শৈশবের একটি স্মরণীয় ঘটনা।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


আজ আমি আপনাদের সাথে শৈশবের একটি স্মরণীয় ঘটনা শেয়ার করবো। আমি আমার শৈশবে পড়ালেখার জন্য বিভিন্ন জায়গায় গিয়েছিলাম। যদিও সেটা নিজের ইচ্ছায় নয়। সেটা ছিল সম্পূর্ণই বাবা-মায়ের ইচ্ছাতে। আমি শৈশবের এক পর্যায়ে আমার ছোট ফুপির বাসায় এক বছর ছিলাম। তখন আমার ফুপি ফুফার চাকরি সূত্রে বাগেরহাট জেলায় অবস্থান করতো। হুট করে যখন সেখানে যাওয়ার কথা ঠিক হলো তখন আমি প্রচন্ড মন খারাপ করলাম। কারন আমার সেই জায়গাটি সম্বন্ধে একেবারেই ধারণা ছিল না।

Polish_20230207_000016329.jpg

কিন্তু যতই মন খারাপ হোক আমাকে সেখানে যেতেই হয়েছিল। কারণ আমার বাবা-মা ছিল একেবারে নাছোরবান্দা। তারা আমার পড়ালেখার জন্য যে কোন কিছু করতে রাজি ছিল। অগত্যা আমাকে সেখানে একটি বছর থাকতে হয়েছিল। জায়গাটির নাম ছিল কচুয়া উপজেলা। এটি বাগেরহাট জেলার অন্তর্গত। এই কচুয়া উপজেলায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য একটি কলোনী ছিল। সেই কলোনিতেই আমি এক বছর ছিলাম। কলোনির পরিবেশ ছিল বেশ চমৎকার। কলোনির ভেতর ছোট্ট একটি পার্ক। সেই পার্ক ঘিরে বাড়িগুলোর অবস্থান ছিল।

ফুফা সমাজসেবা অফিসার হওয়ার কারণে আমি বেশ সমাদরে ছিলাম সেখানে। সেখানে গিয়ে আমি একটি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। তখন আমি ক্লাস ফাইভে পড়তাম। তো বাগেরহাটে কচুয়াতে আমার দিনগুলো মোটামুটি ভালই কেটে যাচ্ছিল। কারণ সেখানে যে স্কুল টাতে আমি ভর্তি হয়েছিলাম। সেখানে আমার বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব জুটে গিয়েছিল। তাছাড়া কচুয়া উপজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশ আমার খুবই ভালো লেগে গিয়েছিল। বিশেষ করে সেখানকার নদীর জোয়ার ভাটা। কারণ তার আগ পর্যন্ত আমি কখনো জোয়ার ভাটা দেখিনি।

আমরা যে স্কুল টাতে পড়তাম তার পাশ দিয়েই একটি ছোট্ট খাল বয়ে গিয়েছিল। সেইখালে জোয়ার ভাটার খেলা আমি খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতাম। কখনো খালটি পানিতে পুরোপুরি ভরে যেত আবার কখনো পানি প্রায় একেবারে শুকিয়ে যেত। পড়ালেখার সময়টুকু বাদে বন্ধুবান্ধবদের সাথে স্কুলের আশেপাশে এলাকাতে আমি ঘুরে বেড়াতাম। সময়টা বেশ ভালোই কেটে যাচ্ছিল। তবে বাগেরহাট যাওয়ার পর থেকে শুনতে পাচ্ছিলাম এখান থেকে মংলা বন্দর অনেক কাছে। সেই সময় পর্যন্ত আমি কখনো বড় কোন সমুদ্রগামী জাহাজ দেখিনি। শুনেছিলাম সেখানে অনেক বড় বড় জাহাজ মংলা বন্দরে আসে। আর রাতের বেলায় নাকি সেই জাহাজগুলো দেখতে এক একটা ছোটখাটো শহরের মতো দেখা যায়। এই কথাগুলো শোনার পর থেকে আমার প্রচন্ড ইচ্ছা ছিল মংলা বন্দরে যাওয়ার।

