মৌমাছিদের মৌচাক যেন এক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ।
![]() |
---|
ছোটবেলা থেকেই পড়েছি মৌমাছির মৌচাক কেটে মধু সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু এই মৌচাক টি কেমন বা কি এটি সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুব কমই আছে। নিঃসন্দেহে মৌমাছি একটি অতি পরিশ্রমী প্রাণী। এর প্রতিটি কার্যক্রম এতটাই রহস্যময় যা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করা হয়। চলুন আমরা আজকে জানি মৌমাছি ও মৌচাকের এক রহস্যময় জগত সম্বন্ধে।
প্রতিটি মৌচাকে প্রায় পাঁচ কেজির মত মধু উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ গ্রাম মধু মৌচাক তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। আর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে যে মধু সংগ্রহ করা হয় সে মধু সংগ্রহের পরে মৌমাছিকে আবার মধু সহ মৌচাক ফিরিয়ে দেয়া হয়। যাতে পুনরায় মৌমাছি মৌচাক হতে মধু উৎপন্ন করতে পারে।
![]() |
---|
মৌমাছিরা মৌচাকের কোষের উপর থেকে নির্মাণ শুরু করে। যখন একটি কোষ মধু দিয়ে পূর্ণ করে তখন এটিকে প্রাকৃতিক মোম দ্বারা বন্ধ করে দেয়। মূলত ১২ থেকে ১৭ দিন বয়সী কর্মী মৌমাছির মোম গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা মৌচাকের দেয়ালে মোমের ঢাকনা তৈরি করা হয়। একটি শক্তিশালী কাঠামো তৈরির জন্য জ্যামিতিক দক্ষতার উদাহরণ দেয় মৌমাছি। এর বন্ধ প্রান্ত কিছুটা ত্রিমাত্রিক আর শেষ প্রান্তটি তিনটি আলাদা অংশ নিয়ে গঠিত হয়। কোষের আকৃতি এমন যে দুটি বিপরীত মৌচাকের স্তর একে অপরের উপর বাসা তৈরি করতে পারে। এবং এক কোষের বন্ধ-প্রান্তের দিকে আবার বিপরীত কোষ তৈরি করে।
এছাড়া আরো এক রহস্যময় কাজ মৌমাছি করে থাকে তা হলো মৌচাকে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে নিজস্ব পদ্ধতিতে।জীবজগতে গরমের হাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে অভিনব পদ্ধতি দেখা যায় সম্ভবত মৌমাছিদের মধ্যেই। মৌমাছিদের মৌচাক যেন এক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ। বসন্তের শেষে যখন গরম পড়তে শুরু করে তখন মৌচাকের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থাকে ৩৪.৫°-৩৫.৫° ।
![]() |
---|
মোটামুটি সবসময়ই মৌমাছিরা তাদের ভেতরকার তাপমাত্রা ৩৫° রাখার চেষ্টা করে। যদি কখনো পরিবেশের তাপমাত্রা যখন৫০°বা ৭০° তখনও মৌচাকের ভেতরের তাপমাত্রা ৩৫° । এখন প্রশ্ন হলো- কিভাবে মৌমাছিরা এই তাপমাত্রা রক্ষা করে ? গ্রীষ্মকালের কখনো মৌচাকের কাছে গেলে প্রায়ই দেখা যায় মৌচাকের প্রবেশ মুখে সারিবদ্ধ হয়ে সবার মাথা একদিকে রেখে দারুণ উদ্যমে ডানা কাঁপিয়ে যাচ্ছে কিছু মৌমাছি। এরা হল বায়ুসঞ্চালক শ্রমিক মৌমাছি।
প্রচণ্ড গরমে মৌচাকের ভেতরে ঠান্ডা বাতাসের জোরালো স্রোত পাঠায় এরা। মৌচাকের ভেতরেও থাকে এইরকম আর একদল মৌমাছি, তারা মৌচাকের ভেতরের গরম হাওয়া বাইরে বের করে দেয়। যখন এতেও হয় না, তখন শ্রমিক মৌমাছিরা মুখে করে বিন্দু বিন্দু পানি নিয়ে এসে মৌচাকের মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। আর একদল তখন জোরে ডানা নাড়তে থাকে । স্বাভাবিকভাবেই গরমের হাত থেকে নিস্তার পায় রাণী, পুরুষ ও শিশু মৌমাছিরা।
