কথা || @shy-fox 10% beneficiary
পাতাগুলো এখন আর খুলে দেখা হয় না । কেন খুলে দেখব , সেখানে যে আমার মান অভিমানের পর্ব লেখা । আজ যখন বুক সেল্ফ ঘাঁটছি, হুট করে কালো ডায়েরিটা সামনে চলে আসলো । একসময় যত্ন করে মুহূর্তগুলো লিখে রাখতাম । সময়ের কারণে হয়তো সেটার উপর ধুলো জমেছে । এই ধুলোর পৃথিবীতে মানুষের মনেই যখন ময়লা জমে, সেখানে তো ডায়েরির পাতায় ধুলো জমে থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে শেষ পাতাটা একবার খুলে দেখি । বলপেন দিয়ে লিখে রাখা, কথা গুলোর উপরও একবার একটু চোখ বুলিয়ে নেই। অকেজো মস্তিষ্ক আমার আজ কেজো হয়ে গিয়েছে । সেই মস্তিষ্কে এখন আর সেই সব স্মৃতি নেই । তাই হয়তো শেষ সম্বল ডায়েরিটায় ধুলোবালি জমে গিয়েছে ।
পড়ন্ত দুপুর হুট করে ডায়েরিটা হাতে নিলাম, প্রথম দিকের পাতা গুলোয় আর চোখ বুলাই নি । চোখ আমার একদম শেষ পাতায় । আমাকে দেখতে হবে কী লিখেছিলাম, সেই সময়টায় ।
সময় তখন ২০০৮ সাল, হাফ হাতা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে ,যখন সরু রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম অজানা একটা অনুভূতি কাজ করছিল নিজের ভিতর। বেশ ফুরফুরে লাগছিল সকাল বেলায় কিন্তু মুহূর্তেই ফুরফুরে মেজাজে যে অজানা অস্বস্তি কাজ করবে, তা আমার সেই দিন জানা ছিল না । খুদেবার্তা চলে আসলো মোবাইল ফোনে, নকিয়া বারোশো মডেলের মোবাইল ফোনটা যখন পকেট থেকে বের করে দেখার চেষ্টা করলাম , তাতে স্পষ্ট লেখা আজ বেলা এগারোটায় কিন্তু আমাদের দেখা হচ্ছে, ডাকবাংলোর পাশে । দাঁড়িয়ে থাকবেন, আমি যাত্রাপথে আপনার সঙ্গে দেখা করে নেব ।
কিছু বার্তা মুহূর্তেই নিজেকে উজ্জীবিত করে এবং অস্থিরতার চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে নিয়ে যায় । এইবোধটা আমার আগে কখনো হয়নি , ঐদিনই প্রথম হয়েছিল এবং বেলা এগারোটা বাজতে তখনো দুঘন্টা বাকি ছিল । দুঘন্টা সময় ডাকবাংলোর পাশে পায়চারি করতে করতে কিভাবে যে কেটে দিয়েছিলাম আর কত রকম প্রশ্ন মনের মধ্যে উজ্জীবিত হচ্ছিল সেই সময়টার ভুক্তভোগী শুধুমাত্র আমিই ছিলাম ।
বেলা গড়িয়ে যায় ঘড়ির কাঁটায় বারবার চোখ বুলিয়ে দেখি, সময়গুলো যেন খুবই ধীরগতিতে যাচ্ছে । অপেক্ষার সময়গুলো যেন আরো দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয় । দুঘন্টা সময় যেন আমার কাছে দু বছরের মতো লাগছিল । হুট করে যখন কাঙ্খিত সময়টি চলে আসলো । ডাকবাংলোর পিছন থেকে বোরকা পরা কেউ একজন সামনে এসে হাজির হলো এবং বলল রোজ রাতে মায়ের ফোনে যে মিসকল আর বার্তা পাঠিয়ে দেন , তাতে কী মজা পান । সেইসব তো আমি দেখতে পারিনা । তার থেকে বরং বিকেল বেলার দিকে বার্তা পাঠিয়েন , আমি সেই বার্তার উত্তর পাঠিয়ে দেবো ।
কিছু কথা শোনার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয় না । বরং কিছু কথা আপনাকে অপ্রস্তুত বানিয়ে দেয় । ঠিক তেমনটাই আমার সেইদিন হয়েছিল । মনে হয়েছিল, যেন আমার কান দিয়ে গরম বাতাস বেরিয়ে গেল । আমি বুঝলাম যে , কেউ একজন আমার বার্তার উত্তর দিতে চায় ।
