মিষ্টি দই/ লাল দই তৈরির রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা ।সকলে কেমন আছেন ? আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। তাপমাত্রা বেশি না হলেও গরম কিন্তু ভালোই। আমাদের শরীরে যেন মনে হচ্ছে দাবদাহ চলছে ।তাপমাত্রা কম হলেও মনে হচ্ছে যেন অনেক বেশি তাপপ্রবাহ বাইরে। এরকম অবস্থায় একটু ঠান্ডা জিনিস খেতে সবারই ভালো লাগে।
গরম মানেই আইসক্রিম শরবত দই। আমি আপনাদের সাথে কত ধরনের আইসক্রিমের রেসিপি শেয়ার করেছি। ভাবলাম আজকে একটু লাল মিষ্টি দই এর রেসিপি শেয়ার করি। এর আগে আম দই রেসিপি আপনাদের সকলকে অবাক করেছে। কিন্তু লাল দই রেসিপি আপনারা জানেন কিনা তা আমার জানা নেই। তবে আপনি এই দইও খুব সহজ পদ্ধতিতে বাড়িতে বানিয়ে ফেলতে পারেন।
লাল দই আমাদের এদিকে এক জায়গায় খুব বিখ্যাত। সেই জায়গার নাম হল নবদ্বীপ ।নদীয়া জেলার মানুষ নবদ্বীপের দই খেতে খুবই ভালোবাসে। আর এদিকে যারাই আসে তারাই নবদ্বীপের দই খাওয়ার জন্য বায়না করে ।ছোটবেলা থেকে যতবার নবদ্বীপ গিয়েছি ,নবদ্বীপ এর দই খাই এবং সাথে করে নিয়েও আসি। আবার যদি কেউ নবদ্বীপ যায়, তাদেরকেও নিয়ে আসতে বললি। আমাদের ফ্যাক্টরিতে একজন দাদা কাজ করে, যিনি নবদ্বীপে থাকেন। তিনি আমার জন্য মাঝেমধ্যেই দই নিয়ে আসেন আমি খেতে ভালোবাসি বলে। কিন্তু কখনো বাড়িতে বানানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি।
বাড়িতে খুব অল্প জিনিসের মাধ্যমে লাল দই তৈরি করা সম্ভব।। যারা একবার করে ,তাদের কাছে এই প্রসেসটা খুব একটা কঠিন বলে মনে হয় না। আমিও কিছুদিন আগে বাড়িতে নিজের পছন্দের লাল দই পেতেছিলাম। আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে সমস্ত ছবি তুলে রেখেছিলাম। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।প্রথমেই আগে উপকরণগুলো দেখে নিই।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | দুধ | ৫০০ |
২ | চিনি | এক কাপ |
৩ | টক দই | ২০০ |
৪ | গুঁড়ো দুধ | ৩চামচ |
প্রথমে একটি সুতির কাপড় নিয়ে তাতে দিয়ে দিচ্ছি টক দই ২০০ গ্রাম মত। এবার এই টক দই থেকে পুরো জলটা যাতে ছেঁকে বার হয়ে যায়, এ কারণে সুতির কাপড়টা ভালো করে মুড়িয়ে জল ঝরিয়ে নেব।
তারপর একটি ছেঁকনি নিয়ে মোটামুটি কুড়ি মিনিটের জন্য ওই সুতির কাপড়ের দই রাখা পুটলিটা রেখে দেব ছেঁকনিটির ভেতরে। যাতে বাকি জল ছেঁকে পড়ে যায়। এভাবে আমরা দই থেকে দই মূল বার করে নেব।
যতক্ষণে আমরা দই ছেকে নিচ্ছি, ততক্ষণে এদিকের কাজ এগিয়ে নেব। একটি কড়াই ওভেনে বসিয়েছি।আঁচ মিডিয়াম রেখে,তাতে দিয়ে দেব হাফ কাপেরও কম চিনি। এই পর্যায়ে আমরা ক্যারামেল তৈরি করব। যেহেতু আমি লাল মিষ্টি দই বানাচ্ছি ,তাই দই এর কালার আনতে এই পদ্ধতি আমাকে ব্যবহার করতে হবে।
আগে থেকেই ৫০০ গ্রাম দুধ ভালো ভাবে জ্বাল দিয়ে নেব। দুধ যত ভালোভাবে জ্বাল দেওয়া যাবে তত দই ভালো হবে।
গ্যাসের ফ্লেম মিডিয়ামে রেখে কোনরকম জল না দিয়েই চিনি এরকম দেওয়ার পর ,কিছুক্ষণ পরেই চিনি গলতে শুরু করবে। একদম গলে গিয়ে ব্রাউন কালার হয়ে যাবে ।
এবার ক্যারামেল এর মধ্যে আস্তে আস্তে করে দুধ মিশিয়ে নেব যেটা জ্বাল দিয়ে রেখেছিলাম। একেবারেই সমস্ত দুধ ঢেলে দিলে হবে না ।ধীরে ধীরে দিতে হবে। ক্যারামেলের সাথে মেশাতে হবে।
