জাকারবার্গের ডান হাত

in #facebook7 years ago

e14b2b1aec38e2f44d446a53fc32a02b-596388f63c37b.jpg

ফেসবুক চালান কে? প্রশ্নের উত্তরে মার্ক জাকারবার্গের নাম বলবেন অনেকেই। কিন্তু ফেসবুকের একজন প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) আছেন। তাঁর নাম শেরিল স্যান্ডবার্গ। তাঁকে বলা হয়, জাকারবার্গের ডান হাত। তাঁর পরামর্শ ছাড়া জাকারবার্গ এক পা-ও নড়েন না, কোনো সিদ্ধান্ত নেন না। শেরিলকে পরিবারের একজন ভাবেন জাকারবার্গ। ফেসবুককে বর্তমান জায়গায় আনতে জাকারবার্গের পাশাপাশি শেরিলের ভূমিকাও যথেষ্ট। প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড অব ডিরেক্টরদের মধ্যে একমাত্র নারী সদস্যও তিনি। ২০১২ সালে টাইম সাময়িকীর করা বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী মানুষের তালিকায় ছিল তাঁর নাম।

সম্প্রতি বিশ্বের জনপ্রিয় উদ্যোগ অ্যাপভিত্তিক ট্যাক্সি সেবা উবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদ থেকে ট্রাভিস কালানিকের পদত্যাগের পর ওই পদে শেরিলের নাম বেশি শোনা যায়। তবে তাতে শেরিলের আগ্রহ দেখা যায়নি। কেনই বা যাবে? ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ যে তাঁকে আগলে রেখেছেন। ২০১৫ সালে শেরিলের স্বামী মারা যাওয়ার পর বন্ধুর মতো পাশে দাঁড়িয়েছেন জাকারবার্গ। শেরিলও ফেসবুকের জন্য যথেষ্টই করেছেন। তিনি ফেসবুকের মোবাইল পরিকল্পনাকে ঢেলে সাজিয়েছেন। গুগলে থাকাকালে তিনি প্রতিষ্ঠানটির ‘গ্লোবাল অনলাইন সেলস’-এর ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। গুগলের বিভিন্ন পণ্য এবং গুগল সার্চ তাঁর দায়িত্বের আওতায় ছিল।

e1c353ec3c98b3f12564c5f7d611818d-596388f453b62.jpg

১৯৬৯ সালের ২৮ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে একটি ইহুদি পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা অ্যাডেল স্যান্ডবার্গ চক্ষুচিকিৎসক ছিলেন এবং মা জোয়েল স্যান্ডবার্গ কলেজশিক্ষক ছিলেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে শেরিল স্যান্ডবার্গ সবার বড়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। হার্ভার্ড থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে তিনি প্রথমে ম্যাকেঞ্জি অ্যান্ড কোম্পানি এবং তারপর বিশ্বব্যাংকে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০১ সালে গুগলে যোগদান করার আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রীর চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন। ছোটবেলা থেকে লেখাপড়ায় মেধাবী ছিলেন তিনি। কর্মজীবনের শুরুতে ১৯৯৯ সালে কোষাগারে সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। তবে, ২০০০ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের পরাজয়ের পর তিনি দ্রুতবর্ধনশীল প্রযুক্তি খাতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অবশ্য ওই সময় সিলিকন ভ্যালিতে গুগল একেবারেই ছোট একটি প্রতিষ্ঠান ছিল। আয়ও তেমন ছিল না। তবে গুগলের লক্ষ্য তাঁকে আকর্ষণ করে। তাঁকে সে সময়ের গুগল প্রধান এরিক স্মিড প্রতি সপ্তাহে ডেকে পাঠাতেন। তিনি শেরিলকে বলেন, ‘বোকামি কোরো না...এটা রকেট যান। এতে উঠে পড়ো।’ ২০০১ সালে গুগলে বিজনেস ইউনিট ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন শেরিল। ওই সময়ে গুগল দ্রুত বেড়ে উঠতে থাকে। বাড়তে থাকে শেরিলের পদোন্নতি। বৈশ্বিক অনলাইন সেলস অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হন তিনি। তবে, গুগলে সাত বছর পার করার পর তিনি নতুন চ্যালেঞ্জ নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। তখন থেকে তিনি ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে রাতের খাবারে সপ্তাহে এক-দুই দিন দেখা করতে থাকেন। প্রথমে মেনলো পার্কের ক্যাফেতে পরে স্যান্ডবার্গের বাড়িতে। এভাবে প্রায় ছয় সপ্তাহ সাক্ষাতের পর শেরিলকে ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার পদ দিতে আগ্রহের কথা জানান জাকারবার্গ।

তাঁর বর্তমান বয়স ৪৭। বাস করছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায়। বর্তমানে বিধবা। বর্তমানে তাঁর সম্পদের পরিমাণ ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার। ২০০৮ সাল থেকে ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার দায়িত্বে আছেন তিনি। ফেসবুকের বর্তমান আয় বাড়ার পেছনে তাঁর অবদান আছেন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। শেরিল সম্পর্কে বিশ্লেষকেরা বলেন, খুব কড়া মানুষ শেরিল। কঠোর নিয়ম মেনে চলেন। সঠিক সময়ে অফিসে যান। সঠিক সময়ে বের হন। সব কাজ গুছিয়ে করেন। প্রতিটি কাজ বিশ্লেষণ করেন, আলোচনা করেন খুঁটিনাটি ধরে। জাকারবার্গকে সঠিকভাবে নির্দেশনা দিতেও দেখা যায় তাঁকে। সর্বোপরি একটি প্রতিষ্ঠান চলার জন্য যা যা গুণ থাকা দরকার, এর সবই আছে তাঁর মধ্যে।

