রমিজ মিয়ার অপূর্ণ স্বপ্ন (শেষ পর্ব)। ১০% সাই-ফক্স।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

কেমন আছেন আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা? আমি ভালো আছি। আশাকরি আপনারা ও ভালো আছেন।


পূর্ববর্তী পর্বের লিংক

খাওয়া-দাওয়া শেষ করে রমিজ বারান্দায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলো। তখন তার বউ এসে জিজ্ঞেস করলো এখন বলো শহরে কি কি ঘটলো? তখন রমিজ মিয়া শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছু তার বউকে বললো। তার বউতো শুনে মহাখুশি। রমিজ বললো আমাদের গাছে আর তাল নেই। তাই একটু পর গ্রামে কোন কোন গাছে তাল আছে সেটা দেখতে বের হবো। যাদের কাছে তাল পাবো তাদের কাছ থেকে কিনে রাখতে হবে। এই কথা বলে রমিজ মিয়া ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো। আর তার বউকে বলল বিকেলবেলায় আমাকে ডেকে দিও।

Polish_20220524_212626235.jpg

বিকাল বেলায় রমিজ বাড়ি থেকে বের হয়ে গ্রামের যে সমস্ত বাড়ি তাল গাছ আছে সেখানে গিয়ে কথা বলে আসলো। কিছু টাকা তাদেরকে অগ্রিম দিয়ে এসেছে যাতে অন্য কেউ আর কিনতে না পারে। সে তাল কিনেছে মাত্র ২ টাকা করে। শহরে এসে ১৫ টাকা করে বিক্রি করতে পারবে। এই টাকা থেকে তার অনেক লাভ হবে। সেই স্বপ্নে বিভোর ছিলো রমিজ মিয়া।পরদিন সকালে রমিজ মিয়া আবার তালশাঁস নিয়ে শহরে গেলো। সে তার বন্ধুর সাথে চুক্তি করে নিয়েছে আগামী একমাস সে প্রতিদিন তার ভ্যান নিয়ে যাবে। তার বন্ধু খুশিমনেই তাতে রাজি হয়েছে। রমিজ মিয়া তাকে ১০ দিনের টাকা অগ্রিম দিয়ে এসেছে। রমিজ মিয়া চিন্তা করে রেখেছে আর কিছুদিন তাল বিক্রি করা হলে সেখানে লাভের টাকা টাকা দিয়ে সে নিজে একটি ভ্যান কিনে নেবে। তাহলে আর তাকে ভ্যান ভাড়া করতে হবেনা। ভ্যান ভাড়ার টাকাটা বেঁচে যাবে। যখন বিক্রি করার মতো কোনো কিছু থাকবে না। তখন সে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে পারবে।


এভাবে অল্পকিছুদিনের ভেতর রমিজের কাছে বেশ কিছু টাকা জমে গেলো। কিন্তু শহরে হকারি করে এতো লাভ সে এই কাজ কিছুতেই ছাড়তে চাচ্ছিল না। তালের সিজন শেষ হয়ে গেলে তখন সে ডাব বিক্রি শুরু করলো। সেখান থেকেও রমিজ মিয়া ভালো লাভ করতে থাকলো। আগের তার ছেলেমেয়েরা স্কুলে পড়তো না। এখন দিন বদলেছে। রমিজ মিয়ার তিন ছেলেমেয়ের সকলেই স্কুলে যায়। তার বাড়িঘরের অবস্থাও অনেকটা ভালো হয়ে গিয়েছে।


গ্রামে সে একটি দোকান দিয়েছে সেই দোকানটি তার স্ত্রী চালায়।রমিজ সন্ধ্যার পর এসে বাড়ি ফিরে এসে বাকিটা সময় সে দোকানে বসে। এভাবে রমিজ মিয়া কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তার অবস্থানের পরিবর্তন হলো। আজ রমিজের কোনো অভাব নেই। সে জানে তার পরিশ্রমের ফলেই আজকে এই জায়গায় আসতে পেরেছে। কিন্তু একজনের উপকার সে কখনোই ভুলতে পারবে না। সে হচ্ছে তার বন্ধু সিরাজ মিয়া। সিরাজ মিয়ার পরামর্শেই তার ভাগ্য বদলে গিয়েছে।


