জেনে নিন ডায়রিয়া হলে কি করবেন

in #doctor6 years ago

ককককক-702x336.jpgএখন ডায়রিয়া হবার সময়। চারপাশে প্রচুর ডায়রিয়া হচ্ছে। তাই ডায়রিয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে কিছু জিনিস জানা প্রত্যেকের জন্য জরুরি।

কারণ:

ডায়রিয়া সাধারণত খাদ্য বা পানি বাহিত রোগ। খাবারের মাধ্যমে। ৮০-৯০ % ক্ষেত্রে ডায়রিয়ার কারন ভাইরাস৷ এদের মধ্যে ভিব্রিও কলেরি মহামারী ঘটিয়ে উজাড় করে দিত সব। আর কিছু ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণু আছে ডায়রিয়ার কারণ হিসাবে।

কখন ডায়রিয়া বলব?

সাধারণভাবে যদি দিনে তিন বারের বেশি পাতলা পায়খানা হয় তবে ডায়রিয়া বলা যায়। তবে একবার পায়খানাতেও যদি প্রচুর পরিমাণ পানি যায় আমরা ডায়রিয়া বলতে পারি। সাধারণত সময়ের হিসেবে ১৪ দিনের মধ্যে হলে একিউট এবং বেশি হলে ক্রনিক ডায়রিয়া বলি৷

ডায়রিয়ায় আসল সমস্যা কি?

আমরা খুবই ভুল ধারনা নিয়ে থাকি ডায়রিয়া নিয়ে। ডায়রিয়ার আসল বিপদ কিন্তু পানিশূন্যতা। আমাদের শরীরের ৬০% পানি। ডায়রিয়ায় শরীরের পানি কমে যায়। পানির সাথে খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। আমাদের শরীরের পানি এবং লবণের পরিমাণ নির্দিষ্ট পরিমাণ থেকে কম বেশি হলেই শরীরের সব উলটাপালটা হয়ে যায়৷ এজন্য দরকার পানি ও লবণ শূন্যতা পূরণ করা৷

ডায়রিয়ায় কিভাবে হয়:

ডায়রিয়া বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাস দ্বারা হয়ে থাকে। ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকরী ওষুধ তেমন নেই। এটা নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যায় এরাও মরে যায়৷ তবে আমাদের চিকিৎসা করতে হবে পানি ও লবণশূন্যতার। তাই ডায়রিয়ার প্রথম ও প্রধান চিকিৎসা স্যালাইন খাওয়ানো। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর প্রচুর পরিমাণ ওরস্যালাইন খাওয়াতে হবে যেন পানিশূন্যতা না হয়। মনে রাখবেন আমাদের লক্ষ্য পায়খানা বন্ধ করা না, কারন তা যতক্ষণ জীবাণু নিজে নিজে শেষ না হচ্ছে চলবে। পায়খানা বন্ধ করার চেষ্টা করলে আরো সমস্যা হতে পারে যা জীবন সংশয় করতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হবে যতক্ষণ পায়খানা নিজে নিজে বন্ধ না হয় ততক্ষণ যেকোন মূল্যে পানিশূন্যতা রোধ করা এবং এজন্য প্রধান ও একমাত্র অস্ত্র খাবার স্যালাইন। পূর্বে কলেরা কে ওলা বিবি বলত৷ এতে প্রচুর মানুষ মারা যেত। কারন খাবার স্যালাইন ছিল না৷ এখন আমাদের বাঁচার কারন একটাই খাবার স্যালাইন৷
কোনভাবেই স্বাভাবিক খাবার বন্ধ করা যাবে না। গরম গরম সব খাবার খাওয়াতে হবে। খাবার না খেলে আরো সমস্যা হবে, এতে ডায়রিয়াও ঠিক হবেনা সহজে, শরীর আরো শক্তি হারাবে।

এন্টিবায়োটিক কখন দেব এবং কিভাবে দেব?

