'Incredible India' ও @meraindia র সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই এত সুন্দর একটি বিষয় নিয়ে কনটেস্টের আয়োজন করার জন্য।আজকের প্রতিযোগিতার বিষয়বস্তুু হলো জীবনে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে সেরা ও সবচেয়ে কষ্টকর ঘটনা নিজের স্মৃতিতে কতটা ছাপ ফেলেছে তার প্রতি আলোকপাত করা।
কনটেস্টটি যখন প্রকাশিত হলো তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম যে, এই সুন্দর বিষয়টিতে অবশ্যই আমি লিখবো। আমার নিজের জীবনের ঘটনা গুলো, আমার ভাবনাগুলো শেয়ার করব। এজন্য এডমিন দিদিকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আর আমি আমার তিনজন বন্ধুকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
@muktaseo
@sayeedasultana
@familycooking1
প্রথমেই বলে নিই স্মৃতি নামে আমার কোন বান্ধবী নেই। তাই কারো চেহারা নয় বরং আমার জীবনের স্মৃতি নামক ঘটনা গুলো পুরোটাই আমার মস্তিষ্কে জুড়ে আছে। আমরা সযত্নে নিজের মস্তিষ্কে আপন ব্যাখ্যায় স্মৃতিকে লালন করি। স্মৃতি তো অনেক ধরনেরই হয়। সুখ-দুঃখ, বেদনা, আর্তনাদ, কোন অপ্রত্যাশিত কিছু পাওয়ার পরম আনন্দ, ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যাওয়ার চরম বেদনা। সমস্ত স্মৃতিই আমরা সযত্নে মনের মনি কোঠায় আবৃত করে রাখি। জীবনের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করি আর পরবর্তী জীবনে চেষ্টা করি সে ভুলটি যাতে পুনরায় না করি।
pexels
অবশ্যই স্মৃতি আমাদেরকে সহায়তা করে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে। আমি যদি আমার ভুল ত্রুটি থেকে শিক্ষা গ্রহণ না করি,কোন অন্যায় দেখে প্রতিবাদ না করি, জীবনের প্রতিটি ধাপে ধাপে নিজেকে পরিবর্তন না করি তাহলে তো এই স্মৃতিগুলো আমাকে ভালো মানুষ হিসেবে কখনোই গড়ে তুলতে পারবে না।
সন্তান জন্মদান নারীর জীবনের পরম আকাঙ্ক্ষার বিষয়। মাতৃত্ব নারীকে পূর্ণ করে।আমার জীবনে সেরা মুহূর্তগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো আমার দুটি সন্তানের জন্মের সময়। সি-সেকশনের বদলে আমি নরমাল ডেলিভারি কে বেছে নিয়েছিলাম। যারা জানেন না স্বাভাবিক প্রসব বেদনা কতটা কষ্টকর তাদেরকে আমি এর অনুভূতি লিখে বোঝাতে পারবো না। আর যারা জানেন তাদেরকে বোঝানোর দরকার নেই। প্রায় ১২ ঘন্টা প্রচন্ড বেদনা সহ্য করে যখন প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছিলাম তখন মনে হয়েছিল এর থেকে সেরা মুহূর্ত আর জীবনে হতে পারে না। এমন মুহূর্তের অনুভূতিটা কোন ভাষাতেই প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
pexels
