দেশে বন্যা ও দুর্যোগ পর্ব-০২

news01.png
এল নিনো (বাঁয়ে) ও লা নিনার (ডানে) সময়ে equatorial প্রশান্ত মহাসাগরের NINO ৩.৪ এলাকার সমুদ্রপৃষ্টের তাপমাত্রা। লাল অংশটুকু স্বাভাবিকের চেয়ে গরম ও নীল অংশটুকু স্বাভাবিকের চেয়ে ঠান্ডা দেখায়।
গত ৫০ বছরের পরিসংখ্যান ঘাঁটলে দেখা যায়, ২০০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ৭টি বড় বন্যা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ সালের বন্যা বড় হিসেবে চিহ্নিত। ১৯৮৭ ও ১৯৮৮ সালে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকা একসঙ্গে সক্রিয় হওয়ায় বড় বন্যা হয়। ১৯৮৭ সালে দেশের ৪০ শতাংশের বেশি আর ৮৮ সালে ৬০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয়। ৮০ শতাংশের বেশি এলাকা প্লাবিত হয় ১৯৯৮ সালের বন্যায়। ১৯৮৮ সালে দেশের বাইরে ও ভেতরে ভারী বৃষ্টিপাত, হিমালয়ের পর্বতে তুষার গলা ও হিমবাহের স্থানান্তর, প্রধান নদীগুলোয় একসঙ্গে পানি বৃদ্ধি এবং জোয়ার-ভাটাসহ নদীর সমুদ্রমুখী প্রবাহে ধীরগতি ছিল এবং হঠাৎ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অন্যতম প্রধান কারণ। সাধারণত, বাংলাদেশের ভেতর ও বাইরের অতিবৃষ্টি বন্যার প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে অতিবৃষ্টির কারণেই এ মাত্রার বন্যা।

২০১৭ সালের বন্যার জন্য অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক কারণগুলো যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা বেসিন জুড়ে অতিবৃষ্টি। তবে মোহনায় দীর্ঘ সময় ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ২০১৭-১৮ সালের ‘লা নিনা’ অনেকাংশে দায়ী। একইভাবে ১৯৮৮ও ১৯৯৮ সালের বন্যাও ছিল ‘লা নিনা’ দ্বারা প্রভাবিত। সাধারণত প্রতি ‘লা নিনা’ বছরেই বাংলাদেশের ভেতরে ও বাইরে অতিবৃষ্টি ও বন্যা হয়। ১৯৮৮ বা ১৯৯৮ সালের তুলনায় একটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ‘লা নিনা’র প্রভাব ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে লক্ষ্য করা যাচ্ছিল যেটা নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে প্রকটভাবে দেখা দেয়। দুর্বল ‘লা নিনা’ সত্ত্বেও এটি প্রচণ্ড আঘাত হানে বাংলাদেশে এবং ২০১৭ সালের ‘লা নিনা’ ছিল এই বন্যার একটি অন্যতম কারণ।

এখানে আরেকটি তথ্য বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। সেটি হলো অতীতে বাংলাদেশে যত শক্তিশালী ঝড় আঘাত হেনেছে, এর সবই ছিল ‘এল নিনো’ অথবা ‘লা নিনা’ সংঘটনের সময়। তবে বঙ্গোপসাগর অথবা বাংলাদেশ এলাকায় সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ‘লা নিনা’ থেকে নিরপেক্ষ (transition to neutral phase) অথবা ‘এল নিনো’ থেকে নিরপেক্ষ হওয়ার পর্যায়ে।

অতীতে কিছু বড় ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের উদাহরণ দেখলে বোঝা যায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের উপকূলীয় বাগেরহাট-খুলনা এলাকায় যে সিডর আঘাত হেনেছিল, তা ছিল মধ্য ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট মাঝারি ধরনের শক্তিসম্পন্ন ‘লা নিনা’ উদ্ভবের কারণে। ২০০৯ সালে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিলে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকায় ৯০ কিলোমিটার বেগে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় বিজলি আঘাত হানে। ওই সময় প্রশান্ত মহাসাগরে ধীরে ধীরে ‘লা নিনা’ দুর্বল হয়ে যাচ্ছিল। ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে ২০০৯ সালের ২৫ মে। প্রশান্ত মহাসাগরে ওই সময় ‘লা নিনা’ দুর্বল হয়ে নিরপেক্ষ অবস্থায় (transition to neutral) পৌঁছে গিয়েছিল। তখন বিষুবরেখা-সংলগ্ন প্রশান্ত মহাসাগরের পানি খুবই উষ্ণ অবস্থায় ছিল।

বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (BBS ১৯৯৩-২০০২) বিগত ২০০ বছরের ঘূর্ণিঝড়ের একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। বিবিএসে দেখানো হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বড় বড় ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিবিএস বলেছে, ১৭৯৫ থেকে ১৮৪৫ এবং ১৮৪৬ থেকে ১৮৯৩ সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে মাত্র তিনটি। ১৮৯৭ থেকে ১৯৪৭ সময়ে মধ্যে ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ১৩টি। অন্যদিকে, ১৮৪৮ থেকে ১৯৯৮ পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড় হয়েছে ৫১টি। ১৯৮০ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রশান্ত মহাসাগর এলাকায় ‘এল নিনো’ অথবা ‘লা নিনা’র উদ্ভবের পরিমাণও বেড়েছে এবং এই প্রবণতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়বে।

Coin Marketplace

STEEM 0.20
TRX 0.14
JST 0.030
BTC 69264.29
ETH 3316.64
USDT 1.00
SBD 2.66