আজ কবিতার পাতা। কবিতার নাম - ভালো থেকো
আজ কবিতার পাতা। কবিতার নাম - ভালো থেকো
🙏 সকলকে স্বাগত জানাই 🙏
এই কবিতায় ‘ভালো থেকো’ শব্দবন্ধটি যেন আশীর্বাদ ও অভিশাপের মাঝামাঝি এক দ্বৈতসংবেদনা বয়ে আনে—যেখানে ভালোবাসা, বঞ্চনা, নিঃসঙ্গতা ও না-পাওয়ার গ্লানি একইসঙ্গে ধরা দেয়। বক্তব্য শুরু হয় এক অনন্য আবেদন দিয়ে—“তোমার না ভালো থাকার ভাগ চেয়েছি”—যার অর্থ, নিজের অস্তিত্বের বিনিময়ে প্রিয়জনের ভালো থাকা নিশ্চিত করতে চাওয়া। “গুছিয়ে রেখেছি মরুঝড়-মৃত্যুর দিন” পঙ্ক্তিটি চরম আত্মবিসর্জনের প্রতীক, যেখানে নিজের সমস্ত যন্ত্রণাকে ভবিষ্যতের কোনও অজানা আশঙ্কার মধ্যে সাজিয়ে রেখেছি। “পরস্মৈপদী” শব্দটি ব্যবহার করে প্রিয়জনের ভালো থাকা ‘অন্যের জন্যে’ হয়ে যাওয়ার ব্যাকরণগত যন্ত্রণাকে বোঝাতে চেয়েছি। “মহিঢাল” শব্দটি স্থবিরতা ও ভারাক্রান্ত মুহূর্তের প্রতীক হয়ে আসে, যেখানে সময় থমকে গেছে, কিন্তু সেই থমকে থাকাও একান্ত ব্যক্তিগত ও অন্তর্জাগতিক। “গুনে রাখা দিনে যত্নে সাজানো পলিমার” চরণে স্মৃতি ও যন্ত্রণার কৃত্রিম সংরক্ষণের একটি রূপক উঠে আসে, যা প্রিয়জনের জন্য সাজানো হলেও বাস্তবতাকে ছোঁয় না। সভ্যতা ও নির্জনতার দুই প্রান্ত ছুঁয়ে শেষ পর্যন্ত একটি ক্ষীণ প্রার্থনায় পৌঁছনো যায়—যেখানে “সোহাগি ঘাসফুল” হেলে পড়ে যেন একটুকরো স্বপ্ন, ভঙ্গুরতা আর অনুরাগের প্রতীক হয়ে ওঠে। কবিতার অন্তিম পঙ্ক্তি—“ভালো থাকুক অযুত সাম্রাজ্য / ভালো থেকো ঝলসানো কবিতার সব রাত”—একটি সুদূর প্রার্থনার মতো, যেখানে নিজের জ্বলে ওঠা রাতগুলিকে উৎসর্গ করে দেওয়া যায় প্রিয়জনের অনন্ত ভালো থাকার উদ্দেশ্যে। এই কবিতা মূলত এক নিঃশব্দ আত্মত্যাগের কাব্য, যা গভীর ভালোবাসা, চিরন্তন না-পাওয়া এবং এক নির্মম বাস্তবতার অভিজ্ঞান বহন করে।
আপনাদের যদি কবিতাটি ভালো লাগে তবে কমেন্ট করে আমার পাশে নিশ্চয় থাকবেন।
💐 কবিতা 💐
ভালো থেকো
কৌশিক চক্রবর্ত্তী
তোমার না ভালো থাকার ভাগ চেয়েছি-
নির্দিষ্ট দিনে গুছিয়ে রেখেছি মরুঝড়-
মৃত্যুর দিন নিয়ে অজানা সংশয়-
যখন শুনলাম তোমার ভালো থাকা পরস্মৈপদী
চোয়ালে গভীর হল মহিঢাল
থমকে দাঁড়ানো সময়টুকুই স্থির...
এপর্যন্ত গুনে রাখা দিনে যত্নে সাজানো পলিমার
পুঁতে এলাম কোনো রঙিন সভ্যতায়
অথবা অতিরিক্ত নিরক্ষরেখার দিকে-
আরও একটু ভালো থাকার জন্য
হেলে পড়ুক সোহাগি ঘাসফুল...
ভালো থাকুক অযুত সাম্রাজ্য
ভালো থেকো ঝলসানো কবিতার সব রাত...
🙏 ধন্যবাদ 🙏
(১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁক ও ৫% এবিবি চ্যারিটিকে)
--লেখক পরিচিতি--
কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ
ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার ভালো থেকো কবিতা পড়ে খুব ভালো লাগলো । খুবই সুন্দর কবিতা লিখেছেন আপনি খুব দারুণ হয়েছে। এতো সুন্দর মনের অনুভূতি কবিতার ছন্দে প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।