পোড়ামাটির হাট বিষ্ণুপুর
পশ্চিমবঙ্গের মন্দির প্রাসাদ নির্মাণের পাথরের অভাবের জন্য সপ্তদশ শতাব্দীতে পোড়া মাটির ইট বিকল্প হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়েছিল। এই পোড়ামাটির কারুকাজের 'টেরাকোটা' শিল্প ও শিল্পীর কদর আজো বর্তমান। এই সুন্দর শিল্পকর্ম গুলি মূলত বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর এবং পাঁচমুড়ায় অবস্থিত।
সর্বভারতীয় হস্তশিল্পের প্রতিক লম্বা টেরাকোটা ঘোড়ার জন্য বিষ্ণুপুর বিখ্যাত। বাঁকুড়া জেলার বিকনা গ্রাম ধাতব ঢালাইয়ের ডোকরা রাজকীয় শিল্পের আবাস। ‘দশাবতার তাশ’ একটি পৃথিবী বিখ্যাত সংগ্রহ। ভগবান বিষ্ণুর দশ অবতারের উপর ভিত্তি করে তৈরি। বিষ্ণুপুর লন্ঠন বিভিন্ন অফিসে, হোটেলে, বাড়ির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন জন্য সমাদৃত।
শাঁখারি, কাঠের কারিগর, কাঁসারি, বালুচরি ও স্বর্ণচরী শাড়ির তাঁতি ও অনেক প্রকার শিল্পীদের বিপুল অবদান ও এদের সামগ্রীর প্রদর্শন ও জীবিকার কথা ভেবে সরকার একটি হাটের পরিকল্পনা করে। সমস্ত ক্রেতা ও বিক্রেতার সার্বিক মেল বন্ধন ঘটিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা ভবে এই পোড়ামাটির হাটের প্রকল্প সরকার বাস্তব রূপ দিতে সফল হয়েছে।
২০১৮ সালে বিষ্ণুপুরের ছিন্নমস্তা মন্দির পেরিয়ে পায়ে হাঁটা দূরত্বে বল্লালগড়ের জোর শ্রেনীর মন্দির সংলগ্ন মাঠে শুরু হয় পরিবেশ বান্ধব পোড়ামাটির হাট।
শনিবার ও রবিবার হাটের দিনে অসংখ্য দেশী ও বিদেশী পর্যটকের সমাগম হয়। পোড়ামাটির হাট যেমন প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে তেমন দেশি বিদেশি মানুষের রসাস্বাদনে সাহায্য করছে। এখানে দোকানের থেকে অনেক সস্তায় সঠিক দামে সরাসরি শিল্পীর হাত থেকে সঠিক জিনিস কেনার আনন্দ পাওয়া যায়।
আদিবাসী নৃত্য, টুসু গান,রণপা, ছৌ, বাউল, রাবণকাটা নৃত্য থেকে শুরু করে কীর্ত্তন হাটকে মেলা উৎসবের রূপ দেয় । শিল্পীদের জিনিসের প্রচার ও কেনাবেচা এই হাটের মুখ্য উদ্দেশ্য। নতুন ভাবে বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়ার সংস্কৃতির প্রচার করা। এই হাট শুরু হয় দুপুরে চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। এখানে বসে পোড়া মাটির সামগ্রীর দোকান , টেরাকোটা দোকান , শাঁখা, শঙ্খ, গয়নার দোকান , শুশুনিয়া অঞ্চলের পাথরের মূর্তির দোকান , দশঅবতার তাসের দোকান , কাগজের পুতুলের দোকান , কিছু শাড়ির দোকান , কাঠের জিনিসের দোকান , লন্ঠন ইত্যাদি ।
আর আছে যে জিনিস গুলো বাঙালিরা প্রথমেই খোঁজে হাটে । গরম গরম ঘুগনি, জিলিপি, পাঁপড় ভাজা, সাবুর পাঁপড় ভাজা , ফুচকা , পাঁপড়ি চাট , পায়েস , হরেক রকমের চপ, পিঠে, পুলী, পাটিসাপটা, আরো অনেক বাড়ির তৈরি খাবার জিনিস। হাটে ঘোরাঘুরি করার সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়।
আসলে পোড়া মাটির তৈরি জিনিসগুলো এখন আস্তে আস্তে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনার এই পোস্টে যে হাটের কথা বলেছেন সে হাতটা এখনো পর্যন্ত মাটির জিনিসের মর্যাদা ধরে রেখেছে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
আপনাকে ধন্যবাদ।