চকলেট আইসক্রিম রেসিপি
নমস্কার সকলকে। প্রায় দুদিন পর আজকে আমি আপনাদের কাছে চলে এসেছি আবার। বিগত দুদিন একটু ব্যস্ত ছিলাম। তাই সময় হয়ে ওঠেনি। ফোন জুড়ে কত স্মৃতি কত ছবি কত রকম গল্প পড়ে থাকলেও সুযোগ সময় হয়ে ওঠেনা সমস্ত কিছু শেয়ার করার ।কিছু কিছু ছবি তো এমন ভাবেই হারিয়ে যায় গ্যালারির বুকে। যখন অনেকদিন পরে গ্যালারি ঘাটি, তখন মনে পড়ে।
তাই আমি চেষ্টা করি যা করছি ,বা প্রতিদিনের যে সুন্দর মুহূর্তগুলো আমার অভিজ্ঞতার খাতায় জমা পড়ছে ,সেগুলোকে খুব তাড়াতাড়ি আপনাদের সামনে তুলে ধরার। না হলে আবার হয়তো সেগুলোও হারিয়ে যাবে।
এর মধ্যেই অনেকবার আইসক্রিম বসিয়েছিলাম। আমি আইসক্রিম খেতে ভালবাসি ,এটা আমার আগের পোস্টগুলোতে আপনারা বুঝতেই পেরেছেন ।আইসক্রিম নিয়েই এত গল্প লিখে যাচ্ছি ,আমি জানিনা ব্যাপারটা আপনাদের কাছে কতটা বোরিং লাগছে, তবে আমার কাছে লাগছে না।
চকলেট জিনিসটা বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করে ।আর এর সাথে যখন প্রশ্ন আসে চকলেট আইসক্রিমের তখন তো মানুষ আগেই হাত তুলবে ।আমার ভাই চকলেট আইসক্রিম খেতে খুবই ভালোবাসে। আর সত্যি বলতে আমিও আইসক্রিমের মধ্যে বাটারস্কচ ও চকলেট ফ্লেভার খুব পছন্দ করি। সাথে আমার আর একটা পছন্দের ফ্লেভার হল ব্ল্যাক কারেন্ট। যাইহোক এত গরম গেলো, তখন আইসক্রিম তৈরি করলাম না। আর যখন আমি আইসক্রিম বসালাম। তখনই বৃষ্টি শুরু হল।
টানা তিন দিন বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে আইসক্রিম করেছি একবার। তারপরে এই বৃষ্টির দিনগুলোতেও আইসক্রিম বসিয়েছিলাম। আজ যে আইসক্রিমটা আপনাদের শেয়ার করছি ,এইটা আমি বসিয়েছিলাম আমার জেঠুর বাড়ির জন্য ।জেঠু বলতে আমার বাবার বন্ধু। ছোটবেলা থেকে জেঠুর মতন করেই আমাকে স্নেহ করেছেন। বাড়িতে কোন ভালো-মন্দ রান্না হলে জেঠুর বাড়িতে দেওয়া হয়। কোনদিনও জেঠুদের আইসক্রিম করে খাওয়ানো হয়নি। তাই ভেবেছিলাম জেঠুদের বাড়িতে এই বার আইসক্রিম করে পাঠাবো। সেই মতনই কাজে লেগে পড়েছিলাম ।
আইসক্রিম তৈরি হওয়ার পরে, পরের দিন সকাল বেলায় যখন আইসক্রিমটা একটু টেস্ট করার জন্য কিছুটা স্কুপ তুললাম। কি মারাত্মক যে খেতে হয়েছিল আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না। আমার এত খারাপ লাগছিল ,জেঠুদের বাড়িতে এই আইসক্রিমের পুরো কৌটোটা পাঠাতে। কিন্তু তবুও ,যেহেতু ওনাদের জন্যই বানিয়েছি। তাই পুরোটাই আইসক্রিম পাঠাতে হলো।তারপরে কয়েকবার আমি নিজের জন্য আইসক্রিম বসিয়েছিলাম।
![]() |
---|
আজকে শেয়ার করছি, জেঠুদের বাড়িতে যে আইসক্রিম পাঠিয়েছিলাম। সেই আইসক্রিম কিভাবে বানিয়েছিলাম সেটাই ।আপনারা যদি এইভাবে বানাতে পারেন আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আইসক্রিম অসাধারণ খেতে হবে।তবে, চলুন পরপর ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিই, কিভাবে আইসক্রিম বানাতে হবে।
