আমার আজকের দিনের অনুভূতি।
বিকেলের দিকে বারান্দায় গেলাম একটু পরিস্থিতি বোঝার জন্য। জানার চেষ্টা করলাম রাস্তা ঘাটের অবস্থা কেমন আর কোথাও গন্ডগোল হচ্ছে কিনা! চোখে পড়লো ঝলমলে রোদ ও কুয়াশার মিশেলেএমন এক দৃশ্য যা আগে কখনো দেখিনি।এমন অস্থিরতা আর কখনো অনুভূত হয়নি। চারিদিকে মানুষের চলাফেরা আর এর মধ্যেই একটি দমবন্ধ পরিস্থিতি।
চারপাশে বিভিন্ন জনের কাছে শুনছি মিছিলের খবর।ফেসবুক ও অন্যান্য মাধ্যম এখনো বন্ধ আছে।তবে কিভাবে যেনো ইউটিউব কিছুটা দেখা যাচ্ছে।সেখান থেকেই দেখলাম চারপাশে যেমন চলছে মিটিং,মিছিল ও জ্বালাময়ী বক্তৃতা ঠিক ততটাই চলছে দমন ও পীড়ন।লজ্জা হয় না তাদের!!! লজ্জা হয় না!!!
এরা কি মানুষ নয়?এদের ঘরে কি সন্তান নেই? এদের মা-বাবা নেই? ভাই-বোন নেই?তাদের সন্তানরা কি স্কুল কলেজে পড়ে না? তারুণ্যের রক্তের কি গতি এটা কি তারা অনুভব করে না?এটাই আমার কাছে বড় আশ্চর্য লাগছে।
ছোট ছোট শিশু,তরুণ, যুবক সহ আপামর সমস্ত জনগোষ্ঠীর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।এ যেন অদেখা ৭১।ঘরের জানালায়,পিতার কোলে যে শিশু সন্তানগুলো প্রাণ দিয়ে দিলে,তাদের যেন কোনো মূল্যই ছিল না।যেন এরা পৃথিবীতে এসেছে শুধু হোলি খেলায় রক্ত দিতে।
এত দমন,এত রক্ত ঝরার পরেও এই জাতিকে যে দাবিয়ে রাখা যায় না তা আবারও প্রমাণিত হলো।কিভাবে মিথ্যার বেসাতি গড়ে তোলা যায়, আর নিজের গড়ে তোলা কল্পনার রাজ্য যে কোন মুহূর্তে ধুলিস্যাৎ হয়ে যেতে পারে তার আশঙ্কায় আজ ভীত সন্ত্রস্ত।
আমি প্রচন্ডভাবে ক্ষুব্ধ।মন চাইছে যেনো এখনই তাদের সাথে নেমে পড়ি।তাহলে অন্তত বিবেককে এতোটুকু সান্ত্বনা দিতে পারব যে আমি তো ঘরে বসে থাকিনি।গর্বে বুক ফুলে ওঠে যখন দেখি মায়েদের টগবগে রক্তের সেই ছেলেমেয়ে গুলোকে যারা আজকে নিজের প্রাণকে সঁপে দেওয়ার পণ করেছে।নির্যাতন হবে,কিন্তু তারা ভয় পায় না।তারা আজকে রক্ত দিতে প্রস্তুত।এ যেন আরেকটি মুক্তিযুদ্ধ।
পৃথিবীতে যারা বাঙালি জাতিকে খুব ভালোভাবে চেনে না, অনেকের মনে অনেক বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে আছে আজ তাদেরকে বলতে চাই তাকিয়ে দেখো,আমাদের জনতার দিকে।আমরা সহ্য করি,ধৈর্য ধরি,কিন্তু একটা সময় আমরা ঠিক তাই করি যা আমাদের করা উচিত।এখনো আমাদের হাড়-মাংস এতটা পচে যায়নি যে গলে যেতে হবে।
আমার শৈশব কেটেছে বগুড়া ক্যান্টনমেন্টের সুরক্ষিত বলয়ে।আবাধ স্বাধীনতা ও যাতায়াত ছিল আমার।নিজেকে কখনো অরক্ষিত পাইনি।তাই বরাবরই স্বাধীনচেতা হিসেবে আমার স্বভাবে এটি রয়ে গেছে।আমি দেখেছি সেনাবাহিনীর কোন সদস্য যদি তার স্ত্রীর গালে একটি চড় ও দিতেন তার জন্য তাকে জবাবদিহি ও বিচারের সম্মুখীন হতে হতো।
অথচ সেই জায়গায় আজকে এমন কি হলো যে তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই।যাদের যুদ্ধ করার কথা অন্য দেশের সাথে তারা আজকে নিজেদের পরিবারের সাথেই লড়াই করছে।আমার দেখা সেই সেনাবাহিনীর সাথে বর্তমানের এই সেনাবাহিনীর কোন মিল নেই।
সেনা পোষাক পরিধান করা একজন ব্যক্তির মাঝে আমি আমার পিতার ছায়া দেখতে পেতাম আজ যেন তাদের কারিন জীনকে দেখতে পাই। মনে যে সম্মান ও শ্রদ্ধা জাগ্রত হতো আজ তা বিলীন হয়ে গেছে।আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তবে আজ আমি মুক্তিযোদ্ধাদের হৃদয় ধারণ করেছি।
সেই দিনগুলো কল্পনা করার চেষ্টা করছি।সেই একাত্তর কে কল্পনা করার চেষ্টা করছি।যখন আমার মা তার ছোট ছোট সন্তানগুলোকে নিয়ে পাঞ্জাবি আসার ভয়ে গাছে চড়ে বসে থাকতেন। না জানি কতটা ভয়াবহ সেই দিনগুলো ছিল।
[প্রথম দুটি ছবি আমার মোবাইলে তোলা এবং পরবর্তী ছবিগুলো ইউটিউব থেকে স্ক্রিনশট দিয়ে নেওয়া এরপর এডিট করা।]