চুম্বকত্বের আদ্যপান্ত
পদার্থে চুম্বকত্ব সৃষ্টি হয়, পরমাণুতে ইলেকট্রনের ঘূর্ণনের জন্য। পরমাণু সম্পর্কে যাদের সামান্য ধারণা আছে তারা জানো যে সকল মৌলের পরমাণুতে একই সংখ্যক ইলেকট্রন থাকে না। আবার ইলেকট্রনগুলোর বিন্যাসও হয় ভিন্ন। যার ফলে সকল পদার্থ একই চৌম্বকধর্ম দেখায় না এবং এই ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে এদের আলাদা আলাদা নামে ডাকা হয়। আজকে আমরা এই বিভিন্ন প্রকার চৌম্বক পদার্থের সাথে পরিচিত হবো।
প্রথমে আমরা চৌম্বক প্রবেশ্যতা শব্দটির সাথে পরিচিত হই। চৌম্বক প্রবেশ্যতা বলতে এই চৌম্বক বলরেখা কোন মাধ্যমে বা পদার্থে কত সহজে প্রবেশ করতে পারে এবং এর অণুচুম্বকগুলোকে নিজের দিক বরাবর যেভাবে সাজিয়ে আবেশী চুম্বকে বা কৃত্রিম চুম্বকে পরিণত করতে পারে তাকে বোঝায়। এই চৌম্বক প্রবেশ্যতাকে গ্রিক অক্ষর ´H (মিউ) দ্বারা প্রকাশ করা হয় আর বলরেখা যখন শূন্যস্থানের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে তখন প্রবেশ্যতার প্রকাশ হয় Ho দ্বারা। বন্ধুরা, যেকোন মাধ্যম আর শূন্যমাধ্যমের প্রবেশ্যতার মানের অনুপাত পদার্থের চৌম্বক ধর্ম বুঝার জন্য খুবই ভাল হাতিয়ার। এই অনুপাতকে আপেক্ষিক চৌম্বক প্রবেশ্যতা বলা হয়। নামটা মনে রেখো, পরবর্তী আলোচনা হৃদয়ঙ্গম করতে সহায়ক হবে।
কোন লোহার খণ্ডকে কোন চুম্বকের পাশে আনলে কী দেখতে পাও? চুম্বক লোহাকে আকর্ষণ করছে, তাই না? এই ব্যাপারটাকে অণুচুম্বক ধারণার সাথে মিলিয়ে আমরা বলতে পারি অণুচুম্বকগুলো তোমার কাছে থাকা চুম্বকের চৌম্বকক্ষেত্রের দিকে নিজেদের সাজিয়ে নিয়েছে এবং আবেশী চুম্বকে পরিণত হয়ে চুম্বকের দিকে আকর্ষিত হচ্ছে। এই লোহার অর্থাৎ যারা চুম্বক দ্বারা আকৃষ্ট হয় তাদেরকে একটা গালভরা নাম দেওয়া হয়েছে ফেরোচুম্বক বা ফেরোম্যাগনেটিক। যেকোন ফেরোম্যাগনেটিক পদার্থ থেকে স্থায়ী চুম্বক তৈরি করা যায়। আর এজন্যই এই ধরনের পদার্থকে আমাদের ব্যবহার্য বিভিন্ন যন্ত্রপাতি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
তা না হয় মানা গেলো যে ফেরোচুম্বক পদার্থ তাড়াতাড়ি চুম্বকে পরিণত হয়, কিন্তু কেন হয়? এর কারণ হলো এ ধরণের পদার্থের চৌম্বক প্রবেশ্যতার মান অন্য যেকোন পদার্থের চেয়ে বেশি। আপেক্ষিক প্রবেশ্যতার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই। ফেরোম্যাগনেটিক পদার্থের ক্ষেত্রে এর মান হয় ১ এর চেয়ে অনেক বেশি। সহজ কথায় বললে এসব পদার্থের প্রবেশ্যতার মান হয় শূন্যস্থানের প্রবেশ্যতা অপেক্ষা অনেক বেশি। মানে তাড়াতাড়ি চুম্বকে পরিণত হয়। এই যে এতকিছু বলা হলো এসব কিছুর সারকথা হলো এদের ভেতরের অণুচুম্বকগুলো অন্যদের চেয়ে বেশি চুম্বকত্ব ধারণ করে।
(চলবে...)