নং | সামগ্রী | পরিমাণ |
---|---|---|
১ | দুধ | ৫০০ |
২ | চিনি | এক কাপ |
৩ | গুড়ো দুধ | এক কাপ |
৪ | কোকো পাউডার | দুই চামচ |
৫ | অরিও বিস্কুট | ১০ টা |
৬ | কফি | দেড় চামচ |
৭ | চিনির গুড়ো | দেড় কাপ |
৮ | ফ্রেশ ক্রিম(আমূল) | ২৫০ এম এল |
আশা করি উপকরণ গুলো আপনারা ভালোভাবে দেখে নিয়েছেন, তো প্রথম ধাপেই আমি ৫০০ দুধ ওভেনে বসিয়েছি। এবং দুধ একটু ঘন করে নেব। তাই বেশ কিছুক্ষণের জন্য জ্বাল দেব।
এবার এর মধ্যে পরিমাণ মতন চিনি দিয়ে দিচ্ছি। আমি এখানে এক কাপ চিনি ব্যবহার করেছি। তারপর আবার ভালোভাবে চিনিটা মিশিয়ে নিচ্ছি।
যেহেতু চকলেট আইসক্রিম বানাচ্ছি তাই নিয়ে নিয়েছি কোকো পাউডার। আগে থেকেই সাইট করে রাখা হাফ কাপ দুধের মধ্যে কোকো পাউডার মিশিয়ে নিয়েছি।
তারপর সেই মিশ্রণটা জ্বাল দিয়ে রাখা দুধের সাথে মিশিয়ে নেব।
ক্রিম দিলে আইসক্রিম আরও সফট হয় এবং খেতেও ভালো লাগে। আমি এখানে ফ্রেশ ক্রিম ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে লিকুইড উইপিং ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। অথবা উইপিং ক্রিম পাউডার ব্যবহার করতে পারেন।
ক্রিম একটি কাঁচের পাত্রে ঢেলে নিয়ে আমি ক্রিমকে উইপ করে নিয়েছি মেসিনের সাহায্যে ,বেশ কিছুক্ষনের জন্য।
এবার এর মধ্যে দিয়ে দিচ্ছি দেড় কাপ চিনির গুঁড়ো।
একটা কাপে হাফ কাপ মত জল নিয়ে তাতে মিশিয়ে দিচ্ছে কফির গুঁড়ো। এবার এই মিশ্রণটি কাঁচের বাটির মধ্যে উইপ করে রাখা ক্রিমে ঢেলে দেব। তারপর আবার মিশিয়ে নেব।
গুঁড়ো দুধ অথবা কনডেন্স মিল্ক ব্যবহার করলে আইসক্রিম আরো খেতে ভালো লাগে। বাড়িতে গুঁড়ো দুধ থাকায় আমি সেটাই ব্যবহার করেছি।
কোকো পাউডার মিশিয়ে রাখা যে দুধ আমরা আলাদা করে সাইড করে রেখেছিলাম এবার সেটা এই ক্রিমের সাথে মিশিয়ে নেব।
টেস্ট যাতে আরো বেশি বেড়ে যায়, তাই আমি এখানে চকলেট বিস্কুট এড করছি। মিক্সচার গ্রাইন্ডার এ বিস্কুট গুলোকে গুঁড়ো করে নিয়েছি।
এবার আইসক্রিমের ব্যাটারের মধ্যে বিস্কুটের গুরু অ্যাড করে দেব।
সমস্ত মিশ্রণ ভালোভাবে আরেকবার মিশিয়ে নিয়ে, এবার একটা এয়ার টাইট কন্টেনার আমি ব্যবহার করেছি। আপনারা চাইলে যেকোনো কিছুতেই বসাতে পারেন। স্টিলের বাটির মধ্যেও আইসক্রিম জমে যায়। তবে আমার মতে কোন কৌটো বা টিফিন বক্স এর মধ্যে বসানোই ভালো।
এবার প্রায় ন থেকে দশ ঘন্টার জন্য আমি ডিপ ফ্রিজের আইসক্রিমের কন্টেনার রেখে দিলাম। মোটামুটি সারারাত আমি রেখে দিয়েছিলাম।
পরের দিন সকাল বেলায় কন্টেনার বার করতে, আপনারা দেখতে পারবেন আইসক্রিম কত সুন্দর ভাবে জমে গিয়েছে। এবার আমি এখানে চকলেট সিরাপ ব্যবহার করে ডেকোরেট করে নিচ্ছি। আপনারা আপনাদের পছন্দমত জিনিস দিয়ে গার্নিশ করতে পারেন আইসক্রিম।
