The Ongoing Pattern Of World Politics | বিশ্ব রাজনীতির চলমান প্যাটার্ন

in LifeStyle3 years ago

image.png
Source

আপনি যদি একবিংশ শতাব্দীর এই যৌবনে এসে বিশ্বের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর রাজনীতি খুবই সহজে বুঝতে চান তাহলে আজকের আলাপটি আপনার জন্য জরুরি। প্রথমেই জটিল একটা বিষয় ব্যাখ্যা করে নেই।

পৃথিবীতে এমন কোন দেশ আপনি পাবেন না যেটা একক জাতিসত্তা নিয়ে গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি দেশই গঠিত হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন কয়েকটা জাতিসত্তা নিয়ে। উদাহরণস্বরূপ- আজকের আধুনিক সিঙ্গাপুর গঠিত হয়েছে চাইনিজ, মালয়, ইন্ডিয়ান ও ইউরেশিয়ান এই চারটি প্রধান জাতি নিয়ে। মালেশিয়াতেও রয়েছে তিনটা ডমিনেন্ট জাতিস্বত্বা- মালয়, ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ।

যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে ব্লাক, হোয়াইট, হিস্প্যানিক আমেরিকান, আফ্রিকান আমেরিকান ও এশিয়ান আমেরিকান। প্রতিবেশী দেশ ভারত হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৌন, শিখ ইত্যাদি জাতিসত্তা নিয়ে গঠিত।

একটা দেশের মোট জনসংখ্যার সবচেয়ে বেশি পপুলেশন যে জাতিসত্তাটি রিপ্রেজেন্ট করে সেই জাতিসত্তাটিই ঐদেশের সংখ্যাগুরু (Majority Group) এবং বাকিরা হলো সংখ্যালঘু (Minority Group)।

বাংলাদেশে যেমন মুসলিমরা সংখ্যাগুরু কিন্তু হিন্দুরা সংখ্যালঘু, তেমনি ভারতে হিন্দুরা সংখ্যাগুরু কিন্তু মুসলিমরা সংখ্যালঘু, যুক্তরাষ্ট্রে হোয়াইটরা সংখ্যাগুরু কিন্তু ব্ল্যাকরা সংখ্যালঘু, মোজাম্বিকে খ্রিস্টানরা সংখ্যাগুরু কিন্তু মুসলমানরা সংখ্যালঘু। এখন কথা হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতিতে এই সংখ্যাগুরু- সংখ্যালঘু এর হিসাবটা কি!!

দেখুন যেসব দেশে নামেমাত্রও গনতন্ত্র রয়েছে, সেসব দেশে নির্বাচনে জিতে আপনাকে ক্ষমতার চূড়ায় আসতে হয়। আর নির্বাচনে জিততে আপনার সম্পূর্ণ ১০০℅ ভোট এর প্রয়োজন নেই, মেজরিটি বা ৫০% এর একটু বেশি ভোট পেলেই হয়। তাই আপনার দেশের মেজরিটি জনগণ যে জাতিসত্তায় রয়েছে সেই গোষ্ঠীকে টার্গেট করেই আপনি এই পঞ্চাশ পারসেন্ট ভোট ইজিলি পেতে পারেন। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে শেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৭৬.৩%, ভারতে হিন্দু জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৭৯.৮%, আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠী মোট জনসংখ্যার ৫৬.১% রয়েছে।

image.png
Source

যুক্তরাষ্ট্রে অন্যসব মাইনোরিটি জনগোষ্ঠী বাদ দিয়ে শুধুমাত্র শেতাঙ্গদের নিয়ে রাজনীতি করেই আপনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন।কেননা শুধু শেতাঙ্গরা ভোট দিলেই আপনার ভোট ৫০ পারসেন্ট এর উপরে হয়ে যাবে। তাই একবিংশ শতাব্দীর রাজনীতিবিদরা প্রথমে তাদের দেশের এই সংখাগুরু জনসংখ্যাটাকে টার্গেট করে এবং তাদের কাছে জনপ্রিয় হওয়ার চেষ্টা করে, যেটাকে আমরা "Populism" হিসেবে চিনি। দ্বিতীয়ত তারা সংখগুরু এবং সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা কনফ্লিক্ট বা বিভাজন সৃষ্টি করায়। কৌশল হিসেবে এসব মাইনোরিটি গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ ছড়ায়। এদেরকে তারা নির্দিষ্ট করে দেয় এবং দেশের সব সমস্যা, ক্ষতি ও বিপদের জন্য এদেরকেই দায়ী করা হয়।

এসব রাজনীতিবিদরা সংখাগুরু বা মেজরিটি জাতিসত্তার মানুষদের বুঝায় দেখো আমরা সংখালঘুদের থেকে ভিন্ন ও শ্রেষ্ঠ। এভাবে তারা একটা দেশের সকল জনগনের মধ্যে আমরা ভার্সাস তারা অথাৎ We vs They সৃষ্টি করে, যেটাকে আমরা রাজনীতির ভাষায় "বাইনারি অপজিশন" বলি।

