হাতে কাটা সেমাই রন্ধন প্রণালী।
[Edit by PicsArt]
চুই পিঠা,চুষি পিঠা,চুটকি পিঠা,স্যাই পিঠা, সেমাই পিঠা যে যেই নামে ডাকুক না কেন হাতে কাটা এই পিঠার কদর কিন্তু এখনো কমেনি। আমি নিজেও এটি পিঠা খেতে ভীষণ ভালোবাসি।
শীতকালে আমাদের গ্রামেগঞ্জে খেজুরের রস, নারকেল দিয়ে পিঠাটি রান্না করা হয়।এটাই মূলত ঐতিহ্যবাহী রান্না।কিন্তু বর্তমানে এই পিঠা রান্নার নানান পদ্ধতি বের হয়েছে।তবে কোনটাই কম স্বাদের নয়।
শুধুমাত্র একটি উপকরণ চালের গুড়া দিয়ে এই পিঠাটি তৈরি হয় বিধায় এর নিজস্ব স্বাদ খুব একটা নেই।বাকি অন্যান্য উপকরণের স্বাদ ধার করে পিঠাটি সুস্বাদু হয়।যখন এত বাহারি নাস্তা, নুডুলস ইত্যাদির সমাহার ছিল না তখন আমাদের দেশে অতিথি আপ্যায়নে শুধু পিঠাই বানানো হতো।
চটজলদি পিঠা হিসেবে ডিমের পিঠা,পোয়া পিঠাটাই বেশ বিখ্যাত।আর একটু সময় যাদের হাতে ছিল তারা নারকেল পিঠা,সেমাই পিঠা এগুলোই বেশি তৈরি করতো।
মূলত এই পিঠাটি সকালের নাস্তা হিসেবে দেয়া হতো। মা-দাদীদের দেখেছি রমজানের আগে বা শবে বরাতের পূর্বেই প্রায় ৫ থেকে ৭ কেজি পিঠা বানিয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে রাখতেন। এরপর পুরো রমজান মাসে অথবা অতিথি আপ্যায়নে রান্না করতেন।
তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবেও এ পিঠাটি বাজারে বিক্রি হয়।তবে সেটা চালের গুড়ির নয় ময়দায় তৈরি।মেশিনে তৈরি ছোট ছোট চুই পিঠা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।তবে সেটা চালের গুড়ির হাতে কাটা পিঠার মত অতটা সুস্বাদু হয় না।কিছুটা দুধের স্বাদ ঘোলে মিটানোর মত ব্যাপার।
আমি গত কয়েকদিন ধরে একটা রুটির পরিমাণ চালের গুড়ির কাই নিয়ে প্রতিদিন অল্প অল্প করে পিঠা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়েছি। চার-পাঁচ দিন পরে মোটামুটি প্রায় আড়াইশো গ্রামের মতো পিঠা হয়েছে।
তাই ভাবলাম আজকে রান্না করে ফেলি।
প্রচলিত পদ্ধতি থেকে একটু ভিন্নভাবে পিঠাটি রান্না করেছি।আজকে মূলত আমি চিনি ক্যারামেল করে পিঠাতে দিয়েছি সুন্দর রংয়ের জন্য। চলুন দেখি কিভাবে তৈরি করলাম এই হাতে কাটা সেমাই পিঠা।
.
উপকরণ | পরিমাণ |
---|---|
সেমাই পিঠা | ২৫০ গ্রাম |
দুধ | এক লিটার |
চিনি | ২৫০ গ্রাম |
কাজুবাদাম | একমুঠো |
কিসমিস | একমুঠো |
তেজপাতা,এলাচ | তিনটি |
নারিকেল কোরা | এক কাপ |
লবণ | স্বাদমতো |
আগেই বলেছি সেমাই রোদে শুকিয়ে নেয়া। তাই পিঠাগুলো একটু পানি দিয়ে ধুয়ে নিলাম। এতে করে পিঠার গায়ে থাকা বাড়তি চালের গুড়ো চলে যায়।বাড়তি চালের গুড়া থাকলে পিঠা বেশি ঘন হয়ে যায়।
বলক দেয়া দুধে পিঠাগুলো দিয়ে দিলাম।সাথে দিয়ে দিলাম তেজপাতা এলাচ ও লবণ।এরপর দুধ ঘন হয়ে পিঠা সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত নেড়ে নিতে হবে।পাশে একটি চুলায় চিনি ক্যারামেল করে নিলাম।আড়াইশো গ্রাম চিনি এক টেবিল চামচ পানি দিয়ে লাল করে গলিয়ে নিলাম।
প্রায় সেদ্ধ হয়ে আসলে কাজুবাদাম ও নারকেল বাটা দিয়ে নেড়ে নিলাম।যখন দেখলাম পিঠা পুরোপুরি সিদ্ধ হয়ে গেছে তখন চিনির ক্যারামেল দিয়ে দিলাম।চিনির কেরামেল দেওয়ার সাথে সাথে চমৎকার একটি রং চলে আসলো।
ওপরে কিসমিস গুলো ছড়িয়ে দিলাম এবং আরেকটু ঘন হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম।তবে খুব বেশি ঘন করব না কারণ ঠান্ডা হলে আরো ঘন হয়ে যাবে।এরপর কাঁচের বাটিতে নামিয়ে ঠান্ডা করে পরিবেশন করার পালা।
এ পিঠাটি শুকনো ও কাঁচা দু অবস্থাতেই রান্না করা যায়।তবে কাঁচা পিঠা আমার কাছে বেশি সুস্বাদু লাগে।আর শুকনো পিঠার সুবিধা হলো এটা আপনি অনেকদিন পর্যন্ত বানিয়ে সংরক্ষণ করতে পারবেন।
আপনারা যারা হাতে সেমাই বানাতে পারেন না তারা youtube দেখে টেকনিক শিখে নেবেন। এটি বানানো খুবই সহজ কিন্তু যারা একেবারেই আনাড়ি তাদের জন্য একটু সময় সাপেক্ষ।
Device | Name |
---|---|
Android | vivo v19 |
Camera | triple camera 48mp+8mp |
Location | Bangladesh 🇧🇩 |
Shot by | @hasnahena |
আপনি আজ আমাদের মাঝে হাতে কাটা সেমাই পিঠা রান্নার পদ্ধতি শেয়ার করেছেন। আমার আপনার এই পিঠা গুলো দেখে মনে হলো আমাদের দিকে সরু পিঠা তৈরি হয় সেই পিঠার মতো লাগছে। এবং রান্নার পদ্ধতিটা ও ঠিক সরু পিঠা রান্নার মতো যাই হোক সুন্দর একটি পোষ্ট উপহার দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
TEAM 6 : Congratulations!
