নারায়ণ পুজোর দিন - প্রথম পর্ব
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন ।বেশ অনেকদিন ধরে আইসক্রিমের পোস্ট করলাম।এর মাঝে আপনাদের জানিয়েছিলাম যে আমি দুই দিন নারায়ণ পুজোর জন্য বাজার করতে বেরিয়েছিলাম ।বাজারের পর্বগুলো আপনাদের সুন্দর লেগেছে তা জেনে আমিও খুশি। এবার আপনাদের সাথে শেয়ার করে নেব বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন এর মুহূর্তগুলো।
আমি বাবা মার কাছ থেকে শুনেছি যে দাদু বলে গেছে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন আমাদের বাড়িতে নারায়ণ পূজো করতে। আমি যখন অনেক ছোট ছিলাম, আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি, তখন আমার দাদু মারা যান ।দাদুর সাথে কাটানো সময় গুলো আমি এখনো ভুলতে পারিনি। মানুষটি আমার কাছে অত্যন্ত পছন্দের এবং প্রিয় ছিল। আমি এখনো ছোটবেলাকার কথা ভুলতে পারি না ।আমার মনে আছে ছোট থেকেই দেখে এসেছি বাড়িতে নানান ধরনের পুজো হতো। কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো থেকে শুরু করে নারায়ণ পূজো, সরস্বতী পুজো আরো কত ধরনের পুজো বাড়িতে করা হতো। তখন ঠাকুমাকে দেখতাম পূজোর জোগাড় করতে। বাড়িতে কত লোক আসত।
আমারও মনে আছে আমি মাঝেমধ্যে ছোট ছোট কাজ করে দিতাম। আমি যেহেতু খুব ছোট ছিলাম, তাই বাড়িতে লোকজন আসলে তাদেরকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতাম। বাচ্চাদের সাথে খেলা করতাম। তবে ঠাম্মা আমাকে দিয়ে বেল পাতা গুছিয়ে নিত ,এর সাথে আমাকে চন্দন বাটতে বলতো। সেই ছোটবেলার স্মৃতিটুকু আমার চোখে এখনো ভাসে।
যে কাজ আগে ঠাকুমাকে করতে দেখতাম আর মা সাহায্য করতো। আজ সেই কাজ আমার মা নিজে দায়িত্ব সহকারে গুছিয়ে করে ।আর আমি মাকে সাহায্য করি ।ঠাকুরমা বেঁচে থাকাকালীন নারায়ণ এবং লক্ষ্মী পূজার ফর্দ মাকে লিখে রেখে গেছিল। কিভাবে পুজো দেওয়া হয় আমাদের বাড়িতে তার সমস্ত কিছুই লিখে রেখে গেছিল। সেই ধরে ধরেই আমার মা এখনো নিয়ম মেনে আসছে।
সেই মতোই এইবার বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন সকাল দশটা নাগাদ আমাদের বাড়িতে পুজো করার কথা বলা হলো। আমাদের বাড়ির সমস্ত পুজো যে ব্রাহ্মণ করে, যে ব্রাহ্মণ আমাদের দুটো শোরুমেও পুজো দেয় প্রত্যেকদিন, তাকে দিয়েই আমরা সারা বছরের যে বাৎসরিক পুজোগুলো হয়ে থাকে সেগুলোই করিয়ে নিয়ে থাকি। আমাদের ব্রাহ্মণের বেশি বয়স না ।আমি দাদা বলেই ডাকি। তবে সে বেশ সুন্দর করে গুছিয়ে অনেকক্ষণ ধরে পুজো করে। তার ভক্তি শ্রদ্ধা দেখে আমার নিজেরও খুব ভালো লাগে।
আজকালকার ব্রাহ্মণরা ব্যবসা ছাড়া আর কিছু বোঝেনা ।কোনরকমে নম নম করে পুজো দিয়ে উঠতে পারলে বাঁচে। কিন্তু আমাদের বাড়ির এই ব্রাহ্মণ দাদাকে দেখেছি। একটু অন্য ধরনের ।আমাদের বাড়ির ব্রাহ্মণ সময়ের হেরফের করে না।। সে যে সময় বলে, সে সময়তেই আসে।
