আম দই - এর রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ।কতদিন হলো গ্যালারিতে কত রেসিপি পড়ে আছে, আমি মাঝে যা যা রান্না করেছি ,সবকিছুই ছবি তুলে রেখেছি আপনাদের শেয়ার করব বলে। কিন্তু সময় করে সেগুলো শেয়ার করা হয়ে উঠছে না। আমি গত পরশুদিন আম দই বসিয়েছিলাম এবং গতকাল খেয়ে দেখলাম দুর্দান্ত খেতে হয়েছে। তাই চলে এলাম সেই রেসিপি শেয়ার করতে।
আমরা এক এক জন এক এক রকম ভাবে বাড়িতে দই বসিয়ে থাকি। আমাদের বাড়িতে গরমকাল পড়লেই প্রত্যেকদিন মা টক দই পাতে। আমি যেহেতু দুধ খেতে ভালবাসি না। তাই দই আমার খুব পছন্দের। আমি আর আমার বাবা প্রত্যেকদিন দুপুরবেলায় খাওয়ার সময় অর্থাৎ খাওয়া শেষ হয়ে গেলে দই খাবই। টক দই আমার বাবা শুধুমাত্র নুন দিয়েই খায়। তবে আমি তাতে একটু চিনিও নিই।
আমার মনে আছে আমি যখন কলকাতাতে থাকতাম। আম দই খুব পরিমাণে খেতাম। ওখানে একটা মিষ্টির দোকানে আম দই বিক্রি করত এবং খুব ভালো আম দই হতো। তাই অনেকদিন ধরেই ইচ্ছা ছিল আম দই বসাবো। সেই মতনই আমার এই উদ্যোগ। আমার আগে থেকে কোন কিছু সেরকম প্ল্যান থাকেনা ।হট করে মন হলে সবাইকে দিয়ে কিছু না কিছু আনিয়ে নিয়ে খাবার যোগাড় করতে বসে যাই।
আমি সন্ধ্যেবেলা নাগাত সমস্ত ব্যবস্থা করে প্রায় নটার মধ্যে দই বসিয়ে ফেলেছিলাম।। আর তারপরের দিন সকাল বেলায় যখন হাড়িটা খুলি, আমার দেখে চোখ জুড়িয়ে গেছে। আর খেয়ে পেটের তৃপ্তি মিটেছে।
যারা প্রতিদিনই দই পাতে ,তারা জানে এটা কত সহজ পদ্ধতি। অনেকেই কৃত্রিমভাবেও করে থাকে। অর্থাৎ সারা রাতের জন্য না রেখে ,ওভেনে অনেকে দই বানিয়ে ফেলে। কিন্তু সেই পদ্ধতি আমার জানা থাকলেও আমি কোনদিনও ব্যবহার করিনি। কেক যেমন বেক করা হয় সেই পদ্ধতিতে দইটাও হয়। আমি জানিনা আপনারা কে কে দই পাতেন। তবে বাড়ির দই এর মর্যাদাই আলাদা।
![]() |
---|
সিরিয়াল নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | আম | ২ টো |
২ | চিনি | এক কাপ |
৩ | দুধ | ১কেজি |
৪ | টক দই | ৩ চামচ |
এত একটা সহজ রেসিপি যে আপনাদের বলে বোঝাবার নয়। এতে খরচ কম। কিন্তু গুণ সাংঘাতিক। দই শরীরের জন্য খুব উপকারী।আপনারা নিজেই আমার পোস্ট পড়ে এবার এই সহজ রেসিপিটা দেখে নিন। আর এই গরম কালে আমের নতুন সময়ে আম দইয়ের মজা নিন।
চলুন , উপকরণ যখন দেখা হয়ে গেল, এবার শুরু করি।
আমি দুটো আমকে কেটে , তার রস বার করে নিয়েছি। এর পর মিক্সি গ্রাইন্ডার ব্যবহার করে, আমের রস বা পাল্প আরেকবার মিহি করে নিয়েছি, যাতে কোনো প্রকার দানা অথবা শাঁস না থাকে।
এর পর ওভেন এর আঁচ একদম লো থেকে রেখে,সেই রস কিছুক্ষণ গরম করে নিয়েছি। সাথে তাতে দিয়েছি চিনি । আম যেহেতু মিষ্টি ছিল না বেশি। তাই আমাকে চিনি দিতে হয়েছে। আমি এখানে বড় চামচের এক চামচ চিনি মিশিয়ে