1964a3edaf0189aaa5b736ec2da46b1d-596388f8611e1.jpg

ফেসবুকের পাশাপাশি ‘লিন ইন’ নামের একটি অলাভজনক সংস্থা তৈরি করেছেন। নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে কাজ করে প্রতিষ্ঠানটি। তিনি এ নামে একটি বই লিখেছেন। এ ছাড়া ‘অপশন বি’ নামেও একটি বই লিখেছেন শেরিল। ২০১৭ সালের এপ্রিলে প্রকাশিত অপশন বি নামের বইটিতে তিনি দুঃখ ও প্রাণোচ্ছল বিষয়টিকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

ফেসবুকে যোগ দেওয়ার আগে ছয় বছর তিনি গুগলে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কাজ করেছিলেন। সেখানে গুগলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন বিভাগটিকে উন্নত করতে কাজ করেছিলেন। সবচেয়ে প্রভাবশালী নারী নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে তিনি ট্রাম্পের বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা ও গর্ভপাত নিরোধক পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন তিনি।

সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করা ছাড়াও দুটি বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তাঁর। বর্তমান দুনিয়ায় কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান উন্নত করতে কাজ করছেন তিনি। বিয়ের ক্ষেত্রে শেরিল খুব সাবধানী ছিলেন। ২০০৪ সালে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত বন্ধু ডেভ গোল্ডবার্গকে বিয়ে করেন শেরিল। ডেভ সার্ভেমাঙ্কির প্রধান নির্বাহী ছিলেন। ২০১৫ সালের ১ মে শেরিলের স্বামী ডেভ গোল্ডবার্গ আকস্মিকভাবে মারা যান। বেশ ভেঙে পড়েন তিনি। তবে শোককে শক্তিতে রূপান্তর করার উদ্যোগে নিয়ে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন।

3554f83e888712a7723af295b688e78d-596388fa2292e.jpg

শেরিল দাতব্য কাজেও নিজেকে এগিয়ে রেখেছেন। গত বছরে দাতব৵ কাজে ১০ কোটি মার্কিন ডলার দান করার ঘোষণা দেন তিনি। শেরিল স্যান্ডবার্গ অ্যান্ড ডেভ গোল্ডবার্গ ফ্যামিলি ফান্ডে এ অর্থ দেন তিনি। ফেসবুকে বিশাল শেয়ার থাকার কারণে সবচেয়ে তরুণ নারী কোটিপতি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।

অনলাইনে আরও বেশি নারীর অংশগ্রহণ চান ফেসবুকের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গ। নারীদের অনলাইনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করাটাকেই ব্যক্তিগত মিশন হিসেবে নিয়েছেন তিনি। উন্নয়নশীল দেশের মানুষ, বিশেষ করে ইন্টারনেট সংযোগের আওতায় থাকা নারীদের আরও বেশি অনলাইনে অংশগ্রহণ করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন তিনি। নারীদের বিভিন্ন বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন শেরিল। জীবনে দুঃখে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন তিনি। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সমাবর্তনে দেওয়া বক্তব্যে শেরিল বলেন, ‘তুমি কারও প্রেমে পড়েছ, কিন্তু সে তোমাকে ছেড়ে গেছে। নিশ্চিত থাকো, এর চেয়েও দুঃখের মুহূর্ত তোমার সামনে আসবে। পছন্দসই একটা চাকরি হয়তো তুমি পাবে না। একটা দুর্ঘটনা কিংবা অসুস্থতা হয়তো মুহূর্তে তোমার জীবন বদলে দেবে। একটা ভাঙা সম্পর্ক, হয়তো আর কখনো জোড়া লাগবে না। সহজ দিনগুলো সহজেই পেরিয়ে যাবে। আমি বলছি কঠিন সময়গুলোর কথা। যে সময় তোমার দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে। কঠিন সময়ই নির্ধারণ করবে, তুমি কে? শুধু তোমার অর্জনই তোমার পরিচয় নয়। বরং তুমি কীভাবে টিকে আছ, সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কৃতজ্ঞতাবোধ হলো স্থিরতার চাবি। জীবনের আশীর্বাদগুলোর মূল্যায়ন করলেই এমন আশীর্বাদ তুমি আরও পাবে।’

e2da7a95e4266504cc4ded188fd10c7c-596388fd2d6fe.jpg

২০১১ সালের বার্নার্ড কলেজের সমাবর্তনে শেরিল বলেছিলেন, ‘জীবনে তোমাদের লক্ষ্য অর্জনে কী উপদেশ দেব তোমাদের? প্রথমে আমি যা বলে তোমাদের উৎসাহিত করতে চাই, তা হলো চিন্তার জগৎ বিস্তৃত করো। সফলতার মূলমন্ত্র হচ্ছে—জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য কী বেছে নেবে—প্রতিযোগিতা না অন্যের সংজ্ঞায়িত সফলতাকে? চেষ্টা করে যাও শেষ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তুমি তোমার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে, যতক্ষণ তুমি এমন একটা কাজ পাচ্ছ, যা তোমার ও সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে তোমার আবেগ ও কর্মদক্ষতাকে মিলিয়ে দাও। সাফল্য আসবেই।’

Sort:  

Every successful man have a women

ha ha yes bro

Really nice post and good info.

This information helps us to increase kowledge

I did not know this news before, now I know

Thanks for your nice information.....

That's very neccessary topics because almost all the people using Facebook .

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.14
JST 0.029
BTC 57062.81
ETH 3068.42
USDT 1.00
SBD 2.43