হয়তো সেইদিনই লেখাগুলো আমার সেখানেই শেষ হয়েছে ডায়েরিতে । তারপর থেকে আর ডায়েরিতে লিখতে হয়নি । তারপরের কথাগুলো জমা হয়েছিল ছোট্ট মেমোরি কার্ডে । প্রতিদিন কথা গুলো জমা হতো আর সেই কথাগুলো আমি রোজ শুনতাম । কত হাসি-ঠাট্টা, কত গুঞ্জন, কত অভিমান। ইশ কত প্রকার কথা । সব কথায় জমিয়ে রাখতাম । আর সময় সুযোগ পেলে ঘেঁটেঘুঁটে কথাগুলো শুনতাম আর মনে মনে হাসতাম ।
রাত এখন তিনটা বাজে । আজ আবারো সেই কথাগুলো শোনার চেষ্টা করছি । বুকের ভিতর চিনচিন ব্যথা অনুভব হচ্ছে । যার সঙ্গে কথা আমার হয়েছিল, সে এখনো একই রকম কথা বলে । তবে সেটা আমার সঙ্গে না হয়তো অন্য কারো সঙ্গে ।
ডিসকর্ড লিংক:
https://discord.gg/VtARrTn6ht
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আসলে কি বলব ভাইয়া বুঝে উঠতে পারছিনা। তবে সময়টা যেমন রোমান্টিক তেমন ভয়ঙ্কর ও বটে। কারণ বুকের ভেতরটা যেমন দুকদুক করে তেমনি চিনচিনও করে। অসাধারণ ছিল আপনার ডাইরির শেষ পাতার লেখাগুলো। তবে আশা রাখি পুরো ডায়রির লেখাগুলো হয়তো জানতে পারবো, যদি আপনি আমাদেরকে লিখার অনুভূতি প্রকাশ করেন। তবে তখনকার সময় টা যেমন আপনার কাছে ছিল রঙিন তেমনই প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে এমন রঙিন একটা সময় আসে। তবে অপেক্ষার যন্ত্রনায় মৃত্যুর যন্ত্রণার চাইতে ও কঠিন যেমন। তেমনি আপনার দুই ঘন্টা হয়তো ওই রকমই কেটেছিল। আপনি সবসময় খুব সুন্দর করে গুছিয়ে লিখেন এবং আজকেও তার ব্যতিক্রম নয়। এত সুন্দর জীবনের একটা অধ্যায় আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনার প্রতি রইল ভালোবাসা অবিরাম।
পুরো ডায়েরির পাতা লিখতে গেলে ,জীবনের অনেকটা অংশ তুলে ধরতে হবে । তবে চেষ্টা করবো আস্তে আস্তে । ধন্যবাদ ভাই ।
পুরনো অতীত গুলো সব সময় বেদনা দেয়। আসলে আমাদের জীবনের অতীত গুলো হয়তো আমরা মনে করতে চাই না। কিন্তু পুরনো ডাইরির পাতা খুললেই সেই অতীতের স্মৃতিগুলো ভেসে বেড়ায়। হয়তো অতীত গুলো অনেক সুন্দর ছিল কিন্তু যে অতীত অতীত হয়ে গিয়েছে সেই অতীতকে মনে করে কষ্ট পাওয়ার কোন কারণ নেই ভাইয়া। সে যদি অন্য কাউকে জীবন সাথী করে সুখে থাকতে পারে তাহলে আপনিও চেষ্টা করুন নিজেকে সুখী রাখার। হয়তো সে আপনার যোগ্য ছিলনা। তাই তো আপনার সেই ভালোবাসা বুঝতে পারিনি। হয়তো আবেগ কেটে যাওয়ার সাথে সাথে ভালোবাসা হারিয়ে গেছে। বর্তমানকে আঁকড়ে ধরে অতীতকে ভুলে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো হবে। তাহলে হয়তো আগামীর পথচলা আরও বেশি সুন্দর হবে। অনেক সুন্দর কিছু কথা লিখেছেন আপনি। খুবই ভালো লাগলো পড়ে। ভাইয়া ধন্যবাদ আপনাকে।
অতীত বড়ই আবেগপ্রবণ। মাঝে মাঝেই আবেগপ্রবণ করে দেয় নিজেকে । ধন্যবাদ আপু আপনার সাবলীল মন্তব্যের জন্য।
ডায়েরি লেখার অভ্যাস খুব ভালো একটি অভ্যাস কিন্তু এই অভ্যাসটি কখনো তৈরি করতে পারিনি। এই যে পুরানো ডাইরি পেয়ে গিয়ে মনের জানালায় কিছু স্মৃতি উঁকি দিয়ে গেল আমার মনে হয় এটাই ডায়েরি লেখার সার্থকতা। মিষ্টি মিষ্টি এই বার্তা আদান প্রদানের মানুষটি কে ছিল জানতে চাওয়া অনধিকারচর্চা হয়ে গেলেও আকর্ষণ বোধ করছি। ভালো থাকবেন প্রিয় ভাই❤️