এবার আসছি সবচেয়ে খারাপ মুহূর্তটির সময়ে। আমার জীবনে সবচেয়ে দুঃসহ কষ্টকর মুহূর্তের একটি দিন ছিল ২০১৮ সালে ৩০ শে ডিসেম্বর। ৩০ শে ডিসেম্বর এর জন্য বেশ কিছুদিন আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম কারণ সেদিন ছিল আমার মেয়ের প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার ফলাফলের দিন। দিনটি ছিল শনিবার। স্কুলে বেলা দুইটার দিকে উপস্থিত হওয়ার সময়। তবে ১ টার দিকে আমি স্কুলের শিক্ষকের কাছ থেকে খবর পেলাম যে আমার মেয়ে খুব ভালো ফলাফল করেছে।প্রায় সোয়া একটার দিকে বাসা থেকে বের হলাম এবং ভাবলাম যাওয়ার পথে আগে কিছু মিষ্টি কিনে নেই। তারপর স্কুলে যাব। যেমন ভেবেছিলাম সেভাবেই মুসলিম সুইটস থেকে কিছু মিষ্টি নিয়ে দেড়টার দিকে রওনা দিলাম। সেদিন একই সাথে পঞ্চম শ্রেণী ও অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার দিন ছিল। আমরা চার ভাই বোনের মধ্যে বড় দুই ভাই ও আমার বাচ্চার পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল আর বড় বোনের ছেলের অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার একই সময় ছিল। এবং ওই সময়টাতে আমরা সবাই যার যার বাচ্চার স্কুলে যাওয়ার পথে ছিলাম। স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছানোর প্রায় পাঁচ মিনিট পূর্বে বাড়ি থেকে আমার ভাবি আমাকে ফোন দিল।আমি ভাবলাম হয়তো রেজাল্ট জানার জন্য ফোন দিয়েছে।তাই আমি বললাম, ভাবি একটু অপেক্ষা করেন। স্কুলে যেয়ে জানাচ্ছি। ভাবি বলল যে, আমার একটু অন্য কথা আছে তোমার বর কে ফোন দাও।
pexels
ফোন দেওয়ার পরে আমার হাজব্যান্ড বিড়বিড় করে বললো যে, আব্বা হয়তো আর নেই। মসজিদে জোহরের নামাজ পড়া অবস্থায় তিনি মারা গিয়েছেন। এরকম একটি মুহূর্তে এমন একটি খবর পাব আমি কল্পনাতেও আনতে পারিনি। মনে হল যেন আমি না জানি কত উপর থেকে মাটিতে পড়ে গেলাম। অবিশ্বাস্য লাগছিল আমার কাছে সবকিছু। গাড়ি ঘুরিয়ে বাসায় চলে গেলাম দ্রুত বাড়িতে যাওয়ার জন্য। মেয়ের রেজাল্ট আর সেদিন জানা হলো না।কাকে যেন আমার হাসবেন্ড মেয়ের রোল নাম্বার দিয়ে বলল, তুমি রেজাল্টটা দেখে নিও।
এ যেন মনে হয়েছিল কোন সিনেমার দৃশ্য, মুহূর্তের মধ্যে আনন্দিত মন কিভাবে বেদনার্ত হয়ে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। এতটা কষ্ট কোনদিনও পাইনি। এই স্মৃতি সারা জীবন আমার স্মরণে থাকবে।
প্রথম সন্তান জন্মের সময় আমার বয়স খুব কম ছিল। আর জানতামও না যে কিভাবে কি করতে হয়। কি খেতে হবে, কি খাওয়া মানা, কিভাবে বাচ্চাকে ফিড করাবো, কিভাবে নিজের যত্ন নেব।এই জিনিসগুলো ভালোভাবে পারতাম না।এ কারণে প্রথম সপ্তাহটা বড় বেশি সমস্যার মধ্যে ছিলাম। পরবর্তীতে আমার বোন ও মেডিকেল পড়ুয়া আমার বোনের মেয়ে আর ডাক্তার, নার্সদের সহযোগিতায় আমি অনেক অসুবিধা থেকেই পার পেয়ে যাই।
pexels
আর বাবার মৃত্যুর পরে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় মাকে সান্ত্বনা দেওয়া। কারণ তিনি যেমন স্বামী হারিয়েছেন আমিও তেমনি পিতা হারিয়েছি। কি বলে ওনাকে স্বান্তনা দেব? প্রচন্ড শীতের সময় তখন ।দেখলাম মা ঠকঠক করে কাঁপছেন। আমার গায়ে একটি উসুমের পশমিনা শাল ছিল। মাকে শালটি দিয়ে বললাম এই শালটি তোমাকে ঠান্ডা লাগতে দেবে না।পরে দেখেছি আমৃত্যু আমার মা এই শালটি সমস্ত শীতেই ব্যবহার করেছেন।
