১৯৮২ সাল

in #bangla5 years ago

১৯৮২ সাল।
একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে আশ্রিত ৮/৯ বছরের
মিনু তাকিয়ে আছে এক প্যাকেট সুপার
বিস্কুটের দিকে, প্যাকেটটি ওর খালা
নাজমার হাতে। সে বাংলো ঘরে বসা দুজন
মেহমানের চায়ের আয়োজনে ব্যস্ত। মিনু
দেখে প্যাকেট ভরা গোল গোল বিস্কুট- কী
সুন্দর কারুকাজ করা। মুখ ভিজে উঠে ওর।দুটো
বিস্কুট পাওয়ার আশায় মিনু নাজমার সকল হুকুম
পালন করছে নিষ্ঠার সাথে। নাজমা
রান্নাঘরের মাটির চূলার পাশে বসা মিনুকে
চুলায় লাকড়ি ঠেলে দেয়ার হুকুম দিয়ে বলে –
বিস্কুটের দিকে তাকিয়ে নজর দিসনা!
মেহমানের খাওয়া শেষ হলে তোকে দেব।
মিনু এবার বাংলো ঘরে মেহমানের সাথে বসা
নানীর কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। এখান থেকে
চায়ের কাপ আর বিস্কুটের প্লেট পরিষ্কার
দেখা যায়। মিনুর নজর চায়ের কাপে। চা শেষ
হলে ওগুলো নিয়ে রান্নাঘরে দৌড় দিতে হবে,
তবেই নাজমা দুটো বিস্কুট দেবে।চায়ে একচুমুক
দিয়ে মেহমানরা গল্প করে। মিনিট যায়, ঘন্টা
যায় – অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়না।
অনেকক্ষণ পর মিনু চায়ের ট্রে নিয়ে রান্না
ঘরে আসে – মুখে হাসি। মেহমানের প্লেটে
অনেক বিস্কুট রয়ে গেছে আর প্যাকেটে তো
আছেই। এবার নিশ্চয় দুটো বিস্কুট দেবে
নাজমা।কাপদুটো দেখেই হুংকার দেয় নাজমা
– এমা! এক কাপে অর্ধেক চা রইছে।
হারামজাদি তুই বিস্কুটের লোভে মেহমানের
সামনে থেকে কাপ নিয়া আইছস। যাহ ।তোরে
একটাও বিস্কুট দিমুনা।
(২)
২০১৫ সাল।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সেই বাড়িটি এখন
তিনতলা বিশিষ্ট, আলোকসজ্জিত। এখানে
একটি বিয়ের আয়োজন চলছে। কাছের দুরের বহু
আত্মীয় এসেছেন বহু বছর পর। বিয়ের দিন
সকাল বেলা শহরের বিখ্যাত শেফ রান্নার
আয়োজন করছে। এক ফাঁকে সে সবাইকে চা
আর কুকিজ পরিবেশন করে। আয়োজক প্রথমেই
নিয়ে আসে একজন সম্মানীত মেহমান
ইংরেজী বিষয়ের অধ্যাপিকা মিনারা বেগম
মিনুর কাছে। তিনি সবিনয়ে প্রত্যাখান করে
বলেন – আমি চা-বিস্কুট ছেড়েছি সেই
ছোটবেলায়। কাছেই শুয়ে ছিলেন বয়স্ক মুরব্বী
নাজমা খালা। তিনি চোখ তুলে তাকান। হঠাৎ
তার কি কিছু মনে পড়ে গেলো?

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 56677.48
ETH 2329.02
USDT 1.00
SBD 2.36