কিন্তু ইচ্ছা থাকলেই তো আর সেখানে যাওয়া যায় না। এর ভিতর একদিন হঠাৎ করে দুপুরের দিকে আমার ফুপু বলল তাড়াতাড়ি তৈরি হয়েনে। আমরা সকলে মংলা যাচ্ছি এই কথা শুনে আমি তো মহা খুশি। অতি দ্রুত কাপড় পড়ে তৈরি হয়ে নিলাম। তারপর জানতে পারলাম কচুয়ার টি এন ও সব অফিসারদের নিয়ে মংলা বন্দর ঘুরতে যাবে। মংলা বন্দর যাওয়ার আমার ইচ্ছার আরো একটি কারণ ছিল। শুনেছিলাম বন্দরের পাশে একটি মার্কেট আছে। সেখানে নাকি অনেক ভালো মানের বিদেশী জিনিসপত্র পাওয়া যায়। ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র থেকে শুরু করে পারফিউম সবই সেখানে পাওয়া যেতো। সেগুলো দেখার আমার খুব ইচ্ছা ছিল।

যাইহোক তৈরি হয়ে কিছুক্ষণ পরে আমরা দুটি গাড়িতে করে মংলা বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। প্রথমে আমরা সেখানে পৌঁছে নদী পার হয়ে অপর পাড়ে সেই মার্কেটে ঘুরতে গেলাম। সেই মার্কেটে ঘোরাফেরা শেষ হলে তারপর আমরা আবার স্পিডবোটে করে এপারে চলে এলাম। ও একটা কথা তো বলতেই ভুলে গিয়েছিলাম। আমরা যাওয়ার আগে সেখানে আমাদের জন্য ঘাটে স্পিডবোট রেডি ছিল। কি হলো সাহেব স্থানীয় এসপির সাথে কথা বলে এই ব্যবস্থা করে রেখেছিলেন। যার ফলে সেই স্পিডবোটে করে আমরা অল্প সময়ে নদীর পারাপার হতে পেরেছিলাম। তবে মোংলা বন্দরে যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের সাথে সরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা থাকার কারণে আমরা সহজেই সেখানে ঢুকতে পেরেছি। সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল।

সেখানে গিয়ে তো আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। কারন আমি এর আগে এত কাছ থেকে এত বড় জাহাজ কখনো দেখিনি। যাইহোক বেশ কিছুক্ষণ মংলা বন্দরে কাটিয়ে আমরা যখন বের হয়ে আসবো। তখন ইতিমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। তখনই আমরা সেই চমৎকার দৃশ্যটা দেখতে পেলাম। নদীর ভিতরে অনেক জাহাজ দাঁড়িয়েছিল। সেই জাহাজগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আলোকসজ্জা করা ছিল। যার ফলে একটি জাহাজ দেখতে এক একটি ছোটখাটো শহরের মতো মনে হচ্ছিল। দৃশ্যটি এখনো আমার চোখের সামনে ভাসে। যাই হোক সারাদিনের ঘোরাফেরা শেষে একরাশ তৃপ্তি নিয়ে সেদিন বাড়ি ফিরেছিলাম।

আজকের মত এখানেই শেষ করছি। পরবর্তীতে আপনাদের সাথে দেখা হবে অন্য কোনো নতুন লেখা নিয়ে। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।


