গল্প||অভিমান পর্ব -২(শেষ পর্ব)
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বাংলা ব্লগের বন্ধুরা আপনারা সবাই কেমন আছেন ?আশা করছি সবাই সুস্থ আছেন, ভালো আছেন।আমিও আল্লাহর রহমতে মোটামুটি ভাল আছি।
গল্প||অভিমান পর্ব -২(শেষ পর্ব)
দিয়া ও দিনা দুই বোন। খুবই বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক তাদের মধ্যে।বেশ ভালো কাটছিল তাদের দিন গুলো।কিন্তু হঠাৎ দিয়ার অসুস্থতা তাদের জীবন টা এলোমেলো করে দেয়।তারপর থেকে ---
এরই মধ্যে দিয়া ও দিনার বাবা একটি ভালো ছেলে পেয়ে গেল। তারা দিনাকে ধুমধাম করে বিয়ে দিয়ে দিল। দিনার বিয়ের পর দিয়া যেন সম্পূর্ণ একা হয়ে গেল ।কেননা বড় বোন হয়ে ছোট বোনের আগে বয়ে হওয়াটা যত টা সহজ সবার কাছে ছিল, দিয়ার কাছে ততটা ছিল না।তাছাড়া দিনা ছিল তার বন্ধুর মত।দিনার বিয়ের পর দিয়া কারো সঙ্গে আগের মত হাসি আনন্দে মেতে ওঠে না ।খুব একটা কথা বলে না ।কেমন যেন একা একা হয়ে গেল। দিনার বিয়ে হওয়ায় দিয়া এতটাই কষ্ট পেয়েছিল যে, তার বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা মরে গেল ।তখন সে লুকিয়ে লুকিয়ে তার ঔষধগুলো জানালা দিয়ে ফেলে দিত।
এভাবে সে দীর্ঘদিন ঔষধ খেত না । কিন্তু পরিবারের কেউ বিষয়টি লক্ষ্য করেনি। সবাই ভেবেছে হয়তো সে নিয়মিত ঔষধ খায়। কেননা ঔষধ ফুরিয়ে গেলে আবার নতুন করে ঔষধ আনায়। এতে করে সবাই ভাবে সে নিয়মিত ঔষধ খাচ্ছে। কিন্তু দেখা গেল সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দিয়া আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলো ।সবাই একটু নড়েচড়ে বসল। দিয়ার প্রতি অনেক বেশি খেয়াল নিতে শুরু করল ।
একবার বাড়ির জানালার পাশে দিয়ার ভাই বেশ কিছু ঔষধ খুঁজে পেল। সেখান থেকে তারা সন্দেহ করতে লাগলো হয়তো দিয়ে এরকম অনেকদিন থেকেই করছে। দিয়াকে তারা জিজ্ঞাসা করলে দিয়ে ব্যাপারটি একেবারেই হেসে উড়িয়ে দেয়। সে বলে আরে না আমি এটা কেন করব ?আমি ঔষধগুলো নিয়মিত খাই ।হয়তো সেদিন ভুলক্রমে জানালা দিয়ে বাইরে পড়ে গিয়েছে ।ইচ্ছে করে আমি ফেলিনি। কিন্তু বিষয়টি তার পরিবারের কারোরই বিশ্বাসযোগ্য হলো না ।
তারপর পরিবারের লোকেরা তাকে চোখে চোখে রাখতে শুরু করল। এভাবে আরো কিছুদিন পর আরো অন্য একটি জায়গায় বেশ কিছু ঔষধ পাওয়া গেল ।তখন তারা ধরেই নিল দিয়া কখনোই ঔষধ খাচ্ছে না ।কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে ।এরই মধ্যে দিয়া অনেক বেশি অসুস্থ হয়ে গেল ।তাকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ঢাকার একটি বড় হসপিটালে ভর্তি করা হলো। কিন্তু মাত্র কদিনের মধ্যেই দিয়া সবার মায়া ত্যাগ করে পৃথিবী থেকে চির বিদায় নিল ।
একটা চাপা কষ্ট ও অভিমান নিয়ে দিয়া যেন পৃথিবী থেকে চলে গেল। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ল ।দিনা নিস্তব্ধ হয়ে গেল ।এটা কি হলো সে ভাবতেই পারছে না। দিয়া কে এভাবে হারিয়ে ফেলবে সে কখনো চিন্তাই করেনি। নিজেকে তার বড় অপরাধী মনে হল। তারপরেও কিছু করার নেই ।এটাই জীবন, এটাই নিয়তি ।এভাবেই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