কিছুটা দুধ কড়াই থেকে তুলে নিয়ে তাতে গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে দেব।
এবং গুড়ো দুধ মিশ্রিত এই দুধটা কড়াই এর মধ্যে ঢেলে দেব।
গুঁড়ো দুধ দিলে দই আরো ভালো হবে।
কড়াইয়ে মিডিয়াম আছে দুধ যখন ঘন হয়ে যাবে ।তখন দিয়ে দেব বাকি চিনি টুকু। মিষ্টি দইয়ে চিনি একটু বেশি পরিমাণে দিতে হয়। আপনারা যদি চিনি কম খান ,তাহলে আপনি আপনার পছন্দমত পরিমাণে দিতে পারেন। চিনি মিশিয়ে নিলে তৈরি হয়ে যাবে আমাদের দইয়ের দুধটা।
এবারে ছেঁকনি থেকে সুতির পুটুলিটা তুলে নিয়ে ,খুলে দেখতে পাবেন দই মূল রেডি।
দই মূল একটি পাত্রে নিয়ে ভালোভাবে ফেটিয়ে নিতে হবে।
এবারে কড়াইয়ের যে দুধ আমরা রেডি করে রেখেছি, তা যখন উষ্ণ উষ্ণ গরম থাকবে ।সেই অবস্থায় আমি দই মূলের সাথে একটি বাটিতে মিশিয়ে নেব।
ধীরে ধীরে সমস্ত দুধ ছেকনির সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে ওই দই মূলের সাথে মিশিয়ে নিতে হবে। আপনারা নিজেরাই খেয়াল করে দেখতে পারবেন , ছেঁকে নেওয়ার সময় কত কিছু লেগে থাকবে ছেঁকনির গায়ে।কারণ আমরা গুড়ো দুধ ব্যবহার করেছি, তার আগে ক্যারামেল তৈরি করেছি এবং সাথেই দুধের সর রয়েছে। সব কিছুই যাতে দইয়ের মধ্যে না যায় এ কারণেই ছেকনি দিয়ে ছেকে নিতে হবে।
এবারে আপনি আপনার পছন্দ মত পাত্র নিয়ে তার চারিদিকে কিছুটা দই লাগিয়ে নিন। আমি এখানে তিনটি মাটির সরা ব্যবহার করেছি। আর একটি স্টিলের ছোট গ্লাস। আমি প্রত্যেকটি সরা এবং স্টিলের গ্লাসে চারিদিকে দই মাখিয়ে নিয়েছি।
এবার একটি আঙুল দিয়ে দেখবেন দুধটা কতটা ঠান্ডা হয়েছে। যদি একটি আঙুল বেশ কিছুক্ষণের জন্য ডুবিয়ে রাখতে পারেন ,হাতে প্রচন্ড পরিমাণে গরম না লাগে। তবে আপনি জানবেন এই দুধ দই পাতার জন্য পারফেক্ট।
এবার আপনি সরাতে এবং স্টিলের যে পাত্রটিতে দই মাখিয়ে রেডি করে রেখেছেন ,তাতে দুধটি ঢেলে দিন।
এবার আপনার বাড়ির যেকোনো গরম বা উষ্ণ জায়গায় এই পাত্র গুলি রাখতে হবে। আমি যেমন রান্না ঘরের ওভেনের পাশে রেখে দিয়েছিলাম। আপনি চাইলে চালের ড্রামের মধ্যেও রাখতে পারেন। দেখুন আমি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে ওভেনের পাশে রেখে দিয়েছি। সারা রাতের জন্য এভাবে রাখতে হবে।
পরের দিন সকালবেলায় ঢাকনা খুলে দেখতে পারবেন দই জমে গেছে। কিন্তু এই অবস্থায় খাওয়াটা ঠিক হবে না। কারণ সুস্বাদু তখনই লাগবে যখন এই দই আপনি রেখে দেবেন দু'ঘণ্টার জন্য ফ্রিজে।
ফ্রিজ থেকে বার করে ঠান্ডা ঠান্ডা দই এই প্রচন্ড গরমে সবাইকে সার্ভ করুন। আর সবার কাছ থেকে শুনে নিন, দই কেমন খেতে হয়েছে।
আমি দই বানানোর পরে নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছিলাম না ,কারণ আমি দই খেতে খুব ভালোবাসি। তাই কখন খাব এই আশাতে বসে ছিলাম। ফ্রিজ থেকে বার করেই যখন এক চামচ খেলাম। তখন আমি নিজেই নিজের উপর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না ।দোকানের থেকেও বেশি সুন্দর দই তৈরি হবে। আমি ভাবতে পারিনি। তারপর আমি আমার পরিচিত কাছের মানুষদের তিনটে সরা দিয়েছি। আর স্টিলের গ্লাসের দইটুকু আমার বাড়ির সবাই মিলে খেয়েছি।