এই পরিস্থিতি থেকে আমি সবচেয়ে বড় যে শিক্ষা গ্রহণ করেছি তা হল জীবনে যে কোন মুহূর্তে যে কোন সময় আপনার সাথে যে কোন কিছু ঘটতে পারে। এর জন্য আপনার সব সময় মানসিক প্রস্তুতি রাখতে হবে। প্রাপ্তির শেষ প্রান্তে এসেও আপনি আপনার প্রত্যাশিত জিনিসটি হারাতে পারেন। যদি মানসিক প্রস্তুতি সবসময় রেখে দেন তাহলে এটি আপনাকে খুব বেশি বিপর্যস্ত করবে না। এজন্য মনকে শক্ত রাখতে হবে আর যেকোনো পরিস্থিতির মোকাবেলায় সচেষ্ট থাকতে হবে। যেভাবে চাইবেন জীবনকে আপনি সেভাবে পাবেন না।ঘটনাগুলো প্রত্যাশা মাফিক ঘটবে না।
জীবনের প্রতিটি ভাল ও খারাপ স্মৃতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, আগামী দিন কিভাবে ভাল হয় সে চেষ্টাই করতে হবে।
আসলে আমাদের জীবনটাই এমন সুখ-দুঃখ হাসি কান্না সবকিছু মিলিয়েই,, আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হয়! আপনার জীবনেও ঠিক এমন কিছু ঘটনা ঘটেছিল! আপনার মেয়ের পরীক্ষার রেজাল্ট বের হয়েছিল! কিন্তু স্কুলের উদ্দেশ্যে যখন আপনি রওনা করেছিলেন! তখন আপনি জানতে পারেন আপনার বাবা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে।
আসলেই খারাপ সময়টা জীবনে হঠাৎ করেই আসে! আর ভালো সময়টাকে জীবনে নিয়ে আসতে হয়! তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত জীবনের সব সময় গুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা! অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে,,,, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য! এবং আপনার জায়গা থেকে প্রত্যেকটা প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেয়ার জন্য! আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল! ভালো থাকবেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রুবিনা আপু।
আপনার মেয়ের রেজাল্ট পেয়ে যেখানে আনন্দ করার কথা সেইসময় আপনার বাবার মৃত্যর খবর পাওয়ায় সেই মুহুর্তটা আসলে যে কেমন কষ্টের বলে বুঝানো সম্ভব না। আপনার প্রথম বাচ্চা নরমাল ডেলিভারী হওয়ায় আপনি যে পরিমান কষ্ট সহ্য করেছেন তার থেকেও বেশী কষ্ট পিতা হারানোর বেদনা। আমার মনে হয় আপনার এই পরিস্থিতিতে বুঝা যায় এক পলকের ও কম সময়ে কিভাবে আনন্দ ঘন মুহুর্ত খারাপ সময়ে পরিনত হোল। আপনার প্রতি শুভকামনা রইলো।
আসলে আমরা চিন্তা করি একরকম হয়ে যায় সম্পুর্ন অন্য রকম।আমাদের কোন হাত নেই এখানে। যেখানে মেয়ের রেজাল্ট পেয়ে আনন্দ করার কথা সেখানে জীবন এর সবচেয়ে বড়ো আঘাত। বাবা -হারানো যে কতটা কস্টদায়ক এটা জানা আছে আমার।
তারপরও জীবন থেমে থাকে না। সে চলে তার নিজের নিয়মেই।
আমাকে মেনশন করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য