মধ্যযুগে হরিনাকুন্ডু ও "দিগনগরের বৌদ্ধ স্তুপ "

in #blog6 years ago

মধ্যযুগে হরিনাকুন্ডু ও "দিগনগরের বৌদ্ধ স্তুপ "

হরিনাকুন্ডু উপজেলার মধ্যযুগীয় ইতিজাস কুয়াসাছন্ন। এ সময়ের সঠিক কোনো ইতিহাস পাওয়া যায় না। তবে জন প্রবাদ আছে যে, এখানে শালিবাহন রাজার রাজবাড়ি ছিল।ঝিনাইদহের নিকটবর্তী বাড়িবাথানের মুকুট রাজার সমসাময়িক রাজা ছিলেন হরিনাকুনাডুর শালিবাহন রাজা ঐতিহাসিকদের ধারনা। ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্রের মতে এদের উভ্যুদয় ঘটে মোঘল শাসন আমালের কিছু আগে। ১৫২৬ সালে পানি পথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লির সুলতান ইব্রাহিম লোদীকে যুদ্ধে পরাস্ত করে ভারতবর্ষে মোঘল শাসনের সুচনা করেন সম্রাট বাবর। তখন মধ্যযুগ। এ মধ্যযুগে হরিনাকুন্ডুতে শালীবাহন রাজার অভ্যুদয় ঘটে বলে ধারনা করা হয়। তিনি এ-স্থান হতে যশোর পর্যন্ত কড়ি দিয়ে একটি রাজপথ নির্মান করেছিলেন বলে শোনা যায়। এ রাজপথ ছিল "কড়ির জঙ্গল" নামে পরিচিত।
জনশ্রুতি আছে যে,শালিবাহন রাজা পরিচিত ছিলেন "দিপল কুম্ভকার" নামে। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন খুব দরিদ্র। পরবর্তী সময়ে এক অস্বাভাবিক উপায়ে তিনি নাকি বিরাট ঐশ্বর্যের অধিকারি হন এবং নিজেকে রাজা বলে ঘোষণা করেন। বঙ্গেশ্বরের বশ্যতা স্বীকার না করায় তার সাথে যুদ্ধ হয়, যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে পরিবার পরিজনসহ পায়রাদহ জলাশয়ে আত্মবিসর্জন দেন। ইহা হতে বুঝা যায় মধ্যযুগে হরিনাকুন্ডু এলাকার জনপদ সুষ্টি হয়েছিল এবং সেই সাথে জনবসতি গড়ে উঠে বিভিন্ন জায়গায়, সৃষ্টি হয় অনেক গ্রাম। তখন বন্যা হতো প্রতি বছর। অনেক জায়গাই সারা বছর পানি জমে থাকতো। এখানে আগত মানুষ মাটি কেটে উচুঁ ভিটার ওপর নির্মাণ করত ঘর-বাড়ি। এমনিভাবে হরিনাকুন্ডু উপজেলার গ্রামগুলো গড়ে উঠেছিল দিনে দিনে এবং বহু বছর ধরে। তখন অধিকাংশ লোক যাতায়াত করত পানিপথে নৌকাযোগে। ড. খোন্দকার রিয়াজুল হক তাঁর প্রণীত " লালন শাহের পূর্নভুমি হরিশপুর " গ্রন্থে(পৃষ্ঠা-১১) লিখেছেন, পাবনা থেকে নৌকাযোগে ব্যবসা-বাণিজ্যের পন্য নিয়ে বিভিন্ন নদীপথে ভ্রমণ করে হরিশপুর গ্রামের পাশ দিয়ে কলকাতা শহরে যাতায়াত করতেন ব্যবসায়ীরা। তাঁর এ মন্তব্যে প্রকাশ পায় যে, হরিনাকুন্ডুর অধিকাংশ জায়গা তখন জলমগ্ন থাকতো। তৎপর ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ থেকে জনবসতি গড়ে উঠতে থাকে হরিনাকুন্ডু অঞ্চলে। কুমার নদীকে কেন্দ্র করে ব্যবসা-বানিজ্য শুরু হয় এবং এ নদ ধরেই যাযাবর জাতীয় লোক এসে বসতি স্থাপন করে বিভিন্ন স্থানে। এভাবে ঊনবিংশ শতাব্দীতে হরিনাকুন্ডু একটি পূর্ন জনবসতি এলাকারুপে আত্মপ্রকাশ করে।

"দিগনগরের বৌদ্ধ স্তুপ "
হরিনাকুন্ডু পৌরসভার অধীন দিগনগর নামে একটি গ্রাম আছে। এ গ্রামে একটি প্রাচীন জলাশায়ের কাছে একটি বিরাট ঢিবি বা স্তুপ আছে।ইহার উচ্চতা ভূমি থেকে তিন ফুটের মত হবে। এটি পূর্বে আরো বেশি উচুঁ ছিল। স্থানীয় জনগন সেখানে চাষাবাদ করার ফলে এর উচ্চতা অনেক কমে গেছে। ঢিবি ও পার্শবর্তী এলাকা দেখে মনে হয় এ স্তুপ হিন্দু বৌদ্ধযুগের ধ্বংসাবশেষ। প্রাচীন প্রত্নতত্ব হিসাবে স্তুপটি বাংলাদেশ প্রত্নতত্ব বিভাগ সংরক্ষন করছে।এ স্তুপ থেকে বুঝা যায় হরিনাকুন্ডু তথা ঝিনাইদহ অঞ্চল গুপ্ত ও পাল বংশীয় শাসনাধীন ছিল। ঐতিহাসিকদের মতে আ: ৭৫০ হতে ১০৯৪ খ্রি. পর্যন্ত এখানে পালবংশীয় নৃপতিদের শাসনাধীন ছিল। তৎপূর্বে বাংলায় কর্তৃত্ব বিস্তার করেন গৌড়রাজ শশাঙ্ক (আ: ৬০৬-৬৩৭ খ্রি.)। এর পূর্বে ছিল গুপ্ত রাজবংশের শাসন। এ বংশের নৃপতিগন ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক। খ্রিষ্টিয় চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দীতে গুপ্ত শাসনামলে এদেশে গড়ে উঠে অনেক বৌদ্ধ বিহার বৌদ্ধ নৃপতিদের পৃষ্ঠপোষকতায়। এতে অনুমান করা যায় বৌদ্ধযুগ গুপ্ত বা পাল বংশীয় শাসনের কোনো এক সময় নির্মিত হয় হরিনাকুন্ডু দিগনগর গ্রামের বৌদ্ধ মঠ, সেই মঠের ওপরে মাটি জমা পড়ে ক্রমান্বয়ে বসে যায়। মৃত্তিকাগর্ভে শুধু স্তুপটির গোলাকার চুড়া ভেসে আছে সমতল ভুমির কিছু উপরে। প্রত্নতত্ব বিভাগও শনাক্ত করেছে এটা বৌদ্ধ স্তুপ। এ প্রচীন বৌদ্ধ নিদর্শনের অস্তিত্ব প্রমান করে যে, হরিনাকুন্ডু একটি প্রাচীন জনপদ।

Sort:  

This user is on the @buildawhale blacklist for one or more of the following reasons:

  • Spam
  • Plagiarism
  • Scam or Fraud

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 60915.52
ETH 3364.88
USDT 1.00
SBD 2.48