সিন্নি / সির্ণি তৈরির রেসিপি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ? এতদিন ধরে আমি আমার বাড়ির পুজোর অনেকগুলো মুহুর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আমি পুজোর কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম যে সত্যনারায়ণ পূজোর একটি মূল অংশ অথবা মেইন প্রসাদ হল সিন্নি প্রসাদ। এটা খেতেও দুর্দান্ত হয়।
এর উচ্চারণ অনেকে সিন্নি অথবা সির্ণীও বলে থাকে। আমি ছোটবেলা থেকেই সিন্নি বলেই জানি। কিন্তু সত্যনারায়ণের পাঁচালীতে শব্দটি সির্ণী রয়েছে । তাই সঠিক কোনটা ,আমি নিজেও বলতে পারব না।
যাইহোক,আজ ভাবলাম সিন্নি কিভাবে তৈরি করতে হয় ,তা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
প্রথমত আমাদের এই প্লাটফর্মে নানান ধর্মের ,নানান সংস্কৃতির মানুষ রয়েছেন। তাই সিন্নি আপনি বাড়িতে নিজে বানিয়ে খেতে পারেন।এটা যে শুধু পুজোর জন্যই , তা নয়। আমাদের পুজোয় যেহেতু এক কেজি আড়াইশো করে আটা এবং গুড় সাথে দুধ দেওয়া হয় শুধুমাত্র নিয়ম বলে।সেটা যে আপনাদেরও করতে হবে ,এমন নয়। আপনারা আপনাদের পছন্দমত পরিমাণ নিয়ে সিন্নি বানিয়ে নিজেরা বাড়িতে খেতে পারেন।
তবে আমি পুজোর সময় কিভাবে সিন্নি তৈরি করেছিলাম।তা আপনাদের কাছে শেয়ার করছি। সিন্নি যে যার বাড়িতে নানান ভাবে বানিয়ে থাকে। কারোর বাড়িতে এত পরিমাণে বানায় না ।আবার কারো বাড়িতে এর থেকে বেশিও বানিয়ে থাকে ।মাপকাঠি পুরোপুরি পূজার উপর নির্ভর করে। কিন্তু আমাদের বাড়িতে প্রথম থেকেই অর্থাৎ আমার ঠাকুমা দাদুর সময় থেকেই এই পরিমাণ অনুযায়ী সিন্নি তৈরি করা হয়। যেহেতু মানুষজন বেশি হয়। তাই জন্য।
এবার তো সিন্নি পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল, পরে আবার মাকে নতুন করে তৈরি করতে হয়েছিল। এই প্রসাদ খাওয়ার জন্যই সকলে এত ভিড় করে ।কারণ এটা খেতে খুবই ভালো লাগে। হতে পারে আপনারা অনেকেই এই সিন্নি প্রসাদ খাননি। তবে আমার রেসিপি দেখে ,আশা করছি আপনারা এটা চেষ্টা করে দেখতেই পারেন।
প্রথমেই আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করি উপকরণগুলো। এই উপকরণ গুলো একটিও বাদ গেলে খামতি হবে টেস্টে। কিন্তু এর আগেও বললাম এতটা পরিমাণ আপনারা যদি না বানাতে চান ,তাহলে ক্যালকুলেশন করে আপনারা নিজেরাই অল্প পরিমাণে বানিয়ে নিতে পারেন ।কিন্তু চেষ্টা করবেন সমস্ত উপকরণ গুলোই ব্যবহার করার।
![]() |
---|
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | দুধ | ১কেজি ২৫০ |
২ | আখের গুড় | ১কেজি ২৫০ |
৩ | কিসমিস | ১০০ |
৪ | কাজুবাদাম | ১০০ |
৫ | কলা | ২১ টা |
৬ | কর্পূর | এক চিমটি |
৭ | আদা | ছোট এক চামচ |
৮ | এলাচ | চারটে |
৯ | নারকেল কোরা | তিন কাপ |
১০ | মধু | এক ছোট চামচ |
১১ | ক্ষীর | একশো গ্রাম |
১২ | আটা | ১কেজি ২৫০ গ্রাম |
যেহেতু পুজোর জন্যই এই সিন্নি বানানো হয়েছিল, তাই আমাদের কাঁসার বাসন ব্যবহার করা হয়েছে। নিয়ে নিয়েছিলাম একটি বড় পিতল বা কাসার গামলা।পাত্রে নিয়ে নিলাম এক কেজি আড়াইশো আটা।
যেহেতু নিয়ম অনুযায়ী ২১টা কলা দিতে হয়। তাই কলা গুলো সাজিয়ে দিলাম ।
মিষ্টি হওয়ার জন্য দিয়ে দিলাম আখের গুড় এক কেজি আড়াইশো। এটাও আমাদের নিয়ম ধরে এই পরিমাণ অনুযায়ী দিতে হয়েছে।
নারকেলকোরা যেকোনো খাবারে দিলেই খাবারের স্বাদ একটু অন্যরকম হয়ে যায়। আরো টেস্ট বেড়ে যায় । তাই এক্ষেত্রেও বঞ্চিত হবে না । সিন্নিতে দিয়ে দেবো নারকেল কোড়া। আমি এখানে একটি বড় নারকেলের হাফ করে নিয়ে, অর্থাৎ হাফ নারকেল কোড়া দিয়েছি।
কাজু কিসমিস দিলে টেস্ট আরো ভালো হয়, তাই কাজু কিসমিস দিয়ে দিলাম।আগে থেকে ধুয়ে রেখেছিলাম।
