সম্পর্কের ক্ষেত্রে 'অতি' পরিহার করুন।
"ভালবাসার এত গুণ,
পানের সাথে লাগে চুন।
কম হলে লাগে ঝাল,
বেশি হলে পোড়ে গাল।"
আমাদের নোয়াখালীতে এ ধরনের আরো বহু শোলক খুবই প্রচলিত। এই শোলকগুলো একেবারেই মিথ্যা নয়। এগুলোর পেছনে রয়েছে অন্তর্নিহিত ও গভীর মর্মার্থ। আমার দাদীর মুখে নানা ধরনের শোলক শুনতাম। সদ্যপ্রয়াত আমার ননাসের মুখে তো শত শত শোলক শুনেছি। উনি নিয়মিত শোলক বলতেন এবং এগুলোর ব্যাখ্যা ও দিতেন।
আমরা অনেকেই সিনেমা জগতের মানুষদের কর্মকাণ্ড দেখি ও তাদেরকে ফলো করি। অনেককেই দেখি বহুবছর ভালবাসার সম্পর্কে থেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে।তাদের প্রেমের সম্পর্ক বহু বছর টিকলেও কেন যেন বৈবাহিক সম্পর্কের আয়ু বড়ই অল্প হয়ে থাকে। অনেক সময় তাদের অতি ভালবাসা তাদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।
যেখানে অতি ভালবাসা থাকবে ধরে নিতে পারেন সেখানে অতি বিপর্যয়ের ও সম্ভাবনা রয়েছে।হতে পারে সেটা ভালোবাসার বিপর্যয় অথবা হতে পারে তা পারিপার্শ্বিক লোকজনের জন্য বিপর্যয়।
পূর্বের তুলনায় বর্তমানে সম্পর্ক গুলো অনেক বেশি ঠুনকো হয়ে যাচ্ছে। একটা সময় খেয়াল করে দেখুন যখন মোবাইল ছিল না, টেলিফোন ছিল না। ছিল শুধু চিঠির যুগ।মাসে-দু'মাসে একটি চিঠি দিয়ে শুধু অতি জরুরী খবরাখবর আদান প্রদান করা হতো। তখনকার যুগে কি মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাঁটি হতো না? নিশ্চয়ই হতো। কিন্তু এটা যে অপরকে বলে তাকে বিষিয়ে তুলে তৎক্ষণাৎ প্রতিশোধ নেওয়া এই ব্যাপারটি সে সময় ছিল না।
দাদি-চাচীর কাছে গল্প শুনেছি যে, স্বামী বিদেশে থাকতো। ঘরে হয়তো শাশুড়ির সাথে কিছুটা মনোমালিন্য হয়েছে বা কেউ অন্যায় আচরণ করে ফেলেছে। এটি নিয়ে মন খারাপ হয়েছে। দুদিন-তিনদিন হয়তো কথাও বন্ধ ছিল। এরপর আবার একে অপরকে তারা কাছে টেনে নিয়েছে। মনোমালিন্য দূর হয়ে গেছে। দু-তিন মাসের পাওয়া এক চিঠির উত্তরে এ ধরনের মনোমালিন্যর কথা লিখে জানাতে হবে এটা তো তাদের মনেও কখনো আসেনি।
এখন প্রতিমুহূর্তে কে কি করেছে, কিভাবে করছে,কে কি বলেছে এরকম প্রতিমুহূর্তের খবর একে অপরের কাছে শুধুমাত্র টেলিফোনে নয় বরং ভিডিও কলেও বলা হচ্ছে বা দেখানো হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে সম্পর্ক এত নাজুক অবস্থায় গেছে যে এখন কোন সম্পর্কই তার স্থায়িত্ব বজায় রাখতে পারছে না।
কিছুদিন পূর্বে দুবাই তে অবস্থানরত আমার এক ভাগ্নের ডিভোর্স হয়েছে। তার স্ত্রী তাকে ডিভোর্স দিয়েছে। দুটি জমজ ফুটফুটে ছেলে সন্তান আছে তাদের।টাকা-পয়সা, ঘরবাড়ি, দুটি সন্তান তাদের ডিভোর্স কে আটকাতে পারেনি। ছেলের ছিল অধিক ভালোবাসা, অধিক রাগ এবং অধিক বাধা-নিষেধ। এগুলো এতো মাত্রাতিরিক্ত ছিল যা তার সংসারটাই শেষ করে দিল।
সম্পর্ক অতিশয় নাজুক একটি ব্যাপার।এর মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তো অনেক বেশি স্পর্শকাতর। এখানে প্রতিটা কদম খুব সাবধানে রাখতে হয়। আমি সম্পর্কের উপরে মন্তব্য করার মত কোন বিশেষজ্ঞ নই। তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি সম্পর্কে ধৈর্য, সহনশীলতা ও পারস্পরিক সম্মানবোধ যদি না থাকে তাহলে শুধু ভালোবাসা দিয়ে কোন সম্পর্কে কে টিকিয়ে রাখা যাবে না।
দুর্বল স্তম্ভের উপরে কখনো কোন পাকা ঘর টিকে থাকে না। তাই আসুন আমরা আমাদের পারস্পরিক সম্পর্কগুলোর ব্যাপারে যত্নশীল হই। সবকিছু থেকে অতি শব্দটিকে বিদায় করি। জীবনটা সুখ-শান্তিতে পার করার চেষ্টা করি।
হ্যাঁ আপু আমারও মনে হচ্ছে যে পুরনো দিনের প্রেম ছিল পবিত্র প্রেম। তখন স্মার্টফোনের সুযোগ ছিল না। এখন যেমন প্রেম করতে সময় লাগে না।
Facebook এর মাধ্যমে নিমিশেয বন্ধুত্ব হয়ে যায় আবার ব্লক করার সাথে সাথে তাদের সম্পর্কটা ভেঙে যায়।
কিন্তু আমরা একটু চিন্তা করলে দেখতে পারি সে আগের দিনের কথা, তখন একটি চিঠি আসতে অনেকদিন সময় লাগতো। মনের ভালোবাসো আবেগ দিয়ে লেখা সেই চিঠি ভালোবাসা মানুষের ছোঁয়া ছিল। তখন কার সময তাদের ভিতরে রাগ অভিমান হতো কিন্তু এখন যেভাবে কথায় কথায় ব্রেকআপ হচ্ছে তখন কিন্তু এটা ছিল না। সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।