গত সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ অফিসে আমার সঙ্গে যা ঘটেছিল।

in আমার বাংলা ব্লগlast year

light-bulbs-1603766_1280.jpg
source

আজ যখন ঘুম থেকে উঠেছি, তখন সম্ভবত দুপুর হয়ে গিয়েছিল। আজকের আবহাওয়া অন্যান্য দিনের থেকে অনেকটাই ঠান্ডা ছিল সঙ্গে ক্রমাগত ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ছিল, যার কারণে হয়তো খুব একটা বেশি গরম অনুভূত হয়নি।

তবে বেলা গড়িয়ে যাওয়ার পরে , আবহাওয়া তার চিরচেনা রূপে ফিরে আসে। ক্রমেই ঘরের মধ্যে থাকা যেন অনেকটাই বিরক্তিতে পরিণত হচ্ছিল। কারণ বিদ্যুৎ নেই সকাল থেকে। হয়তো সকাল থেকে ক্রমাগত বৃষ্টি হয়েছিল, যার কারণে মনেহয় বিদ্যুৎ এর এই অবস্থা। তবে এখন তো টানা ঘন্টা তিনেক হচ্ছে, আবহাওয়া ঠিক আছে। তাহলে এখন কেন বিদ্যুৎ নেই।

এদিকে এমনিতেই ছোট বাবু বাসায় আছে, ওর যেন একটু বেশিই গরম লাগে। তাই বাবুকে যেন কোনভাবেই ঘরের ভিতরে আটকিয়ে রাখা যাচ্ছিল না। তবে এবার আমি কিছুটা আগ্রহ প্রকাশ করলাম জানার জন্য যে, মূল ঘটনাটা আসলে কোথায়। কেনইবা সারাদিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। আশেপাশের বাসা গুলোতে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলাম যে, তাদের বাসায় বিদ্যুৎ আছে কিনা। তারা আমাকে যা জানালো, তা শুনে আমি রীতিমতো হতবাক।

কারণ প্রত্যেকটা বাসাতেই বিদ্যুৎ আছে, শুধু আমার বাসাতেই নেই। যাইহোক এবার বুঝতে পারলাম ঘটনা আসলে অন্য জায়গায়, হয়তো যে কোন একটা ত্রুটি হয়েছে, যার কারণে এই অবস্থা। বিদ্যুৎ অফিসের জরুরি নাম্বারে ফোন করার চেষ্টা করলাম। তারা শুধু আমার অভিযোগটা শুনলো এবং কোথায় থেকে বলছি, সেটাও জানার চেষ্টা করল। তবে কখন আমার সমস্যার সমাধান হবে, সেই ব্যাপারে কোন কিছু জানালো না।

এভাবে আরও দু'ঘণ্টা সময় কেটে গেল তবে বিদ্যুৎ অফিসের কোন লোকজন তখন পর্যন্ত আমার বাসার ঠিকানায় আসলো না। আবারো তাদের জরুরি নাম্বারে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম, তবে তারা এবার ফোনটা রিসিভ পর্যন্ত করলো না। বুঝতে পারলাম এবার আমাকে নিজের থেকেই এগিয়ে যেতে হবে তাদের অফিসের দিকে এবং জানতে হবে যে, আসলে ঘটনাটা কি বা কেন তারা এতো দেরি করছে।

অবশেষে সন্ধ্যার দিকে সশরীরে গিয়ে যখন তাদের অফিসে হাজির হলাম, আমার সমস্যার কথা যখন তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি বলার চেষ্টা করলাম, তখন আসলে প্রেক্ষাপটটা কিছুটা যেন এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বেশ ব্যস্ত ও উদ্বিগ্ন, কারণ তার বাসায় তার ছোট মেয়ের জন্য, বাজার থেকে এখনো কেউ দুধ দিয়ে আসেনি। এটা নিয়ে সে ভীষণ চিন্তিত আছে, তার বাচ্চার দুধ খাওয়ার সময় হয়েছে অথচ কেউ তার বাসায় দুধ পাঠিয়ে দেয়নি। সে তার পুরো অফিসের স্টাফদের সঙ্গে অনেকটাই উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলছে এবং নিজের অবস্থান বোঝানোর চেষ্টা করছে।

যেহেতু এই সময় আমি সেখানে গিয়েছি এবং আমার সমস্যার কথা বলার চেষ্টা করছি, তখন তারা আমার কথা শোনা বাদ দিয়ে বরং তারা তাদের বড় স্যারের মেয়ের জন্য, কিভাবে দ্রুত বাসায় দুধ পাঠাতে হবে, সেটা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে।

