এক ভিন্ন রকম পিরামিড-চিচেন ইতজা

in Incredible India7 months ago
el-castillo-1039528_1280.jpg

pixabay

ক্রিস্টফার কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কারের অনেক আগেই গড়ে উঠেছিল মায়া সভ্যতা। ৯৮৭ খ্রিস্টাব্দের দিকে এ সভ্যতা গড়ে উঠেছিল বলে ধারণা করা হয়। তখন মেক্সিকোর রাজধানী ছিল চিচেন ইতজা। মায়া ওটলটেক শিল্পের সমন্বয়ে ইয়ুটাকান উপদ্বীপে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে উঠেছিল চিচেন ইতজা।

এ নগরীতে কোন নদী না থাকলেও বড় বড় কুয়া ছিল। চিচেন ইতজার অর্থ ইতজাদের কুয়ায় যাওয়ার মুখ'। এই শহরে এখনো অনেক কুয়া আছে। আনুমানিক ৫০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে এখানে খুব উন্নত মায়া সভ্যতা বিস্তার লাভ করে। এ সময় চিচেন ইতজা ছিল পুরো ইউকাটান অঞ্চলের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সামরিক ক্ষমতার প্রধান কেন্দ্র। এই সুবর্ণ সময়ের বেশির ভাগ নগরটি শাসন করে যুদ্ধবাজ ইনকা গোত্র ইতজা।

ইতজাদের পরেও বিভিন্ন ইনকা গোত্র জায়গাটি শাসন করে।এই পিরামিডটির চার প্রান্তে ৯১টি করে ধাপ আছে। ওপরের প্লাটফর্মকে একটি ধাপ ধরে নিলে মোট ৩৬৫ ধাপ, যা বছরের ৩৬৫ দিনকে নির্দেশ করছে। জ্যোতির্বিদ্যার প্রতি মায়াদের গভীর আকর্ষণের ছাপ পাওয়া যায় কুকুলকান পিরামিডে।

mexico-1355036_1280.jpg

Pixabay

নানা সময়ে সূর্যের ছায়া কুকুলকানে সিঁড়ির ওপর এমনভাবে খেলা করে, মনে হয় কুয়ার দিক থেকে বিশাল একটি সাপ আস্তে আস্তে চিচেন পিরামিডে উঠে আসছে। পিরামিডের চূড়ার মন্দিরে খোদাই করা আছে বৃষ্টিদেবতা চাক আর সর্পদেবতা কুয়েটজাকোটের মূর্তি। উত্তর দিকে ধাপগুলোর নিচের একটি প্যাসেজ ধরে মন্দিরের ভেতর ঢুকলেই চোখে পড়বে লাল জাগুয়ার মূর্তি।

চিচেন ইতজাতেই রয়েছে মায়াদের সবচেয়ে বড় খেলার মাঠ। এ মাঠটি ১৬৬ মিটার লম্বা আর ৬৮ মিটার প্রশস্ত। মাঠটিকে ঘিরে আছে ২৫ ফুট উঁচু দেয়াল। দুই দলের মধ্যে হতো খেলা। কনুই, কবজি আর কোমরের নিচের অংশ দিয়ে বলকে আঘাত করতে পারত খেলোয়াড়রা। দেয়ালে আটকানো আংটায় বল ঢোকাতে পারলেই গোল। পরাজিত অধিনায়ককে বলি হতে হতো বিজয়ীর হাতে। অন্যদের মতে অবশ্য বিজয়ীকেই ত্যাগটা স্বীকার করতে হতো।

mexico-1093918_1280.jpg

Pixabay

অনাবৃষ্টির সময় দেবতাকে তুষ্ট করার জন্য এ খেলা ও বলির আয়োজন করা হতো। বল কোর্ট থেকে পূর্বদিকে কিছুটা গেলেই জাগুয়ার মন্দির আর খুলি চত্বর। এই চত্বরেই বলকোর্টের পরাজিতদের হত্যা করা হতো। জাগুয়ার মন্দির অতিক্রম করে উত্তরমুখী একটি রাস্তা ধরে গেলে মিলবে পবিত্র কুয়া। কুয়াগুলো মায়াদের পানির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি ধর্মীয় দিক থেকেও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। কুয়ার গোলাকার মুখ দিয়ে নিচে তাকালেই চোখে পড়বে ঘোলাটে সবুজ পানি।

