাট
সময়: ১২:২৩
তারিখ: ২৬/১২/২২
আমরা সময়ের অনেক আগেই নৌকা ঘাটে পৌঁছে গিয়েছিলাম তাই নৌকার উপর বসে বসে অপেক্ষা করছিলাম কখন নৌকা ছাড়বে। নৌকায় তখনো খুব বেশি মানুষ ওঠেনি মোটে ১০-১৫ জন উঠেছিল। হাতে সময় ছিল আরো আধঘন্টা এর মধ্যেই সম্ভবত আরো লোক নৌকায় উঠবে।
জায়গা: ফকিরেরহাট নৌকা ঘাট
সময়: ১২:২৪
তারিখ: ২৬/১২/২২
চিলমারী নদী বন্দরে যত লোক দেখেছিলাম এই ঘাটে ঠিক তার অর্ধেক লোকও ছিল না। এই ঘাট দিয়ে নাকি শুধু মালামাল পার হয় মানুষ একটু কমই ব্যবহার করে এই নদী পথ। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় এদিক দিয়েই রৌমারী যাওয়া বেশি সুবিধের কারণ নদীপথে সময় লাগে মাত্র এক ঘন্টা আর চিলমারী দিয়ে যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টার মতো এতক্ষণ নৌকায় বসে থাকতে একদমই ভালো লাগেনা তাই আমার কাছে এই নদী পথটাই বেশি সুবিধের মনে হয়েছে।
জায়গা: ফকিরেরহাট নৌকা ঘাট
সময়: ০১:০২
তারিখ: ২৬/১২/২২
অনেকক্ষণ বসে থাকার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম একটা বেজে গেছে এখনই হয়তো নৌকা ছাড়বে। নৌকা ছাড়বে ভাবতে ভাবতেই মাঝি ভাই নৌকাকে ঘাট থেকে ছেড়েই দিল। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটলো। আমি আবার আজকেই রৌমারী গিয়ে পরের নৌকাতেই কুড়িগ্রাম ফিরে আসবো তাই আমার তারা ছিল একটু বেশি।
জায়গা: ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে
সময়: ০১:২৬
তারিখ: ২৬/১২/২২
তারপর নদীপথে অনেকটা দূর যেতে যেতে আমরা মূল নদীতে পৌঁছে গেলাম। নদীতে পানি কম থাকলেও এখানে পানির কোন কমতি ছিল না ছিল না আশেপাশে কোন চর। ভরা মৌসুমে এই জায়গায় থেকে কোন কিনারাযই ভালোমতো দেখা যায় না এখন তবুও কিছুটা কিনারা চোখে পড়ছে। তবে সেই দৃশ্য মনে ধরার মত ছিল, সেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আহা মনে গেঁথে গিয়েছে, আর নদীর সেই বিশুদ্ধ হওয়া যখন গায়ে লাগছিল তখন কতটা যে ভালো লাগছিল তা বলে বুঝাতে পারব না।
জায়গা: বলদমারা নৌকা ঘাটের কাছে
সময়: ০২:১৩
তারিখ: ২৬/১২/২২
আমরা প্রায় ঘাটের কাছে চলে এসেছি ঠিক তখনই আরেকটি যাত্রীবাহী নৌকা আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গেল। এই নৌকাটি বলদমারা ঘাট থেকে ছেড়েছে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে। বসে বসে ভাবছিলাম আর একটু আগে পৌঁছালে এই নৌকায় করেই আমি ফিরে যেতে পারতাম। এখন গিয়ে অনেকটা সময় ঘাটেই বসে কাটাতে হবে পরের নৌকার অপেক্ষায়।
জায়গা: বলদমারা নৌকা ঘাট
সময়: ০২:১৪
তারিখ: ২৬/১২/২২
ছবিতে অনেকগুলো নৌকো দেখা যাচ্ছে এটাই আমাদের গন্তব্যের বলদমারা ঘাট। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা নৌকা থেকে নেমে পড়লাম। আমার গন্তব্য এই পর্যন্তই ছিল। নানি নানুর সাথে কথা ছিল ঘাটে পৌঁছে তাদের একটি গাড়ি ঠিক করে দেব এবং পরের নৌকায় করে আমি কুড়িগ্রাম ফিরে আসবো। নানি এবং নানু আমাকে জোর করছিল তাদের সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু কুড়িগ্রামে আমি কিছু কাজ ফেলে আসায় তাদের সাথে আর যেতে পারলাম না।
তারপর বাড়ি অব্দি তাদের একটি ভ্যান ঠিক করে দিলাম, রৌমারীর মানুষ ভ্যান দিয়েই সব জায়গায় যাতায়াত করে। ভ্যান ঠিক করে তাদের বিদায় দিয়ে আমি নৌকা ঘাটেই বসে ছিলাম। সৌভাগ্যবশত দুজন লোক একটি নৌকা রিজার্ভ নিয়েছিল কুড়িগ্রাম যাবে বলে, আমিও তাদের সাথে কথা বলে তাদের রাজি করালাম আমিও তাদের সাথে কুড়িগ্রাম অব্দি যাব।
জায়গা: বলদমারা নৌকা ঘাট
সময়: ০২:৪৮
তারিখ: ২৬/১২/২২
তারপর আমি সেই রিজার্ভ নৌকায় চড়ে বসলাম। আসার সময় নৌকা ভাড়া নিয়ে ছিল জনপ্রতি ১০০ টাকা, কিন্তু যাওয়ার সময় রিজার্ভ নৌকা হওয়ায় আমার কাছে তারা ২০০ টাকা চাচ্ছিল। তারপর আমি একটু দাম কষাকষি করে ১০০ টাকাতেই ভাড়া ঠিক করে নেই। ভালোই হলো বেশিক্ষণ সিরিয়ালের নৌকার জন্য অপেক্ষা করা লাগলো না আর রিজার্ভ নৌকা হাওয়ায় পৌঁছাতেও অনেকটা কম সময় লাগবে।
