রাখী

নমস্কার সকলকে। আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন। গতকাল ছিল রাখী পূর্ণিমা। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে রাখীর কথা শেয়ার করি।

বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে পূর্ণিমা হল রাখী পূর্ণিমা। রাখী পূর্ণিমা অথবা রাখী বন্ধন উৎসব ভারতের নানা জায়গায় পালিত হয়। এ দেশ ছাড়াও বিদেশে অনেক জায়গায় এই উৎসব পালন করা হয়। শুধু হিন্দু ধর্মেই নয়, আমি শুনেছি বৌদ্ধ ,জৈন ধর্মেও এই উৎসব পালন করার রীতি রয়েছে।

তবে যবে থেকে বঙ্গভঙ্গের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্বয়ং হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে ভেদাভেদ না রাখার জন্য রাখীর উৎসব পালন করেন,তবে থেকে এর আলাদা একটা পরিচয় হয়ে গেছে। এটা শুধুমাত্র কোন ধর্মের বেড়া জালে আটকে থাকে নি। রাখি বন্ধন উৎসব একটা নতুন অর্থ লাভ করেছে।

রাখি এমন একটা ধাগা বা সুতো,যার ধারা আমরা পরস্পরের মধ্যে বন্ধনের সূচনা করি অথবা পরস্পরের সুরক্ষার কামনা করি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাই ও বোনের মধ্যে এই রাখী উৎসব পালন করা হয়। দিদি বোন ভাইফোঁটা উৎসবের মতনই রাখী পড়িয়ে ভাইয়ের সুরক্ষার জন্য প্রার্থনা করে, সাথেই ভাই বোনের অটুট বন্ধনের জন্য প্রার্থনা করে।

কিন্তু যুগের নিয়ম বদলেছে। শুধুমাত্র সব সময় ভাই কেন, কেনইবা শুধুমাত্র ভাইফোঁটার সময় ভাই। এখন সমাজ পরিবর্তন হয়েছে। রাখি বন্ধন উৎসবকে মানুষ এখন অন্যভাবেই দেখে। ভাই বোন দুজন দুজনকে রাখী পড়িয়ে তার অটুট বন্ধন- এর কামনা করে।

আমি যেটুকু শুনেছি, পুরাণের কথা অনুযায়ী রাখী বন্ধন উৎসব শুরু হয় মহাভারতের সময় থেকে। রাখী বন্ধন উৎসব কবে থেকে শুরু হয় এ নিয়ে অনেক মতবিবাদ আছে। নানান পুরানে নানান রকম কাহিনী খুঁজে পাওয়া যায় । তাই দেখতে গেলে উৎসবটি এই কিছুদিন আগেই যে শুরু হয়েছে, এমনটা নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখতে পাওয়া যাবে ,বহুকাল আগে থেকেই এই রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়ে আসছে ।

এইবার রাখি পূর্ণিমা ছিল ১৯ তারিখে। পূর্ণিমা লেগেছিল ১৯ তারিখ ভোর নাগাদ। আর ১৯ তারিখ রাত বারোটার মধ্যেই পূর্ণিমা শেষ। বলা হয়ে থাকে পূর্ণিমার মধ্যেই রাখি পড়ানো শুভ। এবার ঘটনা হলো ,এই বছরে নাকি দুপুর একটা চল্লিশ অবধি সময় ভালো ছিল না, তাই সকলের ক্ষেত্রেই দুপুর ১.৪০ এর পরে রাখি পড়ানোর কথা বলা হয়ে থাকে ।

আমার প্রত্যেক বছরের রাখি পূর্ণিমা আমার ছোট ভাই ঈশান এবং আমার পিসতুতো দাদার সাথে কাটে। ওদের দুজনকে আমি রাখি পড়াই এবং তিনজন মিলে খাওয়া-দাওয়া করি। কিন্তু এবারে পিসতুতো দাদা কাজের জন্য কলকাতায় গিয়েছিল। তাই এটা সেটা রান্না করার কথা, যা ভেবেছিলাম ,সেটা হয়ে ওঠেনি।

দুপুরের পর ঈশানকে রাখি পরিয়েছি। ঈশানকে রাখি পড়ানোর আগে প্রতি বছরের মতন আমার বাড়ির ছোট গোপাল ঠাকুর এবং গণেশ ঠাকুরকে রাখি পরিয়েছি। যেহেতু সেরকমভাবে রান্না কিছুই করিনি ,দাদা ছিল না বলে, তাই অনেকগুলো মিষ্টি কিনে নিয়ে এসেছিলাম। ভাইয়ের জন্য একটা চকলেট কিনে নিয়ে এসেছিলাম।

এই ভাবেই দুজন দুজনকে রাখি পড়িয়ে ,ওর জন্য মন ভরে প্রার্থনা করে রাখি পূর্ণিমার মুহূর্তটা পালন করেছি। দাদাকে খুব মিস করছিলাম। ওর জন্য আমি রাখি রেখে দিয়েছি। ও ফিরে আসলে ওকে রাখি পড়াবো। আর খাওয়া-দাওয়ার কথা, সময় সুযোগ করে তিনজন মিলে অবশ্যই একদিন হবে।

আপনাদের সকলের সাথে আমার রাখির মুহূর্তটা শেয়ার করতে পেরে খুব ভালো লাগলো। অনেক বছরের প্রতীক্ষার পর ভগবানের অশেষ কৃপায় আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি ,তখন আমার ভাই হয়। প্রায় ১২ বছরের ছোট ও। ও আমার জীবনে এক অবিশ্বাস্য উপহার। আমি চাই ,প্রত্যেক ভাই বোনের সম্পর্ক অটুট থাকুক।

শেষে একটাই কথা বলতে চাই,কমিউনিটির সকল ভাই-বোনদের আমার পক্ষ থেকে রাখীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সকলে সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন। আমার সকল ভাই বোন ভালো থাকুক।