একসময় যাদের কাছে সে সাহায্য চাইতে যেতো এখন তাদের অনেকের চাইতে সে ভালো আছে। কিন্তু তার এই ভালো থাকা সকলে ভালো চোখে দেখছে না। সেটা সে বুঝতে পারছে। কিছুদিন আগে সে একটা জমি কিনেছে। সেই জমিতে সে একটা ফলের বাগান করার স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু জমির পাশেই মেম্বারের বাড়ি। মেম্বারের জমিটা কেনার ইচ্ছা ছিলো। কিন্তু রমিজ মিয়া জমিটা কিনে ফেলায় সে আর জমিটা পায়নি। যার ফলে সে রমিজ বিহার উপর ক্ষেপে রয়েছে। তার লোকজন এসে হুমকিও দিয়েছে যে রমিজ মিয়া কাজটি ভালো করেনি।


রমিজ মিয়া জমি কেনার আগে এত কিছু চিন্তা করেনি। কিন্তু জমি কেনার পর এখন তার টেনশন হচ্ছে। কারণ মেম্বার লোক ভালো না। রমিজ মিয়া ভয় পাচ্ছে আবার জমিটাও ছাড়তে পারছে না। কারণ জমিটি তার খুবই পছন্দ হয়েছে। যদিও তার বউ রমিজ মিয়াকে পরামর্শ দিয়েছে জমিটি মেম্বারের কাছে বিক্রি করে দিতে। কিন্তু রমিজ মিয়া তাতে রাজি হয়নি।


তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এরকম একটি জায়গায় সে একটি পাকা বাড়ি উঠাবে। সেই বাড়ির আশেপাশে থাকবে অনেক রকম ফলের গাছ। তার এই স্বপ্ন এখন সত্যি হওয়ার পথে। আর কিছুদিন পর বর্ষা মৌসুম। তখন সে জমিতে ফল গাছ লাগানো শুরু করবে। ইতিমধ্যে জমিতে সে বাড়ির কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর হয়তো মাসখানেক এর ভেতরে বাড়ির কাজ শেষ হয়ে যাবে। প্রচন্ড দুরবস্থা থেকে রমিজ মিয়া আজ পরিশ্রম করে এই অবস্থানে এসে পৌঁছেছে। এখন আর সে পেছন ফিরে তাকাতে চায়না। রমিজ প্রতিদিন সকালে সাইকেলে করে শহরে চলে যায়। সেখান থেকে সারাদিন হকারি করে রাতে আবার সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে ফিরে আসে।


অন্যদিনের মতো সেদিনও রমিজ মিয়া বাড়ি ফিরছিল শহর থেকে। শহর থেকে তার বাড়ি ফেরার পথে একটি রাস্তা পড়ে। সেই রাস্তার দু'পাশে কোন বাড়িঘর নেই। সম্পূর্ণ জনশূন্য রাস্তা। এই রাস্তা দিয়ে সে দীর্ঘদিন চলাফেরা করছে। তার কখনো ভয় করেনি। কিন্তু আজ কেন জানি তার ভয় করছে। যদিও তার কাছে একটি টর্চ লাইট আছে। সে টর্চ জ্বালিয়ে মাঝে মাঝে রাস্তা দেখে নিচ্ছে। সে এভাবে আস্তে আস্তে সাইকেল চালিয়ে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলো। রাস্তা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল না তাই তাকে আস্তে আস্তে সাইকেল চালাতে হচ্ছিলো।


হঠাৎ সে দেখতে পেলো অন্ধকারের ভেতর কিছু লোক রাস্তার দুপাশে দাঁড়িয়ে আছে। এই অন্ধকারের ভেতর হঠাৎ করে এতগুলো লোক দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো। সে দেখার চেষ্টা করল সামনে কারা দাঁড়িয়ে আছে। টর্চের আলোতে সে যা দেখতে পেলো তাতে তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেলো। টর্চের আলোতে সে দেখতে পেলো সামনে প্রায় ১০/১৫ জন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। তাদের সকলের হাতে বিভিন্ন রকম অস্ত্র এবং সকলেরই গামছা দিয়ে মুখ বাধা। হঠাৎ করে রমিজ মিয়া সাইকেল ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু তার পেছন থেকেও লোকজন তাকে ঘিরে ফেলেছে।


