অন্যরকম একটি বিকেল কাটালাম
আশা রাখছি সবাই ভালো আছেন ,আমিও আলহামদুলিল্লাহ মোটামুটি ভালো আছি। আজ বিকেলটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। আমি মনে হয় আমার একটি পোস্টে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছিলাম যে, আমার এক কলিগ ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত। ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকেই মূলত ওনি ঢাকা হেড অফিসে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। পরিশেষে চেয়ারম্যান মহোদয়ের সহায়তায় উনি ট্রান্সফার হতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের ট্রান্সফার গুলো মূলত বি সি আই সির হেড অফিসের চেয়ারম্যান মহোদয়ের অনুমতি ছাড়া হয় না।
তাই উনি উনার প্রেসক্রিপশন গুলো দেখিয়ে উনার সাথে সরাসরি আলাপ করেছেন। চেয়ারম্যান মহোদয় ওনার চিকিৎসার কথা বিবেচনা করে সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবং স্ট্যান্ড রিলিজের অর্ডার দিয়েছে। তাই উনি দু-একদিনের মধ্যে ঢাকায় চলে যাবেন।
সেজন্য ওনাকে আমরা সংক্ষিপ্তভাবে একটা বিদায়ের ব্যবস্থা করেছি এবং সবাই মিলে আমাদেরকে গেস্ট হাউস ঘুরে দেখেছি ওনাকে নিয়ে। আসলে উনি বলেছেন যে ,হায়াতে যদি বাঁচিয়ে থাকি তাইলে হয়তোবা আপনাদের সাথে দেখা হবে আর এই ফ্যাক্টরি হয়তোবা কোনদিন দেখবো না । তাই আসেন আজকে বিকেলে সবাই মিলে একটু ঘুরে আসি।
সেজন্য আমরা সবাই মিলে আসরের নামাজ পড়ে একটু বের হয়েছিলাম ।অবশ্য আমার একটু বের হতে দেরি হয়েছিল ।তাই সবাই অফিসার হোস্টেলের সামনে বসে ছিল। তারপর সবাই একত্রিত হয়ে ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে বের হলাম।আপার যেহেতু ফুসফুস ক্যান্সার থ্রি স্টেজ তাই অনেকটাই শারীরিকভাবে দুর্বল। লাঠি ভর করে হাঁটতে হয়। আমার যতটুকু মনে হয় ,উনি মনের জোরে এখনো এতোটুকু সুস্থ রয়েছেন। এই লাঠি ভরকরেই পুরো ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখেছেন। বিভিন্ন জায়গায় আমাদের সাথে ছবি তুলেছেন। হয়তোবা উনি মনে হয় এটাই ভেবে নিয়েছেন ,মনে হয় আমার সাথে ওদের আজই শেষ দেখা ।আপার জীবনের প্রদীপ যে নিভু নিভু তা বোঝার কোন উপায় নেই উনি এই হাস্যজ্জল মুখখানা দেখে। হাসি দিয়েই দুরারোগ্য ব্যাধিত জয় করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উনি।
সত্যি বলতে কি আমার বাবাও অবশ্য এই ক্যান্সারেই আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন ।যেদিন আমি শুনেছি যে ওনার ফুসফুস ক্যান্সার হয়েছে ।আমার চোখের সামনে আমার বাবার চেহারাটি বেশি উঠেছে আর বাবার সেই কষ্টগুলো পুনরায় মনে পড়েছে।
আপা খানিকক্ষণ হেঁটে ক্লান্ত হয়ে যায়।আর বিভিন্ন জায়গায় বসে পড়ে। আমি এক মুহূর্তের জন্য আপাকে ছাড়িনি ।কারন আমার মনে হচ্ছে ,যে কোন সময় যে কোন অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে। আমার অন্যান্য কলিগরা খুব মজা করেছে কিন্তু আমি আপার পাশে থেকে কয়েকটি ছবি উঠিয়েছি।
