আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে স্বরচিত একটি কবিতা" একুশে ফেব্রুয়ারি"
বন্ধুরা
আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি, আপনারা সবাই ভালো আছেন। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। তাই প্রথমে সকলকে জানাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আন্তরিক অভিনন্দন। আমরা যতই বাংলা ভাষা নিয়ে সাহিত্যচর্চা করি। এবং বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করলেও সময় বিশেষে আমরা সেটা ভুলে যাই। অন্যের কথা বলবো না। আমি নিজেও বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করেছি কিন্তু মাঝে মাঝে সেটা ভুলে ভুলে গিয়ে জগাখিচুড়ী ভাষায় কথা বলি। আমি আপনি আমরা সকলে মনেপ্রাণে বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা সকলের বাংলা। যদিও আমাদের ভাষাতে হিন্দি ,ইংরেজি ,আরবি ,ও ফারসি সব ধরনের ভাষা মিশে থাকে। ভাষা হল মানুষের ভাবের প্রকাশ। যদিও ভাষা মানুষ কবে থেকে বলতে শিখেছে সে কথা বলা খুব কঠিন। প্রাচীন যুগে মানুষ বনে বাস করতো। নিজেদের ভাব বিনিময় করার জন্য ভাষা তৈরি করেছিল। কালের নিয়মে ভাষায় এসেছে অনেক বদল। পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ২৩ কোটি মানুষের মাতৃভাষা বাংলা। বিশ্বে বহুল প্রচলিত মাতৃভাষা গুলির মধ্য সংখ্যা অনুসারে বাংলা ভাষার স্থান চতুর্থ থেকে সপ্তমের মধ্যে। ইংরেজি- চৈনিক- স্পানিশ ইত্যাদি পর বাংলা ভাষার স্থান। বাংলা ভাষায় বিশেষ করে সাহিত্য ইতিহাস, সংবাদপত্র- গান কবিতা রচিত হয়। বাংলাদেশে ভাষা আন্দোলন ইতিহাসে একুশে ফেব্রুয়ারি একটি গৌরব ময় উজ্জ্বল দিন। এই দিনটি প্রত্যেক নাগরিকের কাছে শহীদ দিবস বা মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় স্বাধীনোত্তর ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে পুলিশের সংঘর্ষে আব্দুল সামাদ, রফিক উদ্দিন আহমেদ আব্দুল বরকত আব্দুল জব্বার এবং অতি উল্লাহ নামে অনেক বালক নিহত হন। এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য শহীদ হওয়া মানুষদের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনটিকে বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় স্মরণ করা হয়। গীতিকার আব্দুল গফফার চৌধুরী এই অমর বলিদান নিয়ে বিখ্যাত একটি গান লিখেছেন।
" আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি"।এই গান টি আমার খুব পছন্দের একটি গান। কিন্তু আজ আমরা সেই বাংলা ভাষায় কথা বলতে লজ্জা বোধ করি। কার ও মুখে বাংলা শুনলে হাসা হাসি করি। আর সেই বাংলা ভাষার জন্য কত মানুষ অকাতরে তাদের জীবন বিলিয়ে দিয়েছে। এই বিশ্বায়নের যুগে প্রযুক্তিগত চাহিদা সত্বেও বাংলা মিশেল যেন ঐকান্তিক হয়ে উঠেছে। ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ায় বাড়বাড়ন্ত আমাদের বই পড়ার অভ্যাস বা পাঠকের সংখ্যা দিন দিন কমে আসছে। তাই ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের বিখ্যাত কবিতা দুটো লাইন না বললেই নয়।
