দোলপূর্ণিমার বিশেষ মুহুর্ত|| নগরকীর্তন
নমস্কার আমার প্রিয় বন্ধুরা। আশা করছি সকলে ভালো আছেন। দোল উৎসবের রেস তো কেটে গেছে। কিন্তু এখনও আমার আপনাদের সাথে কত কিছু শেয়ার করা বাকি ।তাই আজকে সেই নিয়ে চলে এলাম। তবে জানেন তো মায়াপুরে সাত দিন ধরেই দোল উৎসব পালিত হয়। আমি এর আগে কখনো মায়াপুরের দোল উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পারিনি ।তবে ভবিষ্যতে ইচ্ছা আছে। আসলে এত ভিড়ের মধ্যে আমার যেতে ভালো লাগেনা।
নগর কীর্তন সম্পর্কে বাবার কাছে শুনেছি, আগে এরকম দোল উৎসব এর দিনে শুধু নয় যে কোন বিশেষ বিশেষ দিনে কৃষ্ণ নাম ভজন করতে করতে বহু জন একসাথে মিলিতভাবে নগর পরিক্রমা করতেন। খোল ,কর্তাল এর আওয়াজে ভোরের মুহূর্ত জমজমাট হয়ে যেত।আমরা গৌর নিতাইয়ের অনেক ছবিতেও নগরকীর্তনের একটা দৃশ্য দেখতে পাই। আপনারা লক্ষ্য করেছেন কিনা জানিনা। যুগের সাথে সাথে এসব অর্থাৎ
যা বাংলার ঐতিহ্য বহন করে ,তা যেন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। আমি কিংবা আমার ছোট ভাই কখনো এরকম দেখিনি। তবে এখন অনেকেই উৎসবের দিনে নগর পরিক্রমায় বের হয়। এই উদ্যোগ যিনি বা যারা নেন তাদেরকে আমার অনেক ধন্যবাদ,আমাদের ঐতিহ্য আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য।
যাইহোক, দোল পূর্ণিমা শুরু হওয়ার আগের দিন অর্থাৎ শনিবার রাতে যে সমস্ত জিনিসপত্র কিনে আনা হয়েছিল সে নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছিলাম ।আজকে চলুন শুরু করি রবিবারের সকাল থেকে কি কি হল। রবিবারের সকাল বেলায় তাড়াতাড়ি স্নান সেরে আমি মায়ের সাথে লেগে পড়লাম। মা ঘরের পুজো নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তার সাথে সাথে গোছানো হচ্ছিল নগর কীর্তন এর যে দল আসবে, তাদের জন্য সমস্ত কিছু ।তারা যে গোপাল নিয়ে পরিক্রমা করতে বেরিয়েছে ।সেই মূর্তিটির সমস্ত জিনিস আমরা গুছিয়ে গুছিয়ে রাখছিলাম। সাড়ে নটার মধ্যে আমাদের সমস্ত কিছু গোছানো কমপ্লিট।
এদিকে ওনাদের আসার কথা ছিল সকাল সাড়ে দশটায় ।দেখতে দেখতে সাড়ে দশটা থেকে বারোটা বেজে গেল তাও কারোর আসার নাম নেই। আমরা সবাই বাড়িতে না খেয়ে ছিলাম ।আমার ভাই এর জন্যই সমস্যা হচ্ছিল ।তাই ওনাদের উপর একটু রেগেও গিয়েছিলাম। অতক্ষণ ধরে ছোট ছেলে না খেয়ে রয়েছে, এটা কি করে মেনে নিই ।যাই হোক তারপরে ওনাদের এলাকার একজন পরিচিত ভদ্রলোককে আমার বাবা ফোন করলেন এবং ভদ্রলোক খোঁজ নিয়ে জানালেন যে ওনারা সদ্য বেরিয়েছেন ।
তখন প্রায় বারোটা বাজে আমরা আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর বারোটা পনেরো নাগাদ হঠাৎ শুনতে পেলাম নাম সংকীর্তন এর আওয়াজ। বহুদূর থেকে কীর্তন আওয়াজ শুনতে পেয়ে বুঝতে পেরেছিলাম ওনারা আসছেন। শব্দ আমাদের বাড়ির কাছাকাছি আসার সাথে সাথেই আমি ,মা,ভাই জল নিয়ে দাঁড়ালাম। মা বলেছিল বাড়িতে ঢোকার সময় ওনাদের পা ধুয়ে দিতে সেই কারণে। তারপর সবাই ধরে গোপাল মূর্তিটি আমাদের তুলসী মন্দিরের পাশে নামালো ,যেখানে আমরা ব্যবস্থা করেছিলাম ।
