বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দির - পর্ব ১
সকল সদস্যকে জানাই নমস্কার 🙏🏾
জগত মল্ল রাজা তার রাজ্য বিষ্ণুপুরে স্থানান্তরিত করেন। বাংলা পোড়ামাটি স্থাপত্য টেরাকোটা নামে প্রসিদ্ধ ছিল। এই পোড়ামাটির ইট বার্মা দেশ থেকে আনা হয়েছিল। সপ্তদশ শতাব্দীতে এই পোরামাটির ইটের শিল্প সর্বশ্রেষ্ঠ পর্যায় পৌঁছায়। রাজা জগৎ মল্ল এবং তাঁর বংশধররা পোড়ামাটির ও পাথরের শিল্প দ্বারা অসংখ্য মন্দির নির্মাণ করেছিলেন।
রসমঞ্চ
এই ইটের তৈরি প্রাচীনতম মন্দিরটি ১৬০০ খৃষ্টাব্দে রাজা হাম্বির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এর স্থাপত্য গত মান এতটাই উন্নত যে সমগ্র ভারত বর্ষে এর খ্যাতি প্রসারিত। রসমঞ্চ একটি স্তম্ভের উপর দন্ডায়মান ও একটি টাওয়ারে পাশে একটি গম্বুজবিশিষ্ট কুড়েঘরের সঙ্গে অবস্থিত। একটি পিরমিডয়াল সুপার স্ট্রাকচারে গঠিত ও তিনটি গোলাকৃতি প্রদর্শনী কক্ষ, পদ্ম মোটিভ, প্রসস্থ স্তম্ভ খিলান সহ সুসজ্জিত।
মৃন্ময়ী মন্দির
রাজা জগৎ মল্ল এই প্রাচীনতম মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন ৯৯৭ খৃষ্টাব্দে। মা দুর্গা এখানে মৃন্ময়ি রূপে পূজা পান। এই মন্দির রাজা মায়ের স্বপ্নাদেশে নির্মাণ করেন। যদিও মন্দিরটি নষ্ট হয়ে গেলে পুনর্গঠিত হয়, কিন্তু গঙ্গামাটিতে তৈরি দূর্গা মূর্তি অক্ষত ছিল। এই বারশত বছরের পুরনো পূজা ঘট স্থাপন করে শুরু করা হয়। মহা অষ্টমী ও নবমীর সন্ধিক্ষণে কামনা দাগানো হয় ও সবজি বলি দেওয়ার প্রথা আছে।
জোড়বাংলা মন্দির
১৬৫৫ সালে মল্ল রাজা রঘুনাথ সিংহ জোড়বাংলা মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মন্দিরটি পোড়ামাটি শিল্পের একটি অনন্য নিদর্শন ও একটি স্থাপত্যে কাঠামোর অধিকারী। দুই চালা আকৃতির ছাদের জন্য এর নাম জোড়বাংলা মন্দির।পোড়ামাটির কাহিনী দিয়ে সজ্জিত প্যানেলগুলিতে সুন্দরভাবে ‘বালগোপালের ক্রিয়াকলাপ’, ‘রাম-সীতার বিবাহ’, ‘ভীষ্মের শরসজ্জা’, ‘মা পার্বতী তাঁর দুই ছেলের সাথে’, ‘লক্ষ্মণ ও শূর্পণখার গল্প’ এবং আরও অনেক কিছুর মতো মহাকাব্য’র দৃশ্য বর্ণিত রয়েছে।
শ্যাম রায় মন্দির
এই মন্দিরটিও রাজা রঘুনাথ সিংহ ১৬৪৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি তে পাঁচটি চূড়া আছে বলে একে পাঁচচূড়া মন্দিরও বলা হয়।
'ঐরাবতের উপর বসে ইন্দ্রের যুদ্ধ’, 'রাধা-কৃষ্ণের প্রেম', ‘রাম ও রাবণরের কাহিনী’, ‘কৃষ্ণ লীলার দৃশ্য’, ‘পুরানো সমাজের শিকারের পরিস্থিতি’ ইত্যাদি ধর্মীয় গল্পের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন দৃশ্য উপস্থাপন করছে। এই মন্দিরের দৈত্যাকার রাশচক্র যা ‘গোপিনীদের মাঝে রাধা-কৃষ্ণ লীলা’ র বিভিন্ন রূপের চিত্র হল আর একটি আকর্ষণ।
এই সব মন্দির ছাড়াও আরো মন্দির সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে সারা শহরে। বিষ্ণুপুরে ও তার আশেপাশের অঞ্চলের দ্রষ্টব্য স্থান নিয়ে আলোচনা করবো পরের পর্বে।
আমার ব্লগটি পড়ার জন্য সবাইকে জানাই ধন্যবাদ।