গুলশানে জোড়া খুনের দুই দিনেই ‘রহস্য উন্মোচন’

in #crime6 years ago

aW1hZ2UtNzQxOTQuanBn.jpg
রাজধানীর গুলশানে কালাচাঁদপুরে বাসায় ঢুকে জোড়া খুনের দুই দিনের মধ্যেই রহস্য উন্মোচনের দাবি করেছে র‌্যাব। বাহিনীটির দাবি, খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের উৎসব ইস্টার সানডেতে খরচের জন্য ওই বাড়িতে চুরি করতে গিয়েই খুন করা হয় দুই নারীকে।

আর এই খুন করেছে নিহত দুই জনের এক স্বজন ও তার তিন বন্ধু। তবে যে উদ্দেশ্যে এতসব, সেই টাকা মেলেনি ওই বাসায়।

গত ২০ মার্চ গুলশানের কালাচাঁদপুরে শিশু মালঞ্চ স্কুল রোডের ক-৫৮/২ নম্বর বাড়ির চতুর্থ তলার একটি বাসায় সুজাতা চিরান ও তার মা বেসেত চিরানকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে সুজাতা চিরানকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এবং বেসেত চিরানকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।

পরদিন অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার চেষ্টায় শেরপুরের নলিতাবাড়ী সীমান্ত থেকে আটক করা হয় চার জনকে।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই হত্যার ‘আদ্যোপান্ত’ জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

র‌্যাবের কর্মকর্তা জানান, খালা সুজাতার বাসায় টাকা চুরি করে ইস্টার সানডে উদযাপন করবে বলে এক মাস ধরে পরিকল্পনা করেছিলেন ধরা পড়া সঞ্জীব চিরান। জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জীব ও তার দলবল তাদেরকে সব জানিয়েছে।

সুজাতার পরিবারের সবাই চাকরিজীবী হওয়ায় ওই বাসা থেকে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পাওয়া যাবে বলেও ধারণা ছিল সঞ্জীব চিরানের।

র‌্যাব জানায়, ওই বাড়িতে সুজাতা চিরান, তার মা বেসেত চিরান, দুই মেয়ে মায়াবী ও সুরভী এবং মায়াবীর এক বছরের বাচ্চা বসবাস করত। এছাড়া জামাই পেলেস্তা সপ্তাহে এক থেকে দুই দিন এই বাসায় থাকতেন। মেজ মেয়ে মাধবী তার কর্মস্থল পার্লারের মেসে থাককেন। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে হালুয়াঘাটে।

পরিবারের সদস্যদের মধ্যে মায়াবী বিক্রয়কর্মী, হাশিষ ও পেরেস্তা দারোয়ান, মাধবী পার্লারের কর্মী এবং সুরভী একটি ব্যাগ তৈরির কারখানার কর্মী।

ঘটনার দিনে সুজাতা ও বেসেত চিরান ছাড়া পরিবারের অন্য সব সদস্য বাসার বাইরে নিজ নিজ কর্মস্থলে ছিলেন।

সুজাতার মেয়ে জামাই পেলেস্তা সেদিন সন্ধ্যায় কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরলে ঘরের মেঝেতে সুজাতার রক্তাক্ত লাশ এবং কিছু সময় পর খাটের নিচে ভিকটিম বেসেত চিরানের মরদেহ দেখতে পান।

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ‘গত ২১ মার্চ র‌্যাব-১ এর একটি দল জানতে পারে, শেরপুর জেলার নলিতাবাড়ি এলাকায় হত্যায় জড়িতরা অবৈধভাবে ভারতে যাওয়ার জন্য অবস্থান করছে। ওইদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটার সময়ে সঞ্জীব চিরান (২১), রাজু সাংমা ওরফে রাসেল (২৪), প্রবীণ সাংমা (১৯) এবং শুভ চিসিম শান্তকে (১৮) গ্রেপ্তার করে। এ সময়ে তাদের কাছ থেকে একটি ছোরা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, সঞ্জীব, শান্ত ও প্রবীণ ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে বসেই ঢাকায় সঞ্জীবের খালা সুজাতার বাসায় চুরি করে ইস্টার সানডে উদযাপনের পরিকল্পনা করে। বাসায় সকালের দিকে বাসায় সঞ্জীবের বৃদ্ধ নানী বেসেত একা থাকতেন বলে চুরি করা কঠিন হবে না বলেই ধারণা ছিল তাদের।

‘পরিকল্পনামতে, ১৯ মার্চ তিনজন ঢাকার উত্তরায় কুড়িলে তাদের আরেক বন্ধু রাজুর কাছে আসে।’