This comment has been curated using steemcurator08. We appreciate your efforts on making useful comments. Thank You! 😊
ধন্যবাদ আপনাকে।
হতে পারে আপনাদের ওখানে এই পিঠার নাম সরু পিঠা। কারণ এ পিঠার নাম একেক অঞ্চলে একেক রকম। তবে নাম যাই হোক পিঠা টি খেতে খুব মজা হয়। ভালো লাগলো আপনার মন্তব্য পেয়ে।
জি এই পিঠার নাম হয়তো বা একা একা অঞ্চলে এক এক নামে পরিচিত এবং এটা একদম সত্য এই পিঠা খেতে অনেক সুস্বাদু এবং ভালো লাগে। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ সুন্দর একটি রিপ্লাই দেওয়ার জন্য।
TEAM 6 : Congratulations!
This post has been curated using steemcurator08. We appreciate your efforts on making quality blogs and post relevant comments. Thank You! 😊
সেমাই পিঠাটা আমার শাশুড়ি অনেক সুন্দর তৈরি করতে পারে। আম্মি খুব একটা পারিনা। খুব একটা সুন্দর হয় না। তবে এই পিঠা যে সংরক্ষণ করে রাখা যায় এটা আমার অজানা ছিল।
আমি পিঠা পছন্দ করি খুব একটা না। যদি কেউ তৈরি করে দেয় তাহলে খাওয়া যায় তবে নিজের এত কষ্ট করে ইচ্ছা লাগে না।
তবে আমার হাজবেন্ড এরকম পিঠা অনেক পছন্দ করে, তার ইচ্ছা আমি এরকম তৈরি করি।।আমার জন্য ভালো হলো। আপনার রেসিপিটা দেখে অন্তত তাকে একটু খাওয়ানো যাবে তৈরি করে।
পিঠা পছন্দ করে না এমন মানুষ আসলে দেখিনি। আমিও এই পিঠা বানাতে খুব বেশি দক্ষ নই। তাই অল্প অল্প করে বানিয়ে রাখি। প্রতিদিন অল্প করে বানিয়ে শুকিয়ে রাখলে দেখবেন খুব একটা কষ্ট হবে না।
পোস্টটি আপনার ভালো লেগেছে জেনে খুব আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
আপনার হাতে তৈরি করে সেমাই গুলো আসলেই খুবই সুন্দর। এসব খাবার আমাদের বাংলাদেশী খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। আপনি যে খাবার তৈরি করেছেন এই খাবার আমার খুবই পছন্দের একটি খাবার। আশা করি পরবর্তীতে আরো সুন্দর সুন্দর খাবারের রেসিপি আমাদের মাঝে মাঝে শেয়ার করবে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে এত সুন্দর একটা রেসিপি শেয়ার করার জন্য।
সুস্বাদু পিঠা পুলি হল বাঙালিদের ঐতিহ্যবাহী খাবার । বাঙালিরা খেতে ভালোবাসে আবার অন্যকে খাওয়াতেও ভালবাসে। সকালের নাস্তা কিংবা বিকেলের নাস্তা হোক বাঙালিরা মিষ্টি জাতীয় খাবার অনেক পছন্দ করে ।সেমাই পিঠা তার ভেতরে অন্যতম ।
এই সেমাই পিঠাকে আমাদের অঞ্চলে বলা হয় চুষি পিঠা। আবার নতুন জামাই আসলে এই পিঠাটা তৈরি করতেই হবে , এটি আমাদের একটি রীতি। তখন এই পিঠাকে বলা হয় চলন্ত পিঠা। আপনি এই পিঠার প্রতিটি উপকরণ খুব সুন্দর ভাবে আমাদের সাথে তুলে ধরেছেন এবং তা ছবির মাধ্যমে শেয়ার করেছেন। এই পিঠা তৈরি করতে অনেক কষ্ট হলেও এটা খেতে অনেক সুস্বাদু। যারা মিষ্টি পছন্দ করে তাদের সবার কাছে এই পিঠাটি অনেক প্রিয়।সেমাই পিঠার রেসিপি আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।