সাধক অর্জুন||তৃতীয় পর্ব
গত পর্বে
তারপর জিজ্ঞেস করলাম,"তাইলে কি বাবা সারাজীবন বেচে থাকা সম্ভব?"উনি হেসে বললেন,আরে পাগল মানুষ তো সারাজীবনই বেচে থাকে।যে যতক্ষণ জিবীত ছিল সেটাই তো তার সারাজীবন।তবে তোমার প্রশ্নটা আমি বুঝতে পেরেছি।"আমার মনে হয় মানুষ চিরদিন বেচে থাকতে পারেনা।জন্ম যখন হয়েছে তখন তাকে মারা যেতেই হবে,সে আজ হোক বা কাল।
| প্রথম পর্ব | লিংক |
|---|---|
| দ্বিতীয় পর্ব | লিংক |
বর্তমান পর্বে
তবে প্রত্যেকটা জীবকে সৃষ্টির পেছনে ঈশ্বরের কোন না কোন উদ্দ্যেশ্য আছেই। একটা জীব তত দিনই বাচে যতদিন তার সেই উদ্দেশ্য পূরণ হয়নি।উদ্দ্যেশ্য পূরণ হলেই তাকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হয়।আমি তখন জিজ্ঞেস করলাম সাধুজি, "তাহলে যে বাচ্চা ভূমিষ্ঠই হয়নি সে মাতৃগর্ভেই কেন মারা যায়? আবার কেউ একশবছর কেন বাচে?"
তখন সাধুজি বললেন,"এই উদ্দ্যেশ্য কারো একদিনে পূর্ণ হয় কারো হয়ত একশ বছর লাগে।হয়ত সেই শিশুর মাতৃগর্ভে আসার উদ্দেশ্যই ছিল তার বাবা মাকে একটু সুখ দেওয়া। কিছুদিন তাদের সুখ স্বপ্ন দেখানো।তারপর যে তাদের মুখে হাসি ফুটল সাথে সাথে তাদের পূণ্যফল ভোগ শেষ হল।তখন তাদের পাপের ফল ভোগ করার জন্য তাদের সন্তান হারানোর কষ্ট ভোগ করতে হয়।"
এসব বড় গভীর বিষয় হে। এখন এসব বুঝবে না।একদিনে তো নয়ই। সেই কবে থেকে সাধনা করে যাচ্ছি।এখনো কি এই অ্যাধাত্মিক বিষয়ের একবিন্দু বুঝেছি? বুঝেছি কি আমার জন্মের রহস্য? সারাদিন অনেক পথশ্রম করেছ।পেট ভরে খাওয়াতেও পারলাম না।এই ক্লান্ত শরীরে আর কথা নয় ঘুমাও। বাকি কথা না হয় কাল সকালে হবে।যদিও আমার এসব তত্ব কথা শুনতে বেশ লাগছিল তারপরেও ভেবে দেখলাম উনার কথা সত্য।ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন সকালে উঠলাম উঠে দেখি সাধুজি নেই।তখন মনে একটু ভয় হল আসলেই কি কাল রাতে সাধুজীর সাথেই কথা বলেছি? নাকি সে কোন বিদেহী আত্মা।এই শ্মশানের বিভিষীকার হাত থেকে বাচাতে স্বর্গ থেকে এসেছিলেন?
তখন পেছন থেকে একটি হাসির শব্দ পেলাম।দেখি সাধুজী হাসছেন।এরপর বললেন,"না হে।আমি রক্ত মাংসের মানুষই বটে। ভগবান এখনো আমাকে মরার সৌভাগ্য দেন নি।এখনো হয়ত অনেক বছর এই পাপময় পৃথিবীতে থেকে দু:খ,জরা ভোগ করতে হবে।"
আমি আবার অবাক হলাম।উনি আমার মনের কথা বুঝলেন কি করে? তখন সাধুজী বললেন,"কিছু গোপন সাধনা আছে।তাতে সিদ্ধি লাভ করতে পারলে তুমিও পারবে।"সেসব পরে হবে, তুমি যাও প্রাত:কৃত্য সেরে এসো।আমি ততক্ষণে খাবারের ব্যবস্থা করি।আমিও তার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম।স্নান সেরে এসে দেখলাম সাধুজী মাত্র চুলা থেকে গরম গরম ভাতে ভাত (ফেন ভাত/মার ভাত)নামিয়ে রেখেছেন।সাথে আলু সেদ্ধ।
আমাকে দেখে সাধুজী বললেন।এই যে এসে গেছ দেখছি,জলদি কাপড় পালটে এসো।এসে দুটো খেয়ে নাও।আমিও তাই করলাম। কাল প্রচুর পরিশ্রম গেছে, তারপর রাতে ঠিকমত খাওয়াও হয়নি।তাই গো গ্রাসে খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষে গুরুজী বললেন বিশ্রাম করো আমি একটু আসছি। চাল ডাল এখানে আছে, তুমি রান্না পার? আমি উত্তর দিলাম, "অল্পসল্প পারি"। সাধুজী বললেন," তাতেই কাজ চলবে।"
বেচে থাকার জন্য খাওয়া,খাওয়ার জন্য বেচে থাকা নয় ।বুঝেছ? আজ দুপুরে বৃষ্টি হবে। তুমি না হয় একটু খিচুড়িই বানিও"।আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম সেখানে মেঘের ছিটে ফোটাও নেই।আমার মনের ভাব বুঝতে পেরে সাধুজী বললেন,"নেই আসতে কতক্ষণ?"আমি আবার অবাক হয়ে গেলুম।সাধুজি হাসতে হাসতে কোথায় যেন চলে গেলেন।
OR


আমি বৃত্ত মোহন্ত (শ্যামসুন্দর)। বর্তমানে ছাত্র। নতুন কিছু শিখতে, নতুন মানুষের সাথে মিশতে আমার খুব ভাল লাগে। তেমনি বই পড়া আর ঘুরে বেড়ানো আমার পছন্দের কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। মুক্তমনে সব কিছু গ্রহণ করার চেষ্টা করি আর মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,"বিশ্বজোড়া পাঠশালা মোর, সবার আমি ছাত্র"।


সাধক অর্জুন গল্পটির প্রথম এবং দ্বিতীয় পর্ব মনে হয় আমার পড়া হয়নি। কিন্তু তৃতীয় পর্ব পড়ে আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে । সাধু যে সবকিছুই বলে দিয়েছেন। মেঘ দেখা যায়নি তবুও উনি বলেছেন বৃষ্টি হবে। যাই হোক পরের পর্ব পড়ার জন্য একটু বেশি আগ্রহ জাগছে মনের ভেতর। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি পরবর্তী পর্ব শেয়ার করবেন।
ধন্যবাদ আপু সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
বেশ ভালো দিকেই এগোচ্ছে গল্পটা। প্রত্যেকটা চরিত্রই যেন প্রাণবন্ত। আসলে এই ধরনের গল্প গুলো আমার কাছে অনেক বেশি ভালো লাগে পড়তে।
এ প্রশ্নের উত্তর আমরা সকলেই খুঁজছি, তবে মনে হয় না কোনদিন এই প্রশ্নের উত্তরের হাদিস খুঁজে পাওয়া যাবে।
ধন্যবাদ দাদা।অনেক উৎসাহিত করার জন্য।এমন মন্তব্য পাইলেই তো লিখতে ভাল লাগে।