ছেলে আমার খুব সিরিয়াস কথায় কথায় হাসে না,
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।।
এটা কবিতা হলে ও এমনই দেখা যায় বাইরের কথা বলবো না। আমার টিনটিন বাবু এখনই বেশির ভাগ কথা বলে ইংরেজিতে। সে মা বলতে পারে না। সে মাম্মা বলে ডাকে। কিছু কথা ইংরেজিতে না বললে সে বুঝতেই পারে না। এটাই হলো আমাদের বর্তমান অবস্থা।তবে ইংরেজিতে কথা বলা খারাপ তা আমি বলবো না। বাংলা ভাষার পাশাপাশি সব ভাষারই প্রয়োজন আছে। তবে সব ভাষা কে সম্মান করতে হবে।
এভাবেই আমরা নিজেরাই বাংলা ভাষাকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছি। ইংরেজি শিক্ষা মূল্য কথন পঠন পাঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বাংলা বইয়ের পাঠকের সংখ্যা বাড়েনি বরং ধীরে ধীরে কমতে চলেছে।
আমরা শুধু ২১ শে ফেব্রুয়ারি খাতা-কলমে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস করে রেখেছি। যাই হোক আমাদের বাংলা ভাষা দুই বাংলার মানুষের অতি প্রিয় ভাষা। এই ভাষাকে সম্মান ও শ্রদ্ধা জানাই।" আমি গর্বিত আমি বাঙালি"। সময় যতই পরিবর্তন হোক না কেন আমাদের গর্ব আমাদের ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতি আমাদের বাঘের প্রকাশক বাংলা ভাষাকে সেই সকল মহান শহীদদের ঠিক এইভাবে শ্রদ্ধার স্মরণ করে যাব।ভাষার কথা বলতে গেলে শেষ হবে না। আমি একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলাম কাল রাতে। আজ সেটি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
"একুশে ফেব্রুয়ারি"
মা তোর মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায় ওই হায়নার দল।
আমার চৌদ্দ পুরুষ বাপ দাদাদের আপন ভুলি কি করে ভুলি বল?
জারি -সারি - ভাটিয়ালি নকশী কাঁথার গান
ওসব আমার বাংলা ভাষার অমূল্য উপাদান।
মাগো ওরা কয়, উর্দু হবে দুই বাংলার ভাষা,
সয়না তোর সন্তানেরা এ অন্যায়ের ব্যথা,
ছাত্র- শিক্ষক, শ্রমিক - মজুর উঠেছিল ফেঁপে
সারাবাংলা আন্দোলনে উঠেছিল কেঁপে।
একতার মুঠো ভাত বিক্ষোভের স্বর
আকাশে বাতাসে তোলে প্রতিবাদের ঝড়।
জয় বাংলা , বাংলার জয়-
হবেই হবে এটা নিশ্চয়,
কোটি বাঙালি একসাথে, জেগেছে অরুনপাতে
মায়ের ভাষা রবে সুরক্ষিত - অক্ষয়।
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই
সকলের প্রাণে বাজে এক সুরের সানাই।
থামবে না প্রতিবাদ চলবে লড়াই
ছাড়বো না নিজেও মায়ের বুলি মরে হবো ছাই,
ব্রজমুষ্ঠি জোর প্রতিবাদ চলে বারংবার
পুলিশের গুলিতে মিছিলে ওঠে হাহাকার,
লুটিয়ে পড়ে সালাম ,বরকত, রফিক, জব্বার।
দিনটি ছিল একুশে ফেব্রুয়ারি
আমার ভাইয়ের রক্তমাখা শার্ট ভুলতে কি পারি?