রেস্ট হাউজের পাশের পরিবেশটা অসাধারণ সুন্দর। তাই ওখানের বারান্দায় দাঁড়িয়ে মেঘনার অপরূপ সৌন্দর্য হৃদয় দিয়ে উপভোগ করেছি। তাই দু একটা ছবি তুলে রেখেছি, স্মৃতি ধরে রাখার জন্য।
তবে আপার সাথে আমার খুব বেশি ছবি নেই। কারণ আমি সিংহভাগে আপার সাথে গল্প করি কাটিয়েছি। বারবারই মনে হচ্ছে ,আমাকে হারিয়ে ফেলছি আর হয়তো একসাথে বসে কথা বলতে পারব না। আপা ২৬ সালে রিটার্ড করবে। আর উনি চাকরি জীবনের শেষ প্রান্তে এসে এরকম দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেন। জানিনা আল্লাহপাক ওনার আয়ুষ্কাল কতদিন রেখেছেন ।তবে আমি মনে প্রাণে দোয়া করি রাব্বুল আলামীন পারেনা এমন কোন কাজ নেই ।আল্লাহপাক যেন তার কুদরতি উসিলায় আপাকে এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করার তৌফিক দান করেন।
তবে দীর্ঘদিন পর রেস্ট হাউস ,গেস্ট হাউস সব ঘুরে দেখেছি। এবং কিছু ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করলাম। আমার মনে হয় আপনাদের কাছে ও ভালো লাগবে আমার এই পরিবেশটা দেখে।
সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মত এখানেই শেষ করছি ,আল্লাহ হাফেজ।
সর্ব প্রথম সৃষ্টি কর্তার কাছে প্রার্থনা রাখি আপনার কাজিনের শরীর যেনো আল্লাহর রহমতে ভালো হয়ে যায়। আসলে সবই সৃষ্টি কর্তার রহমত সৃষ্টিকর্তা যেটাই করেন সেটি আমাদের ভালোর জন্য করেন।হয়তো বা আমাদের খারাপ হয় কিন্তু অবশ্যই কোন না কোন কায়দায় ভালো হয়ে থাকে। সবি আল্লাহর হাতে তিনি দিয়েছেন আপনার কাজিনের এই ফুসফুসে ক্যান্সার হয়তো বা তিনি সারিয়ে দেবেন খুবই দ্রুত।
এটা জানতে পেরে আসলে অনেক খারাপ লাগছে আপনার বাবার ফুসফুসে ক্যান্সার হয়েছিল এবং তিনি তাতে মারা গিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা রাখি আপনার বাবাকে জান্নাতবাসী করুক এবং সন্তান হয়ে বাবার কথা মনে পড়বে এটাই স্বাভাবিক কাজিনের অবস্থার কথা শুনে আপনার বাবার কথা মনে পড়েছে এটা একটি সন্তানের ভালোবাসা।
আপনার লেখাটা পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেল। আমার শাশুড়ীকে ক্যান্সারে হারিয়েছি বছর দুয়েক আগে। ফুসফুস এর ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমার এক মামা আর এক কাজিন মারা গেছে। আমার পরিবারের আরো কয়েকজনকে হারিয়েছি বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সারে। চারপাশে এই রোগের তান্ডব।
দোয়া করি আল্লাহ আপনার এই আপাকে সুস্থ করে আবার সবার মাঝে ফেরত নিয়ে আসুন।
আপনিও ভালো থাকবেন সবসময়ই এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য
ক্যান্সারের চিকিৎসা অনেক ব্যায়বহুল। আসলে যাদের পরিবারে এমন মানুষ থাকে তাদের মানুষিক অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে থাকে।উনাকে সহয়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়াতে আমি চেয়ারম্যান মহোদয়কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই।আপনাদেরকেও ধন্যবাদ জানাই উনার বিদায় উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য।