একটি বাসের ড্রাইভার
পলাশ হাসি থামালো। একটু সিরিয়াস কণ্ঠে বললো, “জি না! আমি বিশ্বাস করি না”।
“ভেরি গুড”। আমি সম্মতিদানের ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকালাম।
এরপর বেশ কিছুক্ষন নীরবে কাটল। আমার একটু হাই উঠছে। ঘড়িতে সময় দেখলাম – ১১টা ৪৫। বাস কাচপুর ব্রিজ পার হয়ে এসেছে।
“আপনি বিশ্বাস করেন?” পলাশ প্রশ্ন করলো।
“কি?”
“আপনি ভ্যাম্পায়ারে বিশ্বাস করেন কি?” পলাশ রিপিট করলো প্রশ্নটা।
আমি কিছু না বলে নিরবে হাসলাম।
“কি ব্যাপার? কিছু বলছেন না যে?”
“কি বলব বলুন?” আমি হতাশ কণ্ঠে বললাম। “বললে লোকে হাসে। কিন্তু তাই বলে নিজের অস্তিত্বকে অস্বীকার তো করতে পারি না!”
“মানে?” পলাশ তো অবাক।
আমি আর কিছু বললাম না। হাই তুললাম আবার। ঘুম পাচ্ছে খুব।
“আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?”
পলাশ খানিকটা রেগে গেছে বুঝতে পারছি। আমি শান্ত কণ্ঠে বললাম, “সেটা একটু পরেই বুঝতে পারবেন”।
“কি বুঝতে পারব?” পলাশ আরও রেগে গেছে। “আপনি বলতে চাচ্ছেন যে আপনি ভ্যাম্পায়ার? এই কথা বিশ্বাস করতে বলছেন আমাকে? এই জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে একজন মানুষরূপী ভ্যাম্পায়ার? ফাজলামি করার আর যায়গা পান না?”
আমি কাঁধ ঝাঁকিয়ে বললাম, “একজন না ভাই। আন্তর্জাতিক জরিপ মতে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ৭২১ জন ভ্যাম্পায়ার আছে। তাদের মধ্যে ২৩৬ জন বাংলাদেশ ভ্যাম্পায়ার সোসাইটির সদস্য। বাকিরা নীরবে নিভৃতে থাকে। পরিচয় দেয় না”।
“ভাই, মশকরা রাখুন এবার”। পলাশ সিরিয়াস কণ্ঠে বলল, “অনেক বিনোদন দিয়েছেন। আর দরকার হবে না”।
আমি থামলাম না। বলে চলেছি, “এই মুহূর্তে এই বাসের ভেতর মানুষ ও ভ্যাম্পায়ারের অনুপাত ১:১। অর্থাৎ, এই বাসে এখন দুজন মানুষ আর দুজন ভ্যাম্পায়ার আছে”।
“তাই নাকি?” পলাশ টিটকারির সুরে বলল, “আপনি ছাড়া আর কে ভ্যাম্পায়ার এখানে? ঐ বয়স্ক লোকটা?”
“না”। আমি মাথা নাড়লাম। “বাসের ড্রাইভার মতিন ভাই”।
“এনাফ! অনেক হয়েছে!” চিৎকার করে উঠল পলাশ। “আপনি দয়া করে উঠুন। অন্য কোন সিটে গিয়ে বসুন। আমার পাশে আপনাকে আর বসতে হবে না। কি ভাবছেন আমাকে? বোকারাম? এইসব লেইম ফাজলামো করে ভয় পাইয়ে দেবেন? এই সবে ভয় পাই না আমি!”
আমি কিছু বললাম না। পকেট থেকে একগাঁদা টিকিট বের করলাম। মুঠো করে হাতটা পলাশের দিকে বাড়িয়ে ধরে বললাম, “এই গুলা কি দেখেছেন?”
“কি এই গুলা?”
“বাসের টিকিট!” আমি খুব শান্ত কণ্ঠে বললো। “একান্নবর্তী পরিবার, সবাই মিলে ভ্রমনে যাবে, আত্মীয় মারা যাওয়ায় ট্রিপ ক্যান্সেল করেছে – এই সব ভুয়া কথা। আসলে বাসের সমস্ত টিকিট কেটে নিয়েছিলাম আমি। দুটো টিকিট বাদে। দুজন সাধারন যাত্রী নিয়েছি মাত্র। যাত্রাপথে আমি আর মতিন ভাই যেনো তাদের রক্ত খেতে পারি। আমি আর মতিন ভাই প্রায়ই এই কাজটা করি। কেউ কিচ্ছু টের পায় না। এবার বিশ্বাস হয়েছে?”
“আ... আপনি ইচ্ছে করে...” রাগে কাঁপছে পলাশ। দাঁত মুখ খিঁচে বললো, “আপনি প্ল্যান করে এসেছেন আমাকে ভয় দেখানোর জন্য... দেখুন... আমি সহজে ভয় পাই না। এইসব করে লাভ হবে না। আমি জানি এইগুলা আসল টিকিট না”।
“আসল টিকিট না?” আমি চ্যালেঞ্জ দেওয়ার সুরে বললাম, “ঠিক আছে আপনি পরিক্ষা করে দেখুন! আপনার নিজের টিকিটের সাথে মিলিয়ে দেখুন। তাহলে বুঝবেন টিকিট আসল না নকল”।
“আমি কিচ্ছু পরিক্ষা করতে চাই না!” পলাশ ভেতর ভেতর ঘাবড়ে গেছে। কিন্তু তা ঢাকার জন্য চিৎকার করছে! “আপনি উঠুন বলছি। নইলে কিন্তু আমি গায়ে হাত দিতে বাধ্য হব”।
আমি বিনা বাক্যব্যয়ে টিকিট গুলো আবার পকেটে ভরলাম। হাতঘড়িতে সময় দেখলাম। বারোটা বেজে গেছে। আরও একটা হাই তুললাম। আড়মোড়া ভাঙলাম। তারপর বললাম, “গায়ে হাত দিতে হবে না। আমি এমনিই উঠতাম। বারোটা বেজে গেছে। অর্থাৎ মানুষের রক্ত খাওয়ার সময় হয়েছে আমাদের”।
পলাশ চোখে মুখে আতংক। আমি এত স্বাভাবিক কণ্ঠে কথা বলছি দেখে সম্ভবত সে দ্বিধায় পড়ে গেছে।
“আমাকে ভয় পাওয়ার দরকার নেই”। আমার ঠোঁটে মুচকি হাসি। “আমি আপনার রক্ত খাব না। আপনার উপরে নজর পড়েছে ড্রাইভার মতিন ভাইয়ের। উনি আপনার রক্ত খাবে। আমি যাই, ঐ বুড়োর রক্ত খেয়ে আসি”।
উঠে দাঁড়ালাম আমি। এগিয়ে গেলাম বুড়ো লোকটার কাছে। না তাকিয়েও বুঝলাম পলাশ আমার পেছন থেকে হতবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সামনের দিকে এসে ড্রাইভারের উদ্দেশ্যে বললাম, “ও মতিন ভাই? ১২টা বাজে তো! রক্ত খাইবেন না?”
“হ ভাই। খামু”।