এই ধাপটা হয়তো আর আমাকে বলতে হবে না, এবার এই টেস্টি চকলেট আইসক্রিম এর মজা নিন এবং সকলের সাথে শেয়ার করে নিন। গরমকালে এর থেকে শান্তির জিনিস আর কিছু হয় না।
আইসক্রিম দেখতে যেমন ভালো হয়েছে তেমন খেতেও দুর্দান্ত হয়েছে। আপনার বাড়িতেও চেষ্টা করে দেখুন অবশ্যই ভালো হবে।
আমি কিছু কথা বলে রাখি, আমি ক্রিম উইপ করেছি মেশিনের সাহায্যে, আপনারা সেখানে হ্যান্ড মিক্সচার ব্যবহার করতে পারেন। সেক্ষেত্রে হয়তো টাইম বেশি লাগবে। তবে মিক্সচার গ্রাইন্ডার এ ক্রিম দেবেন না।
এছাড়াও যদি আপনারা ক্রিম স্কিপ করতে চান। তবে প্রথমে যে ৫০০ দুধ নিয়েছিলেন, তা খুবই ঘন করে নিতে হবে। আর হতে পারে প্রথম আট ঘন্টায় আইসক্রিম পুরোপুরি না জমলো, অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, আপনাকে প্রথমে আট ঘন্টা আইসক্রিম বানিয়ে ফ্রিজে রাখার পরে , সেটাকে বার করে আবার চামচ বা হ্যান্ড মিক্সার এর সাহায্যে নাড়িয়ে নিয়ে,পুনরায় ফ্রিজে দিতে হবে ৮ ঘন্টার জন্য।
আমারে শেষ কথাগুলো বুঝতে পারলেন কিনা জানিনা তবে আমি আপনাদের সুবিধার্থে, ক্রিম এবং মেশিন বাদ দিয়ে একদিন আইসক্রিম করে দেখাবো। আজকের মতন এখানেই শেষ করছি ।সকলে ভালো থাকুন।
তোমার তৈরি আইসক্রিমটা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। আমি জানি তুমি সুন্দর আইসক্রিম বানাও। তবে আমার এই আইসক্রিম টা খাওয়া হয়নি। তোমার পোস্টটা পড়ে আমার খুব ভালো লাগলো। আমিও বাড়িতে চেষ্টা করব তোমার মতো করেই বানানোর।
এই আইসক্রিমই পরে আরেকবার বানিয়ে তোমাকে যে খাওয়ালাম। তুমি তো দেখছি সবই ভুলে যাচ্ছ। নাকি ভুলে যাওয়ার নাটক করছ, যাতে আবার আইসক্রিম খেতে পারো!??
এবার তুমি আইসক্রিম বানাবে আমি খাব। তারপর আমার পালা আবার হবে।
আপনাকে প্রথমে ধন্যবাদ জানাই এতো সুন্দরভাবে আমাদের মাঝে একটা আইসক্রিম বানানোর রেসিপি শেয়ার করার জন্য। আপনি প্রতিটা ধাপ খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।আর কাজ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অনেক সময় ব্যায় করেছেন।বিশেষ করে ফ্রিজে অনেক্ষন রেখে দিয়েছিলেন।আপনার রেসিপি দেখে মনে হচ্ছে এটা খেতে অনেক মজাদার ছিলো।আমিও আমার ছোট বোনকে এমন একটা রেসিপি তৈরি করতে বলবো।
একদম লোভ লেগে যাওয়ার মত অবস্থা। চকলেট আইসক্রিম আনলে অনেক পছন্দ করি সাথে আমার মেয়ে ও মাঝেমধ্যে বাসায় তৈরি করার চেষ্টা করি এবং ভীষণভাবে উপভোগ করি।
তবে আগের তুলনায় বর্তমানে আইসক্রিম হয়তো একটু কম হয় তার কারণ হলো ঠান্ডার সমস্যা আছে আমার তাই হাসবেন্ডের বকাবকি এর কারণে খুব একটা খেতে পারি না।
তবে আমি যখনই সুযোগ পাই একা একা বাহিরে যাই তখন আইসক্রিম কিনে খাও।
খুব সুন্দর এবং চমৎকার ভাবে আইসক্রিম তৈরি করা দেখিয়েছেন কেউ চাইলেই বাসায় তৈরি করে নিতে পারবে খুব সহজে।।