মায়া নগরী চিচেন ইতজার কুয়া থেকে ১৯০১ সালে বেশ কিছু মানব-হাড় উদ্ধার করেন মার্কিন অভিযাত্রী এডওয়ার্ড থমসন। এখানে কী করে এলো এসব হাড়? তবে কি তাদের দেবতার উদ্দেশে উৎসর্গ করা হয়েছিল? সম্ভবত। আবার অন্য অর্থও থাকতে পারে এসব হাড়ের।

chichen-itza-683198_1280.jpg

Pixabay

পিরামিডের বাইরের অংশ সমতল নয়। বরং ধাপযুক্ত এর ভিত্তি হলো বর্গাকার। চিচেন ইতজা দখল-বেদখল হয়েছে অনেকবার। তবে ১২২১ সালের গৃহযুদ্ধে ধ্বংস হয়ে যায় অধিকাংশ স্থাপনা। মেক্সিকানরা দুই রকমের, যারা লম্বা-চওড়া তারা দখলবাজ, স্প্যানিশদের বংশধর। বেঁটে- খাটো স্বাস্থ্যবানরা হচ্ছে মায়াদের উত্তরাধিকারী। মায়াদের পতনের পর চিচেন ইতজার কথা ভুলে গিয়েছিল মানুষ। প্রত্নতত্ত্ববিদ এডওয়ার্ড থমসনের কল্যাণে ১৯১০ সালে চিচেন ইতজার কথা জানতে পারে বিশ্ববাসী।

JvFFVmatwWHRfvmtd53nmEJ94xpKydwmbSC5H5svBACH81LV2Taw36yPRxufNrt2sijWtjPt6kzrf6NDRFxGaPNxTV83YcjEPpjmnTWFhW4iWWoxsJUsqYLYN4KybUavarrWkoCgWa.jpg

3DLAmCsuTe3bV13dhrdWmiiTzq9WMPZDTkYuSGyZVu3GHrVMeaaa5zs2PBqZqSpD3mqpsYSX3wFfZZ5QwCBBzTwH9RFzqAQeqnQ3KuAvy8Nj1ZK1uL8xwsKK6MgDT8xwdHqPK76Y63rPyW9N4QaubxdwM3GV2pD_1.gif

Sort:  
Loading...
 7 months ago 
  • আপনি এক ভিন্ন ধর্মী পিরামিড চিচেন ইতজাঅনেক তথ্য আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। এই পিরামিষ সম্পর্ক খুব একটা ধারণা আমার ছিল না। মিশন নীল নদের দান এই গল্পটিতে পিরামিক সম্পর্কে জেনেছিলাম। তবে আজকে আপনি এটি সম্পর্কে অনেক কিছু ই লিখেছেন।
    ধন্যবাদ আপনাকে তথ্য বহুল একটি পোস্ট
    শেয়ার করার জন্য।
 7 months ago 

আপনি এক ভিন্ন রকম পিরামিড চিচেন ইজতা এর তথ্য আমাদের মাঝে তুলে ধরেছেন। আমার এর আগে এই পিরামিড সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। তবে আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করে এই পিরামিড সম্পর্কে অনেক তথ্য জানতে পারলাম।

 7 months ago 

অনেক তথ্যবহুল একটি পোস্ট করেছেন। পিরামিড এর কথা শুনলেই মিশরের কথা মাথায় আসে। টিভিতে আগে দেখতাম। আজকে আপনার পোস্টের মাধ্যমে অনেক তথ্য জানতে পারলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.16
JST 0.032
BTC 58630.84
ETH 2465.03
USDT 1.00
SBD 2.38