নিয়েছি। যতক্ষণ চিনিগুলো রসের সাথে না গলে যাচ্ছে ততক্ষণ অল্প আঁচে মেশাতে থাকতে হবে।
এবার আমি ওভেন অন করে, আঁচ মিডিয়ামে রেখে দুধ গরম করতে বসিয়েছি। আমি এখানে এক কেজি মতো দুধ ব্যবহার করেছি। দুধ জ্বাল দিতে থাকতে হবে। হাতা দিয়ে নাড়তে থাকতে হবে।
এক কেজি দুধ যখন অনেকটা কমে আসবে। ঘন হয়ে আসবে। তখন ওর মধ্যে আপনি আপনার পরিমাণ মতন চিনি দিতে পারেন। আমি এখানে এককাপ মতো চিনি ব্যবহার করেছি। যেহেতু মিষ্টি দই পাততে গেলে চিনি বেশি করে দিতে হয়, তাই। সাথেই আবার আম দই বলে কথা। কিন্তু আপনারা যদি মিষ্টি কম খান। তবে সেই মতো চিনি ব্যবহার করবেন। তিনি ভালোমতো মিশে গেলে তারপর দুধটা হালকা ঠান্ডা হতে দিতে হবে।
যখন দুধ উষ্ণ উষ্ণ গরম। অর্থাৎ আপনি একটা আঙ্গুল ডুবিয়ে রাখতে পারছেন। এমন অবস্থা হয়ে আসলে। তখন আপনি আমের রসটা যেটা আপনি বানিয়ে রেখেছিলেন, তা আস্তে আস্তে দুধের সাথে মেশাতে থাকবেন। অতিরিক্ত গরম দুধে আমের রস মেশানো যাবে না।
আমাদের বাড়িতে টক দই গরমকালের প্রত্যেকদিন পাতা হয়। তাই টক দইয়ের ছাঁচ আমাদের বাড়িতে থাকেই। আপনাদের বাড়িতে না থাকলে আপনারা কি নিয়ে আনতে পারেন। এই পর্যায়ে এসে আপনি একটি স্টিলের গ্লাস, অথবা বাটি, অথবা মাটির হাড়ি ব্যবহার করতে পারেন।।
আমি এখানে একটি চীনে মাটির পাত্র ব্যবহার করেছি। পাত্রটির মধ্যে চারিদিকে দইয়ের ছাঁচ ভালো করে মাখিয়ে নিয়েছি। আমার মোটামুটি তিন চামচ টক দইয়ের ছাঁচ লেগেছে।
এরপরে আপনি ধীরে ধীরে আম দুধের ওই মিশ্রণটা পাত্রে ঢেলে দিন। উপর থেকে কিছুটা টক দই ছড়িয়ে দিতে পারেন।
এরপর ওই হাঁড়িটাকে বন্ধ করে দিন এমন ভাবে যাতে ওতে আর হাওয়া না ঢোকে। আমি দেখুন আমার পাত্রের ঢাকনাটাই একটা ছোট ছিদ্র থাকায় আমি সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি। আমি প্রথমে ঢাকনা লাগানোর আগে পাতলা একটা প্লাস্টিক দিয়ে মুখটা মুড়িয়ে নিয়েছিলাম। যেটার ছবি আমি তুলতে পারিনি কিন্তু পরের দিন সকালে তুলেছি। এইভাবে আপনি নিজের ইচ্ছেমতো ঘরের একটি কোণে অথবা রান্নাঘরের কোন একটা কোণে পাত্রটি রেখে দিন। নিচ থেকে বেশি যেন ঠান্ডাও না পায় সে কারণে একটা কাপড়ের ওপর রাখতে পারেন। যেহেতু আমার এই পাত্রের স্ট্যান্ড ছিল, তাই আমার খুব সুবিধা হয়েছে।
পরের দিন সকাল বেলায়। মোটামুটি প্রায় 10 ঘন্টা হয়ে গেছে। এরপর আপনি দেখতে পারবেন দইটা জমে গেছে। আপনি এবার ফ্রিজে দইটি রেখে দিন। মোটামুটি দু তিন ঘন্টার জন্য হলেও রাখুন। এবং তারপরে সকলকে সার্ভ করুন। গরমকালে ঠান্ডা ঠান্ডা দই আর সাথে অনেক তৃপ্তি।
আশা করছি আমার আজকের পোস্ট আপনাদের সকলের ভালো লেগেছে। সকলে আমার এই পদ্ধতিতে দই বসিয়ে দেখতে পারেন। আর ফলাফলটাও আমাকে জানাবেন। আজকের মত আমি এখানেই শেষ করছি। আরো নতুন নতুন খাবারের রেসিপি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাজির হব। ধন্যবাদ।