এন্টিবায়োটিক দেবার আগে কিছু জিনিস দেখতে হয়। যেমন:

-রোগীর পায়খানায় রক্ত যাচ্ছে কিনা।
-রোগীর জ্বর আছে কিনা।
-পেটের কি অবস্থা। ইত্যাদি৷
একে গ্যাস্ট্রোএন্টেরেটাইটিস বলতে পারি৷ এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রণীত গাইড লাইনে এজিথ্রোমাইসিন ৫০০ মিগ্রা প্রথমে দুইটা এবং তারপর প্রতিদিন একটা করে মোট চার দিন দিতে বলা হয়েছে(পূর্ণবয়স্ক)। এছাড়া ডাক্তার মনে করলে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, মেট্রোনিডাজল গ্রুপের ওষুধ দেবেন। তবে এন্টিবায়োটিক কেবল এবং কেবল মাত্র একজন ডাক্তারকে দেখানোর পর দেবেন কখনোই নিজেরা না। এতে আপনার রোগী সামান্য ডায়রিয়ায় মারাও যেতে পারেন।

বাসায় চিকিৎসা:

প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর সঠিক নিয়মে বানানো খাবার স্যালাইন প্রচুর পরিমাণে। কমপক্ষে এক গ্লাস।
-দুই বছরের কম বয়সি শিশুদের জন্য জিংক বা বেবি জিংক খাওয়াতে হবে। ৬ মাস বয়স পর্যন্ত ১০মিগ্রা দিনে একবার দশদিন আর ৫ বছর পর্যন্ত ২০ মিগ্রা দিনে একবার দশদিন৷ তবে ওজন অনুযায়ি চিকিৎসক কম বেশি করবেন।
-বাচ্চাকে বুকের দুধ বন্ধ করবেন না৷ শুধু যদি দুধ খেলে সমস্যা হয় তখন বন্ধ করবেন। ভাল হলে আবার দুধ খাবে৷
-স্বাভাবিক খাবার কোন ভাবেই বন্ধ হবেনা। পারলে গরম গরম তৈরি খাবার আরো বেশি খাওয়াবেন।
-চিকিৎসক যদি এন্টিবায়োটিক দেন তা নিয়ম মেনে খাওয়াবেন।
-কখনোই পায়খানা বন্ধর ওষুধ লোপেরামাইড জাতীয় কিছু (ইমোটিল) কারো কথায় খাওয়াবেন না। এতে মারাত্মক সমস্যা হতে পারে৷
-মনে রাখবেন পায়খানায় পেটে ব্যথা হবে। মলদ্বারেও ব্যথা হতে পারে। এজন্য পেট ব্যথার আলাদা ওষুধ লাগবে না। একটু সহ্য করতে হবে৷ এর জন্য অধৈর্য হবেন না৷
-অনেকে পাতলা পায়খানার সময় পেটে গ্যাসের কথা বলেন এবং গ্যাসের ওষুধ খান। এতে পায়খানা আরো বেড়ে যাবে। তাই এ সময় গ্যাসের ওষুধ খাবেন না।
-জ্বরের জন্য সাধারণ প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে পায়খানার রাস্তায় দিয়ে লাভ নেই৷ বের হয়ে যাবে।

কখন হাসপাতালে নেবেন?

যদি প্রচুর পানি বের হয়ে শরীর নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে মনে হয়। তখন দ্রুত শিরায় কলেরা স্যালাইন দিতে হবে।

লক্ষণ চেনার উপায়:

*প্রস্রাব অনেক কমে যাওয়া। (কিডনি ফেইলুর এর লক্ষণ)
*রক্ত গেলে বা খুব জ্বর হলে
*চোখ কোটরে বসে যাওয়া
*জিহবা একদম শুকিয়ে যাওয়া
*হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া
*নিস্তেজ হয়ে পড়া
*চামড়া টানলে আগের অবস্থায় যেতে বেশি সময় নেওয়া ইত্যাদি।
সঠিক ভাবে স্যালাইন বানানোর নিয়মঃ
আধা কেজি পানিতে স্যালাইনের এক প্যাকেট পুরোটা দেবেন অথবা প্যাকেটে যেভাবে লেখা আছে সেভাবে। কমবেশি করবেন না৷ অবশ্যই মেপে মেপে পানি দেবেন।
আপনারা হয়ত জানেন না ভুল ভাবে তৈরি স্যালাইন মৃত্যুর কারন হতে পারে। এতে পানি ও লবণশূন্যতা পূরণ না হয়ে বেড়ে যেয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তাই অবশ্যই সঠিক পদ্ধতিতে বানাবেন। অবহেলা করবেন না।