জায়গা: ব্রহ্মপুত্র নদেরর মাঝে
সময়: ০৩:৪০
তারিখ: ২৬/১২/২২
নৌকা ঘাট থেকে মোটামুটি ভালই দ্রুতগতিতে ছেড়েছিল তাই নদীর মাঝে পৌঁছাতে খুব একটা সময় লাগেনি। কুড়িগ্রাম ফকিরেরহাট ঘাট খুব একটা দূর নয়। পৌঁছাতে আর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মত সময় লাগবে। ঘাটে পৌঁছানোর পর সেখান থেকে অটো নিয়ে সোজা চলে যাব কুড়িগ্রাম।
এই ছিল আমার নৌকা ভ্রমণে গিয়ে সামান্য কিছু অভিজ্ঞতা। আমার অভিজ্ঞতা গুলো আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে পেরে আমার খুবই ভালো লাগছে। আমার পোস্টটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভালো থাকবেন অনেক অনেক শুভকামনা রইল সকলের জন্য।
তবে আপনার নদী ভ্রমণের অভিজ্ঞতাটা দারুন ছিল।
অসংখ্য ধন্যবাদ আপু এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
নৌকা চড়তে আমারও ভালো লাগে তবে, যেহেতু আমি সাঁতার জানিনা তাই ভালো লাগার পাশাপাশি মনের মধ্যে ভয়ও লাগে। আপনার নৌকা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা পড়ে ভীষণ ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন
সাঁতার শিখে নিয়েন দিদি , সাঁতার জানা ভালো। যাইহোক আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
নৌকা ভ্রমণের বেশ সুন্দর সুন্দর দৃশ্য আপনি উপস্থাপন করেছেন। তবে নৌকা ভ্রমণ অনেকের কাছেই ভালো লাগে কিন্তু আমার কাছে মাঝে মাঝে অনেক বিরক্ত লাগে কারণ আমরা সবসময় নৌকা দিয়েই যাতায়াত করি তাই। এপার থেকে ওইপার যাতায়াত সময় এক ঘন্টার ঊর্ধ্বে লাগে। তবে আপনাদের ভাড়ার চাইতে আমাদের এখানকার ভাড়া কম ৫০ টাকা। আমাদের এখানে আবার স্পিড বোড রয়েছে। স্পিডবোর্ড এর ভাড়া ১৩০ টাকা। যাইহোক বেশ ভালো লাগলো আপনার নৌকা জার্নি ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
We would like to appreciate your presence and activities towards the community. Our community also like to inspire you to participate in the engagement by visiting others post and make insightful comments.
Regards
@jakaria121(Moderator)
Incredible India
ভাই এটা ব্রহ্মপুত্র নদ তাই ভাড়াটাও একটু বেশি নেই। যাই হোক অনেক অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
নদী ভ্রমণ অন্যরকম একটা প্রশান্তি দেয়, আমাদের উত্তরাঞ্চলে নৌকা ভ্রমণের দরকার হয়না বললেই চলে। সেজন্য সুযোগ হয়ে ওঠে না। এমনিতেই বন্ধু বান্ধব মিলে পিকনিক করলে যত সময় দিতে পারি সেটাই আর কি।
নৌকা ভ্রমণ নিয়ে আপনি সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
ভাই আপনার নৌকা ভ্রমন সুন্দর ও মজাদার হোক। নৌকা ভ্রমন আমার ও ভালো লাগে কিন্তু নৌকা ভ্রমন আমরা সব সময় করি কারণ আমাদের বাড়িতে যাইতে হয় নৌকা দিয়ে এজন্য যখন নৌকা দিয়ে যেতে সময় বেশি লাগে তখন মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। আমাদের এখানে তুলনামূলক ভাড়া তাহলে অনেক কম আমাদের এখানে জনপ্রতি নৌকা ভাড়া নেয় মাত্র ৫০ টাকা কিন্তু আপনি বললেন ১০০ টাকা তাহলে তো হিসেবে আমাদের এখানে নৌকা ভাড়া অনেক কম। আর আমাদের কে নৌকাতে যেতে লাগে ৪০ থেকে ৫০ মিনিট এবং যখন নদী তে পানি কম থাকে তখন এক ঘন্টার উপরে লেগে যায় তখন একটু মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ নৌকা ভ্রমন সম্পর্কে সুন্দর উপস্থাপন করার জন্য।
We support quality posts anywhere and any tags.
Curated by : @lhorgic
Many many thank dear for your support.
We support quality posts anywhere and any tags.
Curated by : @lhorgic