Weekly challenge on Steem || Talk About Your favorite Book Contest || 15 Steem in prize pool || Week # 02 - Submissions post || Kaler Mandira by Sharadindu Bandhopadhopadhyay
Best of Bangladesh কমিউনিটির বন্ধুদের সাথে আমার একটি প্রিয় বইয়ের বিষয়ে আমার মতামত ভাগ করে নিতে চাই।
বইয়ের নাম : কালের মন্দিরা।
লেখক : শ্রী শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রথম প্রকাশ : শ্রাবণ, ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ।
এই কাহিনীর ঘটনাকাল ৪৬৫ খ্রিস্টাব্দের কাছাকাছি। ৩০ বছর আগে পূর্ববর্তী আর্য রাজা কে হত্যা করে হূণরা বিটঙ্ক রাজ্য অধিকার করে। সেই আর্য রাজার শিশু সন্তান তিলক বর্মা কোনক্রমে বেঁচে গেছিলেন। তিলক বর্মা নিজের পরিচয় জানতেন না। তিনি অর্থের বিনিময়ে সৈন্যদলে যোগ দিয়ে যুদ্ধ করেন। বিটঙ্ক রাজ্যের বর্তমান রাজা ধর্মাদিত্য বর্তমানে সীমান্তবর্তী চষ্টন দুর্গে কিরাত নামে এক স্থানীয় অধিপতির নির্দেশে বন্দি। কিরাত চায় ধর্মাদিত্যের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ধর্মাদিত্যের একমাত্র কন্যা যশোধরা কে বিয়ে করে বিটঙ্ক রাজ্যের অধিপতি হতে।
ইতিমধ্যে গুপ্ত সম্রাট স্কন্দগুপ্ত বিটঙ্ক রাজ্য কে অবিলম্বে বশ্যতা স্বীকার করার নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে হূণরা রাজ্যের সীমান্তে উপস্থিত। তিলক বর্মা ঘটনাচক্রে নিজের পরিচয় জানতে পারেন। কিন্তু সেই পরিচয় গোপন করে তিনি রাজকন্যার সাথে চষ্টন দুর্গের দিকে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে তাঁরা একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েন। পথের মধ্যে এক ভিক্ষুদলের কাছে সংবাদ পান যে ধর্মাদিত্য রাজকন্যা কে চষ্টনে আসতে নিষেধ করেছেন কারণ রাজকন্যা এলে কিরাত তাকে জোর করে বিবাহ করবে। তিলক বর্মার পরামর্শে রাজকন্যা যশোধরা সম্রাট স্কন্দগুপ্তের সাথে দেখা করে সাহায্য প্রার্থনা করেন। সম্রাট স্কন্দগুপ্ত অবিবাহিত হলেও তিনি যশোধরাকে বিবাহ প্রস্তাব দেন।
শেষ পর্যন্ত স্কন্দগুপ্তের হস্তক্ষেপে ধর্মাদিত্য মুক্তি পান। তিলক বর্মার সাথে অস্ত্রযুদ্ধে কিরাতের মৃত্যু হয়। স্কন্দগুপ্ত নিজে দাঁড়িয়ে থেকে তিলক বর্মা আর যশোধরার বিবাহ দেন।
কালের মন্দিরা যুদ্ধের নয়, ভালোবাসার গল্প। পিতার রাজ্য দখলকারী হূণ অধিপতির কন্যাকে তিলক বর্মার ভালোবেসে ফেলার গল্প - তাকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়ার সুযোগ পেয়েও তাকে মারতে না পারার গল্প, তিলক বর্মা কে ভালোবেসে যশোধরার স্বয়ং সম্রাট স্কন্দগুপ্তের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার গল্প, আবার যশোধরা অন্যের প্রতি অনুরক্ত জেনেও সম্রাট স্কন্দগুপ্তের যশোধরার পিতাকে বিদ্রোহী কিরাতের থেকে মুক্ত করা আর যশোধরার সাথে তিলক বর্মার বিয়ে দেওয়ার গল্প, নিজের স্মৃতিলোপের পরও হূণ গুহকের বন্দিনী গোপাকে ৩০ বছর ধরে খাবার পৌঁছে দেওয়ার গল্প, মা মারা গেছেন জানার ৩০ বছর পর সুগোপার মাকে জীবন্ত ফিরে পাওয়ার গল্প..
এটা ভারতবর্ষের গল্প। মহামানবের সাগরতীর এই ভারতবর্ষ। ভারতের যে মূল বৈশিষ্ট্য - সবাইকে আপন করে নেওয়া - তার এক নিদর্শন এই গল্প। তিলক ক্ষমা করে তার পিতার রাজ্য দখলকারী হূণ ধর্মাদিত্যকে - তাঁর কন্যাকে বিবাহ করে, আবার যশোধরা হূণ কন্যা হলেও আর্য যুবক তিলক বর্মাকে বিয়ে করেন - গল্পের শেষে দেখি তিনি এতোটাই ভারতীয় হয়ে গেছেন যে হূণরা আবার আক্রমণ করলে তিনিই তিলক বর্মাকে হূণ দমন করতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছেন। সেই যে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন-
"হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন /
শক-হূণ-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হ'ল লীন"
অনেক পড়ুয়া তুমি🙃🙏