ডোনাল্ড ট্রাম্প কৃশাঙ্গদের বিরুদ্ধে হোয়াইট সুপ্রিমেসি বা শেতাঙ্গ আধিপত্যকে কাজে লাগিয়ে, যুক্তরাজ্যের বরিস জনসন ব্রেক্সিট ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে, নরেন্দ্র মোদি মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এভাবে একটা নির্দিষ্ট আইডেন্টিটির জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে (Solidarism Approach) রাজনীতি করাকে অমর্ত সেন "Identity Politics" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এবার তিনটা সিচুয়েশন নিয়ে কথা বলিঃ

সিচুয়েশন-০১

অনেকগুলো জাতিসত্তার মানুষ থাকা সত্বেও মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কোন রকমের সমস্যা হয় না। এই দুটি দেশে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই সমান। গোষ্ঠী ভেদে এই দুটি দেশে তেমন কোন বৈষম্য হয়না, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে পলিটিক্স করা হয় না। তাই ইথনিক গ্রুপ ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে এই দুটি দেশ প্রথম সারিতে। এজন্য এসব দেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী তাদের অধিকার নিয়ে কোনো রকম আন্দোলনেরও প্রয়োজন হয় না।

সিচুয়েশন-০২

একটা দেশে অনেকগুলা ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্তা রয়েছে। এদের মধ্যে বৈষম্য রয়েছে, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী নিয়ে রাজনীতি করা হয়, তারা নয় বরং আমরা শ্রেষ্ঠ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের কৃশাঙ্গ জনগোষ্ঠী, অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠী। কিন্তু কথা হচ্ছে এই কৃশাঙ্গরা বা অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরা বৈষম্যের শিকার হওয়ার সত্বেও এবং নানাভাবে নির্যাতিত হওয়া সত্ত্বেও তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করার বা রাষ্ট্রের সাথে নেগোসিয়েশন করার বা টেবিলে বসার সুযোগ পাচ্ছে কিনা? উত্তর হচ্ছে হ্যা। নিজেদের অধিকার আদায় করে নেওয়ার মতো সুযোগটা তাদের এখনো রয়েছে। এজন্য ব্লাক বা কৃশাঙ্গ জনগোষ্ঠী বলতে পারেনা যে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করবো।এজন্য অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীরাও বলা উচিত না যে, আমরা অস্ট্রেলিয়া থেকে বের হয়ে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠ করবো।

সিচুয়েশন -০৩

এমন কিছু দেশ রয়েছে যেখানে মাইনোরিটি জনগোষ্ঠীরা একদিকে বৈষম্য, অত্যাচার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অন্যদিকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করার বা সরকারের সাথে টেবিলে বসে নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের সুযোগটা পর্যন্ত রাখেনি। এমন সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে চায়নার উইঘুর জনগোষ্ঠী। আরেকটি হলো ইন্ডিয়ার কাশ্মিরের মুসলিমরা। সংবিধানের ৩৭০ ধরা বাতিলের কারনে স্বাধীনভাবে বেচে থাকার অধিকারটুকুও হারিয়েছে কাশ্মীরিরা।

একটি অসাধারণ বই সদ্য বের হয়েছে। বইটির নাম "জানাজা থেকে স্বাধীনতা"। এই বইটা খুব সহজে কাশ্মিরের রাজনৈতিক হালত, ইতিহাস আর হাকিকত নিয়া আপনাকে ধারনা দেবে৷ আপনি দেখবেন এই জনপদে শিশুদের শৈশব কিভাবে কেবলই বারুদ গন্ধময় হয়ে আছে৷ দেখবেন নারীরা কিভাবে একটা লড়াইয়ের সিলসিলাকে সামনে নিয়া যায়। বুঝবেন কিভাবে উর্দিঘেরা জনপদে মানুষ বাচে,ভালোবাসে,লড়াই করে। আর কিভাবে তাদের বীরদের স্মরন করে।
গুরুত্বপূর্ণ হইলো বইটাতে দেখানো হয়েছে কিভাবে এখানকার প্রত্যেকটা মৃত্যু নতুন লড়াইয়ের সুচনা করে। কিভাবে কাশ্মিরের প্রত্যেকটা জানাজা স্বাধীনতার রাস্তায় এক কদম আগায়ে দেয়। বইটা পড়তে পারেন।

সর্বশেষ বলতে চাই রাষ্ট্র হিসেবে কাশ্মীরিদের নিয়ে বাংলাদেশের স্টেইটমেন্ট বা অবস্থান কি সেই বিতর্কে যাওয়ার অবকাশ নেই বিশ্ব রাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান, বাংলাদেশের সিকিউরিটি ও ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারনে।তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগনই কাশ্মীরিদের পক্ষেই। দেখুন ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ছিলো পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলো। তেমনিভাবে ১৯৯০ সালে ইরাক যে উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনা করে সেখানে বাংলাদেশ কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে মার্কিন–নেতৃত্বাধীন জোটে অংশগ্রহণ করেছিল অথচ বাংলাদেশের অধিকাংশ জনগনই কিন্তু ইরাকিদের পক্ষে ছিলো।

কলমে: মুহাম্মদ মিরাজ মিয়া ভাই
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56991.17
ETH 2341.20
USDT 1.00
SBD 2.33