ফটোগ্রাফির জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসহুয়াই নোভা 2i
ফটোগ্রাফার@rupok

logo.png

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


break .png

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote


VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png



🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

আমার বাবার চাকরির সুবাদে আমাকেও বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হয়েছে। আসলে ছোটবেলার সেই মধুর স্মৃতিগুলো এখনো মনে পড়ে। আপনি আপনার ছোট ফুফুর বাসায় ছিলেন জেনে ভালো লাগলো। মংলা সমুদ্র বন্দর যদিও কখনো যাওয়া হয়নি তবে আপনার গল্প শুনে মনে হচ্ছে জায়গাটি ভীষণ সুন্দর। আর বড় বড় জাহাজগুলোতে যখন আলো জ্বলে উঠে তখন দূর থেকে দেখলে মনে হয় ছোট কোন শহর। যেহেতু আপনার ফুপা চাকরি করতেন তাই সেখানে উনার সম্মান ছিল। এছাড়া স্থানীয় টি এন ও সাহেব যেহেতু সব ব্যবস্থা করেছিলেন তাই তো আপনারা ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। ভালো লাগলো ভাইয়া আপনার পোস্ট পড়ে।

 2 years ago 

সরকারি কলোনি গুলোর পরিবেশ অনেক সুন্দর হয় আমরাও থেকেছি সবাই খুব মিলেমিশে বসবাস করে কলোনির মধ্যে যা দেখে মনে হয় সবাই এক পরিবারের লোক।প্রতিটি বাবা-মা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে আপনার ভালোর জন্যই হয়তোবা ফুপির বাসায় রেখেছিলেন ভাইয়া।এক বছর বেশ ভালো ভাবেই কাটিয়েছেন।মংলা সমুদ্রবন্দরের গল্প অনেক শুনেছি কিন্তু কখনো ঘুরতে যাওয়ার সুযোগ হয়নি।ভাইয়া আপনি ফুপির সাথে থাকার কারনে এত সুন্দর একটি জায়গা দেখার সুযোগ পেয়েছিলেন বলেই আজও সেই দিনটি স্মরণীয় হয়ে আছে।অনেক সুন্দর মুহুর্ত গুলো শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই ভাইয়া।

 2 years ago 

যদিও তেমন কোন জেলা ঘুরাঘুরি হয়নি,বাবা সরকারি চাকরি করলে বাবা সব সময় ঢাকাতেই হেড অফিসে ছিলো।যাই হোক ফুফুর বাসায় এক বছর পড়াশুনার জন্য বাগেরহাটে থাকাতে বেশ ভালোই সময় কাটিয়েছেন। জোয়ার ভাটা আমি দেখিনি,তাছাড়া এত বড় জাহাজ সন্ধ্যা বেলা দেখার মজাই আলাদা। আপনার ভাগ্য ভালো মনের সকল ইচ্ছে পূরন হয়ে গেলো।আসলে কিছু কিছু দৃশ্য ভুলা যায় না।ধন্যবাদ

 2 years ago 

ভাইয়া আপনার টাইটেল দেখে প্রথমে বেভেছিলাম বাড়িতে ছোট খাটো কোন ঘটনা হবে পরে বিস্তারিত পড়ে বুঝলাম মংলা বন্দরে রাতের বেলা সামুদ্রিক জাহাজ নামক ছোটখাট শহর দেখেছেন। আপনার বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলা সরকারি কলনীতে থাকার অনুভূতি পড়ে অনেক ভাল লাগলো। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

শৈশবের সুন্দর ঘটনাগুলো মনে হলে খুব ভাল লাগে। আপনি আপনার শৈশবে ফুফুর বাসায় পরাশোনার জন্য গিয়ে কাটানো বেশ সুন্দর কিছু মুহূর্তের কথা এখানে শেয়ার করেছেন। আমি একবার রাতে লঞ্চে করে আসছিলাম চাদপুর থেকে তখন লঞ্চের আলোগুলো দূর থেকে দেখতে ছোট শহরের মতই লেগেছিল। আমার কিন্তু দেখতে খুব ভাল লেগেছিল কারন ডেকের অন্ধকারে বসে দেখেছিলাম। আপনার জাহাজের আলো দেখার অনুভুতিগুলো উপলব্ধি করতে পারছি । ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.15
TRX 0.15
JST 0.028
BTC 53948.70
ETH 2245.46
USDT 1.00
SBD 2.29