সময় পরিবর্তন হয়েছে । এখন ব্লগিং করতে হবে । ভাইয়ের কাছে আবার কিসের অনাধিকার , সময় সুযোগ পেলে লিখবো একদিন ভাই ।শুভেচ্ছা রইল আপনার জন্য।
কি মাধুর্য লেখায় যে লেখাগুলো শেষ না হওয়া অবধি পড়তেই থাকতে ইচ্ছে করে।কখনো ইচ্ছে হয়না মাঝপথেই ছেড়ে দি।রাত যত গভীর হয় মন যেনো ততই চঞ্চল হয়ে উঠে।
আহা সেকি আকুলতা । পাঠকের সন্তুষ্টি লেখকের আত্নতৃপি ।ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য আপু ।
এই ধুলোর পৃথিবীতে মানুষের মনে যখন ধুলো পড়ে গেছে তখন ডায়েরিতে ধুলো পড়বে এটা অস্বাভাবিকের কিছু নেই ভাইয়া। আসলে পুরনো স্মৃতির ডায়েরিতে ধুলা জমে যেমন ছেড়ে গেছে তেমনি পুরনো সম্পর্কগুলোর মাঝেও ধুলা জমে গেছে। পুরনো সম্পর্কগুলো যেমন হারিয়ে গেছে তেমনি সম্পর্কের সেই স্মৃতিগুলো আজ শুধু স্মৃতি হয়েই আছে। হয়তো আপনার সেই ভালোলাগা ও অনুভূতির সেই কথাগুলো আপনার স্মৃতির পাতায় আছে। কিন্তু প্রিয় মানুষটি এখন অন্যের ঘরে চলে গেছে। আপনার লেখাগুলো পড়ে খুবই ভালো লাগলো। খুবই আবেগপ্রবণ ছিল লেখাগুলো। ভাইয়া আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি দারুণ কিছু কথা লিখে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করার জন্য। সেইসাথে আপনার জন্য শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।
আসলেই অতীত ভীষণ জ্বালাময় । তবে মানুষ গুলো সুখে নিজ নিজ জায়গায় । শুভেচ্ছা রইল ভাই ।
এই আবেগ মিশ্রিত গল্পটি পড়ে নিজেও আবেগে পড়ে গেলাম। আপনার গল্প পড়ার মাধ্যমে বাস্তবিক জীবনের একটা শিক্ষা পাওয়া যায়। অনেক সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লিখেন আপনি। তবে আপনার গল্পটি ভাবী পড়লে মন খারাপ করতে পারে। অবশ্য আপনাদের বোঝাপড়া অনেক ভালো। অনেক ধন্যবাদ ভাই অসাধারণ গল্পটি আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য। ভালোবাসা অবিরাম ❣️❣️
আমার জীবনেই শুধু অতীত আছে তা কিন্তু না । হয়তো আপনার ভাবীর জীবনেও তো অতীত থাকতে পারে । আমরা গল্পের মানুষ, তাই মাঝে মাঝে স্মৃতিচারণ করি । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য ভাই ।
আসলে এ মান-অভিমান নিয়েই আমাদের জীবন। আসলে একটা সময় কত যত্ন করে লিখতাম ডাইরিতে এখন সে ডাইরিটি ধুলোবালি জমে গিয়েছে।আসলে এমন এমন সময় দু'ঘণ্টার সময় দু'বছর মনে হয় সময় যেতে চায় না।আসলেই এই মুহূর্তগুলো খুবই কষ্টকর। একটা মানুষ যখন একটা মানুষের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট থাকে যখন মানুষটা ছেড়ে দেয়। আসলেই সে মানুষটা একদম ভেঙে পড়ে কিন্তু বাস্তবতার তাগিদে দুজনে দুজনে জায়গা থেকেই স্থির থাকে আসলে জীবনটাই এমন💔
সত্যিই জীবনটাই এমন । এটা কেউ না মানলেও আমি মানি । থেমে থেমে শুধু রং পাল্টায় ।
ভাইয়া আপনার কথায় কিন্তু অসাধারণ মাধুর্য আছে। পড়তে পড়তে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আসলেকি ভালোবাসাই ভেঙ্গে যাওয়া মানুষ গুলোকে কিভাবে শান্তনা দেয়া যায় তা আমার জানা নেই । তবে এটাই বলবো যা হয় ভালোর জন্যেই হয়। ধন্যবাদ ভাইয়া।
বেশ ভালো আছি তো এখন । সেও ভালো থাকুক তার নিজ ভুবনে । ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য আপু ।