অনেকদিন পর একসাথে
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও সুস্থ আছি। গত দুইদিন ধরে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি চকলেট কেক তৈরির রেসিপি। আজকে ভাবলাম একটু অন্য কিছু মুহূর্ত আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
গত ৭ তারিখ ছিল রথযাত্রা। সেদিন সকাল থেকে আমার অনেক প্ল্যান থাকলেও আমার শরীর ভালো না থাকায় সবকিছুই একেবারে অন্যরকম হয়ে যায়। আমি সকাল বেলায় বেশ সুস্থ ছিলাম এবং নিজের বিজনেসের কাজে ব্যস্ত ছিলাম ।হঠাৎই শরীরটা এতটা অসুস্থ হয়ে পড়ল সাথে প্রেসার এত লো হয়ে গেল ,আমাকে বাড়ি চলে আসতে হল। তারপর থেকেই আমি একেবারেই বিছানায় ,উঠবার উপায় নেই।
এদিকে রথযাত্রার দিন আমাদের প্রায় দু জায়গা নিমন্ত্রণ ছিল। আমার মায়ের এক বান্ধবীর বাড়িতে সেদিন ছিল নারায়ন পুজো, সাথে রাতে খাওয়া দাওয়ার নিমন্ত্রণ ছিল ,আবার আমার খুব কাছের বান্ধবী অনামিকার বাড়িতেও নারায়ন পুজো ছিল এবং ও আমাদের পুরো বন্ধুদের গ্রুপকে নিমন্ত্রণ করেছিল।
আমাদের গ্রুপের আমরা যে কজন আছি ,সবারই নানান কাজে ব্যস্ততা, তাই সেভাবে একসাথে মিট করা হয়ে ওঠে না। পুজোর সময় এবং রবিবার করেই একটু চেষ্টা করা হয় যাতে আমরা কজন একসাথে আসতে পারি ,কিন্তু তাও একেকজনের একেক রকম কাজ থাকে। এদের মধ্যে অনেকেই বাইরে থাকার জন্য উইকেন্ডের সময় কোথাও বার হতে পারে না ।ওই মাত্র দুদিন ওরা চেষ্টা করে বাড়িতেই থাকার। তাই মাঝেমধ্যেই সমস্যা হয়ে যায়।
কিন্তু অনামিকা যেহেতু নিমন্ত্রণ করেছিল সবাইকে, সবাইকে যেতেই হত ।আর যেহেতু দিনটাও ছিল রবিবার সবারই ছুটির দিন তাই কারোর বাহানা চলত না। আমরা তাই বলাবলি করছিলাম যে আমাদের সবার টাইমের ম্যাচ খায় না, এবার হয়তো নারায়ণ ঠাকুরই আমাদের একসাথে মিট করাতে পারবে।
আগের দিন কত প্ল্যান করলাম যে সবাই মিলে একসাথে যাব ওদের বাড়িতে। কিন্তু আমার শরীরটা খারাপ হওয়াতে সবকিছুই গোলমাল হয়ে গেল। আমাদের বাড়ি থেকে অনামিকাদের বাড়ি বেশ অনেকটাই দূর। মানে আমাদের বন্ধুরা আমরা যারা রয়েছি। তারা মোটামুটি কাছাকাছিই রয়েছি। কিন্তু অনামিকা আমাদের বাড়ির আশপাশ থেকে অনেকটা দূরেই থাকে। মোটামুটি আধ ঘন্টা লেগে যাবে ওর বাড়িতে পৌঁছাতে।
তাই আমরা সব্বাই মিলে ঠিক করেছিলাম বিকেল বিকেল সবাই এক জায়গায় হব। তারপর ওখান থেকে একসাথে ওর বাড়ির দিকে রওনা দেব। কিন্তু দুপুর থেকে আমার শরীর খারাপ হওয়াতে আমি ভেবেছিলাম যাব না, আমি সবাইকে জানিয়েও দিয়েছিলাম, যে আমি যেতে পারব না। আমার এতটা আফসোস হচ্ছিল যে আমি রীতিমতো কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলাম ,কারণ রথের দিন শরীর খারাপ হওয়াতে রথ দেখতেও যেতে পারছিনা। আবার এদিকে বন্ধুদের সাথে এতদিন পরে দেখা হওয়ার কথা ছিল ,সেটাও ক্যান্সেল হয়ে গেল।
তার ওপর আমার শরীর ভালো না থাকায় বাড়ি থেকে বাবা-মাও বারণ করছিল আমি যাতে না যাই কারণ রাস্তায় বেরিয়ে যদি হুট করে শরীর খারাপ করে তখন সত্যিই সমস্যা হয়ে যাবে। এভাবে দেখতে দেখতে আমি যখন একেবারেই হাল ছেড়ে দিয়েছি, মোটামুটি বিকেল ছয়টা বেজে গেছে এবং আমি জানি ওরা হয়তো এতক্ষণে অনামিকার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তখনই শরীরটা একটু সুস্থ হতে লাগলো ।
মাকে বলার পর, মা পারমিশন দিল যাওয়ার জন্য ।আমি সাথে সাথে ওদেরকে ফোন করলাম এবং ওরা জানালো যে ওরা এখনও রওনা দেয়নি। অনামিকার বাড়ি যাবে বলে কিছু কেনাকাটা করছে।
