মেহেন্দি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ? আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। আমিও সুস্থ আছি ।আজ সকালবেলায় বৈষ্ণব পদাবলী পড়ছিলাম। যদিও এই বইটার সাথে আমার বহু যুগের সম্পর্ক। মোটামুটি বলতে গেলে উচ্চমাধ্যমিকের পর থেকে এই বই কতবার যে পড়েছি, তার ঠিক নেই, কিন্তু এখনো মনে হয় দেখলে নতুন। কিছু কিছু বৈষ্ণব পদ গুলো মাথার মধ্যে গেঁথে গেছে, আবার কিছু পদ এতটাই অপরিচিত লাগে, বলে বোঝাবার নয়।
যখন গ্রাজুয়েশন এবং মাস্টার্সের পড়া পড়েছি। পদ সংক্রান্ত ব্যাপারে শুধুমাত্র বড় প্রশ্ন আসত ।পদ গুলো বিশ্লেষণ করা অথবা পদের ভেতর থেকে দুটো লাইন তুলে দিয়ে সেটাকে বিশ্লেষণ করা এরকম ধরনের প্রশ্ন আসতো।
কিন্তু এখন তা তো নেই ,এখন নেটের পড়া রয়েছে ।আর নেটের প্রশ্ন আসে খুঁটিয়ে ।এতগুলো পদের মধ্যে থেকে মাঝপথে কোন একটা পদ তুলে দিয়ে জিজ্ঞেস করবে এটা কোন ধরনের পদ,কার লেখা। বৈষ্ণব পদাবলীতে এত এত পদ রয়েছে ,সব পদ মুখস্থ করা অথবা মাথায় রাখা খুব চাপের। আর এই নিয়েই কবে থেকে পড়ে আছি তাও মনে আসতে চায় না।
আজ সকাল বেলায় বৈষ্ণব পদাবলী পড়তে পড়তেই যখন একেবারেই মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল ,তখন ভাবলাম কি করি। গতকাল আমি মার্কেট থেকে মেহেন্দি কিনে নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম সময় সুযোগ করে একটা টাইমে শোয়ার আগে পড়বো। আসলে মেহেন্দি আমি খেয়াল করে দেখেছি সন্ধ্যেবেলা পরলে রাতের মধ্যে একটা সুন্দর রং আসে ,আর সকালবেলায় রংটা আরো গাঢ় হয়ে যায়।
গতকাল রাতেই ভেবেছিলাম পড়বো, কিন্তু পড়া হয়ে ওঠেনি কিছু কাজের জন্য ।তাই আজকে সকাল বেলায় নিজের আর লোভ সামলাতে পারলাম না। শুরু করে দিলাম মেহেন্দি করতে। আমি মেহেন্দি পড়তে ভীষণ ভালোবাসি আর মানুষকে পড়াতেও আমার ভালো লাগে ।নতুন নতুন ডিজাইন মন থেকেই বার করে আমি নিজের হাতে অথবা দিদি, বৌদি ,মায়ের হাতে চেষ্টা করি। আর এভাবেই আমি বেশ সুন্দর ডিজাইন করতে শিখে গিয়েছি।
ছোটবেলায় যখন কেউ মেহেন্দি পড়াতো তখন তার কাছে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতাম ।আমার হাতে মেহেন্দি পরিয়ে দিতে বললে সে যেমন তেমন করে ডিজাইন করে দিত। সে সব কথা আমার মনে আছে ।তখন যদি মেহেন্দি পড়তে জানতাম তাহলে কারো কাছে বলতামই না ।বিয়ে বাড়ির সময় বাড়িতে বিয়ে বাধলে যেখানে মেহেন্দি পরা হতো, আমি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। কিন্তু বাচ্চা বলে কেউ গুরুত্ব দিত না। আর অবশেষে আমার বাবা আমাকে মেহেন্দি পরিয়ে দিত।
আর এখন নিজে নিজেই সেটা সম্ভব হয়ে যায়। মেহেন্দি নানান ধরনের পাওয়া গেলেও আমি আমাদের মার্কেটে ১০ টাকা করে যে কাবেরী মেহেন্দি বিক্রি হয় ,সেটা ভীষণ পরিমাণে পছন্দ করি। কারণ এই মেহেন্দি র রং অনেক সুন্দর।
