ঈশানের জন্মদিনের সকালের মুহূর্ত

in Incredible India2 months ago

নমস্কার বন্ধুরা,আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আজ ভাবলাম ঈশানের জন্মদিনের মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করি ।কিছুদিন আগেই পোস্টে ঈশানের সম্পর্কে আমি কিছু কথা লিখেছিলাম। সেদিন ওর জন্মদিন ছিল ।আর এটাও জানিয়েছিলাম জন্মদিন কিভাবে পালন হলো ,তা আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

1000091349.jpg

ছোট বাচ্চাদের জন্মদিন নিয়ে একটা বেশ মাতামাতি থাকে। আমিও যখন ছোট ছিলাম তখন আমার মধ্যেও এই উৎসাহটা ছিল। জন্মদিন আসার আগে থেকেই মা-বাবাকে বলতে থাকতাম, যে আমার জন্মদিন আসছে। আমি কেক কাটবো। ঈশানের মধ্যেও সেই ব্যাপারটা দেখতে পাই। মে মাস আসার আগে থেকে ,এপ্রিল মাস থেকে ও প্রায় বায়না শুরু করেছে। ওর জন্মদিনে কি কি দরকার, কি কি গিফট চাই, আর কেমন করে জন্মদিন করবে আর কজনকে বলবে।

1000091337.jpg

যদিও এসব আমরা এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে আর এক কান দিয়ে বার করে দিই। কারণ বাচ্চাদের পাহাড় সম আবদার। আবদারের শেষই হয় না। ঈশান দেখতে দেখতে ১২ বছরের হয়ে গেলেও, মনটা এখনো বাচ্চাদের মতনই রয়েছে। আমাদের অজান্তেই ও নিজে নিজেই ওর পড়ার স্যার ,ম্যাডামদের একা একাই ওর জন্মদিনের নিমন্ত্রণ করে ফেলেছে। এছাড়া ওর বন্ধুদেরও ওর জন্মদিনের খবর ওর বলা হয়ে গিয়েছে। 😅

1000091346.jpg

বেশ কিছু বছর আগে তখন ওর বয়স সাত /আট বছর। অনেক বড় করে জন্মদিন করা হয়েছিল। প্রায় ৬০০ জন লোক নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল। তারপর থেকে বাড়িতেই ছোট করে জন্মদিনের আয়োজন হয়। মা প্রত্যেকবার এই দিন ওর জন্য পাঁচ তরকারি ভাত রান্না করে দেয় সাথে পায়েশ। আর সন্ধ্যেবেলায় বাড়ির সবাই মিলে এবং আশেপাশের বাড়ি মিলে কেক কাটা এবং ভালো মন্দ খাওয়া দাওয়া। এমন ভাবেই জন্মদিন হয়ে থাকে।

1000092355.jpg

আর প্রত্যেকবারই বাবুর নানান রকম বায়না মত জিনিসপত্র কিনে দিতে হয়। যদিও এতদিন তিনি খালি রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি চেয়ে গেছেন। কিন্তু এখন যত বড় হচ্ছে ঈশান এখন গাড়ি চায় না। চাইলেও আমি ভীষণ বকা দিই। কারণ এর আগেও যতবার গাড়ি কিনে দিয়েছি, দিনের দিন অথবা তারপরে দু দিনের মধ্যে গাড়ির কোনো না কোনো পার্টস খারাপ করে ফেলেছে সে।🫡

1000091343.jpg

বাচ্চাদের এই কারবার সবারই জানা। তাই আমি নিজেও সবাইকে বলি ওই ধরনের কোন জিনিসই যেন ঈশানকে কেউ না দেয়। যাই হোক এইবারে খুব বেকায়দায় পড়ে গিয়েছিলাম আমরা সকলে।
যেদিন ঈশানের জন্মদিন ছিল সেদিন আমার দিদির ছেলের অন্নপ্রাশনের দ্বিতীয় দিন। অর্থাৎ মামার বাড়ি থেকে আড়াই দিনের মাথায় অন্নপ্রাশন দিতে হয়।। আর আমার পিসির বাড়ি আমার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরেই। ওরা সেই মতোই দিদির বাপের বাড়ি অর্থাৎ আমার পিসির বাড়িতে মামা ভাতের আয়োজন করেছিল। গত পোস্টে জানিয়েছিলাম দিদির শ্বশুরবাড়ির আয়োজনের কথা। আশা করি আপনারা বুঝতে পারলেন।

