আমার নিজের লেখা গল্প।। মায়ের নিঃস্বার্থ ত্যাগ ও ভালোবাসা।। পর্ব-০২
প্রিয়, পাঠকগণ,
সন্ধের সময় একটু বেড়াতে যায় অলস পায়ে। বেরবার সময় গালশ থাকলে ওটাই পরে বেরবে, হোক না রাস্তা খটখটে শুকনো। আর ছাতা থাকলে বৃষ্টি না পড়লেও তা সঙ্গে নিয়ে বেরনো চাই।
কারো সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ হলে সেই একই কথা-কারখানা, যন্ত্র আর ফোরম্যান... কাজ ছাড়া ওদের কোনো কথা নেই, কোনো চিন্তা নেই। পানসে, একঘেয়ে দিন। এরই মধ্যে কদাচিৎ এক-আধটা, অতি ক্ষীণ, ভীরু চিন্তার ফুল্কি ঝলক দিয়ে যায়। বাড়ি ফিরে ঝগড়া লাগে বৌ-এর সঙ্গে, ঠেঙায় তাকে, ঘুসি মারতে ছাড়ে না। চ্যাংড়ারা মদের আড্ডায় যায়, অথবা বন্ধু-বান্ধবের বাড়ি আড্ডা দেয়,-অ্যাকর্ডিয়ন বাজিয়ে অশ্লীল গান গায়, নাচে, গালাগালি দেয় আর কষে মদ খায়। খাটুনিতে অবসন্ন দেহটা সইতে পারে না, নেশা ধরে সহজেই, কী যেন একটা অজানা অস্থির ফরিয়াদ বুকের মধ্যে জ্বলতে থাকে সবকিছুর তলায়, বেরবার পথ চায়। তাই মনের জ্বালায় সামান্য কারণেই তারা খেয়োখেয়ি করে পাশব হিংস্রতায়, কথায় কথায় হাতাহাতি, রক্তারক্তি, হাত-পা-মাথা ভাঙা,
কখনো কখনো খুনোখুনি পর্যন্ত।
মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কটুকু ওদের বেলায় কী যেন এক বিদ্বেষে বিষিয়ে থাকে যে, ওই বিষের জ্বালায়ই ওরা অযথা ক্রুর জঘন্য সব অপরাধ করে থাকে।
রবিবারগুলোয় ছোকরারা অনেক রাত্তিরে বাড়ি ফেরে ছেঁড়া কাপড়ে, সর্বাঙ্গ ধুলো-কাদা মাখা, কালশিটে-পড়া-চোখ, জখমি নাক; কখনও আবার বন্ধুদের ঠেঙিয়ে এসে বিদ্বেষের সঙ্গে আস্ফালন করে, আর নয়তো গুঁতোনি খেয়ে কাঁদতে কাঁদতে আসে, গোমড়া মুখে গজরায়; মাতাল, করুণ, অসহায়, ন্যাক্কারজনক কতকগুলো মানুষ। কোনো কোনো দিন ছেলেরা বাড়িই ফেরে না; পাঁড় মাতাল হয়ে পড়ে থাকে রাস্তার ধারে বা বেড়ার আড়ালে, নয়তো আড্ডাখানার মেঝেতে। বাপ-মা খুঁজে পেতে কুড়িয়ে আনে, যাচ্ছেতাই করে গালিগালাজ করে, ভদকা- ঠাসা অসাড় গতরগুলোর উপর লাগায় ঠ্যাঙানি। কম-বেশি যত্নশীল যে-সব মা- বাপেরা তারা ধরে নিয়ে বিছানায় ফেলে ওদের যাতে পরের দিন সাত- সকালে কারখানার ক্রুদ্ধ বাঁশিটা যখন ভোরের আলো ঠেলে আঁধারের ঢেউয়ের মতো তেড়ে-ফুঁড়ে এগিয়ে আসে, তখন আবার ওদের তুলে দিতে পারে।
বড়রা রাগ করে, ছেলেদের পেটায়ও বটে, কিন্তু ওদের মাতলামি আর মারামারিটা অস্বাভাবিক ভাবে না। নিজেরাও করেছে যখন চ্যাংড়া ছিল; বাপ- মায়ের কাছে এমনি ঠ্যাঙানিও তাই খেয়েছে। এমনিভাবেই তো চলে এসেছে ওদের জীবন-একটানা ঢিমে ঢিমে স্রোতে গড়িয়ে গড়িয়ে চলেছে বছরের পর বছর তার ঘোলা জল আদ্যিকালের পুরনো মন, চালচলন আর রীতকরণের পাড়- বাঁধা হয়ে। সে স্রোত বদলাবার বাসনা কারও নেই।
চলবে..........
This post has been upvoted by @italygame witness curation trail
If you like our work and want to support us, please consider to approve our witness
Come and visit Italy Community
Hi @dreamlife10,
my name is @ilnegro and I voted your post using steem-fanbase.com.
Come and visit Italy Community