নাম না জানা কত ভাষা শহীদগণ
ছিনিয়ে এনেছিল মাগোতোর চির আসন।
বিশ্বের দরবারে আজ কত সম্মান।
মায়ের তরে রেখে গেল যারা অবদান
তাদের জানাই সশ্রদ্ধা কোটি কোটি প্রণাম।
প্রথমেই ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আজকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আপু আপনি খুব সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন।আমার ভায়ের রক্ত রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। পুরো কবিতা খুবই আবেকঘন।তাই কপি করলে পুরোটাই করতে হবে।তাই আর করলাম না।ধন্যবাদ আপু আপনাকে।
মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনেক সুন্দর একটি কবিতা লিখেছেন বৌদি। এই ভাষার জন্য কত ভাইয়ের রক্ত ঝরেছিল। বলতে হয় এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আজকে এই মাতৃভাষা অর্জিত হয়েছে। যারা তাদের রক্তের বিনিময়ে' আজকে আমাদেরকে আমাদের মাতৃভাষা ফিরিয়ে দিয়েছে তাদের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা। আপনার কবিতা পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
দিদি,মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আপনাকে প্রথমে জানাই আমার মন থেকে শুভেচ্ছা। এই মাতৃভাষা জন্য হাজারো তরুণ হাজারো খেটে খাওয়া মানুষ শ্রমিক জীবন দিয়েছে। পৃথিবীর বুকে একটাই দেশ সেটি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং বাঙালি মাতৃভাষার জন্য রক্ত ক্ষয় সংঘর্ষ করেছে। তাদের এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের জন্য আমরা আজ স্বাধীন ভাষায় কথা বলতে পারছি।তাদের ঋণ কখনো আমরা শোধ করতে পারব না। তারা আমাদের জন্য স্বাধীন ভাষা এনে দিয়েছে নিজের জীবনকে বিলিয়ে দিয়ে।
দিদি, মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আপনি খুব সুন্দর একটি কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। দিদি, আপনার কবিতাটি পড়ে আমার সত্যিই অনেক ভালো লেগেছে। প্রতিটা বাঙালি এই মাতৃভাষা দিবসটিকে খুব ভালবাসি।দিদি, আপনার লেখা কবিতার মধ্যে আমার এই অংশটি খুবই ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ দিদি,২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে এত সুন্দর কবিতা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
@tipu curate
Upvoted 👌 (Mana: 5/6) Get profit votes with @tipU :)
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে এরকম চমৎকার একটি কবিতা লেখার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। পাশাপাশি খুব গুছিয়ে ভাষার ইতিহাস লিখেছেন ভালো লাগলো, শুভকামনা আপনার জন্য।
বৌদি খুব সুন্দর করে বাংলা ভাষার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আসলেই আমরা মাঝে মাঝে ভুলে যাই কত কষ্টের বিনিময়ে আমরা এই ভাষা অর্জন করেছি। তা না হলে আমরা এইভাবে আমাদের এই ভাষাটা কে নিয়ে তুচ্ছ মনে করতাম না।
কবিতার এই লাইন গুলো খুবই ভালো লেগেছে।
বৌদি আপনার কবিতা পড়ে মনে হচ্ছে কোন এক বিদ্রোহী কবির কবিতা পড়ছি। অসম্ভব ভালো লেগেছে কবিতাটি পড়ে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আপনি অনেক সুন্দর একটি কবিতা লিখে আমাদের মাঝে উপহার দিয়েছেন বৌদি। আপনার লেখা কবিতার প্রতিটি লাইন আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মানে হচ্ছে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা নিবেদন। আমরা সকলেই ভাষা শহীদদের কথা জানি এবং তাদের আত্মত্যাগের কথা আজও মনে রেখেছি। তাদের রক্তমাখা শার্ট এর কথা আমরা আজও ভুলতে পারিনা। যখন এই দিনটি আসে তখন মনে পড়ে যায় তাদের কথা। অনেক সুন্দর একটি কবিতা সকলের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি বৌদি।
বৌদি আপনাকে সাধুবাদ জানার ভাষা আমি খুঁজে পাচ্ছি না, আর একটি কথা বৌদি আমি আপনার কবিতার কোন লাইনটি কোড করবো..? কারণ পুরো কবিতাটি যে আমার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে, বাংলা ভাষার পক্ষে থেকে অনেক অনেক ভালোবাসা নিয়েন বৌদি, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
বৌদি ভাষা নিয়ে আপনি সত্যিই একটি চমৎকার পোস্ট করেছেন। অনেক তথ্য সমৃদ্ধ সেইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই দিনটির জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি পোস্ট। টিনটিন বাবুর মত বর্তমানে অনেক পরিবারেই একই অবস্থা বিরাজ করছে। আমরা অনেকেই বাংলা ভাষায় কথা বলতে অনেক সময় লজ্জা পাই। বিদেশি ভাষার প্রতি আমাদের সম্মান প্রদর্শন করতে হবে তবে অবশ্যই নিজের ভাষাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার পর। কবিতাটিও এককথায় অসাধারণ হয়েছে। শুভ কামনা রইল আপনাদের জন্য।
শহীদ দিবসের শুভেচ্ছা রইল বৌদি । খুব সুন্দর কবিতা লিখেছেন এবং নিজের কিছু মন্তব্য তুলে ধরেছেন। যা আসলেই সবার জানা উচিত ।