সাধারণত পুজোর নিমন্ত্রণ থাকলে কিছু না দিলেও চলে ,কিন্তু আমাদের বন্ধু বলে কথা আমরা তাই মিষ্টি না কিনে, আমরা ওর পছন্দ মত কিছু টুকটাক জিনিস কিনেছিলাম চকলেট ,লস্যি এবং আরো অনেক ধরনের খাবার জিনিস।
যাই হোক আমি তাড়াতাড়ি করে রেডি হলাম এবং ওদের এক জায়গায় দাঁড়াতে বললাম এবং আমার জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বললাম সেই মতো আমি সেখানে পৌঁছেও গেলাম ।ওদের সাথে মিট করে তারপরে আমরা সবাই একসাথে রওনা দিলাম অনামিকার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
যেহেতু অনামিকার বাড়িটা অনেকটাই দূর ,তাই ওর বাড়ির দিকে সেরকম ভাবে আসা হয় না। অন্যান্য বন্ধুদের বাড়িতে প্রায়শই যাতায়াত রয়েছে, কিন্তু ওর বাড়িতে যাওয়া হয় না সেই ছোটবেলায় একবার ক্লাস নাইনে থাকতে ,ওর বাড়ির দিকে যাওয়া হয়েছিল। আমি তো একেবারে ভুলেই গেছি। যখন পৌঁছলাম তখন সবকিছু মনে পড়ে গেল।
তারপর গিয়েই শুরু হয়ে গেল নানান ধরনের আড্ডা এবং গল্প ।এতদিন পরে সবার সাথে দেখা ।সবাই সবাইকে নিয়ে গল্প জুড়ে দিল। নানান ধরনের কথা, হাসি, মজা ।পরিবেশ একেবারে বদলে গেল।আমার শরীরটা বেশ ভালো লাগতে শুরু করল। আসলে সবার সাথে দেখা হয়ে আমার নিজের শরীর অসুস্থর কথা আমি ভুলে গিয়েছিলাম।
ওদের বাড়িতে কীর্তন হচ্ছিল। আমরা প্রায় আড়াই ঘণ্টার মতো ছিলাম ।লাস্টে খাওয়া-দাওয়া করলাম। পোলাও ,খিচুড়ি ,আলুর দম ,পনিরের তরকারি ,চাটনি, মিষ্টি খেলাম। খুব ভালো রান্না হয়েছিল।
রথের দিন রাস্তাঘাটে প্রচুর ভিড় ছিল ।যেহেতু ওদের বাড়ির কাছে শক্তিনগর এর মাঠ এবং সেখানে রথের মেলা হয়। তাই মাঠ ভর্তি লোকজন ।ফেরার পথে এত লোকজন দেখে আমার তো মাথা খারাপ। শহরের কোন মানুষ বোধ হয় বাকি ছিল না ,সবাই রাস্তায় নেমেছিল রথের জন্য।
তবে আমার রথের মেলা দেখার সুযোগ হয়নি। কিন্তু আমি যা মজা করেছি তাতেই আমার সারাদিনের সমস্যাগুলো এক ধাক্কায় মিটে গিয়েছে। আপনাদের সাথে মুহূর্তগুলো শেয়ার করতে পেরে ভালো লাগলো। সকলে সুস্থ থাকুন। ভালো থাকুন।
প্রথমেই আপনার সুস্থতা কামনা করছি, অবশ্যই শরীরের দিকে খেয়াল রাখবেন, আপনি অসুস্থ না হলে আরও বেশি আনন্দ করতে পারতেন, তারপরেও অনেক আনন্দ করেছেন। ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আজকে রথযাত্রার দিন ছিল এবং আপনার বন্ধু অনামিকার বাড়িতে ও আপনার মায়ের বন্ধুর বাড়ি এই দুই জায়গাতেই আপনার নিমন্ত্রণ ছিল। কিন্তু আপনি কিছুটা অসুস্থ থাকারকারণে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
পরে আপনার মা আপনাকে যাওয়ার পারমিশন দেন এবং আপনি আপনার বন্ধুর বাড়িতে যান। সেখানে পোলাউ ,আলুরদম ,খিচুড়ি ইত্যাদি মজার মজার খাবার খান। তবে শরীর খারাপ না থাকলে হয়তো আরো অনেক বেশি আনন্দ করতে সক্ষম হতেন।
ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। আমি জানিনা তোমার শরীর খারাপ হয়েছে। যাইহোক বিকেল বেলায় বন্ধুদের সাথে বেরিয়ে আশা করি মনটা একটু ভালো হয়েছিল। সব বন্ধুরা মিলে বেশ ভালই মজা করেছ। মন খারাপ করো না সোজা রথ দেখতে পারোনি ।তাই কি হয়েছে উল্টো রথে তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাব।
আসলে অনেকদিন পরে যদি চেনা মানুষগুলো আবার একসাথে হওয়া যায় তাহলে তাদের সাথে দেখা হয়ে নিজের মনটা অনেকটাই আনন্দ করা যায় কারণ অনেকদিন পরে তাদের সাথে আবার নতুন করে দেখা। যাই হোক আজকে আপনার এই পোস্টটি অনেক সুন্দর ছিল আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট মাঝে মাঝে শেয়ার করার জন্য।