আমাকে কথা বলতে দাও,আমার কথা শোনো।
কয়েকদিন আগে পোস্টে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম আমার ননদের কথা। যে বিভিন্ন কারণে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে গেছে। যখন অনাকাঙ্খিত আচরণগুলো সে করছিল এবং প্রচন্ড রেগে গিয়ে সে অনেক কথা বলছিল এবং তার চারপাশে প্রত্যেকে বারবার তাকে বলছিল যে "আর কথা বলো না চুপ কর।"
আমার হাজব্যান্ড ও তাকে বারবার বলছিল তুমি ঘুমাও, রেস্ট নাও সব ঠিক হয়ে যাবে। একটা সময় আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। তখন আমি বলি কেন সবাই বারবার ওকে চুপ করতে বলছো?ওকে কথা বলতে দাও। ওর ভেতরের সব রাগ-ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলতে দাও। কি কারণে সে এত কষ্ট পেয়েছে, কি কারনে সে এত রেগে গিয়েছে সে কারণগুলো খুঁজে বের করো। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো কিছু করতে পারো আর না পারো অন্তত মনোযোগ দিয়ে ওর কথাগুলো শোনো।
যখন সে অনেক কথা বলল এর পরে দেখলাম ধীরে ধীরে সে স্থির হয়ে গেলো। যে কারো উত্তেজনা কমাতে এটি খুবই ফলপ্রসু একটি চিকিৎসা। এ কারণেই তো কাউন্সেলিং একটি সফল চিকিৎসা পদ্ধতি।আপনি আপনার চারপাশে তাকালে দেখতে পাবেন সবার ভেতরে কেমন যেন এক ধরনের অস্থিরতা। প্রতিটা মানুষ যেন অপরপক্ষকে দমিয়ে রাখতে বেশি পছন্দ করে। অনেকে আছে অন্যের প্রতিক্রিয়া সহ্য করতে পারে না কিন্তু প্রতিক্রিয়ার পেছনে তার নিজের কি ব্যবহার বা কর্ম তা ভাবে না।
সম্প্রতি আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওটিটি প্লাটফর্মের একটি সিরিজের ট্রেলার সহ কিছু ক্লিপ দেখেছি। সিরিজের নাম হলো লজ্জা। যে ক'টি ক্লিপ দেখেছি তাতে একটি কথা বুঝতে পেরেছি যে ঘরের মধ্যে যে নারী সদস্যটি আছে তার কথা কেউ শোনে না। সে নূন্যতম কি পছন্দ করে খাবে এ কথাটি বলার ও তার অধিকার নেই।
তাকে বাহিরে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে,গায়ে হাত তোলে না,কোন কিছুর অভাব রাখেনি এটাই তো যথেষ্ট তার জন্য। সমাজের দৃষ্টিতে সে যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করা হয়। কিন্তু তাকে ভার্বাল এবিউজ অর্থাৎ কথা দ্বারা অপমান করা হয়। যেটাকে কেউ অন্যায় বা অপরাধ হিসেবে গণ্যই করে না।এটাই ছিল ওই সিরিজটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কথা দিয়ে মানসিক অত্যাচার করাও যে এক ধরনের অপরাধ সে তো আমার ও জানা ছিল না।
মনের কথা একে অপরকে বলতে না পারার তালিকায় সবার প্রথমে আছে দম্পতিরা। বছরের পর বছর ধরে একঘেঁয়ে দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে যেতে থাকে। একই ছাদের তলায় পাশাপাশি থেকে রোজকার জীবনযাপন করে। একজন আরেকজনকে টেকেন ফর গ্রান্টেড হিসেবে নিয়ে নেয়।বিবাহিত জীবনের বয়স যত বাড়তে থাকে একে অপরকে যেন গুরুত্ব দেয়া সমানতালে কমতে থাকে।
দু তিনটে বাচ্চা হয়ে গেলে তো আর কথাই নেই। যেন তার কাছে বিক্রীত কোন পণ্যের মতো ব্যবহৃত হতে থাকে। ফলশ্রুতিতে অভিমান দানা বাঁধতে থাকে। একসময় তা মহীরুহে পরিণত হয়। এরপর আর সহজে এর শিকড় উপড়ে ফেলা যায় না।
নিঃসন্দেহে আমি বলতে পারি "আমার কথা কেউ শোনে না, আমাকে কেউ বলতে দেয় না" বিভিন্ন সম্পর্কে এমন অভিজ্ঞতা কমবেশি আমাদের সবারই আছে। অন্তরের বুকফাটা হাহাকার চিৎকার করে কাঁদে। ভূমিকম্পের মতো কেঁপে কেঁপে সম্পর্কের ভিত্তিগুলোয় ফাটল ধরে যায়। কিন্তু প্রিয়জন এ সম্পর্কের স্রোতের অনুকূলে ভাসতে পারেনা। বরং দম বন্ধ হয়ে তলিয়ে যায় আর ভেসে থাকে শুধু সম্পর্কের কঙ্কাল।
সময় কারো জন্য থেমে থাকে না। আজকে আমার যা প্রয়োজন তা কালকে তা নাও থাকতে পারে।যে কথা আজ আমি বলতে চাই,শুনতে চাই আগামীকাল তা আমার কাছে মূল্যহীন হয়ে যেতে পারে। তাই সময়কে বেঁধে না রেখে প্রতিটি মুহূর্তকে সুখস্মৃতির পাতা দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়।
তাই আমি বলতে চাই, আপনার সঙ্গীর কথা শুনুন।প্রিয়জনের কথা শুনুন।যদি তার কথা রাখতে না পারেন অন্তত তাকে সান্ত্বনা দিন। আপনার কথা যেন তার ঘায়ে মলম লাগানোর মত হয় ।তাকে যেন আরো রক্তাক্ত না করে। না হলে এমন একদিন আসবে এই সব কিছু বুমেরাং হয়ে আপনার প্রতিই আঘাত হানবে।
সত্যি কথা বলতে প্রতিটি মানুষকে নিজের ভাব প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া উচিত। হ্যাঁ আপনি একদম ঠিক বলেছেন আপনার সাথে আমি একজন সহমত। প্রতিটি মানুষ অপরপক্ষকে সবসময় দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু এটা আসলে ঠিক না।
সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