(সমাপ্ত)
আজকের মতো এখানেই শেষ করছি ।আগামীতে আবার দেখা হবে নতুন কোন লেখা নিয়ে ।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আমার ব্লগ টি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ফটোগ্রাফার: | @wahidasuma |
---|---|
ডিভাইস: | OPPO Reno8 T |
🔚ধন্যবাদ🔚
@wahidasuma
আমি ওয়াহিদা সুমা।আমি একজন হাউজ ওয়াইফ। সমাজবিজ্ঞানে অনার্স মাস্টার্স করেছি।ঘুরে বেড়াতে , ঘুমাতে এবং গান শুনতে আমি ভীষন পছন্দ করি।বাগান করা আমার শখ।এছাড়াও আর্ট , বিভিন্ন রেসিপি ট্রাই করতেও ভালো লাগে। আমি 🇧🇩বাংলাদেশি🇧🇩।বাংলা আমার মাতৃভাষা।আমি বাংলায় কথা বলতে ও লিখতে ভালোবাসি।ধন্যবাদ আমার বাংলা ব্লগকে এই সুযোগটি করে দেওয়ার জন্য।
সত্যি আশেপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে গল্পের সৃষ্টি হয়। সেই ঘটনাগুলোই এক সময়ে আমাদের কাছে গল্প হয়ে ধরা দেয়। আপনি আজ খুব সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনার গল্প পড়ে যেমন ভালো লেগেছে তেমনই শেষের দিকে এসে খুব কষ্ট লেগেছে। প্রথম পর্ব পড়া হয়নি তবে এতোটুকু বুঝেছি প্রথম পর্বে দিয়ার বড় ধরনের রোগ ধরা পড়েছে। যার কারণে পরিবারের সবাই খুব ভেঙ্গে পড়ে। কিন্তু দিয়ার বাবা দিয়াকে রেখে দিনাকে বিয়ে দিয়ে দেওয়াতে দিয়া খুব ভেঙ্গে পড়ে। এই কাজটি করা হয়তো দিনার বাবার উচিত হয়নি, কিন্তু বাবা হিসেবে তিনিও বা কি করবে। বড় মেয়ের সমস্যা রয়েছে বলে ছোট মেয়েকে তো আর ঘরে রেখে দেওয়া যায় না। তবে দিয়া এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি আর এক্ষেত্রে দিয়া অনেক বড় একটি ভুল করে বসে, যার পরিণতি মৃত্যু। সে হয়তো পরিবারের সাথে এ বিষয়টি আলোচনা করলে তার একটু হলেও ভালো লাগতো। হয়তো দিনার মত কেউ তাকে সময় দিতে পারত না কিন্তু তারপরেও দিয়ার একাকীত্ব মনে হতো না। খুব সুন্দর গল্প লিখেছেন পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি গল্প আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপু আপনার কাছে আমার গল্পটি ভালো লেগেছে জেনে বেশ ভালো লাগলো। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে মন্তব্য করার জন্য। ভালো থাকবেন।
এই গল্পের প্রথম পর্ব পড়ে আমিও বুঝতে পারিনি দিয়া এভাবে অভিমান করে পৃথিবী থেকে বিদায় নিবে। বেশ খারাপ লাগলো দিয়ার শেষ পরিণতি দেখে। একজন মানুষ কতোটা কষ্ট পেলে এমনটা করতে পারে। দিয়া যদি ঠিকমতো ঔষধ খেতো, তাহলে হয়তোবা সুস্থ হয়ে যেতো। কিন্তু অভিমান অনেক সময় আমাদেরকে একেবারে শেষ করে দেয়। যাইহোক গল্পের নামের সাথে এন্ডিং একেবারে পারফেক্ট হয়েছে আপু। বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে। শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ভাইয়া গল্পটি আমার নিজের দেখা সত্য ঘটনা কে কেন্দ্র করে লেখা। আপনার ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।