জীবনে সফলতা অর্জন করবেন? চাইলে আপনিও পারবেন।
মানুষের জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চাই প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তি এবং দৃঢ় মনোবল। বাস্তবে কোন কিছুই মানুষের উন্নতির পথে বাধা হতে পারে না। বাধা হল ভিতরের ভয়। যার জন্য সে নিজেই দায়ী। চলুন সফল কিছু ব্যক্তিদের উদাহরণ দেখে নেই।
আমেরিকার বিখ্যাত বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন দশ হাজার বার চেষ্টার পর বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেছিলেন। এডিসন লেখাপড়ায় খুবই অমনোযোগী ছিলেন। কোন ক্লাসেই একবারে পাশ করেন নাই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্কুল পালিয়েছেন। নজরুল দারিদ্র্যতার কারণে পড়তেই পারেননি। লালন ফকির জানতেন না স্কুল কী জিনিস? আজ মানুষ এদের কর্ম নিয়ে গবেষণা করে। ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করে। অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জবস্ প্রতি রবিবার ভালো খাবারের আশায় সাত মাইল দূরে পায়ে হেঁটে মন্দিরে যেতেন। আন্ড্রু কার্নেগীকে তার ময়লা পোশাকের জন্য এক পার্কে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ত্রিশ বছর পর কার্নেগী সে পার্কটি কিনে নিয়ে তাতে সাইনবোর্ড লটকে দেন, ‘পার্ক সবার জন্য।'
ভারতের সংবিধান প্রণেতা বাবা আম্বেদকর নিম্নবর্ণের হওয়ায় তাকে স্কুলের বারান্দায় ক্লাস করতে হয়েছে। গাড়িতে তাকে উঠতে দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিয়ার রহমান বাজার থেকে চাঁদা তুলে স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। বাবার গরু না থাকায় নিজে জমিতে কাঁধে লাঙ্গল জোয়াল টেনেছেন। ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী এপিজে আব্দুল কালাম দরিদ্র মাঝি পল্লীর ছেলে হওয়ায় উপোস থেকে মাইলের পর মাইল হেঁটে স্কুল করেছেন। পরবর্তীতে তিনি মেধা আর বুদ্ধিমত্তার আলোতে পুরো ভারতবাসীকে উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছেন। বড় হওয়ার জন্য সুন্দর চেহারা বা শারীরিক যোগ্যতা জরুরী নয়। দার্শনিক শেখ সাদী কদাকার ছিলেন।
source
সঙ্গীতশিল্পী লতা মুঙ্গেষ্কারের চেহারা মোটেই সুন্দর নয়। বীর তৈমুর লং খোঁড়া ছিলেন । দার্শনিক ও বিজ্ঞানী এরিস্টটল তোতলা ছিলেন। গণতন্ত্রের প্রবক্তা আব্রাহাম লিঙ্কনের হাত ও মুখ বড় এবং অসামঞ্জস্য ছিল। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং ছিলেন বিকলাঙ্গ । তিনি চলাফেরা করতে পারেন না। অথচ আধুনিক বিজ্ঞান তার হাতেই শাসিত হচ্ছে। নেপোলিয়ান বেঁটে ছিলেন। স্মৃতিশক্তিও মানুষের এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হতে পারে না । আইনস্টাইন নিজের বাড়ির ঠিকানা মনে রাখতে পারতেন না।
নিউটন বেখায়ালে বান্ধবীর আঙ্গুল পুড়িয়ে দিয়েছিলেন। ফলে নিউটনের জীবনে আর বিয়ে করাই হয়নি। অথচ পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী হলেন এরা দু'জন। অর্থাৎ নিউটন ও আইনস্টাইন। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চৌকস হওয়ার দরকার নেই। আমাদের থেমে গেলে না। আফ্রিকার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ৩০বছর কারাগারে থেকে পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ইতালির জনক গেরিবল্ডি সতের বার যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পরবর্তীতে ইতালিকে মুক্ত করেছিলেন।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় চার ব্যক্তিত্ব : অ্যাপলের স্টিভ জবস্, ফেইসবুকের জুকারবার্গ, মাইক্রোসফটের বিল গেটস, আলীবাবা ডট কমের জ্যাক মা—কেউই লেখাপড়া শেষ করেননি। কিন্তু তারা কর্মজীবনে সফল ও অনুকরণীয়। এরা বিশ্বকে নতুন পথ দেখিয়েছেন। সবাই একটি কথা বলেছেন, জীবনে ঝুঁকি নাও, জিতলে তুমি নেতৃত্ব দিবে। আর না জিতলে তুমি পরবর্তী কাউকে পথ দেখিয়ে দিবে।
এদের গুরু বিল গেটসের সরল উক্তি হল,
‘তরুণ বন্ধুরা, তোমরা মেয়েদের পেছনে না ঘুরে পড়ালেখার পেছনে ঘুরো। সময় হলে মেয়ে নয়, মেয়ের মা-বাবারাও তোমাদের পেছনে ঘুরবে।'
source
কেউ মায়ের পেট থেকে কিছু শিখে আসেন না। অর্থ, বংশ, সামাজিক মর্যাদা কোন কিছুই বড় হওয়ার পথে বাধা নয় । যুগে যুগে মানুষ সামনে এগিয়েছে তার নিজস্ব উদ্যোগে আর বলিষ্ঠ পদক্ষেপের কারণে। নতুন কিছু করার নেশা আর সামনে যাওয়ার প্রেরণা, দৃঢ় বিশ্বাস আর পূর্ণ আস্থার কারণেই মানুষ আজ
জ্ঞান-বিজ্ঞানের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছে। পাখি নিশ্চিন্ত মনে গাছের ডালে বসে থেকে রাত্রী যাপন করে। পাখির আস্থা ডালের উপরে নয়। পাখির আস্থা নিজের ডানার উপর। নিজের উপর অবিচল আস্থা উপরে উঠার পূর্বশর্ত। গুটিকয়েক মানুষের হাত ধরেই বিশ্ব আজ এখানে এসে দাড়িয়েছে।
pexels
তবে আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, মহান স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস হচ্ছে সব অনুপ্রেরণার মূল উৎস। স্রষ্টা তার সৃষ্টিকে উদ্ভাসিত করেছেন তার সৃষ্ট মানবকূলের মাধ্যমেই । এজন্যেই স্রষ্টার ঘোষণা হচ্ছে, মানবতাই স্রষ্টার শ্রেষ্ট সৃষ্টি ।
খুব সুন্দর একটা পোস্ট শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপু।
মহান স্রষ্টাকে স্মরণে রেখে তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস নিয়ে চেষ্টা চালাতে হবে। নিজের দক্ষতা বৃদ্ধি আর পরিশ্রম করতে পারলে সফলতা আসবাই।