তাই বুদ্ধপূর্ণিমার সকালবেলায় আমার মাকে অনেক সকালে উঠতে হয়েছিল। আমার মা যদিও অনেক সকালেই ওঠে। সেদিন আরো শুনলাম মা ভোরবেলায় সাড়ে চারটে নাগাদ উঠেছে। আর আমি উঠেছিলাম ছটার সময়। আমাদের বাড়ির কাজের পিসিটা সকাল সকাল সেদিন কাজ করে দিয়ে গিয়েছিল। যেহেতু বৃহস্পতিবার ছিল। দুটো দিকের পূজো সামলাতে হবে এই ভেবেই হয়তো মায়ের সারারাত ঘুম হয়নি।
সকালবেলা ওঠার পরে দেখি মা বেশ অনেকটাই গুছিয়ে রেখেছে। বাড়ির পুজোটুকু মোটামুটি গোছানো শেষ। শুধু বাকি ছিল নারায়ণ পূজোর জোগাড়। আমি তো তার আগেই বাজার করে রেখেছিলাম। এবার সব জিনিস ঠিকঠাক মত করতে লাগলাম ফলকাটা এবং বাকি টুকটাক কাজ। আমি ঘুম থেকে ওঠার পরে স্নান সেরে নতুন জামা কাপড় পড়ে নিলাম। তারপর মায়ের কথা মতো যে কাজগুলো বাকি আছে সে কাজে লেগে পড়লাম।।
কিছু জিনিস বাজার থেকে আনতে ভুলে গিয়েছিলাম ,তাই বাবা সকালবেলা উঠেই সেগুলো নিয়ে এসেছিল। সেদিন আমরা সবাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়েছিলাম। আমার বাবা সাধারণত অনেক দেরিতে ওঠে। কিন্তু বাড়ির পূজোতে সকলকেই সকালে উঠতে হয়। পাশের বাড়ির দুই জনকে প্রত্যেক পুজোতে আগে থেকেই বলা হয়ে থাকে , যাতে তারা এসে একটু সাহায্য করে দিতে পারে ।তার মধ্যে একজন হল আপনাদেরও পরিচিত আমার পাশের বাড়ির মৌসুমী বৌদি। আর আরেকজন হল পাশের বাড়ির আর একটা কাকিমা।
বৌদিও বেশ দেরি করে ঘুম থেকে উঠলেও ,সেদিনকে সকাল সকাল স্নান করে আমাদের বাড়িতে চলে এসেছিল। কাকিমা আসার সাথে সাথে ফল কাটতে শুরু করে। আর বৌদি আমার সাথে টুকটাক কাজগুলো করতে শুরু করে। দেখে মনে হয় দূর থেকে যে কতটুকুই বা পরিশ্রম হয়েছে। কিন্তু কত কি যে করতে হয় ,তা হয়তো যারা পুজো করে তারাই জানে।
বাড়িতে ছোটবেলা থেকে পুজো দেখে বড় হয়েছি। তাই আমারও অভ্যাস হয়ে গেছে। পুজোর জিনিসপত্র কেমন কি রাখতে হয় এবং বাড়ির কোথায় কোথায় সে সমস্ত কিছু থাকে সবই আমার জানা। ঠাকুর মশাই সময় মত একদম দশটার সময় এসে হাজির হলো। আমরা তো সকাল থেকেই না খেয়ে ছিলাম। তারপর পুজো শুরু হল।
বাকিটুকু না হয় পরের পোস্টে আবার শেয়ার করব ।আজকের মত এখানেই শেষ করলাম ।সকলে সুস্থ থাকুন।
বৃহস্পতিবারের দিন নারায়ণ পূজোর খুব সুন্দর একটা বর্ণনা দিয়েছেন।আপনার দাদু মারা গেছে।আমি বুঝি আপনার প্রিয়জন হারানোর অনুভূতি কেমন।কারণ আজ থেকে ৫ মাস আগে আমার প্রিয় নানাকে হারিয়েছি।আমার পৃথিবী এখনো থমকিয়ে আছে।আপনার কাকি আপনাকে সাহায্য করেছে আপনার বৌদি আপনাকে সাহায্য করেছে।সবাই মিলেমিশে সব কাজ করেছেন।খুব ভালো লাগলো আপনার পূজোর বিষয়গুলো শুনে।
আপনি ছোটবেলা থেকেই দেখে আসছেন আপনাদের বাড়িতে এই পুজো পালন করা হয়ে থাকে। তবে আগে আপনার ঠাকুরমা এবং আপনার মা মিলে সম্পন্ন কাজ করতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে আপনার মা একাই সব কাজ গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু আপনি তার সাথে সাহায্য করছেন। মোটামুটি বলা যায় সারাটা দিন আপনারা অনেক বেশি ব্যস্ত ছিলেন। আপনাদের সাথে মৌসুমী বৌদি ও সাহায্য করেছে জানতে পেরে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ। নারায়ণ পূজার প্রথম দিন আমাদের সাথে উপস্থাপন করার জন্য। ভালো থাকবেন।