অনেকটা সময় এসব দেখার পরে, আমি নিজেকে আর স্থির রাখতে পারিনি। এবার নিজের থেকে একটু উচ্চস্বরে কথা বলার চেষ্টা করলাম সকলের সঙ্গে, আমার বাসায় সকাল থেকে বিদ্যুৎ নাই, বেশ কয়েকবার আপনাদের জরুরি নাম্বারে ফোন দিয়েছি, সেখান থেকেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। আমার বাসাতেও ছোট বাচ্চা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আছে, তাদের এই গরমে অনেকটা নাজেহাল অবস্থা। আমার এই সমস্যার সমাধান কে করে দেবে, আমি তো আপনাদের নিয়মিত গ্রাহক, কখনো তো বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রাখিনি।

এবার কিছুটা তারা আমার কথায় কর্ণপাত করেছে, আমি তাদেরকে বলার চেষ্টা করলাম, আপনাদের জেলা শহরে যে আরো বড় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আছে, সে কিন্তু আমার বাল্যবন্ধু। তবে আমি চাইনা, এই তুচ্ছ ব্যাপারে তার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা আমার কথা শুনে এবং আমার বেশভূষা দেখে, তারা কোনভাবেই অনুমান করতে পারছে না, নেসকোর জেলা সদরের আঞ্চলিক প্রধান আমার বাল্যবন্ধু হতে পারে। তারা ব্যাপারটা নিয়ে অনেকটাই হাসিঠাট্টা করার চেষ্টা করল এবং বলল, আজ তো আমরা সবাই ব্যস্ত, কাল দিনের বেলায় আপনার কাজ করা হবে।

আমি বুঝতে পারলাম, এখন যা করার আমাকেই করতে হবে। আমি আসলে খুবই ছোট মানুষ এবং একদম সাধারন ভাবেই জীবনযাপন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। তবে ছোটবেলা থেকে যাদের সঙ্গে পড়াশোনা করেছি,তারা মোটামুটি কম বেশি এখন সরকারি-বেসরকারি অনেক বড় চাকুরীর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে।

বিদ্যুৎ অফিস থেকে বাহিরে বের হয়ে, বন্ধু হেলালকে ফোন করার চেষ্টা করলাম। ও অবশ্য রংপুরে কর্মরত আছে। আমার সমস্যাটা ওকে জানানোর চেষ্টা করলাম এবং আমাকে মানসিকভাবে তাদের লোকাল অফিসের লোকজন একপ্রকার হেনস্থা করেছে , তাও বলে ফেললাম।

সত্যি বেশিক্ষণ লাগেনি, মিনিট পাঁচেক পড়ে মুহূর্তেই বিদ্যুৎ অফিস থেকে দুজন টেকনিশিয়ান বাহিরে এসে, আমার কাছে এবার একটু জোরালো আবেদন করে কথা বলা শুরু করেছে। আমি বুঝতে পেরেছি, হয়তো হেলাল এখানকার অফিসারকে ফোনে বেশ ভালই ঝাড়ি দিয়েছে। হঠাৎই সবার ভিতরে একটা পরিবর্তন দেখলাম, আমাকে অফিসের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসতে দিল এবং সঙ্গে হালকা চা নাস্তা।

আমার কাছ থেকে, আমার বাসার ঠিকানা সংগ্রহ করে নিয়ে, আমাকে বিদ্যুৎ অফিসে বসে রেখেই, তারা আমার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আর এই ফাঁকে, এখানকার বিদ্যুৎ অফিসার আমার সঙ্গে আবারো এবার ভিন্ন আঙ্গিকে গল্প করা শুরু করে দিল। কিভাবে আমার হেলালের সঙ্গে পরিচয়, আমি কি করি,এইসব।

হঠাৎই বাসা থেকে ফোন এসেছে এবং বলল, বিদ্যুৎ চলে এসেছে, আমি যেন দ্রুত বাসায় ফিরি, এমনটাই ফোনের ওপাশ থেকে গিন্নি বলে দিল। আমি আর বিদ্যুৎ অফিসারের সঙ্গে খুব একটা বেশি কথা বাড়ালাম না। তবে অফিস থেকে ওঠার সময় তাকে শুধু বললাম, আপনার মেয়ে সঠিক সময়ে দুধ খায়নি দেখে, আপনার অনেক চিন্তা হচ্ছিল। তবে আপনার বাচ্চার মত যে, আরো সর্বসাধারণ মানুষের বাচ্চাকাচ্চা আছে বা তাদের বাসায় দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ না থাকলে, ব্যাপারটা যে আসলেই কিছুটা কষ্টকর হয়, এটা একটু মানবিকভাবে এরপর থেকে ভেবে দেখিয়েন, ধন্যবাদ আপনাকে।