প্রতিকার:

ডায়রিয়া পানি ও খাবার বাহিত রোগ। তাই
-বিশুদ্ধ ফুটানো পানি খেতে হবে।
-গরম গরম খাবার খেতে হবে। বাসি খাবার খাবেন না৷
-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে৷ হাত পরিষ্কার রাখতে হবে।
-শুকনো খাবার ধুয়ে খেতে হবে।
-খাবার আগে ও পায়খানার পর হাত ভাল করে সাবান দিয়ে ধুতে হবে।

কিছু প্রশ্ন যা শুনতে হয়:

খাবার খেতে পারবে?

-ডায়রিয়ার রোগী স্যালাইন যেমন খাবে, স্বাভাবিক সব খাবার খাবে৷ কখনোই বন্ধ করবেন না।

পেটে ব্যথা বা গ্যাস

-এজন্য কোন ওষুধ লাগবে না। ওষুধ দিলেই সমস্যা বাড়তে পারে। একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে।

গ্রাম ডাক্তার বা অমুকে লোপেরামাইড(ইমোটিল) দিয়েছে, পায়খানা তো কমেনা। এগুলো দেব?

-কখনোই দেবেন না৷ যদি হাসপাতালে চিকিৎসক দেন তখন দেবেন। এই ওষুধ অন্ত্রের স্বাভাবিক মোটিলিটি (চলন) বন্ধ করে। অপরদিকে ডায়রিয়ার অন্যতম কারন ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার টক্সিন (বিষ) যা পেটে থাকে৷ পায়খানার পানির সাথে জীবাণু এবং টক্সিন বের হয়ে যায়। যদি বন্ধ করার ওষুধ দেওয়া হয় এগুলো ভেতরে জমতে থাকে ফলে টক্সিক মেগাকোলন নামক ভয়াবহ অবস্থা হতে পারে। যাতে মৃত্যু হতে পারে।

এন্টিবায়োটিক দেব?

-বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লাগেনা এন্টিবায়োটিক। আপনি সঠিক নিয়মে স্যালাইন খাওয়াতে থাকেন। যদি মনে করেন ডাক্তার দেখিয়ে এন্টিবায়োটিক দেবেন।

শিরায় স্যালাইন দেব না ভয় লাগে, অথবা খেতে ভাল লাগেনা।

-প্রয়োজনে যদি ভয় করেন ভয় ভীতির ঊর্ধ্বে পরপারে যেতে হতে পারে। তাই যতই খারাপ লাগুক শরীরে পানি শূন্যতা পূরণ করতে যে পদ্ধতিই দরকার তাই করতে হবে।

কোন খাবার নিষেধ আছে?

-স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে তৈরি বাড়ির কোন খাবারই নিষেধ নেই। যদি কোন খাবার সহ্য না হয় তা বাদ দেবেন।

photo & writing reference:

https://bangalianaa.com/%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A6%BE-%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A7%9F%E0%A7%87-%E0%A6%AF%E0%A6%A4-%E0%A6%95%E0%A6%A5%E0%A6%BE-%E0%A5%A4-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D/

Sort:  

Good informative post, don't forgot to add source of your using photos also And don't just copy/paste , use your own thought about that topic and speard it on article . join our community for any kind of help :https://discord.gg/Z3P6bbt

Good post friend.Want to see more posts on future.Good luck @rdnblogs

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.12
JST 0.025
BTC 55693.62
ETH 2494.94
USDT 1.00
SBD 2.31