তারপর লোকগুলো তাকে টেনে হিঁচড়ে রাস্তা থেকে নামিয়ে পাশের একটা পাট ক্ষেতের ভেতর নিয়ে গেলো। রমিজ মিয়া আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে চিৎকার করতে থাকলো। কিন্তু জায়গাটা জনমানব শূন্য হওয়ায় কেউ তার আওয়াজ শুনতে পেলো না।সেখানে রমিজ মিয়াকে তারা নির্মমভাবে হত্যা করলো। এভাবেই একটি অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে রমিজ মিয়া পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো। (সমাপ্ত)

logo.png


Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP500 SP1000 SP2000 SP5000 SP

Heroism_3rd.png

standard_Discord_Zip.gif


🇧🇩🇧🇩ধন্যবাদ🇧🇩🇧🇩


@rupok

Sort:  
 2 years ago 

গল্পটা পড়লাম,আসলেই আমরা মানুষরাই একজনের সুখ আরেকজন দেখতে পারি না।রমিজ মিয়ার দুঃখের সময় কেউ পাশে ছিলো না,কষ্ট করে যখন ভালো জায়গায় পৌছালো তখন সবার চোখে পরে গেলো।ভালো ছিলো।পরর্বতী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ

 2 years ago 

আপু গল্পটা শেষ পর্ব ছিল অপেক্ষা করে লাভ নেই।

 2 years ago 

আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যে মনোযোগ দিয়ে গল্পটা পড়েছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে। সাথে অন্যের কমেন্ট ও মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। এটা দেখে ভালো লাগলো।

 2 years ago 

এরকমই হয় আপু। আশেপাশে খেয়াল করে দেখুন এমন ঘটনা প্রচুর ঘটছে। আর এটিই গল্পের শেষ পর্ব ছিলো।

 2 years ago 

ভাই কালকে আমি কমেন্ট করেছিলাম যে আসলে এত সুখ এত আনন্দের মাঝে আমি কিছুটা অসুখের ছায়া দেখতে পাচ্ছি, আসলে আমারটাই সত্যি হলো সমস্যা হচ্ছে আমরা মানুষ একে অপরের সুখ দেখতে পারি না। আর এই কারণেই এত কষ্ট করে রমিজ মিয়া তার সুখের সংসারটা কে গড়ে তুলল দুখের সময় কেউ তার পাশে ছিল না অথচ সে যখন একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছলো তখন তার এই সুখটা কারো সহ্য হলো না। তাই রমিজ মিয়া তার অপূর্ণ স্বপ্ন নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হলো, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। ধিক্কার জানাই ঐসব মানুষকে যারা পরে সুখ সহ্য করতে পারেনা।

 2 years ago 

এই ধরনের শ্রেণি বিদ্বেষী এবং পরশ্রীকাতর মানুষ দিয়েই পৃথিবীটা ভরা।

 2 years ago 

ভাইয়া,পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি আর একটা কথা আছেনা। সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। রমিজ মিয়া পরিশ্রমের মাধ্যমে তার সংসারের উন্নতি করেছে এবং আর্থিক দিকে উন্নয়ন করেছে আর এই সবের জন্য তার প্রিয় বন্ধু অবদান রয়েছে ।

কিন্তু তার এই ভালো থাকা সকলে ভালো চোখে দেখছে না। সেটা সে বুঝতে পারছে।

আসলে ভাইয়া,কিছু মানুষ পরিশ্রম করে যখন নিজের আর্থিক উন্নয়ন করে তখন সে উন্নয়ন গুলো দেখে অনেকে সহ্য করতে পারে না।আমাদের সমাজে রমিজ মিয়ার মতো অহরহ ঘটনা করছে জমিসংক্রান্ত অথবা হিংসাত্মক কারণে। ভাইয়া,আপনার গল্পটি খুব মনোযোগ সহকারে আমি পড়েছি শেষের অংশটুকু সত্যিই খুব খারাপ লেগেছে তার স্বপ্নটি অসমাপ্ত রয়ে গেল। ধন্যবাদ ভাইয়া।।

 2 years ago 

ঠিকই বলেছেন। এধরনের ঘটনা আমাদের আশেপাশে হরহামেশাই ঘটছে।

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56588.25
ETH 2399.94
USDT 1.00
SBD 2.32