ছোটবেলা থেকেই দেখেছি সিন্নিতে এক চিমটি কর্পূর ব্যবহার করতে। কি কারনে কর্পূর ব্যবহার করা হয় তা আমি আজও জানি না, তাও আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিলাম।
প্রতিটি খাবারে আমরা আদা কুচি দিয়ে থাকি এক্ষেত্রেও অল্প করে আদা কুচি ব্যবহার করা হয়েছে।
এবার দিয়ে দিলাম ১০০ গ্রাম ক্ষীর।
তারপর দিয়ে দিচ্ছি এক কেজি আড়াইশো দুধ।
দুধ দেওয়ার পরে কাঁসার বাসনে বেশিক্ষণ রাখা যাবে না ।না হলে তেতো হয়ে যাবে। এ কারণে পুজো শেষ হওয়ার সাথে সাথেই আমরা সিন্নি মেখে নিয়েছিলাম। আমাদের বাড়িতে প্রথম থেকেই চল আছে, বাড়ির যিনি গার্জেন তিনি সিন্নি মাখেন। ছোটবেলায় দেখতাম দাদুকে, দাদু চলে যাওয়ার পর থেকে বাবা সিন্নি মেখে থাকে।
মাখা হয়ে গেলেই আপনারা সার্ভ করতে পারেন। এর থেকেও ভালো স্বাদ পেতে গেলে আপনারা কিছুক্ষণের জন্য ফ্রিজেও এটাকে রাখতে পারেন। তারপর খেতে পারেন।
খাবার তো খাবারই হয় । আমরা ভগবানকে যেমন সন্দেশ বা মিষ্টি দিই পুজোর জন্য, তেমন আমরা নিজেরাও আলাদা করে সন্দেশ কিংবা মিষ্টি খেয়ে থাকি। তাই আমি আপনাদের সাথে রেসিপি শেয়ার করলাম। যাতে আপনারা কোন ধর্মের বা পুজোর মধ্যে না গিয়ে ,শুধুমাত্র নিজেরা বানিয়ে খেতে পারেন।
আর যারা এখানে বাড়িতে সত্যনারায়ণের পুজো করে থাকেন, তাদের জন্যও এই রেসিপি শেয়ার করলাম। যাতে তারা সুন্দর করে সিন্নি তৈরি করতে পারেন।
আমার আজকের পোস্টটি আপনাদের কেমন লাগলো, তা কমেন্ট বক্সে জানাবেন। আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। সকলে ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন।
আমার তো নারায়ণ পূজোর সিন্নি মাখা খেতে খুব ভালো লাগে। তুমি কিভাবে সিন্নি মাখতে হয় এত সুন্দর ভাবে লিখেছো।দেখে খুব ভালো লাগলো। যাইহোক সে দিনকে সিন্নি টা খুব সুন্দর ভাবে মাখা হয়েছিল ।খেতেও খুব সুন্দর লাগছিল।
আমরাও আমাদের বাসায় সিন্নি রান্না করে থাকি। তবে আপনারা যেভাবে সিন্নি তৈরি করেছেন। সেভাবে আমরা তৈরি করি না। আমরা চুলার উপরে রান্না করে থাকি। আমাদের তৈরি করা সিন্নি দেখতেও অন্যরকম খেতেও নিশ্চয়ই বেশ ভালো হয়ে যায়। কেননা বিভিন্ন ধরনের কাজুবাদাম এবং কলা দুধ সবকিছুই আপনার এখানে ব্যবহার করেছেন। ধন্যবাদ নারায়ণ পুজারা সিন্নি তৈরি করার পদ্ধতি আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।
অনেক সুন্দরভাবে সিন্নি বানানোর রেসিপি আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন। আমিও ছোটবেলা থেকে এটার নাম সিন্নি হিসেবেই জানি। তবে বিভিন্ন জায়গায় সির্ণির প্রচলন থাকতে পারে। এটা যে শুধু খেতে সুস্বাদু এমনটা নয়,উপকরণ দেখে মনে হচ্ছে এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারীও বটে। বাসায় অনেক প্রকার মিষ্টি খাওয়া হয়েছে কিন্তু সিন্নি কখনো তৈরি করে খাওয়া হয়নি। আশা করি আপনার পোস্ট দেখে এর পরের বার আমি নিজেই বানাতে পারব এবং খেয়ে অবশ্যই রিভিউ দিব। ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এত সুন্দর পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
TEAM 7
Congratulations! Your post has been upvoted through steemcurator09.ছোট বেলায় আমি ঘুরে ঘুরে প্রসাদ খেতাম আশেপাশের বাড়িতে।আজকে আপনার এই শির্নি প্রসাদ এর ছবি দেখে মনে হচ্ছে এটা খেয়েছি আমি। কিন্তু নাম জানা ছিলো না আমার। যতটা মনে পরে এটাকে গোলা প্রসাদ বলা হতো। খেতে খুব ভালো হতো।
ধন্যবাদ এই রেসেপিটা শেয়ার করার জন্য। ভুলে যাওয়া স্বাদ মনে পরে গেল। অবশ্যই বাসায় একবার বানিয়ে দেখবো।
ভালো থাকবেন সবসময়।
প্রথমত আপনার রেসিপিটি খুব লোভনীয় হয়েছিলো।আর দ্বিতীয় কথা হচ্ছে আপনি খুব সুন্দরভাবে প্রতিটি স্টেপ ব্যাখ্যা করেছেন।যার ফলে আমরা সুন্দর একটা রেসিপি করা শিখে গেলাম।ধন্যবাদ আপনাকে