![]() |
---|
প্রচন্ড শীতেও কিন্তু মৌচাকের অভ্যন্তরের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। যখন বাইরের তাপমাত্রা কমে যায় তখন চাকের উপর শ্রমিক মৌমাছিরা পরস্পর জড়াজাড়ি করে থাকে যাতে কিনা এদের বহির্ভাগে তাপ ক্ষয় কম হয়। এতে এদের বিপাক বেড়ে যায়, ফলস্বরূপ দেহের তাপমাত্রা যায় বেড়ে- গরম থাকে মৌচাকের অভ্যন্তর ।
এবার থেকে গরম আর শীতে মৌচাকের ভেতর গিয়ে থাকবো ভাবছি। সত্যি আপনার পোস্ট পড়ে এই প্রথম এতো কিছু জানতে পারলাম মৌমাছি আর মৌচাক সম্পর্কে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে এতো তথ্যবহুল পোস্ট লেখার জন্য।
আমরা সবাই জানি মৌমাছি ফুল থেকে মধু সংরক্ষণ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। আজকে আপনার পোস্ট পরিদর্শন করার মাধ্যমে, মৌমাছির জীবনধারা সম্পর্কে বিস্তারিত অনেকগুলো তথ্য জানতে পারলাম।
অতিরিক্ত গরমে মৌমাছি কিভাবে নিজেদের বাসার তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, সেই বিষয়টা জানতে পেরে অনেক বেশি অবাক হলাম। সৃষ্টিকর্তা এই পৃথিবীতে ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। এক একটা সৃষ্টির জন্য এক এক ধরনের মেধা দিয়েছেন। মৌমাছির এই দুর্দান্ত প্রকৌশলী কাজ দেখে, আমি অনেকটা অবাক হলাম। চমৎকার বিষয় উপস্থাপন করার জন্য ধন্যবাদ।
Regards
@rubina203 (Moderator)
Incredible India
ছোট বেলা থেকেই আমাদের বাড়িতে একাধিক মৌচাক দেখে এসেছি। কামড়ও খেয়েছি প্রচুর। তবে ওদের সম্পর্কে এত বিস্তারিত বিশেষ করে এই শীতাতপ নিয়ন্ত্রনের এই বিষয়টি একদমই জানা ছিলো না।
নতুন একটা বিষয় নিয়ে লেখার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
ভালো থাকবেন সবসময় এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
ছোট্ট প্রাণী মৌমাছির পুরো জীবনচক্র আমাদের কোরআন শরীফের মাধ্যমে প্রথম জানতে পারি। আসলেই খুব ই আশ্চর্য এক প্রানী। যতই এদের সম্পর্কে জানতে পারি ততোই অবাক হই। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্যে।
আপনার পোস্টটি পড়ে মনে হলো মৌমাছি খুব বুদ্ধিমান। তাদের দক্ষতা খুব বেশি।একতা বদ্ধতা
রয়েছে তাদের মধ্যে।তারা তাদের জীবন যাপনের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সবাই একসাথে কাজ করে। খুব ভালো লাগলো আপনার পোস্টটি পড়ে।
আপনি মৌচাক নিয়ে বেশ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা যায়।।
প্রতিটি মৌচাক থেকে পাঁচ কেজির মতো উৎপন্ন করা হয় এটা আমার জানা ছিল না। আমার বেশ কিছু বন্ধু আছে তারা মধু সংগ্রহ করে একদম অরিজিনাল মত এক কেজি এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করে।।
মৌচাক নিয়ে এত বিস্তারিতভাবে আলোচনা করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভালো থাকবেন সবসময়।।