দোকানে নানা রকম ভেজাল জিনিসপত্র দিয়ে দই তৈরি করে ।আমি শুনেছি বিস্কুটের গুড়ো দিয়েও দই পাতা হয়। কিন্তু সেগুলো পেটের পক্ষে কতটা খারাপ, তা হয়তো আমরা সবাই জানি। তাই বাড়িতেই যদি আপনারা দই পাততে পারেন এত সহজে, তবে অবশ্যই একবার চেষ্টা করেই দেখুন। আমি যেভাবে দেখালাম এভাবে যদি আপনারা দই পেতে থাকেন । তাহলে নিঃসন্দেহে বলবো ,দই ভালোভাবে বসবে।
যদি লাল দই না পাততে চান, শুধুমাত্র মিষ্টি সাদা দই পাততে চান ।তবে সেটা আরো সহজ পদ্ধতি ।আমার ইচ্ছা আছে আমি সেটাও আপনাদের সাথে শেয়ার করব। নিজের হাতের বানানো দই খেতে আমার কিন্তু ভীষণ ভালো লেগেছে। আপনারাও চেষ্টা করে দেখে আমাকে জানাবেন।
আজকে এখানেই শেষ করছি সকলে সুস্থ থাকুন। নতুন কিছু নিয়ে আবার পরের দিন হাজির হব।
আপনার তৈরিকৃত মিষ্টি দই বা লাল দইটি অত্যন্ত লোভনীয় ছিলো।দেখেই মনে হচ্ছে খেয়ে ফেলি।আপনি সব দ্রব্যের পরিমণ খুব সুন্দরভাবে উল্লেখ করেছেন পাশাপাশি আপনি দইটি বানানোর প্রতিটি ধাপ খুবই যত্ন সহকারে উপস্থাপন করেছেন।আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দর একটা রেসিপি আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য।
আপনি লাল দই বানানোর পদ্ধতিটা খুব সুন্দর করে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। প্রতিটি উপাদান এর পরিমান দিয়ে খুব সুন্দর ও সহজ করে ধাপে ধাপে লিখেছেন যার কারনে বুঝতে খুব সুবিধা হয়েছে। বাসায় অবশ্যই আপনার এই রেসেপি ফলো করে লাল দই বানাবো।
এত সুন্দর ও সহজ করে এই দই বানানোর পদ্ধতিটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময়।
আপনার শেয়ার করা মিষ্টি দই/লাল দই তৈরি করার পদ্ধতি দেখে মনে হল সামনে হলে খেয়ে নিতাম। কি আর করার শুধু দেখেই যেতে হলো। মাঝে মাঝে আমরা মালয়েশিয়াতে দই খেয়ে থাকি তবে সেই দইতে খুব একটি স্বাদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে আপনার দই তৈরি করার পদ্ধতি দেখে মনে হলো যদি একবার তৈরি করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো হতো। এবং দেখি যদি সময় সুযোগ পায় তাহলে অবশ্যই আপনার এই পদ্ধতি অনুযায়ী তৈরি করার চেষ্টা করব।
খুবই সুন্দর একটি পোস্ট উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
এইতো বেশ কয়েকদিন আগেই আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছিলেন। কিভাবে টক দই তৈরি করতে হয়। কিন্তু আজকে অন্যরকম ভাবে লাল মিষ্টি দই কিভাবে তৈরি করতে হয়, সেই পদ্ধতি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যদিও আমি সাদা মিষ্টি দই তৈরি করেছি। কিন্তু লাল মিষ্টি দই এখনো তৈরি করা হয়নি। তবে অবশ্যই আপনার পদ্ধতি অবলম্বন করে তৈরি করার চেষ্টা করব। বিশেষ করে লাস্ট যে ফটোগ্রাফি আপনি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। যেখানে চামচ দিয়ে আপনি দই ধরে রেখেছেন, মনে হচ্ছে আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন। 🫢যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ লাল মিষ্টি দই কিভাবে তৈরি করতে হয়। সেই বিষয়টা আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।