আমাদের বাংলাদেশের লালবাগ কেল্লা সম্পর্কে কিছু অজানা ইতিহাস জানুন।

in #history7 years ago

59e7772382613.jpg

রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে মোঘল আমলে স্থাপিত হয় লালবাগ কেল্লা।
এই প্রাচীন দুর্গটি একটি ঐতিহাসিক নিদর্শন। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ও নামকরা একটি নিদর্শন হলো লালবাগের কেল্লা।
বিশাল জায়গা জুড়ে বেশ কয়েকটি স্থাপনা রয়েছে এর ভেতরে। প্রধান দরজা দিয়ে ঢুকে একটু সামনে গেলেই চোখে পড়ে একটি সমাধি, পরী বিবির সমাধি।
বাংলার সুবেদার শায়েস্তা খার আদরের কন্যা ছিলেন তিনি। পরী বিবি ছাড়াও আরেকটি নাম ছিল তাঁর, রহমত বানু।
তবে খুব কম মানুষই তাঁকে এ নামে চিনতো বা চিনে।
অনেকের ধারণা, পরী বিবি দেখতে পরীর মতোই সুন্দরী ছিলেন। যে কারণে তাঁর নাম রাখা হয়েছিল পরী বিবি।
অবশ্য অপরূপা এ রাজকন্যার ঘটে অকাল মৃত্যু। এতে অসহায় হয়ে পড়েন তাঁর বৃদ্ধ পিতা শায়েস্তা খাঁ।
কন্যার এ অকাল মৃত্যু কিছুতেই সইতে পারছিলেন না পিতা। ক্ষোভে-দুঃখে তিনি ‘অপয়া’ ভাবলেন লালবাগ কেল্লাকে।
ফলে বন্ধ করে দেন কেল্লার নির্মাণ কাজ।
অবশ্য তিনি লালবাগ কেল্লা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন কন্যার মৃত্যুর কিছুদিন আগে।
পরে পরী বিবিকে সমাহিত করা হয় কেল্লার ভেতরেই।
তার অন্তিম শয্যার ওপর যে সৌধ নির্মাণ করা হয়েছিল, সেটি ঢাকার অন্যতম সেরা সৌন্দর্যময় একটি মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন।
এটি নির্মাণের মাধ্যমে পিতা শায়েস্তা খার স্থাপত্য জ্ঞানেরও বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এখনো অগণিত মানুষ দেখতে আসে লালবাগ কেল্লা। অনেকের ইচ্ছা থাকে পরী বিবির সমাধি একনজর দেখার।
কেল্লার মাঝখানে একই সরলরেখা বরাবর তিনটি স্থাপনা চোখে পড়ে।
তার মধ্যে মাঝখানেরটি পরী বিবির সমাধি।
শায়েস্তা খাঁ সুদূর রাজমহল থেকে এনেছিলেন কালো ব্যাসল্ট পাথর।
সাদা মার্বেল পাথরের বড় বড় ফলক এনেছিলেন জয়পুর থেকে।
এসব এনেছিলেন সমাধি নির্মাণের জন্য। শ্বেত চন্দন কাঠ এনেছিলেন দরজা ও খিলান নির্মাণের জন্য। সমাধির ফলকগুলো রাখা হয় আস্ত।
তার ওপর কাটা হয় নকশা। সমাধি সৌধের বিভিন্ন অংশ নির্মাণ করা হয় ফুলেল নকশাখচিত জালি ও ফলক দিয়ে।
এসব জিনিস শত শত বছর ধরে যেন পিতৃহৃদয়ের গভীর বেদনারই নীরব প্রকাশ।
জানা যায়, পরী বিবির বিয়ে ঠিক হয়েছিল সম্রাট আওরঙ্গজেবের ছেলে শাহজাদা আজমের সঙ্গে। ঢাকার সুবেদার হয়ে এসেছিলেন আজম।
তিনি এসেই পিতার নামে ‘আওরঙ্গবাদ কেল্লা’ নির্মাণে উদ্যোগী হন।
কিন্তু দুর্গের নির্মাণকাজ শেষ হবার আগেই মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট আওরঙগজেব তাকে দিল্লি ডেকে পাঠান।
এ সময় একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর দুর্গ নির্মাণের কাজ থেমে যায়।
দ্বিতীয় মেয়াদে ঢাকায় আসেন সুবাদার শায়েস্তা খাঁ। কেল্লার কাজ সমাপ্ত করার জন্য শাহজাদা আজম তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন।
সুবাদারকে এটি দান করেছিলেন সম্রাট আওরঙ্গজেবও। নির্মাণ কাজ শুরুও করেছিলেন বাংলার সুবাদার।
কিন্তু ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে এর নির্মাণ বন্ধ করে দেন। পরে আর ইট গাঁথেননি শায়েস্তা খাঁ।
১৭০৪ সালে বাংলার শাসনকেন্দ্র মুর্শিদাবাদে স্থানান্তরিত হলে দুর্গ হিসেবে লালবাগের গুরুত্ব কমে যায়।
১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে।
এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে পত্নতত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়।
অবশেষে নির্মাণের প্রায় ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের যথাসম্ভব সংষ্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের প্রত্নতত্ব বিভাগ এই কেল্লা এলাকার রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে।
শনিবার ছাড়া সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বাংলাদেশী দর্শনার্থীদের জন্য ১০ টাকা এবং বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য ১০০ টাকার মূল্যে টিকিটের ব্যবস্থা রয়েছে।
বেদনাহত পিতা সোনার পাত দিয়ে মুড়িয়ে দিয়েছিলেন কন্যার সমাধি সৌধের গম্বুজটি।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেই সোনার পাত এখন আর নেই। একসময় এই সোনার পাতের ওপর রোদের আলো পড়লে তা ঝলমল করতো।
বর্তমানে যে কালো গম্বুজটি চোখে পড়ে, তা মোড়ানো হয়েছে তামা বা পিতলের পাত দিয়ে।
জানা যায়, শায়েস্তা খাঁ এ সমাধি সৌধটি নির্মাণ করেন তাজমহল ও সম্রাট হুমায়ুনের সমাধির স্থাপত্য রীতির সঙ্গে মুসলিম স্থাপনার আদলে।
শুধু মোগল স্থাপত্যই নয়, এই সমাধি সৌধ স্থপতি শায়েস্ত খার একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবেও বিশেষভাবে প্রশংসিত।
তবে দুঃখের বিষয় হলো, পরী বিবির সমাধি সৌধের যত্ন নেই আগের মতো।
তারপরও বলা যায়, এটি লাবাগ কেল্লার ভেতরে থাকায় দখলের হাত থেকে মোগল ঐতিহ্য নিয়ে এখনো টিকে আছে।
তবে নেই আদি কারুকাজ ও সৌন্দর্য। এর আরো যত্ন বা সংরক্ষণ প্রয়োজন।
এজন্য গোটা লালবাগ কেল্লার ওপর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নজরদারি আরো বাড়ানো দরকার বলে মনে করেন অনেকেই।

Sort:  


This post was resteemed by @steemitrobot!
Good Luck!

Resteem your post just send 0.100 SBD or Steem with your post url on memo. We have over 2000 followers. Take our service to reach more People.

Pro Plan: just send 1 SBD or Steem with your post url on memo we will resteem your post and send 10 upvotes from our Associate Accounts.

The @steemitrobot users are a small but growing community.
Check out the other resteemed posts in steemitrobot's feed.
Some of them are truly great. Please upvote this comment for helping me grow.

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.16
JST 0.029
BTC 60661.72
ETH 2395.32
USDT 1.00
SBD 2.56