মেহেন্দি করতে আমার বেশিক্ষণ সময় লাগেনি। মোটামুটি ১৫ মিনিট হবে। আসলে আমি হাত ভরা করে মেহেন্দি পড়িনি আজকে। এমন নয় যে আমি হাত ভরাট মেহেন্দি পছন্দ করি না। মনের মতন করে মাঝেমধ্যে আমি মেহেন্দি করি।
যখন যখন হাত ভরাট ভালো লাগে ,তখন সেটাই পরি, আর যদি ফাঁকা ফাঁকা রাখতে ইচ্ছা করে সেটাই করি। ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে নিজের বিয়ের মেহেন্দি টা বাঁ হাতেরটা অন্তত নিজেই পড়বো। বিয়ে হবে কবে তা জানি না ।তবে মেহেন্দি নিয়ে আমার খুবই আহ্লাদ। সব থেকে বড় কথা, মেহেন্দির গন্ধ আমার ভীষণ পছন্দের।
মেহেন্দি পড়তে পড়তে সব ছবি তুলে রেখেছি যাতে আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারি ।কিভাবে স্টেপ বাই স্টেপ আমি মেহেন্দি পরলাম , আজ সেটাই আজকে আমি শেয়ার করছি। পরপর ছবির সাথে সাথে আপনারাও দেখে নিন।
আপনারা নিজেরাই বুঝতে পারবেন যে আমি খুব সিম্পল এর মধ্যে সুন্দরভাবে ডিজাইন করেছি। প্রথমে আঙুলে মেহেন্দি করা শুরু করেছি, প্রত্যেকটা আঙুলে একই রকম ডিজাইন করেছি এবং পুরোটাই নিজের মনের মতন করে। আঙ্গুলগুলো হয়ে যাওয়ার পরে হাতের তালুতে চলে এসেছি এবং হাতে তালুতে সুন্দর করে ডিজাইন করেছি ।সমস্ত শেষে আঙুলের উপরের মেহেন্দি দিয়ে ভরাট করেছি। এতে দেখতে আরো সুন্দর লাগে।
আমার মতে সব কিছুর একটা জ্যামিতিক আকার আছে ।আর সবকিছুর জ্যামিতিক আকার আছে বলেই সবকিছু এত সুন্দর এবং যে জিনিসের জ্যামিতিক আকার থাকে না, তার রূপটা অন্যরকমই হয়। মেহেন্দি করতে গেলে জ্যামিতিগতভাবে অবশ্যই আকার ঠিক রাখতে হবে।
প্রত্যেকটা ডিজাইনের একটা আলাদা জ্যামিতিক ফর্ম আছে ,সেই জ্যামিতিক ফর্ম ধরে রাখতে পারলে তবে জিনিসটা দেখতে সুন্দর হয়। আর কোনরকম ভাবে যদি সেখানে কোন ত্রুটি থাকে ,তাহলে একটু ট্যাড়া দেখতে হবে।
আশা করছি আমি আমার পোষ্টের মাধ্যমে আমার মেহেন্দির পুরো ডিজাইনটা আপনাদের সাথে বোঝাতে পেরেছি এবং ভালোভাবে শেয়ার করতে পেরেছি এবং মেহেন্দির প্রতি আমার যে প্রেম তাও আপনাদের সাথে শেয়ার করে নিতে পেরেছি।
আপনাদের মেহেন্দি পড়তে কেমন লাগে? আপনারা আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। আর আমার মেহেন্দি ডিজাইন আপনাদের কেমন লাগলো ,সেটাও কিন্তু আমি জানতে চাই।আজকে এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন।
তোমার হাতের মেহেন্দি ডিজাইন টা খুব সুন্দর লাগছে। আমারও তোমার কাছ থেকে অনেক দিন মেহেন্দি করা হয়নি। আমি জানি তুমি খুব সুন্দর মেহেন্দি করতে পারো। আমিও মেহেন্দি করতে ভীষণ পছন্দ করি তবে তুমি এখন কেন মেহেন্দি করেছ তা আমার জানা নেই । মেহেন্দির কেমন হয়েছে দেখতে যাব।
প্রথমেই বলব মেহেন্দি পরতে আমার ভীষণ ভালো লাগে।
একটা সময় ছিল মেহেন্দি শুকানোর আগেই আবার নতুন করে হাতে দিতাম।
তবে এখন সংসারের চাপে মেহেন্দি পড়ার সুযোগ হয় না তবে যখন সুযোগ পাই হাতে নেই। আর আপনার হাতের মেহেন্দির ডিজাইন টাও বেশ সুন্দর হয়েছে দেখতে চমৎকার লাগছে।