1000091352.jpg

তো অন্নপ্রাশনের নিমন্ত্রণ ,তার ওপর ঈশানের আবার জন্মদিন। পিসিরা মাকে খুব তাড়াতাড়ি পিসিদের বাড়িতে যেতে বলে ,এ কারণে মা ভীষণ বিপদে পড়ে যায়। আমি তখন একটা প্ল্যান করি। যে ঈশানের জন্মদিন কোন রকম ভাবে সকালবেলায় লুচি ,মাংস ,আলুর তরকারি, মিষ্টি পায়েস দিয়েই, রান্না করে ওকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য। সাথে প্রত্যেকবার যেমন আশীর্বাদ করা হয় সেরকম।

যেহেতু পিসিদের বাড়িতে নিমন্ত্রণ আছে। যদি মা এখন পাঁচ তরকারি রান্না করতে বসে ,যেমন সময় লাগবে, তার থেকেও বড় কথা জিনিসগুলো নষ্ট হবে। কারণ পিসি দের বাড়ি নিমন্ত্রণ মানেই,রাতের প্লাস পরের দিনের খাবারগুলো ওরা সব পাঠিয়ে দেয়। সেই মতো বুদ্ধি করে শুধু সকালের খাবারের আয়োজন করা হলো ছোট করে।

1000091340.jpg

ঈশানের জন্মদিন ছিল আমাদের এখানকার ভোটের আগের দিন অর্থাৎ 12 তারিখ ।১৩ তারিখে ভোট।পাশের বাড়ির মৌসুমী বৌদি তার মধ্যে ভোট দিতে বাপের বাড়ি যাবে বলে তাড়াহুড়ো করছে। ভোটের আগের দিন ওকে বাপের বাড়ি চলে যেতে হবে। তাই বৌদিও সকাল বেলায় এই প্ল্যান এর ব্যাপারে রাজি হলো। ও কিছুটা হেল্প করে দিল। আমি আর বৌদি মিলে অনেকগুলো লুচি করে ফেললাম। বাকি মাংস এবং আলুর তরকারি মা রান্না করে রেখেছিল। সাথে পায়েসও মায়ের রান্না করা হয়ে গিয়েছিল।

এরপর সবাই স্নান করার পরে ঈশান কে আশীর্বাদ করা হলো। দুষ্টু ছেলেটা জন্মদিনের দিনকেও কতবার যে বকা খেয়েছে তার ঠিক নেই। তারপর সবাই মিলে খাওয়া-দাওয়া সারলাম। শুধু আমরা এই পাঁচজন নই ,পাশের বাড়ির সবাই খাওয়া-দাওয়া করলো।

সাথে আমাদের বাড়িতে যেহেতু উপরের ঘরে মিস্ত্রি কাজ করছে ,তারাও খাওয়া-দাওয়া করলো।

সব থেকে বড় কথা আমার একটা ব্যাপার খুব ভালো লাগলো। ওরা ঈশানের জন্মদিন এর কথা শুনে সাথে সাথে একটা বড় চকলেট সেলিব্রেশানের প্যাকেট নিয়ে এসে ঈশানের হাতে দিল , ওকে আশীর্বাদ করল। ওরা ভালোবেসে ওকে চকলেট দিয়েছে দেখে ও তো আর খুশি।
আসলে মানুষের কিছু কিছু ব্যবহার এবং মানসিকতাতেই অপজিট পারসন খুশি হয়। আবার কিছু কিছু মানুষ এতই অমানবিক ,তাদের কর্তব্য দায়িত্ব যেন একেবারেই শূন্য। অথবা নিজের দায়িত্ব কর্তব্যর কথা জানলেও তারা সেগুলো পালন করে থাকে না। তাই আজকালকার দিনে এমন ধরনের মানুষ দেখেও ভালো লাগে।

এমন ভাবেই সকালের খাওয়া দাওয়া মিটে গেলে মৌসুমী বৌদি তো তাড়াতাড়ি বাপের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল ।এদিকে আমার মাও সমস্ত কিছু গুছিয়ে আমাদের সাথে পিসির বাড়ির দিকে চলল।
ঈশানের জন্মদিন এখানেই শেষ হয়নি। জন্মদিনের বাকি মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে পরের পোস্ট এ শেয়ার করব। আজকে এখানেই শেষ করছি।

@isha.ish

Sort:  
Loading...
 2 months ago 

ঈশানের জন্মদিন এবার একটু অন্যরকম ভাবে পালন করা হয়েছে। খুব ছোট করেই হলো। আমি রাতের বেলা থাকতে পারলাম না। তাই আমি খুব দুঃখিত। ঈশান ভালো থাক সুস্থ থাক এই কামনা করি। তোমার পোস্ট টা পরে খুব ভালো লাগলো।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 65733.39
ETH 3506.40
USDT 1.00
SBD 2.51