Banner-16.png

ডিসকর্ড লিংক
https://discord.gg/VtARrTn6ht


20211003_112202.gif


JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

banner-abb4.png

Follow @amarbanglablog for last updates


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year 

ভাইয়া এগুলো তো সরকারি অফিসের চিরচেনা রূপ। আমার তো মনে হয় কখনো এগুলো পাল্টাবে না। কারণ আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছি। আজকাল আমরা অন্যায়ের সাথে বন্ধুত্ব করছি। সৎ লোককে অবমূল্যায়ন করছি। তাই তো এদেরকে যতই জ্ঞান দেন না কেন এ কান দিয়ে ঢুকাবে, আর ও কান দিয়ে বের করবে। তবে আপনার পোস্টটি পড়ে একটা জিনিস ভালোই বুঝতে পেরেছি। ঠেলার নাম বাবাজি। হিহিহি

 last year 

আসলেই ঠেলার নাম বাবাজি। এটা আবারও যেন প্রমাণ পেলাম।

 last year 

আমাদের দেশের পরিস্থিতিটাই এমন ভাইয়া শক্তের ভক্ত আর নরমের যম। আর তাইতো আপনার বন্ধু হেলালের ফোন পেয়েই বিদ্যুৎ অফিসের লোক দ্রুত চলতে শুরু করেছিল আপনার সমস্যার সমাধানের জন্য। অথচ আপনি যখন আপনার সমস্যা নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসের লোকদের সাথে কথা বলছিলেন তখন তারা আপনার কথায় পাত্তাই দেয়নি। অথচ একটি মাত্র ফোন পেয়ে বিদ্যুৎ অফিসের পরিস্থিতিটাই পাল্টে গিয়েছিল। এমন পরিস্থিতি দেখলে সত্যিই হাসি পায়। আমরা বাঙালি তাই সোজা আঙ্গুলে কখনো ঘি ওঠেনা। তাই আপনি আপনার বন্ধুকে ফোন করে নিজের সমস্যা সমাধান করেছেন এবং বিদ্যুৎ অফিসের লোকদেরও উচিত শিক্ষা দিয়েছেন।

 last year 

যদি আমি কাজটা করতে চাইনি, তবে তাদের অবস্থা দেখে বাধ্য হয়ে, আমাকে কাজটা করতে হয়েছিল।

 last year 

বাংলাদেশের প্রত্যেকটা সেক্টর এর অবস্থা এত খারাপ কি আর বলবো!! আসলে জবাবদিহিতার অভাবের জন্য এই সমস্যাগুলো তৈরি হয়েছে। জানিনা এগুলো থেকে বাংলাদেশ কবে পরিত্রাণ পাবে। তবে আপনি যে সমস্যা ফেস করেছেন এটা কিন্তু বাংলাদেশের চিরচেনা একটা পরিবেশ।

 last year 

আসলে আপু, কোথায় গেলে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে, কোথায় গেলে মুক্তি আসবে, কে জানে। পরিস্থিতি আসলেই খুব জটিলতা সম্পন্ন।

 last year 

ভাইয়া এটা হলো বাংলাদেশ। সরকারি অফিসের লোকেরা মনে করে তাদের সরকারি চাকরি হয়ে গেছে। তাদের আর কিসের টেনশন। বাকিরা কে মরলো কে বাচঁলো সে খবর তাদের রাখার দরকার নেই। তাদের মেয়ের দুধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে দুধ আসে নাই, দুধওলার কোন দায়িত্ব নেই। আর তিনি সরকারি অফিসে বসে খুব দায়িত্ব পালন করছেন। ঠেলা পড়লে সব ঠিক হয়ে যায়। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 last year 

হ্যাঁ অবশেষে, বাধ্য হয়েই আমাকে এই কাজটা করতে হয়েছিল, না হলে আমার সমস্যার সমাধান হচ্ছিল না।

 last year 

ভাই মাঝেমধ্যে সরকারি চাকুরীজীবিদের কাহিনী দেখলে মাথায় রক্ত উঠে যায়। কি যে ভাবে নিজেদেরকে। ওরা নিজেদেরকে মানুষ মনে করে,আর আমরা মনে হয় সবাই গরু ছাগল। তাই আমাদের কষ্ট তাদের কাছে কষ্ট বলে মনে হয় না। কিছুদিন আগে আমি উপজেলার ভূমি অফিসে গিয়েছিলাম জমির নামজারি করতে। পরোক্ষভাবে টাকার ইঙ্গিত দেয় সেখানকার কর্মকর্তা। পরে আমার পরিচিত উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানকে দিয়ে এসি ল্যান্ডকে ফোন করালাম। পরবর্তীতে সেই লেভেলের কদর করলো আমাকে। এসি ল্যান্ড অফিসার আমার সামনে তার পিএসকে বলে দিল উনার যা যা দরকার সবকিছু করে দিন। আমি তো মনে মনে হাসছি। যাইহোক মাঝেমধ্যে এমনটা করা দরকার। আপনি ফোন দিয়ে একদম ঠিক কাজ করেছেন। ঠেলার নাম বাবাজী 🤣।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42