‘২০ মার্চ সকালে সঞ্জিব, শান্ত এবং প্রবীণ কুড়িলে রাজুর কর্মস্থলে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে পরিকল্পনাটি জানায়। রাজু সঙ্গে ধারালো অস্ত্র (ছোরা) রাখতেন আর সেটি চেয়ে নেন সঞ্জীব। পরে সবাই মিলে কালাচাঁদপুরে সঞ্জীবের খালার বাসায় আসে।’

‘সকাল নয়টার সময়ে প্রথমে রাজু ও প্রবীণ বাসায় সুজাতা বেসেত এবং তার মেয়ে মায়াবীকে দেখে ফিরে এসে নিচে থাকা সঞ্জীব ও শান্তকে জানায়।’

‘বাসায় তিনজন থাকলে তাদের পক্ষে চুরি করা সম্ভব হবে না বলে সঞ্জীব ও তার বন্ধুরা পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা কালাচাঁদপুর এলাকায় ঘোরাঘুরি করে।’

‘কিছু সময় পর সুজাতা বেসেত বাসা থেকে নিচে নেমে আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার জন্য বাইরে চলে যান।’

“বিকাল তিনটার দিকে শান্ত, রাজু ও প্রবীণকে নিয়ে আবার সে বাসায় যান সঞ্জীব। এ সময়ে সুজাতা ও তার মেয়ে মায়াবী অবস্থান করছিলেন। মায়াবীর এক বছরের একটি মেয়ে সন্তানও ছিল। সেখানে আপ্যায়নের পর সঞ্জীব তার খালা সুজাতাকে দুইশ টাকা দিয়ে দেশীয় মদ ‘চু’আনতে বলেন। সুজাতা চু আনলে সবাই মিলে পান করেন এবং আসামিরা পরিকল্পিতভাবে সুজাতাকে বেশি পান করিয়ে নেশাগ্রস্ত করে ফেলে। একই সময় মায়াবী তার কর্মস্থলের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হয়ে যান।”

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ সময় আসামিরা চুরির উদ্যোগ নিলে বিকাল সাড়ে চারটার সময়ে সঞ্জীবের নানি প্রবীণ বেসেত বাসায় চলে আসেন।

‘চুরির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছে বুঝতে পেরে আসামিরা এক পর্যায়ে রাজু ও প্রবীণ বেসেতের পা চেপে ধরে ও শান্ত বালিশ দিয়ে বেসেতের মুখে চাপা দেয়। এসময় সঞ্জীব তার নানির গলায় ওরনা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।’

‘তারপর সঞ্জিবের নির্দেশে শান্ত, প্রবীণ ও রাজু মরদেহ খাটের নিচে রাখতে বলে। তারপর তারা সুজাতাকে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে তারা প্রবীণকে বাসার নীচে পর্যাবেক্ষণ করার জন্য পাঠায়।’

‘এ সময় সুজাতা মদ্যপ অবস্থায় শুয়ে ছিলেন। রাজু তার মুখের উপর বালিশ চাপা দেন। সঞ্জীব দুই পায়ের উপর বসে ছোরা দিয়ে পাজরে আঘাত করতে থাকেন। আর শান্ত বাসা থেকে আরেকটি ছোরা নিয়ে সুজাতার গলা কাটতে উদ্যত হন। কিন্তু ছোরাটি কম ধারালো হওয়ায় সঞ্জীব তার হাতে থাকা ধারালো ছোরা দিয়ে সুজাতার গলায় জখম করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।’

মুফতি মাহমুদ খান বলেন, পরে পুরো বাসায় তল্লাশি চালিয়েও কোনো টাকা পয়সা না পেয়ে বিকাল সোয়া পাঁচটার সময়ে ওই বাসা ত্যাগ করে সঞ্জীব ও তার দল।

বাসা থেকে চারজন জোয়ার সাহারা বাসস্ট্যান্ডে যায়। সেখান থেকে একটি বাসে আবদুল্লাহপুর এবং অন্য একটি বাসে শেরপুরের নালিতাবাড়ী চলে যায়। সেখান থেকে তারা অবৈধভাবে ভারতে যেতে মোস্ত নামে একজনের সাথে যোগাযোগ করে।

(ঢাকাটাইমস/২২মার্চ/এএ/ডব্লিউবি)

Sort:  

This post has received a 0.52 % upvote from @drotto thanks to: @kdjakirtgl.

This post has received a 0.10 % upvote from @speedvoter thanks to: @kdjakirtgl.

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.027
BTC 60003.48
ETH 2309.22
USDT 1.00
SBD 2.49