আস্তে আস্তে ঠাকুর ঘর থেকে সমস্ত যাবতীয় আয়োজিত জিনিসপত্র আমরা তুলসী তলার সামনে নিয়ে আসলাম। ওনাদের আসার কিছুক্ষণ আগেই আমাদের বাড়ির গোপাল ঠাকুরটা আমরা তুলসীতলার সামনে নিয়ে এসেছিলাম। ওনারা আসার সাথে সাথে সারা বাড়ি হরিনামে ভরে গেল। এ যে কি আনন্দের মুহূর্ত ছিল বলে বোঝাবার নয় ।হরিনাম শুনলে সত্যিই মনে কি যে এক শান্তি এবং শক্তি কাজ করে তা হয়তো মুখে প্রকাশ করে বোঝানো যাবে না। ও নারা যখন কীর্তন করছিলেন তখন আমি গোপাল ঠাকুরকে প্রথমে বরণ করে নিলাম আবির দিয়ে। তার আগে গোপাল ঠাকুরকে মুকুট ওড়না পরিয়ে দিলাম। তারপর মিষ্টিমুখ করিয়ে দিলাম। আমার পরপর বাবা-মা এবং বাকি আরো দু-তিনজন এই ভাবেই ঠাকুরটিকে বরণ করে নিল।
আমার বাবার বন্ধু এবং তার এসেছিলেন। ওনারা কিছুক্ষণ কীর্তন করলেন এবং ততক্ষণ আমি সকলকে চন্দনের টিপ এবং আবির দিলাম। ওনারা ভীষণ ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলেন অতোখানি হেঁটে আসার পর। তাই দুটো কীর্তন করেই বিশ্রাম নিলেন । খাবারের যা আয়োজন করা হয়েছিল আমরা প্রসাদ হিসেবে সেগুলোই ওনাদের দিলাম।বাড়ির উঠোনে যেহেতু ওনারা সংকীর্তন করছিলেন, তাই আমাদের বারান্দায় খেতে বসানো হলো।
সকলের জন্য ফলপ্রসাদ ছিল। এছাড়া লুচি তরকারি এবং নিরামিষ কেকের ব্যবস্থা ছিল ।সাথে লাড্ডু, সন্দেশ এবং রসগোল্লা ছিল। আমরা হালকার মধ্যেই ওনাদের জন্য ব্যবস্থা করেছিলাম ।কারণ আমাদের বাড়ি থেকে ফিরে ওনাদের মন্দিরে খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন চলছে। অধিবাসের যে মহাভোজ রান্না হয়।
খাওয়া শেষ করলে আমরা সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে নিলাম।আমি, বাবা ,মা, ভাই ছাড়াও আমার পাশের বাড়ির এক জেঠিমা এবং আর একজন আমার সমবয়সী ভাই ভীষণ সাহায্য করছিল ওনাদের আপ্যায়ন করতে। খাওয়া দাওয়ার পর ওনারা আবার ফুল এনার্জি নিয়ে কীর্তনে সারা বাড়ি জমিয়ে দিলেন। যেহেতু আমিও নাম সংকীর্তন করতে ভীষণ ভালোবাসি। ওনাদের সাথে সাথে আমিও গাইছিলাম ।ভীষণ মজা হল কিছুটা সময়। তারপর ওনাদের ফেরার সময় হল। গোপাল ঠাকুরকে ধীরে ধীরে তুলে দেওয়া হলো গাড়িতে এবং ওনারা আবার পায়ে হেঁটে হরিনাম নিতে নিতে ফিরে গেলেন।
সকাল থেকে কিছু না খেয়ে ভীষণ খিদে পেয়ে গিয়েছিল ।ওনারা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই আমরা সমস্ত কিছু গুছিয়ে রাখলাম। তারপর প্রসাদ মুখে দিলাম এবং দুপুরের খাওয়া দাওয়া করলাম। মা সকাল বেলায় ঘরের পূজো সেরে রান্নাঘরের দিকে কিছুটা কাজে এগিয়ে রেখেছিল। ভাত তরকারি রান্না হয়ে গিয়েছিল ।কারণ ওনাদের আসতেও দেরি হয়েছিল। তারপর শরীর আর পারছিল না তাই ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। এভাবেই রবিবার সকালের মুহূর্তটা কৃষ্ণ নামে ভরে উঠেছিল।
আশা করছি এই আনন্দ ঘন মুহুর্তটি আপনাদের সকলের সাথে ভালোভাবে ভাগ করে নিতে পেরেছি। সকলকে অনেক ধন্যবাদ। রাধে রাধে।😇♥️☺️
আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে বুঝতে পারলাম, দোল পূর্ণিমা আপনাদের খুবই বড় একটা অনুষ্ঠান। আসলে নগর কীর্তন এই কথাটা আমি আপনার পোস্টেই প্রথম জানতে পারলাম। বিশেষ করে আমাদের এদিকে আপনাদের সনাতন ধর্মের মানুষ একেবারেই নেই বললেই চলে। তাই হয়তো বা অনুষ্ঠানগুলো অথবা আপনাদের বিশেষ দিনগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কম। ধন্যবাদ আপনাকে বিশেষ মুহূর্তগুলো আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। আপনার জীবনের প্রত্যেকটা মুহূর্ত এভাবেই ভাল কাটুক। ভালো থাকবেন।
মানুষ আসলে আধুনিকতার অর্থ জানেনা। আধুনিকতা মানে নতুন কিছু, যা পুরাতনের ভিত্তিতে / আদলে তৈরি হয়। আর এখন মানুষ পুরাতনের ঐতিহ্য নষ্ট করে , নতুন নিয়ে মাতামাতি করে। কি আর বলবো।
তাই তো এসব ভালো জিনিস মানুষের চোখে আর ধরা পড়ে না। আপনার কমেন্ট পড়ে সত্যি খুব ভালো লাগলো ।
আসলে আধুনিকতার ছোঁয়া পেয়ে, মানুষ ইতিহাস ঐতিহ্য সবকিছুই ভুলে যাচ্ছে। তবে এটা করা কতটুকু সঠিক সেটা আমার জানা নেই। আমার মনে হয় আমাদের পুরনো ঐতিহ্য গুলো ধরে রাখা, প্রত্যেকটা মানুষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্য পড়ে এত সুন্দর একটা রিপ্লাই দেয়ার জন্য।
Upvoted. Thank You for sending some of your rewards to @null. It will make Steem stronger.
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। দোল পূর্ণিমার বিশেষ মুহূর্ত গুলো আমাদের সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। আপনাদের এই উৎসব অনেকটা আনন্দের মোহ নিয়ে আসে আপনাদের জীবনে। আবার ও ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
দোল পূর্ণিমার উৎসবটি খুব ভালোভাবেই আপনি আপনার পোস্টে বর্ণনা করেছেন। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কি কি করেছেন এবং এর মধ্যে ভোজনে কি কি ছিল তাও আপনি লিখেছেন। দোলযাত্রা আপনারা খুব উপভোগ করেন এবং প্রায় এক সপ্তাহ ব্যাপী উদযাপন করেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের এই উৎসবের কিছু অংশ আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
যাক, খাবার গুলো লক্ষ্য করেছেন যখন, এতেই শান্তি।আমি কিন্তু ভোজন রসিক, কম খাই। কিন্তু খেতে ভালোবাসি।
দোল পূর্ণিমা উৎসব উৎযাপন আমরা প্রতিবছরে একবার করে, করে থাকি ৷ এই দিনে আমরা হলি খেলি সবাই মিলে তাছাড়াও পূর্জা পার্বণে মেতে উঠি ৷ তার পাশাপাশি ছোট বড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে ৷
ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷
আপনিও ভালো থাকুন। আপনার কমেন্ট পড়ে আমার ভালো লাগল। এটা ঠিক , অনেক জায়গায় অনেক মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এই পোস্টের মাধ্যমে দোল পূর্ণিমার বিশেষ মুহূর্তগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। দোল পূর্ণিমা অনেক বড় একটি অনুষ্ঠান। খুব ভালোভাবে দোল পূর্ণিমা উদযাপন করেছেন। আপনার জন্য শুভকামনা, ভালো থাকবেন।