আম দই নামটা আমি জানি তবে কখনো আমার খাওয়া হয় নাই আর খাওয়ার কখনো ইচ্ছেও হয় নাই।
তবে আপনার লেখায় এর এত সহজ বানানোর পদ্ধতি দেখে মনে হচ্ছে এবার খাওয়াও হয়ে যাবে।
আমি ভেবেছিলাম আম হয়তো ছোট ছোট টুকরো করে দেয়া হয় এতো।🤣
আশাকরি আপনার এই রেসেপির মাধ্যমে আমার মতো অনেকেরই আম দই খাওয়া হয়ে যাবে এবার।
এই চমৎকার রেসেপিটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো এবং সুস্থ থাকবেন সবসময়।
আপনি অনেক সুন্দর ভাবে মন্তব্য করলেন দিদি। আমারও বেশ ভালো লাগলো আপনার কমেন্ট পড়ে।
সত্যিই তোমার রেসিপিটি খুব সুন্দর ছিল ।আসলে আমি বাইরে ছিলাম ।তাই খাবারটা মিস করে গেলাম। পরের বার বানালে আমাকে দিও । তোমার পোস্টটি সত্যিই ভালো লেগেছে ।আমি বাড়িতে চেষ্টা করব বানানোর জন্য।
পরেরবার সুন্দর করে দই পাতবো। তখন না হয় খেও। আসলে দই বেশি দিন রাখলে নষ্ট হয়ে যায়। তাই তোমার জন্য আর রাখিনি।
এই গরমে আমি প্রায় রোজই বাড়িতে দই পাতছি। আম দই তৈরি করার রেসিপি আজকে আমি আপনার কাছ থেকে শিখে নিলাম। কি করে যে ধন্যবাদ জানাবো তার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আম দইয়ের রেসিপিটা শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার পোস্টটি পড়ার জন্য।
শুনতে হাস্যকর হলেও
সত্যি আম দই নামটা মনে হয় এর আগে একবার শুনেছি তবে দেখেনি।
আমি জানিনা এটা খেতে কেমন স্বাদ ।তবে আপনার রেসিপিটা পড়ে আমার মনে হচ্ছে ভীষণ লোভনীয় হচ্ছে খেতে।
আম আমার পছন্দের তালিকায় ফল। ভীষণ পছন্দ করি আর দইয়ের কথা কি বলবো এটা তো আরো বেশি পছন্দ করি।
তাই ভাবছি দুটাই যখন পছন্দের খাবার একদিন বানিয়ে ফেলবো আপনার রেসিপিটা দেখে ধন্যবাদ খুব সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।।।
আম দই আমি প্রথমে খেয়েছিলাম কলকাতায় গিয়ে। আমার সত্যিই খুব ভালো লাগে, আম দই খেতে। আম দিয়ে তো অনেক কিছুই তৈরি করা যায় ।তবে এটা একটু ইউনিক।
গতকালকেই আমি দুধ দিয়ে দই তৈরি করেছি। তবে আজকে আপনি যেভাবে আম দিয়ে দই তৈরি করেছেন সেটা দেখতেই তো অনেক বেশি লোভনীয় দেখাচ্ছে। ইনশাল্লাহ অবশ্যই আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আপনার রেসিপি ফলো করে, আম দিয়ে দই তৈরি করার চেষ্টা করব। আসলে এভাবে কখনো চিন্তা করা হয়নি। আপনি যেভাবে আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আম দিয়ে কিভাবে দই তৈরি করতে হয়। সেই পদ্ধতিটা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
আম দই খেতে অনেক সুন্দর হয়। আপনি আমার রেসিপি ফলো করে দেখতে পারেন। খুব ভালো তৈরি হবে।